Sunday 16 December 2012

মৌণ সঙ্গীত-২৯

আজকের বিষয়ঃ ভাষমান শহর

Photobucket
(ছবি সুত্রঃ- ইন্টারনেট)
ভাসমান শহর! নাম শুনেছেন কখনো? নিশ্চয়ই নয়। ভাবতেও অবাক লাগছে তাই না? মনে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক ভাসমান শহর আবার কি? আসুন আজ এমন এক শহরের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি যার নাম Oasis of the Seas , না বন্ধুগণ এটা আসলে কোন শহর নয় এটা The Royal Caribbean Cruises Ltd. কোম্পানির মালিকানায় ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে চলাচল কারি বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বড় যাত্রী বাহি বিলাস বহুল একটা সামুদ্রিক জাহাজ।

Photobucket
Photobucket
Photobucket
উপরের ছবিতে দেখুন। আমাদের দেশের তো বটেই এমনকি আমেরিকার অনেক ছোট শহরের চেয়ে অনেক বেশি জন সংখ্যা এর ধারন ক্ষমতা, ৬৩০০ জন যাত্রী এবং ৭১ টি দেশের প্রায় ২৪০০ জন ক্রু মিলিয়ে মোট ৮৬০০ জন মানুষ এক সাথে এক সপ্তাহের সমুদ্র যাত্রা করতে পারে। টাইটানিকের নাম অবশ্যই শুনেছেন, অনেকেই হয়ত টাইটানিক সিনেমাও দেখেছেন। এটা ৫টা টাইটানিকের চেয়েও বড়। ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে এটা প্রথম সমুদ্র যাত্রা আরম্ভ করেছে।
স্বাভাবিক ভাবে মনে একটু কৌতুহল জাগতে পারে এই এত মানুষ নিয়ে কি করে সমুদ্রে চলাচল করে এবং তাদের নানা রকম প্রয়োজন কিভাবে মিটায়?
Photobucket
Photobucket
Photobucket
Photobucket
Photobucket
Photobucket
আসুন এবার এর নানা খুটিনাটি তথ্য দেখা যাকঃ-
১। প্রায় ৫টা A380 মডেলের এয়ার বাসের চেয়ে বড়, ভিন্ন ভাবে বলতে গেলে ৪টা ফুট বল মাঠের চেয়েও বড়। তাজা বাগান সহ ‘সেন্ট্রাল পার্ক’ নামে একটা পার্ক, ২৪ টা রেস্টুরেন্ট রয়েছে।
২। সপ্তাহের প্রতি শনিবারে ৭৫০টা প্যালেটে করে ৭০০টন নানাবিধ নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য, পানীয়, ফুল ও অন্যান্ন কঞ্জুমাবল মালামাল সংগ্রহ করতে হয়
৩। যাত্রী, ক্রু সবার জন্য ২০ গ্যালন সেরী এবং ৮০,০০০ বোতল বিয়ার প্রয়োজন হয়
৪। এক সপ্তাহের একটি ট্রিপের জন্য ভিতরের দিকে কেবিন ভাড়া ১৪৫৮ মার্কিন ডলার এবং দ্বিতল বিশিষ্ট সমুদ্রের দিকে মুখ করা সুইট ভাড়া ৩২০০ মার্কিন ডলার। আমাদের কাছে শুনে অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্যি যে আগামী দুই বত্সরের জন্য সব গুলি সুইট বুক করা হয়ে গেছে। অর্থাৎ আগামী দুই বত্সরের মধ্যে এর কোন সুইট পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
৫। দিন রাত ২৪ ঘন্টা পালা ক্রমে ক্রুরা নানা কাজ করছে, শুধু জানালার কাচে জমা নোনা জল পরিষ্কার করার জন্য ডজন খানিক ক্রু এবং ১৮টা রোবট কাজ করছে।
৬। এতে স্বয়ং সম্পূর্ণ জিমনেসিয়াম এবং কয়েকটা সুইমিং পুল রয়েছে।
৭। ২৪ ঘন্টা ধরে এর লন্ড্রিতে ৩৪ জন ক্রু কাজ করছে যাদেরকে দিনে প্রায় ২০,০০০ টেবিল ক্লথ, ন্যাপকিন, বিছানার চাদর, তোয়ালে ধোয়া, ইস্ত্রি করা এবং ভাজ করতে হয় তবে চাদর, ন্যাপকি্ন , টেবিল ক্লথ ইস্ত্রি করে বিশাল আকারের মেশিন কিন্তু তোয়ালে ও টেবিল ন্যাপকিন নানা ডিজাইন করে ভাজ করার কাজ হাতেই করতে হয়।
৮। ইন্টেন্সিভ কেয়ার ইউনিট সহ ৩ জন ডাক্তার আছে, ইন্টেন্সিভ কেয়ার ইউনিটে এক জন মানুষের যাবতীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। এমনকি হার্ট এটাক হলেও তার চিকিৎসার যাবতীয় আয়োজন আছে। প্রতি যাত্রায় অন্তত একটি এ ধরনের প্রয়োজন দেখা দেয়। তবে ক্ষেত্র বিশেষে জাহাজের ডাক্তার এবং ক্যাপটেন পরামর্শ করে জাহাজের দিক পরিবর্তন করে নিকটস্থ বন্দরে ভেড়াবার ক্ষমতা দেয়া আছে, মাঝে মাঝে রোগীকে হেলিকপ্টারে করে স্থানান্তর করার ব্যবস্থাও আছে।
জাহাজে যে ধরনের চিকিতসা দেয়া হয় তার মধ্যে খাদ্য সংক্রান্ত পেটের অসুখ, পিঠে ব্যাথা, গলায় ইনফ্যাকশন, সাইনুসাইটিসের চিকিৎসাই বেশি। প্রতি যাত্রায় ২০০০-৩০০০ meclizine ব্যবহার হয় যা কেবল মাত্র সী সিকনেসের যেমন জাহাজের রোলিং পিচিং এর কারনে বমি রোধকের জন্য।
৯। ২০০ ক্রু যাত্রীদের মনোরঞ্জনের জন্য নিয়োজিত থাকে যেমন, বাচ্চা দের নানা রকম অনুষ্ঠান, আলো ও মিউজিক নিয়ন্ত্রণ করা সহ নানা রকম বিনোদন মুলক আয়োজন করে।
১০। ৮০০০ এর অধিক মানুষের খাবার ব্যবস্থার জন্য ২৬টা গ্যালি বা রান্না ঘরে যাত্রীদের সকালে ঘুম ভাঙ্গার আগে থেকেই রান্নার কাজ চলতে থাকে।
১১। এই সব মালামাল জাহাজের মাতৃ ভুমি(port of registry)Fort Lauderdale শহরের Port Everglades বন্দর থেকে প্রতি শনি বার প্রায় সকাল ৬টা থেকে জাহাজে্র ডেকে এসে পৌছতে থাকে এবং সকাল সাড়ে সাতটা থেকে সেগুলি চাহিদার তালিকার সাথে মিলিয়ে বাছাই করে ভাঙ্গা প্যাকেট, পচা ইত্যাদি সরিয়ে ফেলে ফর্ক লিফটে করে ভান্ডারে নির্দিষ্ট জায়গা অনুযায়ী স্টোরিং হতে থাকে। যেমন, চা, কফি, দুধ, মাছ, মাংশ, চাউল, ময়দা, বিস্কুট, সব্জী, সস, কেচাপ, মাখন, পনীর, রুটি, নানা ধরনের মদ এবং পানীয় ইত্যাদি যেটা যেখানে রাখতে হয় সেখানে রাখা হয়।
১২। বিভিন্ন গ্যালিতে বিভিন্ন রকমের খাবার রান্না হয়, যেমন যে গ্যালিতে মাছ মাংশ রান্না হয় সেখানে সব্জী রান্না বা বেকিং হবে না আবার সকালের নাস্তা বা হালকা নাস্তার জন্য ভিন্ন গ্যালি এই ভাবে।
১৩। বিকেল ৫টার মধ্যে সমস্ত মালামাল লোডিং কাজ শেষে পরবর্তী যাত্রী ওঠানো আরম্ভ হয়। এদের নিয়ে আবার ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের দিকে যাত্রা শুরু করে।
Photobucket
Photobucket
Photobucket
Photobucket
Photobucket
Photobucket
১৪।
ক) এই ভাসমান শহরের গ্রস টনেজঃ ২,২৫,২৮২ টন
খ) প্রপেলারের সংখ্যা ৩টাঃ আকার দৈত্যাকার, এবং ৩৬০ ডিগ্রী ঘুরতে সক্ষম
গ) হারবারে ঢুকা এবং বের হবার সময় ব্যাতিত এটা স্বয়ংক্রিয় অটো পাইলটিং ব্যবস্থায় স্টিয়ারিং করে
ঘ) চার্টিং ব্যবস্থাঃ ইলেকট্রনিক
ঙ) ক্যাপটেনঃ Captain Thore Thorolvsen
চ) যাত্রী ডেকঃ ১৬টা
ছ) যাত্রী কক্ষঃ ২০৭৬টা
জ়) সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে উচ্চতাঃ ২১৩ফুট
ঝ) দৈর্ঘঃ ১১৮৭ ফুট/ প্রস্থঃ ২০৮ ফুট/ ড্রাফট (সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে তলায় কীল পর্যন্ত) ঃ ৩০ ফুট
ঞ) ক্যাপটেনের ভাষ্য: এটি বিশাল, প্রশস্ত এবং ভীষন ওজন।
(জেনে খুশী হবেন যে আমি নিজে এরকম কোন জাহাজে কাজ করিনি তবে দুই একটা জাহাজের ভিতরে যাবার সৌভাগ্য হয়েছে এবং আরো কিছু জাহাজ কাছে থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছি।)
সংগ্রহঃ ওয়েব সাইট।

No comments:

Post a Comment

Thank you very much for your comments.