Friday 28 December 2012

গানে গানে কবিতা


কবিতার মাঝে পেতে চাই জীবনের ছন্দ
তাই বুঝি নেচে ওঠে এই হৃৎপিণ্ড।
হাসি আর গানে ভরে হবে উদ্ভাস

তাই বুঝি মনে আজ এত উচ্ছ্বাস।

পড়েছ কি যা লিখেছে কবি কাজী গুরু
তাই দিয়ে আজ কর কবিতার শুরু।
এপাশে ওপাশে রেখো কিছু অনুপ্রাস
ছন্দে গন্ধে বর্ণে ভরা সাবলীল প্রকাশ।

তুমি আমি চল আজ লিখে যাই কিছু পংতি
সুরে তালে পড়ে যেন নেচে ওঠে ধমনী।
কোথা গেলে যুঁই কামিনী নিয়ে এসো বরষা
যামিনী যেন গুনগুন গেয়ে ওঠে সহসা।

তাই বুঝি রিমঝিম দোলা দেয় বৃষ্টি
ধরণীর বুকে যেন এক অপরূপ সৃষ্টি।
মাঠে ঘাটে চারিদিকে ঝরে কত সুর
মন বলে স্বপ্ন পুরী যেন বেশী নয় দূর।


Sunday 23 December 2012

নক্ষত্রের গোধূলি-৭০ [অধ্যায়-৭]

বাড়িতে যোগাযোগ যা করার তা সবই প্রায় মেইলের মাধ্যমেই করে শুধু নিয়ম করে সপ্তাহে এক দিন ছুটির দিনে ফোন করে। মেইল যাই হোক তাতে কথা শোনা যায় না, মনির বা তার মেয়েদের কণ্ঠের উষ্ণ অনুভূতি গুলি শুনতে পায় না। কেমন যেন শূন্য শূন্য মনে হয়। মন ভরে না। আবার এদিকে ফোন করতে অতিরিক্ত খরচ হয়ে যায়। সে দিকেও লক্ষ্য রাখতে হয়। এমন কীইবা বেতন পায়। সবে কয়েক মাস হল এসেছে। অন্তত এক বছর
না হলে বেতন এর চেয়ে তেমন কিছু বাড়বে না। ফোন করেই যদি সব খরচ করে ফেলে তা হলে কি আর চলে? রাশেদ সাহেব সে কথা ভালই জানে। মনিও তাই মেনে নিয়েছে।

নাসিরের ভিসার মেয়াদ শেষ হতে চলেছে আর মাত্র কয়েক দিন বাকী। দেশ থেকেই টিকেট নিয়ে এসেছে। রিটার্ন টিকেট। রেস্টুরেন্টে নোটিশ দিয়েছে। আগামী ২৩ তারিখে ফ্লাইট। রাশেদ সাহেবের মনে একটা ঢেউ বিস্তারিত হচ্ছে। এক জন সাথি ছিল, সুখ দুঃখ ভাগ করা যেত। মনটা কিছুটা হলেও হালকা হত। নানা রকম বুদ্ধি পরামর্শ দিত। দিনের অধিকাংশ সময় এক সাথেই কাটত। কোথাও যেতে হলেও এক সাথে যেত। এখন? কে তাকে সান্ত্বনা দিবে? কে এমন আপন ছায়ায় ঢেকে রাখবে? কোথায় পাবে এমন আপন জন?
এত গুলি প্রশ্নের ভারে রাশেদ সাহেব অস্থির। নাসির কিছু বুঝতে পেরে যতটা সম্ভব সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করে। এক দিন বলল
রাশেদ ভাই, দেশে ভাবী বাচ্চাদের জন্য কিছু কিনে দেন আমি নিয়ে যাই। আমার কোন শপিং নেই। আপনার যতটা ইচ্ছা দিয়ে দিন। আমি নিজে যেয়ে ভাবীর হাতে দিয়ে আসব। ভাবীকে যতটা পারি সান্ত্বনা দিয়ে বুঝিয়ে আসব।
হ্যাঁ তাইতো!
সেই দিনই দুপুরের ডিউটি সেরে দুই জনে এক সাথে কাছের সুপার স্টোর টেসকোতে গেল। গত কাল বেতন পেয়েছিল বলে পকেটে রানীর মাথার ছবি আকা পাউন্ডের নোট গুলি ছিল। সারা স্টোর ঘুরে যা যা ইচ্ছা হল, দুই চোখে যা যা ভাল লাগল এটা  আমার খুকুর জন্য, এটা আমার মাঝুর জন্য, এটা আমার ছোটনের জন্য আর এটা আমার মনির জন্য। তিন মেয়ে আর মনির জন্য কিনে আনল। নাসির সাথেই ছিল। সব দেখল কোন বাঁধা দিল না। মানুষটাকে বেঁচে থাকতে হবে। যা ইচ্ছা তাই করুক। এক দিন তাকে আবার দেশে তার স্ত্রী সন্তানদের কাছে ফিরে যেতে হবে, এত দিন তাকে নিজেকে টিকিয়ে রাখতে হবে। এই কয়েক দিনেই নাসির এই আত্ম ভোলা মানুষটাকে একান্ত কাছে থেকে দেখে চিনে ফেলেছে। এমন সহজ সরল সুন্দর মনের মানুষ তার চোখে খুব কমই পরেছে। সে নিজেও পৃথিবীর অনেক দেশ দেখেছে। ঢাকায় ব্যবসা করে, মানুষ কম দেখেনি। মাঝে মাঝে রাশেদ সাহেবেকে দেখে অবাক হয়। করুক তার যা ইচ্ছা তাই করুক। এতেই যদি সে বেঁচে থাকার কিছুটা শক্তি খুঁজে পায় তাহলে তাই হোক। এক দিন নাসিরের যাবার দিন এসে হাজির হল। রাশেদ সাহেব নাসিরকে বুকে জড়িয়ে ধরে চোখের পানি সামলাতে পারলেন না। বললেন
এখানে যা দেখে গেলে ঢাকায় এসব কিছু বলতে যেয়ো না।
ভাবী জানতে চাইলে কি বলব?
একটা কিছু বলে দিও।
তাতে কার কি মঙ্গল? এর চেয়ে সত্য জানাই কি ভাল হয় না?
ঠিক আছে তোমার যা খুশী তাই বলে দিও, আমাকে আর জিজ্ঞেস করছ কেন?
চিন্তা করবেন না। ছয় মাসের মধ্যেই আমি আবার আসব, তখন এখানেই আসব এবং আপনার সাথেই থাকব। আপনি ওদের সাথে সে ভাবে ব্যবস্থা করে রাখবেন।
তাই?
হ্যাঁ।
বেশ, খুব ভাল হবে, আমি তোমার অপেক্ষায় থাকব।
মন খারাপ করবেন না। যেভাবে চলছেন এই ভাবেই চলবেন। আমি আসছি, আবার দেখা হবে।
আগেই হিথরো গামী কোচের টিকেট করা ছিল। রাশেদ সাহেব নাসিরের পথে খাবার জন্য কয়েকটা স্যান্ডউইচ বানিয়ে রেখেছিল, সে ব্যাগটা হাতে নিয়ে দুই জনে এক সাথে বের হয়ে হেঁটে কোচ স্টেশনে গেল। কিছুক্ষণের মধ্যেই সোয়ানসী থেকে কোচ এসে স্টেশনে দাঁড়াল। অন্য কোন যাত্রী ছিল না। নাসির একাই ছিল। লাগেজটা নিচে বক্সের ভিতর দিয়ে হাত বাড়িয়ে বলল খোদা হাফেজ।
রাশেদ সাহেব স্যান্ডউইচের ব্যাগটা হাতে দিয়ে বলল
খোদা হাফেজ।
ন্যাশনাল এক্সপ্রেসের কোচটা নাসিরকে নিয়ে ছুটে চলল লন্ডন হিথরো এয়ারপোর্টের দিকে।
এমনি করেই দিন কেটে যায়। সপ্তাহ, মাস এমনকি মনের মধ্যে যত ঝড় জমা আছে তার সব কিছু যেমন ছিল তেমন রেখেই দিন চলে যায় তার আপন ঠিকানায়।

৭ম অধ্যায় সমাপ্ত।

Saturday 22 December 2012

নক্ষত্রের গোধূলি- ৬৯ [অধ্যায়-৭]

মুল কথা হচ্ছে যে জাতি এক সময় প্রায় সমস্ত পৃথিবী শাসন থেকে শোষণ এবং অত্যাচার অনাচার নির্যাতন করে যে সাম্রাজ্য গড়েছিল যেখানে সূর্য অস্ত যেত না সেই জাতিকে এমন করে কাবু করে জেঁকে বসেছে সে এক পরম পাওয়া বললে অন্যায় হবে না। এদের সেই বিগত দিন গুলির সামান্যতম প্রতিশোধ নেয়া হচ্ছে। তবে এই পর্যায়ে
আসতে কম কাঠ খর পোড়াতে হয়নি। প্রথম দিকে বখাটে ছেলে পিলে বা বয়স্ক লোকেরাও খেয়ে দেয়ে পয়সা না দিয়ে চলে যেতে চাইত। পয়সা চাইতে গেলে ধমকে উঠত যে “তোমরা আমাদের দেশ থেকে সব টাকা পাচার করছ, লুট করে নিয়ে যাচ্ছ, কাজেই আবার কিসের দাম দিব”? তোমাদের এই ব্যবসা করতে দিব না। ক্রমে এই কথা রানীর কানে গেলে সে পাত্তা দেয়নি। রানী বলেছে এরা যদি এভাবে রান্না না করে তা হলে তোমরা খাবে কি? উনিশ’শ আশীর দশকে এক সময় ছিল যখন রেস্টুরেন্টের মালিকেরা হিথরো এয়ারপোর্টে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকত কোন বাঙ্গালি আসছে কিনা তাই দেখার জন্য। কোন বাঙ্গালিকে দেখলেই তার সাথে গিয়ে আলাপ করত যে ভাই আপনি কোথায় যাবেন? এগিয়ে নেয়ার জন্য কেও এসেছে কিনা, না হলে চলেন আমি নিয়ে যাই। গাড়িতে উঠিয়ে নিজের ঠিকানা লেখা একটা কাগজ হাতে দিয়ে বলে দিত যদি ভাই কাজকর্মের প্রয়োজন হয় তা হলে আমার সাথে যোগাযোগ করবেন। আমার রেস্টুরেন্ট আছে সেখানে কাজ করতে পারবেন, ওখানেই থাকবেন, খাবেন। এমন করেও কর্মচারী সংগ্রহ করতে হয়েছে। এরা আগে থেকে এই সুযোগ করে রেখেছিল বলে অনেক বাঙ্গালি এখানে এসে কোন বিপদে পড়েনি। অন্তত থাকা খাওয়া সহ কিছু একটা কাজের সংস্থান হয়েছে।

এক দিনে যেমন রোম নগরী তৈরি হয়নি তেমনি এই শিল্পও রাতারাতি এক দিনে হয়ে উঠেনি। যতটা সহজ ভাবে ভাবা যায় ততটা সহজে এই সুনাম গড়ে উঠেনি। যারা এর সাথে জড়িত কেবল তারাই জানে কি মূল্য দিতে হয়েছে। ঘড়ে স্ত্রী সন্তান রাত জেগে শেষ পর্যন্ত হয়ত না খেয়েই ঘুমিয়ে পরেছে অথচ কর্তা তখন খরিদ্দারের মনোরঞ্জনের জন্য, তাদের রসনা তৃপ্তির জন্য ফ্রাই প্যান নিয়ে জালফ্রেজি রাঁধছে কিংবা লোহার শিকে মাংস, পিয়াজ, টমাটো, ক্যাপসিকাম গেঁথে শাসলিক বানাচ্ছে। এদিকে ঘরে তার নতুন বিয়ে করা বৌ একা ছটফট করছে। হয়তবা কারো সন্তানকে কাল সকালে স্কুলে নিয়ে যেতে হবে ভর্তির জন্য অথচ বাবা তার গ্রাহকদের মন তুষ্ট করে রাত তিনটা বা তারও পরে ঘড়ে ফিরে বিছানায় যাবার সাথে সাথেই ঘুমে বেহুশ। সকালে সময় মত উঠতে না পেরে ছেলেকে নিয়ে আর স্কুলে যাওয়া হয়নি বলে ছেলের স্কুলে ভর্তিও হয়নি।
সবাই যখন দিনের কাজ শেষে ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে ঘরে ফিরছে তখন এই রেস্টুরেন্টের মালিক বা কর্মচারীরা ছুটে আসছে রেস্টুরেন্টে। এসেই রেস্টুরেন্ট খুলে বাতি জ্বালিয়ে সুগন্ধি ছড়িয়ে সাজসজ্জা করে নানা খাদ্যের পসরা সাজিয়ে বসছে। কখন ঘড় মুখো ক্ষুধার্ত গ্রাহকেরা ভুরি ভোজনের জন্য আসবে সেই পথ চেয়ে তীর্থের কাকের মত চেয়ে থাকছে। খরিদ্দার এলেই হাসির টেবলেট খেয়ে একটা হাসি দিয়ে তাকে অভ্যর্থনা জানিয়ে জিজ্ঞেস করছে
গুড ইভনিং ম্যাডাম, টেবিল ফর টু?
ওহ!
 ইয়েস ম্যাডাম/স্যার প্লীজ ফলো মি।
বলেই আগে আগে যেয়ে সাজানো টেবিল থেকে চেয়ারটা একটু টেনে দেখিয়ে বলবে হ্যাভ ইয়োর সীট প্লিজ। তারপর শুরু হবে যান্ত্রিক হাটা চলা, মাপা কেতা দুরস্ত মেকী কথা বার্তা। কাজকর্ম শেষ করে মালিক তার গাড়িতে করে চলে যাবে বাসায় বা অন্যান্য বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়ার জন্য বা যারা এর মধ্যে মদ বিক্রি করতে করতে কখন যে সে নিজেও মদে আসক্ত হয়ে গেছে তা সে নিজেও জানে না। বন্ধুদের সাথে এমন কোন পানের আড্ডা বসে যায়। আরও অনেক কাহিনী আছে। এদেশে ভাল মেয়ের অভাব বলে নিজ দেশে যায় পাত্রীর সন্ধানে। পাত্রীর বাবা বা অভিভাবক বিলাতি পাত্রের কথা শুনে তার কাছে মেয়ে দেয়ার জন্য পাগল হয়ে যায়। অনেক সময় পাত্রী নিজেও আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায়। কিন্তু সে কোথায় আসছে তা টের পায় যখন এখানে আসে।

এমনও দেখা যায় ৩, ৪ বা ৫ দিন পর্যন্ত স্বামী ঘড়ে ফিরছে না। স্ত্রীর মলিন মুখ। কি করবে, কাকে বলবে? নিজের ভিতরেই একটা চিতা জ্বেলে তার আগুনে দগ্ধ হতে থাকে, অথচ তার শরীরে মাথা থেকে পায়ের আঙ্গুল পর্যন্ত দামী গহনা, হীরের গহনা জড়ান রয়েছে! আলমারি ভরা নানা রকম দামী শাড়ি, বছরে অন্তত একবার আমেরিকা বা ফ্রান্স ঘুরে আসা সবই আছে কিন্তু যার কাছে আসা তার কোন দেখাই নেই। এমন অনেক ঘটনা আছে। আবার সে নিজেই দেখে শুনে অন্য কার হাত ধরে চলে যাচ্ছে নিজের অনন্ত সুখী ভবিষ্যতের স্বপ্নে বিভোর হয়ে। কিন্তু সুখ কি আর শাড়ি গহনা কিংবা পেরিসের টিকেটের মত দোকানে কিনতে পাওয়া যায়?
যারা কর্মচারী তারা কাজ শেষ করে রেস্টুরেন্টের উপরে বা কাছে কোথাও মালিকের ভাড়া করা ঘড়ে গিয়ে শুরু করে নিজেদের আড্ডা। এর মধ্যে বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ রয়েছে। লাঙ্গল ছেড়ে লন্ডন এসেছে এমন থেকে শুরু করে দেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সরকারি কোন পদস্থ কর্মকর্তা, কোন ব্যাবসায়ী বেশ বড় কোন ব্যবসায় মার খেয়ে জীবন বাঁচাবার জন্য এসেছে বা অন্তত পড়তে এসেছে এমন পর্যন্ত। সবার সাথে সবার আড্ডা জমে না।

ওদিকে থাকার ব্যবস্থা নিতান্ত আমাদের দেশের কাজের বুয়াদের চেয়ে খুব একটা ব্যবধান নেই। কোথাও হিটার নেই, কোথাও গোসলের পানি নেই, পানি আছে তো গরম পানি নেই এদেশে গরম পানি ছাড়া গোসলের কথা ভাবাও যায় না। কোথাও একটা ছোট্ট ঘড়ের মধ্যে ৩ থেকে ৭ জন পর্যন্ত থাকতে হয়। রাতের কাজের পর ঘড়ে গিয়ে গায়ের জামাটা খুলে কোথাও হ্যঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখবে তেমন কোন ব্যবস্থা নেই। অথচ মালিকের কড়া নির্দেশ ধোপ দুরস্ত কড়া ইস্ত্রি করা জামা প্যান্ট, পালিশ করা জুতা পায়ে টাই বেঁধে ডিউটি করতে হবে। কিন্তু কাপড় চোপর ধোয়ার বা শুকবার জায়গা নেই সেদিকে মালিক পক্ষের কোন মাথা ব্যথা নেই। এদেশে সাধারণত কেও হাতে কাপড় ধোয় না। রেস্টুরেন্টের কর্মচারীদের জন্য মালিক পক্ষ একটা সাধারণ মানের ওয়াশিং মেশিন পর্যন্ত কিনে দিতে টাকার অপচয় মনে করে। অবশ্য অসুবিধাও আছে। যেমন যারা লাঙ্গল ছেড়ে লন্ডন এসেছে তারা এই মেসিনের মর্ম বুঝবে কেমন করে। কমোড কি করে ব্যবহার করতে হয় তাও জানে না।

এদের সাথেই যদি ওই একটু আগে যাদের কথা বলেছি তাদের থাকতে হয় তাহলে কি অবস্থা দাঁড়ায় তা সহজেই অনুমান করা যায়। হাতের ঘড়িটা রাখতে হয় বালিশের নিচে। টুথ ব্রাশ বা মাথার চিরুনি পায়ের কাছে বা মাথার পাশে নিচে কোথাও রাখতে হয়, একটা টেবিল পর্যন্ত নেই। কোন রকমে এসে ক্লান্ত শরীরটাকে বিছানা নামের একটুখানি ভাঙ্গা খাটে ছেড়ে দিয়ে আগামী কালের ডিউটির প্রস্তুতি নেয়ার অপেক্ষা।  রাতে কারো একটু নীরবে ঘুমানো সম্ভব নয়। এত গুলি মানুষ এক ঘড়ে থাকলে যা হবার তাই হয়। কাউকে বিরক্ত করা বা এমন কিছু করলে কেহ বিরক্ত হতে পারে এই সাধারণ বোধও অনেকের নেই। এর ব্যতিক্রম যে নেই তা কিন্তু নয় তবে সে হটাত দুই একটা, সাধারণত এই ছবিই বেশি দেখা যায়।
সমস্ত সপ্তাহের কাজের অন্তত দুই সেট কাপড়, প্রতিদিনের েক জোড়া মুজা, দুই একটা বাইরে যাবার কাপড় সব কিছু মিলিয়ে প্রায় এক বালতি কাপড় এই শীতের দেশে হাতে ধোয়া আবার শুকানো এক কঠিন ব্যাপার। অনেকেই গরম কাপড় ধোয়ার ঝামেলায় না গিয়ে যত দিন এমনি গায়ে দেয়া যায় তত দিন গায়ে দিয়ে সেটা ফেলে দিয়ে আবার গরিবের বন্ধু প্রিমার্ক থেকে কম দামে আর একটা কিনে নেয়াই সুবিধা মনে করে।

এখানকার মালিকেরা সাধারণত এই সব কর্মচারীদের জন্য কাপড় ধোয়ার মেশিন দেয় না বলে তাদের মনে কোন আফসোস বা বিকার নেই বললেই চলে। অযথা খরচ বাড়াবার এমন কি প্রয়োজন? এমনটা ভেবেই সামান্য এক শ পাউন্ডের একটা সেকেন্ড হ্যান্ড মেশিন কিনে দেয়া হয় না। অভাবের তাড়নায় কিংবা নিতান্ত সখের বসে কিংবা চোখে রঙিন স্বপ্নের ঘোরে আমাদের দেশের অধিকাংশের কাছে এটাই বিলাতের স্বাভাবিক চিত্র।
এমনি করে দিন গুলি কেটেই যাচ্ছিল। সময় কেটে যেতে হবে তাই। রেস্টুরেন্টের পাশে লাইব্রেরি, মাঝে একটা ইটালিয়ান বেকারি দোকান শুধু কেক বিষ্কুট পাওয়া যায়।

Thursday 20 December 2012

নক্ষত্রের গোধূলি- ৬৮ [অধ্যায়-৭]

মদ তো এদের সাধারণ ব্যাপার এ নিয়ে কেও মাথা ঘামায় না বা এটা মাথা ঘামাবার বিষয়ও না। ছেলের মেয়ে বন্ধু বা স্ত্রীর হাতে পান পাত্র তুলে দিচ্ছে বা জিজ্ঞেস করছে তুমি কি খাবে? বিয়ের রীতি এদের প্রায় উঠেই গেছে, মেয়েবন্ধু বা ছেলে বন্ধু হিসেবেই জীবন কাটাচ্ছে এবং এদের সমাজ সেটা মেনেও নিয়েছে। এরা ভাবতেই
পারে না যে একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ সে মহিলাই হোক বা পুরুষই হোক মদ না খেয়ে বাঁচে কি করে। বর্তমান প্রজন্ম হিরোইন গাজা সহ নানা ধরনের নেশায় আসক্ত হয়ে গেছে। এমনও আছে যে অনেক ছেলে বা মেয়েকে স্কুল থেকে বের করে দিয়েছে। তাদের আর পড়া লেখা করার দরকার নেই। এরা স্কুলে থাকলে অন্যদের ক্ষতি করবে। এতে এদের কোন অসুবিধা নেই, আঠার বছর পর্যন্ত বাবা মার সাথে থাকবে তারপর সরকারী বেকার ভাতা পাবে আর তার সাথে চুরি চামারি করে দিন কাটাবে। চুরি করতে গিয়ে ধরা পরে অনেকেই জেলে আছে তবে আঠার বছরের আগে কোন অপরাধ করলে তার বিচার নেই বলে যার যা ইচ্ছা করে যাচ্ছে।

এদের চুরি করার কৌশল দেখে অবাক হতে হয়। এদেশে সুপার স্টোর গুলি সহ প্রায় সব দোকানেই বের হবার পথে সেন্সর থাকে, দোকানের প্রতিটি মালামালের প্যাকেটের গায়ে যে বার কোড থাকে তা দাম দেবার সময় স্ক্যান করলেই ডিকোড হয়ে যায়। যখন কেও দাম না দিয়ে ওই মাল নিয়ে গেট দিয়ে বের হবে গেটের সেন্সর সেই ডিকোড না করা মালের বার কোড পড়ে নিয়েই এলার্ম বাজানো শুরু করে দিবে, কাজেই সহজ পথে চুরি করার পথ নেই। ওদিকে আবার সমস্ত দোকান সিসি ক্যেমেরার আওতায় রয়েছে, কোন পাশে কোন রো তে কে কি করছে সব মনিটরিং করে। এই ক্যেমেরার চোখ ফাঁকি দিয়েও এরা ওই মালের প্যাকেটে যেখানে বার কোড থাকে ঠিক সেই জায়গাটুক কিছু দিয়ে ছিড়ে ফেলে পকেটে ভরে বের হয়ে যায়। আঠার বছর বয়সের নিচে কারো কাছে মদ জাতিয় পানিয় বা তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি করা নিষেধ। তাই বলে কি আঠার বছর হয় নি এমন কেও মদ পান বা ধুম পান করতে পারবে না? তা না, ওই রকম কোন কৌশল করে ঠিকই ব্যবস্থা করে নিচ্ছে। সাধারণত এই সব দ্রব্য যে কাউন্টারে বিক্রি হয় সেখানে লেখাই থাকে যে “আপনার চেহারা দেখে যদি আপনার বয়স আঠার বছরের কম মনে হয় তাহলে আপনার পরিচয় পত্র দেখতে চাইলে অপরাধ নেবেন না”। এমনকি সুপার স্টোর গুলিতে যারা কম কিছু কিনেছে তাদের লম্বা কিউতে না দাঁড়িয়ে সেলফ পে বা কুইক জোনে মেশিন দিয়ে খরিদ্দার নিজেই মাল স্ক্যান করে নগদ বা কার্ডে দাম পরিশোধ করে স্লিপ নিয়ে চলে যাচ্ছে। এই মেশিন গুলি অত্যন্ত শিক্ষিত, এগুলি সঠিক দামের হিসেব করতে পারে সেই সাথে ক্রয় মূল্যের চেয়ে যে কোন বড় মাপের নোট দিলে সঠিক অংক ফেরত দিতেও পারে। এখানে এসেও যদি কেও মদের বোতল স্ক্যান করে সঙ্গে সঙ্গে এই মেশিনই খরিদ্দারের বয়স প্রমাণের জন্য যে কোন আইডি কার্ড যেমন ড্রাইভিং লাইসেন্স বা পাসপোর্ট স্ক্যান করতে বলবে নতুবা ওই স্টোরের কোন কর্মচারী এসে খরিদ্দারের চেহারা দেখে নিশ্চিত হয়ে তার কার্ড স্ক্যান করে ঠিক করে না দেয়া পর্যন্ত মেশিন বলতেই থাকবে ‘অথেনটিকেশন রিকয়ার্ড’, এই মেশিন আবার কথাও বলতে পারে।

ইদানীং অনেক জায়গায় এমনকি বাসের গায়েও বিজ্ঞাপন দেখা যাচ্ছে যে “স্বল্প মাত্রায় পান করুন সুস্থ ভাবে বেশি দিন বাঁচুন” “কেও আপনার কাছে ভিক্ষা বা কোন পয়সা চাইলে তা দিবেন না” তা হলে সে ওই পয়সা দিয়ে নেশা করে মারা গেলে কি আপনি তার জন্য নিজেকে ক্ষমা করতে পারবেন? এই ধরনের বিজ্ঞাপন।
এদের বাবা মা নিজের সন্তান যেদিন আঠার বছর পেরিয়ে উনিশে পা দেয় সেদিন তারা নিজেরাই সন্তানের হাতে পানপাত্র তুলে দেয় এমনকি এই দিন উদযাপনের জন্য কোন রেস্টুরেন্টে পার্টিও দেয়। এমনও দেখা যায় যে কোলের বাচ্চার মুখে নিজের বিয়ারের গ্লাস ধরে তাকে খাওয়াচ্ছে।(চলবে)
এই সব খাবার রান্না করা অত্যন্ত সাদামাটা কৌশল। আমাদের দেশে পোলাও রান্না যে ভাবে হয় এখানে সে ভাবে রান্না করার তেমন কোন প্রয়োজন নেই। খুব সাধারণ ভাবে চালের সাথে ডালডা, তেজপাতা এবং গরম মশলা দিয়ে পানি মেপে এক বারে চুলায় বসিয়ে দিচ্ছে। চাউল কষান বা সাথে বিশেষ কোন স্বাদের ভিন্নতার কোন ঝামেলা নেই। বিরিয়ানি বলতে এখানে যা বোঝায় তা যদি আমাদের দেশে কাওকে দেয়া হয় তাহলে সে লাঠি নিয়ে আসবে এ ব্যাপারে নিশ্চিত। আগে থেকে হলুদ, আদা রসুন দিয়ে সেদ্ধ করে রাখা মুরগী বা ভেড়ার মাংসের সাথে কিছু হলুদ মরিচের ছোঁয়া দিয়ে পোলাওর সাথে একটু নেড়েচেড়ে মিশিয়ে চিকেন বিরিয়ানি হয়ে গেল। কাস্টমারেরা এই খেয়েই তৃপ্ত।


সন্ধ্যা থেকে মদ খেয়ে এসে আড়ষ্ট জিহ্বায় অনেকেই ভিন্দালু পছন্দ করে তবে মহিলারা সাধারণত এই মাত্রার ঝাল খেতে পারে না। স্প্যানিশ বড় পিয়াজ একটু বড় চৌকো সাইজ করে কেটে তার সাথে কিছু ক্যেপসিকাম মিশিয়ে চিকেন রান্না হলে তার নাম জালফ্রেজি। আবার একই জিনিশ ভেড়ার মাংস দিয়ে হলে তার নাম ল্যাম্ব সাতকানিয়া। এই রকম বিভিন্ন রেস্টুরেন্টের মেনুতে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য রয়েছে। কোথাও সিলেটি চিকেন, কোথাও চিকেন কাফরিল, কচি মুর্গ, চিকেন বনানী, চিকেন চামেলি, চিকেন পাতিয়া, চিকেন মুলি যার যা ইচ্ছা একটা মন গড়া নাম দিলেই হয়ে গেল। রান্নার পরে উপরে দুই টুকরা টমাটো দিলে এক নাম আবার চার টুকরা টমাটো রান্নার সাথে দিলে আর এক নাম। একটা কাঁচা মরিচ ফালি করে কেটে উপরে দিয়ে দিলে এক নাম মরিচ না দিলে আর এক নাম। স্বাদের তেমন কোন তারতম্য নেই। কোথাও দেখেছি চিকেন জামদানি, এটা একটা ওভাল ডিশে দিয়ে পাশে কিছু টমাটো শসা জামদানি শারির মত খাঁজ কাঁটা নক্সা করে কেটে সাজিয়ে দিচ্ছে বলে এই নাম। এর পর রয়েছে কড়াই ডিশ। ছোট  ছোট কড়াই চুলায় গরম করে তাতে সামান্য একটু তেল আর রসুন ছেড়ে দিয়ে ফ্রাই প্যান থেকে কারি ঢেলে দিতেই ছর ছর করে এক শব্দ হয় আর ধোয়া উঠে, সেই কড়াই আবার কাঠের ছোট ট্রেতে করে এনে টেবিলে নামিয়ে দেয়।

কেউ কেউ আবার এর উপরে একটু ব্র্যান্ডি ছিটিয়ে তাতে আগুন জ্বেলে দেয় তাতে ব্র্যান্ডির এলকোহল জ্বলে আগুনের শিখা জ্বলতে থাকে যা দেখতে খারাপ দেখায় না। ইংরেজ খরিদ্দার এতেই মহা খুশি। আবার বালটি ডিশ আছে এগুলি ছোট ছোট তামার বালতিতে করে পরিবেশন করে নানা রকম চমকের সৃষ্টি করে। তবে কিছু কিছু মেনু আছে যেগুলি প্রায় সব জায়গায়ই সমান। যেমন, কারী, দোপিয়াজা, জালফ্রেজি, রগন, পাতিয়া, ধানশাক, মাদ্রাজ, ভিন্দালু, কোর্মা, পাসান্দা, টিক্কা মাসালা, তন্দুরি, শাষলিক, কাশ্মীরি ইত্যাদি। নানা রকম পুর দেয়া নান রুটি, বাদাম কিসমিসের সাথে চিনি মিশিয়ে রান্না করা হালুয়ার মত পুর দেয়া যে নান রুটি সেটা পেশোয়ারি নান, রান্না করা কিমার পুর দিলে সেটা কিমা নান, রসুন দিলে গারলিক নান, কাচা মরিচ দিলে তার নাম কুলচা নান। সকলেই নিজ নিজ একেকটা ঘরানা তৈরি করে নিয়েছে। আমাদের দেশের সাধারণ নামের সাথে এর কোন মিল নেই এমনকি রান্নার মশলা বা ধরনের মধ্যেও কোন মিল নেই। সাধারণত মালিক নিজেই সেফ এর কাজ করে। কোথাও যদি বেতন ভুক্ত সেফ থাকে তাহলে মালিক এসে গ্র্যাভি বা মাংস সেদ্ধ করে রাখার সময় মশলা মিশিয়ে দিয়ে যায়।

Wednesday 19 December 2012

নক্ষত্রের গোধূলি- ৬৭ [অধ্যায়-৭]

 একাধিক মালিকানায় যে সব রেস্টুরেন্ট রয়েছে তাদের কাজ পরিচালনা অত্যন্ত সহজ। তাদের নিজেদের কেও কিচেনে সেফ এর কাজ করছে, কেও গ্রাহদের সাথে মিশে গিয়ে তাদেরকে বুঝিয়ে কিছু দামি খাবারের অর্ডার নিচ্ছে নিদেন পক্ষে একটা অতিরিক্ত ড্রিঙ্কের অর্ডার আদায় করে নিচ্ছে। আবার রাতের শেষে রেস্টুরেন্ট বন্ধ হলে
সবাই মিলে মিশে হিসাব নিকাস করে নিচ্ছে। পর দিন কে গ্যাস বিল দিবে, কে পানির বিল দিবে বা কে কি করবে তা ঠিক করে নিচ্ছে। সবসময়ই যে এমন সু সম্পর্ক বজায় থাকছে তা নয়, মাঝে মাঝে অংশীদারদের মধ্যে মারামারি হাতাহাতি এমনকি আদালত পর্যন্তও গড়াচ্ছে। আবার এমনও দেখা গেছে যে কেও কৌশলগত বা অন্য কোন কারণে ব্যবসায় সফল হতে পারেনি তবে এ ঘটনা খুবই কম। কেও আবার আশাতিরিক্ত লাভের মুখ দেখে বিপথেও চলে যাচ্ছে। এদেশের ব্যবসা অধিকাংশই লাভ জনক, এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে সমস্ত খরচ বাদ দিয়ে বিক্রির সত্তর থেকে পঁচাত্তর ভাগ লাভ থেকে যায়।

গ্রাহকেরা অনেক ক্ষেত্রেই তাদের পারিবারিক বা ঘরোয়া আপ্যায়ন বা আত্মীয় স্বজনদের নিয়ে সপ্তাহ শেষে এসে খেয়ে যায়। জন্ম দিন, বিবাহ বার্ষিকী বা অন্য যে কোন স্মরণীয় দিন গুলি বৈচিত্র্যময় পরিবেশে উদযাপনের জন্য প্রায়ই এই সব রেস্টুরেন্টে অহরহই অনুষ্ঠান হচ্ছে। এমনকি বেশ কয়েক দিন আগে থেকেই ফোন করে বুকিং দিয়ে রাখছে আমরা অমুক দিন এতটার সময় এত জন আসব। সেগুলি আবার বুকিং ডাইরিতে লিখে রাখছে। কি ধরনের অনুষ্ঠান তাই বুঝে তাদের জন্য টেবিল বা পুরো ফ্লোরটাই সাজিয়ে রাখে। কখনো গ্রাহকরা নিজেরাই একটু আগে এসে সাজিয়ে নেয়।
এদেশে দুপুরে সবাই কাজে ব্যস্ত থাকে বলে আমাদের দেশের মত দিবা নিদ্রার প্রচলন নেই বললেই চলে। কাজেই কাজে থাকা কালীন সাধারণ একটা স্যান্ডউইচ বা বার্গারের সাথে একটা আপেল আর এক ক্যান পানীয় এই দিয়েই দুপুরের খাবার হয়ে যায়। প্রধান খাবার খায় রাতে। রাতে রেস্টুরেন্ট থেকে খেয়ে বাড়িতে গিয়ে কিছুক্ষণ পরেই ঘুম। এদের আবার একটা খুব ভাল গুন হচ্ছে যত রাতেই ঘুমাতে যাক না কেন খুব ভোঁরে উঠে। আমাদের মত এরা গভীর রাতে শোবার আগে খায় না। খাবার অন্তত দুই ঘণ্টা পর বিছানায় যায়।

কাজেই রেস্টুরেন্টগুলি দুপুরে বারোটার পর ঘণ্টা দুই আড়াই খোলা রাখলেও গ্রাহক খুব একটা আসে না। সাধারণত রাতের প্রস্তুতির জন্যই এই সময় খোলা হয়। সন্ধ্যা পাঁচটা বা তার কিছুক্ষণ পরেই খোলা হয়। এলাকা বুঝে রাত এগারটা থেকে একটা বা দুইটা পর্যন্ত খোলা থাকে। শনি এবং রবি দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটি বলে শুক্র এবং শনি বারের রাতে প্রচণ্ড ভিড় হয়। সম থেকে শুক্র বার পর্যন্ত যান্ত্রিক গতিতে কাজের চাপ থেকে অব্যাহতি পাবার জন্য, সমস্ত ক্লান্তি ধুয়ে মুছে নিজেকে ধোপ দুরস্ত করতে গিয়ে বসে আমাদের দেশের চায়ের দোকানের মত পান শালা গুলোতে। উত্তাল বাজনার তালে তালে জোড়ায় জোড়ায় বা যার কোন সঙ্গী বা সঙ্গিনী নেই তারা একাই পান পাত্র হাতে নেচে গেয়ে ক্লান্ত শ্রান্ত পৃথিবীতে গড়ে নেয় আপন স্বর্গ। অবশেষে যখন ক্ষুধা নামের জীবের একান্ত শত্রুর আক্রমণের ছোবল অনুভব করে তখন পানশালা থেকে উঠে এসে ভিড় করে এই সব রেস্টুরেন্ট গুলিতে
এখানে তাদের জন্য অপেক্ষা করছে চির সুবাসিত নানা ধরনের সুস্বাদু খাবার। খাবার পরিবেশনের আগে আবার এক দফা পানীয় পূর্ণ গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে মত্ত অবস্থায় সঙ্গী বা সঙ্গিনীর সাথে মানব জাতির ভালবাসা প্রকাশের আদিম ঢঙ্গে মগ্ন হয়ে যায়।

তখন আর স্থান কাল পাত্র বিবেচনার হুশ থাকে না। এর মধ্যেই বেরসিক ওয়েটার এসেই বলে উঠে এক্সকিউজ মি স্যার/ম্যাডাম, ইউর মিল ইজ রেডি। তখন তারা চমকে উঠে পরস্পরের বন্ধন মুক্ত হয়ে একটু নরে চরে বসে বলে দেয় ইংরেজদের কৃত্রিম ভদ্রতা মূলক কথা ‘থ্যাংকস’। মনে চেপে রাখে বিরক্তি, যা কখনো এই ইংরেজ জাতির পক্ষে প্রকাশ করা হয়ে উঠে না। ইংরেজদের চারটা যাদু শব্দ আছে যেমন, এক্সকিউজ মি, থ্যাঙ্ক ইউ, সরি এবং প্লিজ এই দিয়ে অনেক কিছু জয় করে নিতে পারে যা আমাদের জন্য অচল। এদেশে বাস থেকে নামার সময় ড্রাইভারকে থ্যাংকস বলে নামে অথচ আমাদের দেশে ড্রাইভারকে ধন্যবাদ বললে সে উলটো জিজ্ঞেস করবে আমারে ধন্যবাদ কইলেন কেন? যাই হোক যা বলছিলাম, এদেশের মহিলাদের প্রিয় খাবার টক মিষ্টি জাতিয় চিকেন টিক্কা মাসালা বা চিকেন কোর্মা। তবে পুরুষেরা অনেকেই চরম ঝাল পছন্দ করে।

ঝালের মাত্রা বোঝানর জন্য এখানে চারটা নাম আছে প্রথমত সাধারণ কারি যা তেমন ঝাল না, দ্বিতীয় পর্যায়ের ঝালের নাম মাদ্রাজ কারি এখানে মাদ্রাজ দিয়ে ঝালের মাত্রা বোঝাচ্ছে, এর পর ভিন্দালু, এটা হচ্ছে ঝালের তৃতীয় মাত্রা চতুর্থ মাত্রা হল ফাল। এই দিয়ে কোন রকম রাতের খাবার সেরে আবার মেতে উঠে গল্পে। দেখে মনে হয় এদের বাড়ি ঘর সব ক্রোক হয়ে গেছে কিংবা বান ভাসিতে তলিয়ে গেছে যাবার কোন জায়গা নেই। কোথায় যাবে তাই এই রেস্টুরেন্টে বসে রয়েছে। রাত বাড়তে থাকে সেই সাথে বাড়ে কর্মীদের বিরক্তি। এরা মনের সুখে এখানে বসে আনন্দ করছে কিন্তু বেচারা কর্মচারীরা সেই যে দুপুরে শুরু করেছে রাতের একটা বা দুইটা বেজে গেছে এখনো কাজে লেগেই রয়েছে। সব কাস্টমার বের হয়ে যাবার পর সম্পূর্ণ রেস্টুরেন্ট পরিষ্কার করে, সব কিছু ধোয়া মুছা করে তবেই ছুটি।

এখনো হয়ত কেউ কিছু খাবার সময় পায়নি অথচ অন্যের খাবার যোগান দিয়ে যাচ্ছে। বিরক্তি আসাটাই স্বাভাবিক। আবার ইংরেজদের তৈরি করে দিয়ে আসা উপ মহাদেশীয় গোলামি ভাব এখনো রক্তের সাথে রয়ে গেছে বলে কাস্টমার অভিমান করে যদি আবার না আসে এই ভয়ে কিছু বলতেও পারছে না। অবশ্য এ দেশিয় বা ইটালিয়ান বা ম্যাক্সিকান রেস্টুরেন্ট গুলিতে ভিন্ন চিত্র, ওরা রেস্টুরেন্ট বন্ধ করার নির্দিষ্ট সময়ের আধা ঘণ্টা আগে মাইক দিয়ে ধন্যবাদ জানিয়ে ক্ষমা চেয়ে বলে দেয় “সম্মানিত গ্রাহক বৃন্দ, আমাদের রেস্টুরেন্ট আর মাত্র আধা ঘণ্টার মধ্যে বন্ধ হবে আপনারা এর মধ্যে প্রস্তুতি নিয়ে নিন”। এ প্রসঙ্গে এখানে প্রচলিত একটা কৌতুক মনে হল, এক রেস্টুরেন্টে শেষ গ্রাহক খেয়ে দেয়ে বসে বই পড়ছে, আর ওদিকে ওয়েটার সাহেব তার অপেক্ষায় আছে যে সে কখন যাবে। এমন সময় গ্রাহক সাহেব হাত উঁচিয়ে আঙ্গুলের ইশারায় ওয়েটারকে কাছে ডাকছে দেখে ওয়েটার মনে মনে ভাবছে যাক বাঁচলাম এবার হয়তো বিল চাইবে। ওয়েটার কাছে যেতেই গ্রাহক বলল ওয়ান কফি প্লীজ। এর মানে হচ্ছে কফির উছিলায় আর অন্তত এক ঘণ্টা বসে থাকার সুযোগ পাবে আর ওয়েটারকে তার সাথে বসে থাকতে হবে।
এই ইংরেজ জাতি আমাদের উপ মহাদেশকে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে এসেছে, ভাইয়ে ভাইয়ে লড়াই বাধিয়ে এসেছে, হিন্দু মুসলিমের যুদ্ধ বাধিয়েছে এমনকি মুসলিমের মধ্যেও ভাগাভাগি করে এসেছে। জুলুম জালিয়াতি, লুঠ তরাজ থেকে শুরু করে কি না করেছে এদের পূর্ব পুরুষ। মসলিনের উৎপাদন বন্ধ করার জন্য কারিগরের আঙ্গুল কাটা থেকে নীল চাষের নামে যে অত্যাচার করেছে সে কি ইতিহাসে নেই? এদের রানীর মাথার মুকুটে যে হীরা এদের সোভা ও মর্যাদা বৃদ্ধি করছে সেও আমাদের দেশ থেকেই চুরি করে এনেছে। সারা পৃথিবীতেই ব্যবসার নামে ঢুকে সে দেশ শাসন থেকে শোষণ করলেও এদের ইতিহাসে কিন্তু এদের পূর্ব পুরুষদের সুগন্ধি সাবানে ধোয়া তুলসী পাতা বানিয়ে রেখেছে। বর্তমান বংশধরকে এদের আসল চেহারা লুকিয়ে রেখে কাল্পনিক বীরত্বের কাহিনী তুলে ধরেছে। সারা বিশ্ব থেকে চুরি করে আনা সম্পদ দিয়ে নিজেদের দেশ সাজিয়েছে, একথা বর্তমান প্রজন্ম জানেই না। এদের পূর্ব পুরুষদের দূর দৃষ্টি ছিল এবং ক্ষমতা ছিল বলেই এমন পেরেছে। তবে বর্তমান প্রজন্মের রূপ সম্পূর্ণ ভিন্ন স্রোতে বইছে। এদের অধিকাংশই নানা রকম নেশায় আসক্ত হয়ে গেছে।

Tuesday 18 December 2012

নক্ষত্রের গোধূলি- ৬৬ [অধ্যায়-৭]

রান্না বান্না! এতো এক মস্ত শিল্প। যে শিল্পের কারুকাজ দিয়ে মানুষের মন জয় করা যায় তাৎক্ষনিক ভাবে অতি সহজে, পেটের ক্ষুধা, মনের ক্ষুধা দুয়ে মিলে পায় সীমা হীন তৃপ্তি। তখন মেনু ছিল চিকেন বা মিট (মিট বলতে এদেশে ভেড়ার মাংস বোঝায়) কারী, দোপিয়াজা, ভুনা, মালাই কারী, কোর্মা, বয়েল্ড রাইস, পোলাও রাইস, বিরিয়ানি
এবং সুপ। চিকেন পোলাও ছিল তখনকার একটা বিশেষ চাহিদার খাবার। কিন্তু মানুষ বৈচিত্র্যের সন্ধানী। কত কাল আর এই এক খাবার চলবে? নতুন কিছু চাই। রাঁধিয়েরা চেষ্টা করছে, গবেষণা করছে কি কি উদ্ভাবন করা যায়। রাঁধিয়ে বললাম এই জন্য যে তখন রান্না করত পুরুষ মানুষ তাকে তো আর রাঁধুনি বলা যায় না! অবশ্য মাঝে মাঝে তার স্ত্রীও কিচেনে সাহায্য করেছে।
এই গবেষণা বা চেষ্টা যাই বলি না কেন এর ফলে যুক্ত হল আর এক নতুন মাত্রা। টিক্কা এবং তন্দুরি। বিশেষ ভাবে কাটা মাংস টক দৈ বা ইওগার্টের সাথে মশলা পাতি মিশিয়ে সারা রাত রেখে দিয়ে লোহার শিকে গেঁথে সরাসরি আগুনে ঝলসে টিক্কা বা তন্দুরি করা হোত। এগুলি ঝলসিয়ে খাওয়া যায় আবার এই ঝলসান মাংস রান্না করেও এক নতুন পদ তৈরি করেছে। এর মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য হচ্ছে টিক্কা মাসালা সে চিকেন বা মিট যাই হোক।

এই সব মশলা এবং রেস্টুরেন্টের নানা বিধ মালামাল যোগান দেয়ার জন্য আর এক দল তৈরি হয়ে গেল যারা রেস্টুরেন্টের চাহিদা অনুযায়ী মালামাল রেস্টুরেন্টে পৌঁছে দিয়ে যাচ্ছে। প্রথম দিকে আস্ত মশলা বা আস্ত মুরগী ভেড়া দিয়ে যেত। আজকাল আর সে দিন নেই এখন বিজ্ঞানের দৌলতে গ্রাইন্ডিং মেশিন এসে গেছে, রেফ্রিজারেটর এসেছে। এখন গুড়া মশলা আসছে, চাহিদা মত টুকরা করা মাংস প্যাকেটে বরফ করে দিয়ে যাচ্ছে। গ্রাহকদের খাবার পর হাত মুখ মোছার জন্য সুগন্ধ যুক্ত ভেজা ছোট তোয়ালের প্যাকেট, শাকসবজি, মদ বা নানা রকম পানীয়ও একই ভাবে আসছে। সপ্তাহের একটা নির্দিষ্ট দিনে টেলিফোনে অর্ডার নিয়ে সময় মত পৌঁছে দিচ্ছে। একই ভাবে টেবিল ক্লথ, ন্যাপকিন, সার্ভিস টাওয়েল ইত্যাদি লন্ড্রি থেকে ধুয়ে দিয়ে যাচ্ছে।শুধু দিয়ে যাচ্ছে বললে ভুল হবে। একে বারে যে জিনিস যেখানে থাকে সেখানেই তুলে দিয়ে যাচ্ছে।
যারা খেতে আসে তাদের মনোরঞ্জনের জন্য যার যার সামর্থ্য ও রুচি অনুযায়ী রেস্টুরেন্টগুলি সুন্দর পরিপাটি করে সাজান। তবে অধিকাংশই উপ মহাদেশীয় কায়দায় সাজান। এমনকি দেয়ালে টানানো ছবিতেও উপমহাদেশীয় কৃষ্টি সংস্কৃতির প্রতিফলন ফুটে উঠেছে। এই বিজাতিয় ইউরোপীয় সংস্কৃতির মাঝে চমৎকার বিদেশি সংস্কৃতি ধরে রেখেছে। এতে রেস্টুরেন্টের মালিকদের দেশ প্রেম এবং তা ইউরোপের মাঝে ফুটিয়ে তোলার যে প্রচেষ্টা তাতে তাদেরকে ধন্যবাদ জানাতেই হয়। ভিতরে অন্যান্য সাজসজ্জার সাথে মৃদু লয়ে মূর্ছিত বাংলা বা হিন্দি সুর লহরীর ঝংকার যা প্রকৃত পক্ষেই এই সুদূর পশ্চিমা সভ্যতার মাঝে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি পরিচয় করিয়ে দেয়ার এক অসাধারণ প্রচেষ্টা এবং এটাই এদের সফলতা। এটা তখন বোঝা যায় যখন এই বিলাতিদের মুখ থেকে শোনা যায় বাহ! বেশ সুন্দর বাজনা, কোন কোন মাতাল আবার এই বাংলা সুরের সাথে নেচেও ওঠে।



[একটি দুর্লভ মুহূর্তের বিবরনঃ
যখন আমি এই লেখা লিখছি তখন বিবিসি-২ থেকে একটা কালচারাল প্রোগ্রামের জন্য আমার সাক্ষাতকার নিতে এসেছে। অনুষ্ঠানটি ২০০৪ সালের ডিসেম্বর মাসের ২ তারিখ রাত আটটায় বিবিসি-২ চ্যানেলে প্রচারিত হয়েছে।
এখন আমি বিবিসির ক্যেমেরার সামনে বসে এই লেখা লিখছি। এ যে আমার জন্য কত বড় আনন্দের ব্যাপার তা বোঝাই কি করে, এর চেয়ে বড় আনন্দ আর কি হতে পার জানি না। আমি জীবনেও যা কল্পনা করিনি যে বিশ্বের প্রথম শ্রেণীর একটা মিডিয়ার ক্যেমেরার সামনে বসে আমি সাক্ষাতকার দিব আর লিখবো। এটা শুধু আনন্দের এবং আনন্দের, চরম আনন্দের ব্যাপার। যা কেবল মাত্র মনে মনেই ভাবা যায় অনুভব করা যায়, যা প্রকাশ করার মত ভাষার স্বল্পতা এই মুহূর্তে আমাকে ভীষণ ভাবে আলোড়িত করছে। মনে হচ্ছে আমি যদি নতুন কিছু শব্দ বানিয়ে এখানে যোগ করতে পারতাম। হয়তোবা এমন কোন শব্দ রয়েছে যা এই মুহূর্তে আনন্দের আতিসহ্যে আমার মনে আসছে না।
পৃথিবীর সমস্ত ভাল লাগা গুলি যেন আমার ভাবনার মিছিলে যোগ দিয়েছে। এই এত ভাল লাগা আমি কি করে প্রকাশ করি, ভেবে পাচ্ছি না। এই চরম প্রাপ্তির জন্য আমার সৃষ্টি কর্তার কাছে শোকর জানাবার ভাষাও খুঁজে পাচ্ছি না। যে আমাকে প্রায় পাঁচ হাজার মাইল দূরের বাংলাদেশের ঢাকা জেলার রৌহা গ্রামের এক ছোট্ট কুড়ে ঘর থেকে তুলে এনে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছে। যা অসংখ্য কোটি কোটি দর্শকে দেখবে। জানি না কে কি ভাববে, কি ভাবে এর মূল্যায়ন করবে। তবে যে যাই ভাবুক বা যে ভাবেই এর মূল্যায়ন করুক এযে আমার এক চরম প্রাপ্তি তাতে কোন সন্দেহ নেই। এই বিশ্বে অনেক বড় বড় নামি দামি গুণী লেখক অনেক মূল্যবান লেখা লিখে গেছেন যা হৃদয়ে দোলা দেয়, অনন্ত কাল ধরে যে লেখা সারা বিশ্বকে আলোকিত করে রাখবে। জানিনা কয় জন লেখকের ভাগ্যে এই সৌভাগ্য এসেছে। ধন্যবাদ বিবিসির প্রযোজক ফেনোলাকে এবং তার সম্পূর্ণ টিমকে।]


যাই হোক, আবার ফিরে আসছি যেখানে ছিলাম। এই যে আমাদের বাংলাদেশিরা তার নিজের ভাবমূর্তি, সংস্কৃতি, নিজের খাদ্যের স্বাদ গন্ধ ভিন্ন জাতির মাঝে পরিচিত করে দিচ্ছে তাদেরকে এর সাথে একাত্ম করে দিচ্ছে যে প্রচেষ্টা দিয়ে সে অবশ্যই আনন্দের এবং গর্বের। একটা ব্যাপার যা উল্লেখ না করে পারছি না তা হচ্ছে এই প্রচেষ্টা যা আজ একটা বিশাল শিল্পে পরিণত হয়েছে তার যারা উদ্যোক্তা তারা কিন্তু কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত নয় এমনকি তাদের তেমন কোন সাধারণ শিক্ষাও নেই। কেবল মাত্র নিজের সংসার পরিচালনার তাগিদে নিজের অভিজ্ঞতার এবং আগ্রহের উপর ভিত্তি করে এর বিকাশ ঘটিয়েছে। যা আজ বিলাতের সরকারী পর্যায়ে স্বীকৃত এমনকি ব্যক্তিগত ভাবে সরকারি উচ্চ মহলের পদস্থ ব্যক্তিবর্গ অত্যন্ত আগ্রহের সাথে এই খাদ্য গ্রহণ করছেন।
কোন রকম শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ ছাড়াই যে ভাবে এই শিল্পের প্রসার ঘটেছে তাতে অবাক না হয়ে পারা যায় না। আমাদের দেশে বা এই দেশে যদি সরকার বা বেসরকারি পর্যায়ে এমন কোন প্রতিষ্ঠান থাকতো যেখানে এসব শিক্ষা দেয়া হয় তা হলে নিশ্চয়ই এর প্রতিফলন আরও ব্যাপক আরও বিস্তৃত হতে পারত। তবে, এখনো সে সুযোগ হারিয়ে যায় নি। এখনো সারা যুক্তরাজ্যে প্রায় বিশ হাজার রেস্টুরেন্ট এবং টেক এওয়ে রয়েছে যার অন্তত ৮০% আমাদের বাংলাদেশিদের মালিকানায় রয়েছে। কোনটা একক মালিকানায় আবার কোনটা একাধিক মালিকানায় রয়েছে। শুধু যুক্তরাজ্যেই নয় সারা ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা সহ অনেক জায়গায় এই ব্যবসা বিস্তারিত। তবে বিলাতে এর প্রসার উল্লেখযোগ্য।
এতে যে শুধু ভিন দেশিদের রসনা তৃপ্ত হচ্ছে তা নয় এর মাধ্যমে এই রেস্টুরেন্টের স্বত্বাধিকারীদের সম্পদের বিশাল ভাণ্ডার জমে উঠছে যার বেশ একটা মোটা অংশ আমাদের দেশে যাচ্ছে। নানা ভাবে যাচ্ছে। তারা নিজেরাও পাঠাচ্ছে আবার এখানে যারা কাজ করে তারাও বাংলাদেশি কাজেই তারা যে মজুরী পাচ্ছে তা থেকে সে নিজের জন্য কিছু রেখে প্রায় সবটাই পাঠিয়ে দিচ্ছে দেশে। এতে বাংলা দেশের ছাত্র যারা এখানে পড়তে আসে তাদের একটা আশ্রয় হয়েছে। রেস্টুরেন্টে কাজ করলে অন্তত থাকা খাওয়ার কোন চিন্তা নেই, অধিকন্তু সপ্তাহ শেষ কিছু স্টার্লিং পাউন্ড পাচ্ছে যা এদেশের জন্য নগণ্য হলেও আমাদের দেশের জন্য অনেক।

Monday 17 December 2012

নক্ষত্রের গোধূলি- ৬৫ [অধ্যায়-৭]

 নাসির আসাতে কথা বলার মানুষ পেয়েছেন, বাহাদুরের সাথেও কথা বলেছে গল্প করেছে তখনো ভালই সময় কেটেছে।  রাশেদ সাহেব বাচাল নন তবে কথা না বলে থাকতে পারেন না।  অফিসে যখন চাকরি করেছেন তখনো চারিপাশে অনেক লোক জন নিয়ে থাকতে হয়েছে। চাকরি ছেড়ে এসে যখন ব্যবসা করেছেন তখনো লোকজনের
সাথেই থাকতে হয়েছে বলে একা একা চুপ চাপ থাকতে পারেন না। মানুষের ভিতরের দুঃখ গুলি যখন বেড়ে উঠে সীমা ছাড়িয়ে যায়, বুকের ভিতর দুঃখের জন্য বরাদ্দ করা স্থান ভড়ে যায় তখন সেখানে আবার কোন নতুন দুঃখ কষ্ট যা আসে সেগুলি সহ আস্তে আস্তে চাপ বাধতে থাকে। চাপতে চাপতে যখন আর চাপার জায়গা পায় না, ভিতরে কোন ফাঁক পায় না তখন ক্রমে জমে উঠা পাহারের সমান সব দুঃখ কষ্ট গুলি এক সাথে দুর্বার গতিতে সব কিছু ভেঙ্গে চূড়ে ঘটে বিস্ফোরণ। কথা বলে বলে যদি কিছু চাপ কমানো যায়, কিছু ভার কমানো যায়, কিছু বোঝা কমানো যায়। তাই কথা বলতে পারা, কথা বলে বলে ওগুলিকে বের করে দেয়ার একটা উপায়। না হলে এতো চাপ সইতে না পেরে বাক রুদ্ধ হয়ে যায়। কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলে।  ঘুম থেকে উঠার পর থেকে ঘুমাতে যাবার আগ পর্যন্ত নাসির আর রাশেদ সাহেব এক সাথেই থাকেন, এক সাথে খাওয়া দাওয়া, কাজ কর্ম, লাইব্রেরিতে যাওয়া, বাইরে বেড়ানো সর্বক্ষণ এক সাথেই। নাসিরের অফের দিন ফরহাদ ভাইয়ের ওখানে গিয়েছিল, অনেকক্ষণ গল্প করে এসেছে। এসে বলল
আপনাকেও যেতে বলেছে, যাবেন দেখবেন ভাল লাগবে। আপনি সাথে থাকাতে আমারতো মনেই হয় না যে আমি ঢাকার বাইরে আছি।

আমিওতো তাই, নাসির তুমি বিশ্বাস করবে কিনা তুমি এখানে আসাতে আমি যে কত সুখে আছি তা তোমাকে বুঝাতে পারবোনা।
না রাশেদ ভা, আমি বুঝি, আপনাকে সেদিন যখন জব সেন্টারে দেখেছিলাম সেই চেহারা আর আজকের এই চেহাড়ার অনেক পার্থক্য, আমার কাছে ধরা পরেছে, আমি বুঝতে পারি।
বাহাদুরের জায়গায় এসেছে সবুজ।
সবুজও ঢাকার মানুষ। ফরহাদ সাহেবের সাথেও বেশ জমে উঠেছে। নাসিরের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে আসছে তাকে যেতে হবে। নাসির ফিরে যাবার দিন গুনছে। রাশেদ সাহেবকে পরামর্শ দেয়,
বেশি ভাববেন না, চিন্তা করবেন না ফরহাদ ভাই রয়েছে সময় কেটে যাবে। সব সময় হাসি খুশি থাকার চেষ্টা করবেন। দেখি, হয়তো আমি দুই তিন মাস পর আবার আসতে পারি। যদি আসা হয় তাহলে এখানেই আসব, আপনি যেখানে আছেন আপনার সাথেই থাকব।
বাহাদুর যাবার পর নাসিরের ফোনে ফোন করেছিল, কথা হয়েছে
না রাশেদ ভাই এখানে থাকা হবে না, পরিবেশ ভাল না, আপনি যা বলেছেন এখানে তাই। সমস্ত স্কটল্যান্ডেই মনে হয় একই অবস্থা, যাই হোক আমি অন্য জায়গায় কাজ খুঁজছি হলে চলে আসব। 
কি ভাবে কাজ খুঁজছেন?
কেন, জব সেন্টারে ফোন করে।

ও এভাবেও কাজ খোজা যায়?
হ্যাঁ অনেকেই এভাবেই খোজে।
আচ্ছা শিখে রাখলাম, বাহাদুর ভাই, আমি একটা ফোন নিয়েছি নম্বরটা লিখে নেন।
লিখতে হবেনা আপনি একটা কল দেন তাতেই নম্বর এসে যাবে আমি শেভ করে রাখব।
আচ্ছা দিচ্ছি। তবে ভাই যেখানেই যান যোগাযোগ রাখবেন আপনার তো ফ্রি ফোন।
হ্যাঁ আমিই ফোন করব এবং আপনার সাথে সব সময় যোগাযোগ থাকবে, চিন্তা করবেন না।
এদিকে আবার নাসিরের যাবার সময় হয়ে গেছে ও চলে যাবে।
যাক, ফরহাদ ভাই আছে না?
আপনি তার সাথে চলবেন উনি তো ভাল লোক।
হ্যাঁ তাই করতে হবে। 
আচ্ছা তাহলে আজ রাখি ভাই, নাসিরকে বলবেন।

ভারতীয় রেস্টুরেন্ট। হ্যাঁ ভারতীয়ই বললাম কারণ যখন এই রেস্টুরেন্টের গোঁড়া পত্তন হয়, যখন এই সব রেস্টুরেন্টে ভারতীয় নাবিক থেকে শুরু করে ভারতে জবর দখল করে শাসন থেকে শোষণ কাজে নিয়োজিত যে সব ইংরেজরা ভারতে গিয়ে মশলা যুক্ত খাবারের ঘ্রাণ ও স্বাদ পেয়ে নিজ দেশে ফিরে এসেও ওই খাবারের লোভে এই রেস্টুরেন্টে খেতে আসত তখন ওই দেশের নাম ছিল ভারত। তারা ওই দেশটাকে তিন ভাগ করে দিয়ে এলেও তাদের বর্তমান বংশধর অনেকেই তা জানে না। তারা এখনো ভারত বলেই জানে। তাদের এসব ইতিহাস জানার দরকার নেই, চেষ্টাও নেই বা ইচ্ছেও নেই। এদের দরকার সুগন্ধি মশলাদার সুস্বাদু খাবার। তা সে যে দেশেরই হোক তাতে কি এমন আসে যায়।
কবে কে এই রেস্টুরেন্ট চালু করেছে অনেক খুঁজেও আমি সে ইতিহাস সংগ্রহ করতে পারিনি। বিলাতে এই ব্যবসার সাথে জড়িত কয়েক জন প্রবীণ ব্যক্তির সাথে আলাপ করে কিছু জেনেছি, এর মধ্যে ইদ্রিস মিয়া, যিনি এসেছিলেন বর্তমান বাংলাদেশের সিলেটের মৌলভী বাজার থেকে ১৯৩৫ সালে, তার ভাতিজার থেকে পাওয়া কিছু সামান্য তথ্য এখানে দিচ্ছি। ১৯০০ সালের প্রথম দিকে ভারতীয় নাবিক বা অন্য কাজের জন্য যারা বিলাতে এসেছে তারা একটা ব্যাপার লক্ষ্য করেছে যে ইংরেজরা দেশ দখল করার কৌশল জানলেও রান্নার কাজে এরা খুবই দুর্বল। বিশেষ করে আমাদের নুন মশলার ঝাল খাবার ক্রমেই এদের কাছে জন প্রিয় হয়ে উঠছে। হবে না কেন, এরা যা খায় তাকে আর কিছু বলা গেলেও রান্না বলা যায় না। কোন রকম একটু সেদ্ধ করে লবণ, গোল মরিচের গুড়া আর একটু টমাটো সস ছিটিয়ে খেয়ে নিচ্ছে। এই মুখে যদি একটু মশলা ছিটিয়ে দেয়া যায় তাহলে যেন ধন্য হয়ে যায় এমন একটা ভাব।

লন্ডন, বৃস্টল, লিভারপুল, ডান্ডি এই সব বিভিন্ন বন্দরে কিছু ভারতীয় নাবিক আসা যাওয়া করতে করতে তাদের কেউ কেউ সমুদ্রের নোনা জলের মায়া কাটিয়ে এখানেই থেকে যায়। এরা যেহেতু দেশ থেকে বিয়ে শাদী করে বৌ নিয়ে আসেনি কাজেই এখানেইসাদা চামড়ার পাত্রী খুঁজে বিয়ে করে স্থায়ী ভাবে ঘর সংসার পেতে বসেছিল। নাবিকের পেশা ছেড়ে দিয়েছে এখন সংসার চলবে কি করে? ধীরে ধীরে নানান কল কারখানায়, কয়লার খনিতে কাজ জোগাড় করে নেয়। ইংরেজ বৌর সাথে সেদ্ধ বা আধা সেদ্ধ খেয়ে কোন মতে দিন যায়। কিন্তু ভারতীয়দের কি আর এই খাবারে মন ভরে? তাই যে সব জাহাজ ভারতে আসা যাওয়া করে তাদের দিয়ে ওখান থেকে মশলা পাতি আনিয়ে বাড়িতে মা চাচীকে যেভাবে রান্না করতে দেখেছে  সেই ভাবে চেষ্টা করে কিছুটা হলেও মনকে প্রবোধ দিতে পেরেছে। এদিকে বিশ্ব যুদ্ধ শুরু হলে অনেক কল কারখানা হুমকির মুখে পরে যায় তখন শুরু হল ছাটাই। তখন এই সব ভারতীয়দের যারা চাকুরী হারিয়েছে তারা ইতোমধ্যেই এদের রান্নার দুর্বলতা ধরে ফেলেছে। এখান থেকেই উৎপত্তি হল এক নতুন দিগন্তের উন্মেষ।
ভারতে যাতায়াত কারী জাহাজে করে এর মধ্যেই বেশ কিছু মশলা আসছে আর চিন্তা কি? খুলে ফেলল খাবার ঘর। যেখানে নাবিক সহ ওই যে ভারত ফেরত ইংরেজরা যারা এই সব মশলাদার খাবার খেয়ে অভ্যাস করে এসেছে তারা ওই স্বাদ, ওই গন্ধ ভুলতে পারেনি। ভুলবেই বা কি করে, পৃথিবীর সেরা স্বাদ এই ভারতীয় রান্না, এর কোন তুলনা নেই। সাধে আমাদের গুণীজনেরা বলেনি যে ‘ঘ্রানং অর্ধং ভোজনং” জিভে জল আসা ঘ্রাণেই অর্ধেক ভোজনের তৃপ্তি। জিহ্বাটা তীর্থের কাকার মত চেয়ে থাকে কখন এই খাবারের সংস্পর্শে আসবে।

বিলাতিদের ভারতীয় খাবারের আসক্তি এবং সাগরের মায়া কাটিয়ে এখানে যারা বসতি গড়েছে তাদের জীবীকার তাগিদ এই দুয়ে মিলে যাত্রা আরম্ভ হল ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টের। প্রথম দিকে নোঙ্গর ফেলে মাটির স্পর্শ নিতে আসা কিছু নাবিক আর ভারত ফেরত কিছু বিলাতি মিলে খেতে শুর করল এই রেস্টুরেন্টে। ভারতীয় স্বামী রান্না করে আর তার বিলেতি বৌ সামনে গ্রাহকদের সেই খাবার পরিবেশন করে। সাধারণ ভাত, সামুদ্রিক ম্যাকারেল, কড বা সার্ডিন মাছ, এদেশের নদীর হেরিং, ট্রাউট মাছ, মুরগী বা ভেড়ার মাংস যা আমরা সচরাচর খেয়ে থাকি তাই দিয়েই যাত্রা। পরবর্তীতে সময়ের সাথে মানুষের চাহিদা বাড়তে শুরু হল আর সেই সুযোগে এই সব রেস্টুরেন্টে যারা রান্না করে তাদের পারদর্শিতাও বাড়তে থাকে। ক্রমে ক্রমে ভারতের নানা এলাকা যেমন বাংলা, মাদ্রাজ, গুজরাট, কেরালা, পাঞ্জাব বিভিন্ন এলাকা থেকে রন্ধন পটীয়সীরা তাদের নানা রকম ভাণ্ডার এনে চমক দেখাতে আরম্ভ করল।

Sunday 16 December 2012

মৌণ সঙ্গীত-২৯

আজকের বিষয়ঃ ভাষমান শহর

Photobucket
(ছবি সুত্রঃ- ইন্টারনেট)
ভাসমান শহর! নাম শুনেছেন কখনো? নিশ্চয়ই নয়। ভাবতেও অবাক লাগছে তাই না? মনে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক ভাসমান শহর আবার কি? আসুন আজ এমন এক শহরের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি যার নাম Oasis of the Seas , না বন্ধুগণ এটা আসলে কোন শহর নয় এটা The Royal Caribbean Cruises Ltd. কোম্পানির মালিকানায় ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে চলাচল কারি বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বড় যাত্রী বাহি বিলাস বহুল একটা সামুদ্রিক জাহাজ।

Photobucket
Photobucket
Photobucket
উপরের ছবিতে দেখুন। আমাদের দেশের তো বটেই এমনকি আমেরিকার অনেক ছোট শহরের চেয়ে অনেক বেশি জন সংখ্যা এর ধারন ক্ষমতা, ৬৩০০ জন যাত্রী এবং ৭১ টি দেশের প্রায় ২৪০০ জন ক্রু মিলিয়ে মোট ৮৬০০ জন মানুষ এক সাথে এক সপ্তাহের সমুদ্র যাত্রা করতে পারে। টাইটানিকের নাম অবশ্যই শুনেছেন, অনেকেই হয়ত টাইটানিক সিনেমাও দেখেছেন। এটা ৫টা টাইটানিকের চেয়েও বড়। ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে এটা প্রথম সমুদ্র যাত্রা আরম্ভ করেছে।
স্বাভাবিক ভাবে মনে একটু কৌতুহল জাগতে পারে এই এত মানুষ নিয়ে কি করে সমুদ্রে চলাচল করে এবং তাদের নানা রকম প্রয়োজন কিভাবে মিটায়?
Photobucket
Photobucket
Photobucket
Photobucket
Photobucket
Photobucket
আসুন এবার এর নানা খুটিনাটি তথ্য দেখা যাকঃ-
১। প্রায় ৫টা A380 মডেলের এয়ার বাসের চেয়ে বড়, ভিন্ন ভাবে বলতে গেলে ৪টা ফুট বল মাঠের চেয়েও বড়। তাজা বাগান সহ ‘সেন্ট্রাল পার্ক’ নামে একটা পার্ক, ২৪ টা রেস্টুরেন্ট রয়েছে।
২। সপ্তাহের প্রতি শনিবারে ৭৫০টা প্যালেটে করে ৭০০টন নানাবিধ নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য, পানীয়, ফুল ও অন্যান্ন কঞ্জুমাবল মালামাল সংগ্রহ করতে হয়
৩। যাত্রী, ক্রু সবার জন্য ২০ গ্যালন সেরী এবং ৮০,০০০ বোতল বিয়ার প্রয়োজন হয়
৪। এক সপ্তাহের একটি ট্রিপের জন্য ভিতরের দিকে কেবিন ভাড়া ১৪৫৮ মার্কিন ডলার এবং দ্বিতল বিশিষ্ট সমুদ্রের দিকে মুখ করা সুইট ভাড়া ৩২০০ মার্কিন ডলার। আমাদের কাছে শুনে অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্যি যে আগামী দুই বত্সরের জন্য সব গুলি সুইট বুক করা হয়ে গেছে। অর্থাৎ আগামী দুই বত্সরের মধ্যে এর কোন সুইট পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
৫। দিন রাত ২৪ ঘন্টা পালা ক্রমে ক্রুরা নানা কাজ করছে, শুধু জানালার কাচে জমা নোনা জল পরিষ্কার করার জন্য ডজন খানিক ক্রু এবং ১৮টা রোবট কাজ করছে।
৬। এতে স্বয়ং সম্পূর্ণ জিমনেসিয়াম এবং কয়েকটা সুইমিং পুল রয়েছে।
৭। ২৪ ঘন্টা ধরে এর লন্ড্রিতে ৩৪ জন ক্রু কাজ করছে যাদেরকে দিনে প্রায় ২০,০০০ টেবিল ক্লথ, ন্যাপকিন, বিছানার চাদর, তোয়ালে ধোয়া, ইস্ত্রি করা এবং ভাজ করতে হয় তবে চাদর, ন্যাপকি্ন , টেবিল ক্লথ ইস্ত্রি করে বিশাল আকারের মেশিন কিন্তু তোয়ালে ও টেবিল ন্যাপকিন নানা ডিজাইন করে ভাজ করার কাজ হাতেই করতে হয়।
৮। ইন্টেন্সিভ কেয়ার ইউনিট সহ ৩ জন ডাক্তার আছে, ইন্টেন্সিভ কেয়ার ইউনিটে এক জন মানুষের যাবতীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। এমনকি হার্ট এটাক হলেও তার চিকিৎসার যাবতীয় আয়োজন আছে। প্রতি যাত্রায় অন্তত একটি এ ধরনের প্রয়োজন দেখা দেয়। তবে ক্ষেত্র বিশেষে জাহাজের ডাক্তার এবং ক্যাপটেন পরামর্শ করে জাহাজের দিক পরিবর্তন করে নিকটস্থ বন্দরে ভেড়াবার ক্ষমতা দেয়া আছে, মাঝে মাঝে রোগীকে হেলিকপ্টারে করে স্থানান্তর করার ব্যবস্থাও আছে।
জাহাজে যে ধরনের চিকিতসা দেয়া হয় তার মধ্যে খাদ্য সংক্রান্ত পেটের অসুখ, পিঠে ব্যাথা, গলায় ইনফ্যাকশন, সাইনুসাইটিসের চিকিৎসাই বেশি। প্রতি যাত্রায় ২০০০-৩০০০ meclizine ব্যবহার হয় যা কেবল মাত্র সী সিকনেসের যেমন জাহাজের রোলিং পিচিং এর কারনে বমি রোধকের জন্য।
৯। ২০০ ক্রু যাত্রীদের মনোরঞ্জনের জন্য নিয়োজিত থাকে যেমন, বাচ্চা দের নানা রকম অনুষ্ঠান, আলো ও মিউজিক নিয়ন্ত্রণ করা সহ নানা রকম বিনোদন মুলক আয়োজন করে।
১০। ৮০০০ এর অধিক মানুষের খাবার ব্যবস্থার জন্য ২৬টা গ্যালি বা রান্না ঘরে যাত্রীদের সকালে ঘুম ভাঙ্গার আগে থেকেই রান্নার কাজ চলতে থাকে।
১১। এই সব মালামাল জাহাজের মাতৃ ভুমি(port of registry)Fort Lauderdale শহরের Port Everglades বন্দর থেকে প্রতি শনি বার প্রায় সকাল ৬টা থেকে জাহাজে্র ডেকে এসে পৌছতে থাকে এবং সকাল সাড়ে সাতটা থেকে সেগুলি চাহিদার তালিকার সাথে মিলিয়ে বাছাই করে ভাঙ্গা প্যাকেট, পচা ইত্যাদি সরিয়ে ফেলে ফর্ক লিফটে করে ভান্ডারে নির্দিষ্ট জায়গা অনুযায়ী স্টোরিং হতে থাকে। যেমন, চা, কফি, দুধ, মাছ, মাংশ, চাউল, ময়দা, বিস্কুট, সব্জী, সস, কেচাপ, মাখন, পনীর, রুটি, নানা ধরনের মদ এবং পানীয় ইত্যাদি যেটা যেখানে রাখতে হয় সেখানে রাখা হয়।
১২। বিভিন্ন গ্যালিতে বিভিন্ন রকমের খাবার রান্না হয়, যেমন যে গ্যালিতে মাছ মাংশ রান্না হয় সেখানে সব্জী রান্না বা বেকিং হবে না আবার সকালের নাস্তা বা হালকা নাস্তার জন্য ভিন্ন গ্যালি এই ভাবে।
১৩। বিকেল ৫টার মধ্যে সমস্ত মালামাল লোডিং কাজ শেষে পরবর্তী যাত্রী ওঠানো আরম্ভ হয়। এদের নিয়ে আবার ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের দিকে যাত্রা শুরু করে।
Photobucket
Photobucket
Photobucket
Photobucket
Photobucket
Photobucket
১৪।
ক) এই ভাসমান শহরের গ্রস টনেজঃ ২,২৫,২৮২ টন
খ) প্রপেলারের সংখ্যা ৩টাঃ আকার দৈত্যাকার, এবং ৩৬০ ডিগ্রী ঘুরতে সক্ষম
গ) হারবারে ঢুকা এবং বের হবার সময় ব্যাতিত এটা স্বয়ংক্রিয় অটো পাইলটিং ব্যবস্থায় স্টিয়ারিং করে
ঘ) চার্টিং ব্যবস্থাঃ ইলেকট্রনিক
ঙ) ক্যাপটেনঃ Captain Thore Thorolvsen
চ) যাত্রী ডেকঃ ১৬টা
ছ) যাত্রী কক্ষঃ ২০৭৬টা
জ়) সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে উচ্চতাঃ ২১৩ফুট
ঝ) দৈর্ঘঃ ১১৮৭ ফুট/ প্রস্থঃ ২০৮ ফুট/ ড্রাফট (সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে তলায় কীল পর্যন্ত) ঃ ৩০ ফুট
ঞ) ক্যাপটেনের ভাষ্য: এটি বিশাল, প্রশস্ত এবং ভীষন ওজন।
(জেনে খুশী হবেন যে আমি নিজে এরকম কোন জাহাজে কাজ করিনি তবে দুই একটা জাহাজের ভিতরে যাবার সৌভাগ্য হয়েছে এবং আরো কিছু জাহাজ কাছে থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছি।)
সংগ্রহঃ ওয়েব সাইট।

নক্ষত্রের গোধূলি- ৬৪ [অধ্যায়-৭]

রাশেদ সাহেব যেদিন এসেছেন সেই ভাঙ্গা সপ্তাহের বেতন রবিবার রাতে দিয়েছে। সবাইকেই তাই দেয়। সোমবার রাতে শ্যামলকে কাজে দেখা যাচ্ছে না। আসিয়াদ ভাইকে বলি বলি ভাবছে এমন সময় সে নিজেই ওকে না দেখে জিজ্ঞেস করল
দাদা শ্যামল কোথায়? তাই বলতে চাইছি, আমি সকালে ঘুম থেকে
উঠেছি এগারোটায় তার পর থেকে ওকে দেখিনি। ও
র রুমে দেখেছেন?
না।

ওর সাথে কে থাকে?
ওর সাথে থাকে আবুল।
আবুল দেখেছে ওকে?
আবুলের তো আজকে অফ ও তো সকালেই কোথায় গেছে।
চলেনতো দেখি ওর রুমে।
রুমে ঢুকে দেখে শ্যামলের জিনিষ পত্র কিছু নেই।
তার মানে ব্যাটা পালিয়েছে! আচ্ছা বলেন তো দাদা পালাবার কি দরকার ছিল? বলে গেলে কি আমরা নিষেধ করতাম? যার যেখানে ভাল লাগে না তাকে কি জোড় করে রাখা যায়? এখন এই সময় মানুষ কোথায় পাই? দাদা আপনার পরিচিত কেও আছে?
রাশেদ সাহেবের নাসিরের কথা মনে হল, সেতো এই সুযোগের অপেক্ষায়ই আছে।
হ্যাঁ আছে কিন্তু সে নতুন মানুষ!
তা হোক, ইংলিশ জানে?
হ্যাঁ তা জানে। এইতো আমি যেদিন এখানে এসেছি তার পর দিন ও ডিডকোটে এক রেস্টুরেন্টে কাজে ঢুকেছে।
তা হলে উনাকে বলেন না এখানে আসতে! আসবে?
বলে দেখি।
এখনই ফোন করেন।
আচ্ছা।
পকেট থেকে নাসিরের ফোন নম্বর বের করে রেস্টূরেন্টের ফোন দিয়ে ডায়াল করল। ওপাশে রিং হচ্ছে।
হ্যালো!
নাসির, আমি রাশেদ বলছি!
সালামালেকুম রাশেদ ভাই, কেমন আছেন?
ভাল আছি, তুমি কেমন? ভাল রাশেদ ভাই!
আচ্ছা  শোন, তোমার জন্য একটা কাজ পেয়েছি আমার এখানে, এইতো আসিয়াদ ভাই মানে এখানকার মালিকের সাথে কথা বল নাও ধর।
কথার শেষে আসিয়াদ ভাই বলল আপনি আসেন আমি আপনাকে বাস স্ট্যান্ড থেকে নিয়ে আসব।
তাহলে আসছে?

হ্যাঁ তাইতো বলল আগামী সোমবারে আসবে।
ভালই হল আপনারা একত্রে থাকতে পারবেন।
তার পরের সোমবারেই নাসির এল, বাস স্ট্যান্ডে নেমে ফোন করলে আসিয়াদ ভাই তার গাড়ি নিয়ে বের হবার আগে বললেন চলেন দাদা আপনিও চলেন। দুজনে একত্রে গিয়ে নাসিরকে নিয়ে এলেন। শ্যামল যেখানে থাকত নাসিরকেও সেখানেই থাকার ব্যবস্থা দেখিয়ে দিলেন। নাসির আসার পর এখানে কাছেই একটা টেক এওয়ের মালিক ফরহাদ সাহেব আসল একদিন। পরিচয় হল এখানে প্রায় চৌদ্দ পনের বছর যাবত আছে, বাড়ি কুমিল্লা। ভদ্রলোক যাবার সময় বলল অফের দিন আসবেন আমার ওখানে, ও ইতো কাছে, লিটেন ট্রি পাবের পাশে যে রেডিও ক্যাবের অফিসটা তার সাথেই। এর পর আবার এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই বাহাদুর নোটিশ দিয়ে দিল, এখানে আর থাকবেনা। পরের সপ্তাহেই চলে যাবে, তার ধারনা অনুযায়ী তাকে বেতন কম দিচ্ছে। তবে এর মধ্যেই অনেক কিছু শিখিয়ে দিয়েছে রাশেদ সাহেবকে। এই অল্প সময়ের মধ্যে বেশ ভাল একটা হৃদ্যতা জমে উঠেছিল। চলে যাবে শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল। যাক, যার যেখানে খুশি সেখানে যাক। টাকা পয়সার ব্যাপার যেখানে জড়িত সেখানে সে আর কি করে নিষেধ করে? যে জন্য দেশ ছেড়ে আসা। যে যেখানে বেশি টাকা পাবে সে সেখানেই যাবে। মায়া বাড়িয়ে কি হবে?

নিজেকে তৈরি করে নেবার যার যার নিজস্ব পথ রয়েছে। নিজস্ব চিন্তা ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে মতামত দেয়ার কোন সুযোগ নেই। সে যেভাবে তার পথ বেছে নিতে চায় তাতে আমার কিছু করার নেই। তবে আমার মনে হয় আমার জন্য এই জায়গাই ভাল। ওর সাথে আমার তুলনা করা চলেনা। ও এখন যেখানে সেখানে দৌড়া দৌড়ী করতে পারে আমার পক্ষে তা সম্ভব না,  আমার চাই একটু স্থিতি।  টাকা কিছু কম হলেও মেনে নিতে হবে। এ কয় দিনে দেখলাম এত ছুটাছুটি করে কুলচ্ছে না। এখানে ভালই আছি, মালিকের সুনজর আছে,  সম্মান আছে,  শান্তি আছে,  আরাম আছে আর কি? এতেই চলে যাবে, যা দিচ্ছে এই যথেষ্ট,  বেশি দরকার নেই। নাসির এসেছে, ফরহাদ ভাইয়ের সাথে কথা বলে ভালই মনে হল, বেশ আলাপী। সময় কেটে যাবে। আর কি? এখানে এই ভাবে যত দিন থাকা যায়। রাতে খাবার পর সবাই চলে গেলে নাসিরের সাথে সুখ দুঃখের আলাপ আলোচনা গল্প গুজবে সময় কেটে যাচ্ছে। সেদিন সালিক ভাই লাইব্রেরিতে নিয়ে গিয়েছিলেন লাইব্রেরি কার্ড করে দেয়ার জন্য, এখানকার ঠিকানায় কার্ড হয়েছে। দুপুরে কাজের পরে পাশের লাইব্রেরিতে যেতে পারছি। বাড়িতে এবং অন্যান্য বন্ধুদের সাথে মেইলে যোগাযোগ হচ্ছে, দেশের পত্র পত্রিকা পড়তে পারছি। এর মধ্যে পাশের ব্যাঙ্ক থেকে ট্রাভেলার্স চেক ভাঙ্গিয়ে এনেছে, সাথের স্কটিশ নোট গুলি বদলিয়ে এনেছে। বাড়িতে টাকা পাঠাবার ব্যাপারে গত কাল আসিয়াদ ভাইয়ের সাথে আলাপ করেছিল। কোথা থেকে কি ভাবে টাকা পাঠানো যায়। উনি বললেন এখানে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন থেকে পাঠাতে পারেন যদিও চার্জ বেশি নেয় তবে এক দিনের মধ্যেই পেয়ে যাবে।
ভাই আপনি একটু আমার সাথে যাবেন?
কেন আমার যাবার কি দরকার আপনি ইতো পারেন!
যদি প্রশ্ন করে তুমি টুরিস্ট মানুষ এতো টাকা কি করে পাঠাচ্ছ? তাই ভাবছি আপনার নামে পাঠিয়ে দিবেন।

ও আচ্ছা ঠিক বলেছেন,  হ্যাঁ তা হতে পারে,  ঠিক আছে আমি যাব।
আজ তাকে সাথে নিয়ে যাবার কথা। দুপুরে কাজ শেষ করে মনে করিয়ে দিল
আসিয়াদ ভাই আমার সাথে যেতে হবে মনে আছে?
ওহ: আমিতো ভুলেই গিয়েছিলাম, চলেন।
তাকে সাথে নিয়ে গিয়ে টাকা যা ছিল সব পাঠিয়ে দিয়ে এলেন। এসে মনিকে ফোন করে জানিয়ে দিলেন আর কোড নম্বরটাও দিয়ে দিলেন, কি ভাবে কোথায়  গিয়ে টাকা উঠাতে হবে সবই বলে দিলেন। আমি মেইলে সব কিছু লিখে দিচ্ছি কোন ভুল যাতে না হয় মেইল দেখে নিও, আমি পরশু ফোন করে জানবো কি হল। ফোনের কথায় নির্ভর করতে না পেরে লাইব্রেরিতে গিয়ে মেইলে সব বিস্তারিত লিখে দিয়ে আসলেন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে, ছুটির দিনে নিজের রুম পরিষ্কার করে গুছিয়ে নিয়েছে। রুমে কেমন একটা গন্ধ ছিল তা দূর হয়েছে। জানালায় যে পর্দা ছিল মনে হয় রেস্টুরেন্ট ওপেন করার সময় ঝুলিয়েছিল তারপরে আর ধোয়া হয়নি সেই পর্দাও একদিন ধুয়ে নিলেন। কাপড় চোপর জিনিষ পত্র গুছিয়ে রেখেছেন এখন বেশ সুন্দর লাগছে। একদিন আসিয়াদ ভাই রুমে ঢুকে বললেন
আরে দাদা করেছেন কি এখন আপনার এই রুমই সবচেয়ে সুন্দর লাগছে। আপনি যখন এতো কষ্ট হরে এতো সুন্দর করেছেন এক কাজ করেন আমার বাসায় একটা নতুন কার্পেট আছে ওটা এনে বাসায় বিছানোর পর আমার ওয়াইফের রঙ পছন্দ হয়নি তাই উঠিয়ে রেখে দিয়েছিলাম। সেটা আমি নিয়ে আসব আপনি বিছিয়ে নিবেন আরও সুন্দর হবে।

তার পর দিন দুপুরে ওই কার্পেট এনে দিলেন।
কাল সোমবার, ভোঁরে বাহাদুরের চলে যাবার দিন। আজ রাতেই সবার কাছে বিদায় নিয়ে নিল। স্কটল্যান্ডের পূর্ব প্রান্তে আবারডিন যাচ্ছে। স্কটল্যান্ড যাচ্ছেন যান তবে আমি ওখানকার যে চেহারা দেখে এসেছি তাতো বলেছি কত ভয়ঙ্কর। যান দেখেন ওখানে কেমন। তবে যোগাযোগ যেন অবশ্যই থাকে।
কি যে বলেন রাশেদ ভাই আপনার কথা ভুলে যাবো এও কি হয়? এই অল্প কদিনে আমাদের যে সম্পর্ক হয়েছে আশা করি তা ভুলে যাবার নয়। আমার ফোন নম্বর তো দিয়ে গেলাম, নাসিরের ফোন নম্বর নিয়ে গেলাম। নাসির ভাই আপনি রাশেদ ভাইকে একটা ‘পে এজ ইউ গো’ ফোন নিয়ে দিয়েন তো।
হ্যাঁ আমি কয়েকবার বলেছি উনি আবার সব টাকা বাড়ি পাঠিয়ে দিলেন তাই নেয়া হয়নি, দেখি আমার কাছে টাকা আছে আমি কাল অথবা পরশুই একটা ফোন নিয়ে নিব।

ফোন নেয়া হলে আমাকে ফোন দিয়ে নম্বর জানিয়ে দিবেন পরে আমিই ফোন করবো। আর একটা কথা বলে যাই, আপনি আর কোথাও যাবার চেষ্টা করবেন না এখানেই থাকবেন, এরা আপনাকে যথেষ্ট সম্মান করে আমি লক্ষ করেছি। এটা কিন্তু একটা বিরাট ব্যাপার।
হ্যাঁ আমিও তাই ভেবেছি। বাহাদুর ভাই কাল সকালে যাবার সময় ডাকবেন কিছু খাবার দিয়ে দিব আপনিতো নিবেন না। বিশাল জার্নি কোথায় কি খাবেন, সাথে কিছু থাকলে ক্ষতি কি?
না আর কেন ডাকব? এখন ইতো বিদায় নিয়ে নিলাম শুধু শুধু ঘুমের ডিস্টার্ব!
না আপনি ডাকবেন। আর ওই যে বলেছি সকালে কখনো না খেয়ে থাকবেন না, মনে যেন থাকে। আপনি তো যাচ্ছেন এখন আপনার জায়গায় যে আসছে সে কেমন হবে কে জানে, আপনার সাথের দিন গুলি যদিও অল্প কয় দিন তবুও ভালই গেল। এখানে আসার পর থেকেই ডিউটির জন্য উপড়ে থেকে বাহাদুর আর রাশেদ সাহেব এক সাথেই নিচে নেমে আসতো। বাহাদুর কখনো সকালে নাস্তা করতো না তা লক্ষ করে রাশেদ সাহেব দুই জনের জন্য নাস্তা বানিয়ে বাহাদুরকে নিয়ে এক সাথে খেত আর বাহাদুর বলতো
আপনি আমার অভ্যাস খারাপ করে দিচ্ছেন।

খারাপ করছি না ভাল করছি?
সকালে কখনো খালি পেটে থাকবেন না।
নাসির আসার পরও সকালের নাস্তা রাশেদ সাহেবই বানাতেন। নাস্তা আর কি! কয়েক স্লাইস ব্রেড তাওয়ায় সেকে নেয়া আর কয়েকটা ডিম ওমলেট বা পোচ এইতো?
টোস্টার নেই। কর্মচারীদের জন্যে আবার টোস্টারের কি দরকার, তাই থাকেনা। তবে চা বানাত নাসির। জেনে গেছে রাশেদ ভাই একটু বেশি চা খায় তাই যখন তখন এক কাপ চা এনে সামনে দিত নেন রাশেদ ভাই মাথা ঠাণ্ডা করে নেন। ওরা তিন জনেই ঢাকার বলে অন্যরা হাসি তামাশা করত ‘ওই যে তিন ঢাকাইয়া আসতেছে সবাই পথ ছেড়ে দাও’। 

Saturday 15 December 2012

মৌণ সঙ্গীত-২৮

আজকের বিষয়ঃ প্রিয় মা ফাতেমা (রাঃ) এর বাড়ি 
মরা সারা দেশ বা পৃথিবী জুড়ে অনেক বিখ্যাত বা ধনী লোকদের অনেক সুন্দর সুন্দর বাড়ি দেখে অবাক হই। আজ আপনাদের কাছে এমন এক জনের বাড়ির ছবি নিয়ে এসেছি তা যারা নতুন দেখবেন তাদের কাছে ভাল লাগবে আশা করি। এই বাড়ির ছবি দেখে খুব সহজেই অনুমান করা যায় তার
সম্পর্কে আমরা বইতে যা পড়েছি তা কত খানি বাস্তব। তখনকার সময় আমাদের প্রিয় নবী কি ভাবে জীবন যাপন করেছেন। আসুন দেখা যাকঃ-
১। Photobucket
২। Photobucket
৩। Photobucket
৪। Photobucket
৫। Photobucket
৬। Photobucket
৭। Photobucket
৮। Photobucket
৯। Photobucket
১০। Photobucket
১১। Photobucket
১২। Photobucket

মৌণ সঙ্গীত-২৭

 আজকের বিষয়ঃ প্রকৃতি এবং শীল্প
 Photobucket
ইনকাদাতে জাপানের আওমরি প্রিফেকচার এর একটি গ্রামের নাম। মাত্র ৮৭০০ জন লোকের এই গ্রামটি একটি বিশেষ কারণে সাড়া পৃথিবীতে পরিচিতি লাভ করেছে। সেটি হলো ধান ক্ষেতের ছবি। না, কৃষকেরা এই ছবি তৈরীতে কোন রং ব্যবহার করে না। আসলে এই চিত্রকর্মের মূলে যে বিষয়টা আছে, তা হচ্ছে বিভিন্ন রংয়ের ধানের ব্যবহার।এই গ্রামটির কৃষকেরা ১৯৯৩ সাল থেকে তাদের জমিতে বিভিন্ন রংয়ের ধান লাগিয়ে ধান ক্ষেতটিকে একটি ছবির মতো করে তোলে।
কৃষকেরা সাধারণতঃ হালকা বেগুনী এবং হলুদ পাতার (কোদাইমাই ধান) ধানের সাথে লোকাল গাঢ় সবুজ রংয়ের (সুগারু রোমান ধান) যে ধান আছে তা ব্যবহার করে। যখন বিভিন্ন রংয়ের ধান গাছ গুলো বড় হয় তখন পুরো মাঠ জুড়ে ফুটে উঠে আর্শ্চয জনক এই ছবি। প্রতি বছরই ছবির বিষয় বস্তু পরিবর্তন করা হয়। আর এ ছবি দেখতে সাড়া পৃথিবী থেকে ছুটে আসে মানুষ। কোন এক বছর এসেছিলো প্রায় ১,৫০,০০০ জন। প্রতি বছর মে মাসের দিকে এই চিত্রর্কমটি শুরু হয়। আর ধান কাটা হয় সেপ্টেম্বর মাসে।
সেনগাকু পিরিয়ডের অশ্বারোহী যোদ্ধার ছবি…
Photobucket
ছবিটি কাছ থেকে দেখলে যেমন মনে হয়…
Photobucket
আরো কাছ থেকে…
Photobucket
নিচে ধান লাগান হচ্ছে।
Photobucket
ধীরে ধীরে ছবি ফুটে উঠছে।
Photobucket
Photobucket
২০০৭ সালে জাপানের বিখ্যাত দুইটি হকুসাই চিত্রের আদলে করা হয় এই ধানক্ষেতের চিত্রর্কমটি। সত্যিকারের হকুসাই ছবি দুইটি…
Photobucket
Photobucket
এতে চারটি ভিন্ন জাতের ধান ব্যবহার করা হয়। চলুন তাহলে দেখে আসি সেই বিখ্যাত কাজের কিছু দুর্লভ মুহুর্তঃ
Photobucket
২০০৭ সালের সেই ছবির ধান কাটার জন্য প্রায় ৯০০ জন স্বেচ্ছাসেবক যোগ দেয়।
Photobucket
Photobucket

এই ইনকাদাতে গ্রামের দেখাদেখি জাপানের অন্যান্য বেশ কিছু গ্রামেও এ বিষয়টি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। প্রচলন শুরু হয়েছে ইয়ামাগাতা, আইচি প্রিফেকচারে।
ইয়ামাগাতা-র আরেকটি ছবি…
Photobucket
কৃষকেরা মাঠে মোনালিসাকেও একেঁছিলো…
Photobucket
তবে সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে কৃষকেরা এই চিত্র কর্ম তৈরী করতে কোন আধুনিক টেকনোলজি ব্যবহার করেন না। চিত্রকর্মের এই বিষয়টি দিন দিন হয়ে উঠছে জাপানের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি।
এ বছর কিন্তু এখনো ধান কাটা হয়নি। তাই যদি দেখতে চান যেতে পারেন ইনকাদাতে গ্রামে। সবাই ভালো থাকবেন, সবার জন্য শুভেচ্ছা।
(তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট)