Thursday 20 December 2012

নক্ষত্রের গোধূলি- ৬৮ [অধ্যায়-৭]

মদ তো এদের সাধারণ ব্যাপার এ নিয়ে কেও মাথা ঘামায় না বা এটা মাথা ঘামাবার বিষয়ও না। ছেলের মেয়ে বন্ধু বা স্ত্রীর হাতে পান পাত্র তুলে দিচ্ছে বা জিজ্ঞেস করছে তুমি কি খাবে? বিয়ের রীতি এদের প্রায় উঠেই গেছে, মেয়েবন্ধু বা ছেলে বন্ধু হিসেবেই জীবন কাটাচ্ছে এবং এদের সমাজ সেটা মেনেও নিয়েছে। এরা ভাবতেই
পারে না যে একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ সে মহিলাই হোক বা পুরুষই হোক মদ না খেয়ে বাঁচে কি করে। বর্তমান প্রজন্ম হিরোইন গাজা সহ নানা ধরনের নেশায় আসক্ত হয়ে গেছে। এমনও আছে যে অনেক ছেলে বা মেয়েকে স্কুল থেকে বের করে দিয়েছে। তাদের আর পড়া লেখা করার দরকার নেই। এরা স্কুলে থাকলে অন্যদের ক্ষতি করবে। এতে এদের কোন অসুবিধা নেই, আঠার বছর পর্যন্ত বাবা মার সাথে থাকবে তারপর সরকারী বেকার ভাতা পাবে আর তার সাথে চুরি চামারি করে দিন কাটাবে। চুরি করতে গিয়ে ধরা পরে অনেকেই জেলে আছে তবে আঠার বছরের আগে কোন অপরাধ করলে তার বিচার নেই বলে যার যা ইচ্ছা করে যাচ্ছে।

এদের চুরি করার কৌশল দেখে অবাক হতে হয়। এদেশে সুপার স্টোর গুলি সহ প্রায় সব দোকানেই বের হবার পথে সেন্সর থাকে, দোকানের প্রতিটি মালামালের প্যাকেটের গায়ে যে বার কোড থাকে তা দাম দেবার সময় স্ক্যান করলেই ডিকোড হয়ে যায়। যখন কেও দাম না দিয়ে ওই মাল নিয়ে গেট দিয়ে বের হবে গেটের সেন্সর সেই ডিকোড না করা মালের বার কোড পড়ে নিয়েই এলার্ম বাজানো শুরু করে দিবে, কাজেই সহজ পথে চুরি করার পথ নেই। ওদিকে আবার সমস্ত দোকান সিসি ক্যেমেরার আওতায় রয়েছে, কোন পাশে কোন রো তে কে কি করছে সব মনিটরিং করে। এই ক্যেমেরার চোখ ফাঁকি দিয়েও এরা ওই মালের প্যাকেটে যেখানে বার কোড থাকে ঠিক সেই জায়গাটুক কিছু দিয়ে ছিড়ে ফেলে পকেটে ভরে বের হয়ে যায়। আঠার বছর বয়সের নিচে কারো কাছে মদ জাতিয় পানিয় বা তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি করা নিষেধ। তাই বলে কি আঠার বছর হয় নি এমন কেও মদ পান বা ধুম পান করতে পারবে না? তা না, ওই রকম কোন কৌশল করে ঠিকই ব্যবস্থা করে নিচ্ছে। সাধারণত এই সব দ্রব্য যে কাউন্টারে বিক্রি হয় সেখানে লেখাই থাকে যে “আপনার চেহারা দেখে যদি আপনার বয়স আঠার বছরের কম মনে হয় তাহলে আপনার পরিচয় পত্র দেখতে চাইলে অপরাধ নেবেন না”। এমনকি সুপার স্টোর গুলিতে যারা কম কিছু কিনেছে তাদের লম্বা কিউতে না দাঁড়িয়ে সেলফ পে বা কুইক জোনে মেশিন দিয়ে খরিদ্দার নিজেই মাল স্ক্যান করে নগদ বা কার্ডে দাম পরিশোধ করে স্লিপ নিয়ে চলে যাচ্ছে। এই মেশিন গুলি অত্যন্ত শিক্ষিত, এগুলি সঠিক দামের হিসেব করতে পারে সেই সাথে ক্রয় মূল্যের চেয়ে যে কোন বড় মাপের নোট দিলে সঠিক অংক ফেরত দিতেও পারে। এখানে এসেও যদি কেও মদের বোতল স্ক্যান করে সঙ্গে সঙ্গে এই মেশিনই খরিদ্দারের বয়স প্রমাণের জন্য যে কোন আইডি কার্ড যেমন ড্রাইভিং লাইসেন্স বা পাসপোর্ট স্ক্যান করতে বলবে নতুবা ওই স্টোরের কোন কর্মচারী এসে খরিদ্দারের চেহারা দেখে নিশ্চিত হয়ে তার কার্ড স্ক্যান করে ঠিক করে না দেয়া পর্যন্ত মেশিন বলতেই থাকবে ‘অথেনটিকেশন রিকয়ার্ড’, এই মেশিন আবার কথাও বলতে পারে।

ইদানীং অনেক জায়গায় এমনকি বাসের গায়েও বিজ্ঞাপন দেখা যাচ্ছে যে “স্বল্প মাত্রায় পান করুন সুস্থ ভাবে বেশি দিন বাঁচুন” “কেও আপনার কাছে ভিক্ষা বা কোন পয়সা চাইলে তা দিবেন না” তা হলে সে ওই পয়সা দিয়ে নেশা করে মারা গেলে কি আপনি তার জন্য নিজেকে ক্ষমা করতে পারবেন? এই ধরনের বিজ্ঞাপন।
এদের বাবা মা নিজের সন্তান যেদিন আঠার বছর পেরিয়ে উনিশে পা দেয় সেদিন তারা নিজেরাই সন্তানের হাতে পানপাত্র তুলে দেয় এমনকি এই দিন উদযাপনের জন্য কোন রেস্টুরেন্টে পার্টিও দেয়। এমনও দেখা যায় যে কোলের বাচ্চার মুখে নিজের বিয়ারের গ্লাস ধরে তাকে খাওয়াচ্ছে।(চলবে)
এই সব খাবার রান্না করা অত্যন্ত সাদামাটা কৌশল। আমাদের দেশে পোলাও রান্না যে ভাবে হয় এখানে সে ভাবে রান্না করার তেমন কোন প্রয়োজন নেই। খুব সাধারণ ভাবে চালের সাথে ডালডা, তেজপাতা এবং গরম মশলা দিয়ে পানি মেপে এক বারে চুলায় বসিয়ে দিচ্ছে। চাউল কষান বা সাথে বিশেষ কোন স্বাদের ভিন্নতার কোন ঝামেলা নেই। বিরিয়ানি বলতে এখানে যা বোঝায় তা যদি আমাদের দেশে কাওকে দেয়া হয় তাহলে সে লাঠি নিয়ে আসবে এ ব্যাপারে নিশ্চিত। আগে থেকে হলুদ, আদা রসুন দিয়ে সেদ্ধ করে রাখা মুরগী বা ভেড়ার মাংসের সাথে কিছু হলুদ মরিচের ছোঁয়া দিয়ে পোলাওর সাথে একটু নেড়েচেড়ে মিশিয়ে চিকেন বিরিয়ানি হয়ে গেল। কাস্টমারেরা এই খেয়েই তৃপ্ত।


সন্ধ্যা থেকে মদ খেয়ে এসে আড়ষ্ট জিহ্বায় অনেকেই ভিন্দালু পছন্দ করে তবে মহিলারা সাধারণত এই মাত্রার ঝাল খেতে পারে না। স্প্যানিশ বড় পিয়াজ একটু বড় চৌকো সাইজ করে কেটে তার সাথে কিছু ক্যেপসিকাম মিশিয়ে চিকেন রান্না হলে তার নাম জালফ্রেজি। আবার একই জিনিশ ভেড়ার মাংস দিয়ে হলে তার নাম ল্যাম্ব সাতকানিয়া। এই রকম বিভিন্ন রেস্টুরেন্টের মেনুতে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য রয়েছে। কোথাও সিলেটি চিকেন, কোথাও চিকেন কাফরিল, কচি মুর্গ, চিকেন বনানী, চিকেন চামেলি, চিকেন পাতিয়া, চিকেন মুলি যার যা ইচ্ছা একটা মন গড়া নাম দিলেই হয়ে গেল। রান্নার পরে উপরে দুই টুকরা টমাটো দিলে এক নাম আবার চার টুকরা টমাটো রান্নার সাথে দিলে আর এক নাম। একটা কাঁচা মরিচ ফালি করে কেটে উপরে দিয়ে দিলে এক নাম মরিচ না দিলে আর এক নাম। স্বাদের তেমন কোন তারতম্য নেই। কোথাও দেখেছি চিকেন জামদানি, এটা একটা ওভাল ডিশে দিয়ে পাশে কিছু টমাটো শসা জামদানি শারির মত খাঁজ কাঁটা নক্সা করে কেটে সাজিয়ে দিচ্ছে বলে এই নাম। এর পর রয়েছে কড়াই ডিশ। ছোট  ছোট কড়াই চুলায় গরম করে তাতে সামান্য একটু তেল আর রসুন ছেড়ে দিয়ে ফ্রাই প্যান থেকে কারি ঢেলে দিতেই ছর ছর করে এক শব্দ হয় আর ধোয়া উঠে, সেই কড়াই আবার কাঠের ছোট ট্রেতে করে এনে টেবিলে নামিয়ে দেয়।

কেউ কেউ আবার এর উপরে একটু ব্র্যান্ডি ছিটিয়ে তাতে আগুন জ্বেলে দেয় তাতে ব্র্যান্ডির এলকোহল জ্বলে আগুনের শিখা জ্বলতে থাকে যা দেখতে খারাপ দেখায় না। ইংরেজ খরিদ্দার এতেই মহা খুশি। আবার বালটি ডিশ আছে এগুলি ছোট ছোট তামার বালতিতে করে পরিবেশন করে নানা রকম চমকের সৃষ্টি করে। তবে কিছু কিছু মেনু আছে যেগুলি প্রায় সব জায়গায়ই সমান। যেমন, কারী, দোপিয়াজা, জালফ্রেজি, রগন, পাতিয়া, ধানশাক, মাদ্রাজ, ভিন্দালু, কোর্মা, পাসান্দা, টিক্কা মাসালা, তন্দুরি, শাষলিক, কাশ্মীরি ইত্যাদি। নানা রকম পুর দেয়া নান রুটি, বাদাম কিসমিসের সাথে চিনি মিশিয়ে রান্না করা হালুয়ার মত পুর দেয়া যে নান রুটি সেটা পেশোয়ারি নান, রান্না করা কিমার পুর দিলে সেটা কিমা নান, রসুন দিলে গারলিক নান, কাচা মরিচ দিলে তার নাম কুলচা নান। সকলেই নিজ নিজ একেকটা ঘরানা তৈরি করে নিয়েছে। আমাদের দেশের সাধারণ নামের সাথে এর কোন মিল নেই এমনকি রান্নার মশলা বা ধরনের মধ্যেও কোন মিল নেই। সাধারণত মালিক নিজেই সেফ এর কাজ করে। কোথাও যদি বেতন ভুক্ত সেফ থাকে তাহলে মালিক এসে গ্র্যাভি বা মাংস সেদ্ধ করে রাখার সময় মশলা মিশিয়ে দিয়ে যায়।

No comments:

Post a Comment

Thank you very much for your comments.