৪।
ফাতেমার নির্দেশ অনুযায়ী মেইন এক্সিটের বাইরে দাঁড়িয়ে সোলায়মান শুধু ঘড়ি দেখছে। প্রায় চল্লিশ মিনিট হয়ে গেল এখনও ফাতেমা আসছে না! তাহলে কি ও আমাকে ফাকি দিল? না, ওর চেহারা মুখ
বলে না যে এই মেয়ে কেউকে ফাঁকি দিতে জানে। গোলাপের মত নিষ্পাপ যার মুখ সে কি করে একজনকে ফাঁকি দিবে? নানা কিছু ভাবছে সোলায়মান। এমন সময় হটাত দেখল মেইন এন্ট্রান্সের পাশে ফুলের ব্লকের পাশ দিয়ে ফাতেমা ধীর পায়ে এগিয়ে আসছে। টেসকোর পোষাক চেঞ্জ করেছে বলে ও চিনতে ভুল করেছে।
আসতে বললাম আর ও ঠিক আসছে এখন কি বলব, কোথা থেকে কি ভাবে শুরু করব এই সব ভেবে কিছুক্ষণের জন্য একটু হতবিহবল হয়ে গেল। মুহূর্তের মধ্যে নিজেকে সামলে নিয়ে রেডি হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। হাতের ফুলটার অস্তিত্ব দেখে যাচাই করে নিলো, ফুলটা ঠিক আছে। ফাতেমা বেড় হয়ে এদিক ওদিক দেখেই সোলায়মানকে দেখতে পেল। চার চোখের মিলনের সাথে আবার এক টুকরো মিষ্টি হাসি বিনিময়।
কি ব্যাপার, কি বলবে বল
একটু ইতস্তত করে পিছনে লুকিয়ে রাখা ডান হাতে ধরা লাল গোলাপটা সামনে এনে ফাতেমার দিকে বাড়িয়ে বলল
I love you Fatema! তুমি কি কোথাও এনগেজড?
ফাতেমা একটু থতমত খেয়ে আস্তে করে গোলাপটা হাতে নিয়ে হাতের গোলাপের পাপড়ির মত ঠোঁট গুলি থির থির করে কাঁপা কণ্ঠে বলল-
সম্ভবত আমি তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম!
এইতো শুরু হল সোলায়মান আর ফাতেমার এক নতুন অধ্যায়। দেখতে দেখতে প্রায় ছয় মাস পেরিয়ে গেল কিন্তু কাদের কিছুই জানতে পারল না।
ওরা ভাবে আর কতদিন? লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা করা, সারাটা দিন ছটফট করা, যতক্ষণ কথা হয় দেখা হয় ততক্ষণ একটা অজানা আতংকের মধ্যে থাকতে হয়। ফাতেমার রক্ষণশীল পরিবারের কারো চোখে পরে গেলে সর্বনাশের চূড়ান্ত কিছু ঘটে যেতে বিন্দুমাত্র দেরি হবে না। কতদিন এ ভাবে চলে? অবুঝ দুটি মনে কেউ কোন কিনারা পাচ্ছে না, কোন উপায় দেখতে পাচ্ছে না। ফাতেমা একবার না, দুইবার না অনেকবার বলেছে আমাদের যে পরিবার তাতে তাদের কেউ এই সম্পর্ক মেনে নিবে না! ফাতেমা সোলায়মনকে তার বাবা মা এবং দাদার বংশের কৌলিণ্য সম্পর্কে ভাল করে জানিয়ে বলেছে এরা নিজ বংশের কৌলিণ্য সম্পর্কে অতিরিক্ত খেয়ালী। কি জানি কি হয় আমার কিন্তু ভীষন ভয় করছে।
ওদের লুকিয়ে চুরিয়ে কথা হয়। ফাতেমার ডিউটি শেষ হলে পোষাক বদলে টেসকোর কাস্টমারের বসার জন্য যে বেঞ্চ আছে ওখানে বসে বা আড়ালে কোথাও দাঁড়িয়ে। তাতেও ভয়, যদি কেউ দেখে ফেলে! প্রেম! প্রেম কি আর ভূগোল মানে? সে কি আর অর্থ সম্পদ চায়? মান মর্যাদা বুঝে? সে তো হৃদয়ের ভিখারি!
ফাতেমা
শুনছি বল
চল আমরা লন্ডন ছেড়ে কোথাও চলে যাই!
কোথায় যাব? এটা ব্রিটেন, আমার নিখোঁজ সংবাদ যখন আমার পরিবার থেকে পুলিশকে জানান হবে তার দুই ঘণ্টার মধ্যেই পুলিশ আমাদের খুঁজে বের করে ফেলবে। জান এরা কি ভয়ংকর পুলিশ? তার চেয়ে তোমার বন্ধু কাদেরকে বলে দেখ সে যদি আমাদের কোন সাহায্যের পথ বের করে দিতে পারে!
তুমি এদেশের মেয়ে, তুমিই কোন পথ খুঁজে পাচ্ছ না, সে কি করবে? শুধু শুধু জানাজানি হবে! আচ্ছা বলত তোমাদের পরিবারে কে তোমাকে সবচেয়ে বেশে স্নেহ করে?
কেন?
না তাকে যদি বলে দেখতে পার এবং সে যদি কিছু করতে পারে!
না না সোলায়মান তা হবার নয়!
তাহলে?
তাহলে দেখি আরও কিছুদিন যাক, ভেবে দেখি।
ঠিক আছে তাই দেখ।
৫।
ফাতেমা অনেক ভেবে চিন্তে একদিন রাতে তার দুলাভাই দোকান থেকে ফিরে এলে তাদের এই কথা জানিয়ে একটা উপায় বের করে দেয়ার জন্য অনেক অনুনয় বিনয় জানাল। সব কিছু খুব মনোযোগের সাথে শুনে দুলাভাই তাকে উপায় বের করে দেয়ার জন্য আশ্বস্ত করে বলল তুমি কোন চিন্তা করনা আমি এর একটা ব্যবস্থা করব। শুনে আনন্দের আতিশয্যে সাথে সাথে সোলায়মানকে মোবাইলে সুসংবাদটা জানাল। ফাতেমা বিশ্বাস করতে পারছিল না যে দুলাভাই এত সহজে তাকে সাহায্য করতে রাজী হবে। সে আজ একটা অসাধ্য সাধন করেছে মনে করে মনে মনে খুশীর জোয়ারে মুক্ত পায়রার মত নীল আকাশে উড়ছিল। সারা রাতে তার চোখে ঘুম নেই। শুধু মনে হচ্ছিল এই বুঝি সে যেন এলো মোর দারে।
বেথনেল গ্রিন, গ্লোব রোড এবং ইস্ট হেমে দুটি নবীন এবং অবুঝ মন সময়ের অপেক্ষায় প্রতিটি মুহূর্ত গুনছে কখন সোনা ঝরা শুভ লগ্ন তাদের দুয়ারে উকি দিবে।
ব্রিটেনের অধিকাংশ সাধারণ বাড়ির মত ডুপ্লেক্স টাইপের এই বাড়ির এক তলার ফাতেমার রুমে সারা রাত জাগার ক্লান্তি নিয়ে ভোরের একটু আগে যখন দুটি চোখ ক্ষণিকের জন্য একটু এক হয়েছে ঠিক তেমনি সময় তার ঘরের দরজা খোলা এবং মানুষের মনের ষষ্ট ইন্দ্রিয়ের বিপদের একটা ইঙ্গিত পেয়ে ফাতেমার তন্দ্রা ভেঙ্গে দেখে তার মা দুটি হাত ধরে রয়েছে, দুলাভাই ধরে রেখেছে দুই পা। বাবাকে দেখা যাচ্ছে না কিন্তু তার কথার শব্দ পাচ্ছে পিছনে। পাশে মাংস বানাবার চাপাটি হাতে দাঁড়িয়ে রয়েছে ভাই, এক মাত্র ভাই যার কাছে সেই ছোট বেলা থেকে ছিল কত আবদার কত স্মৃতি জড়ান এই ভাইয়ের সাথে, সেই ভাই আজ তার গলায় চাপাটি ধরে রয়েছে! কিছুতেই বিশ্বাস হতে চাইছে না। মা কি করে তার হাত দুটি এমন চেপে ধরে রেখেছে যে এক চুল পর্যন্ত নারার উপায় নেই। যে মা তাকে দশটি মাস পেটে ধরেছে আবার কত কি করে এত বড় করে তুলেছে সেই মা কি করে এ ভাবে তার হাত দুটি ধরে রেখেছে! বাবা কোথায়? মাথা ধরে রেখেছে যে সেই কি তাহলে বাবা? সব সম্পর্ক কি তাহলে এই দুলাভাইকে কাল রাতে বলার পর থেকেই শেষ হয়ে গেল? এই বংশের আভিজাত্য কি রক্তের সম্পর্কের চেয়েও কঠিন? ঘটনার আকস্মিকতায় ভয়ে আড়ষ্ঠ হয়ে স্তব্ধ হয়ে গেল, কত কথা বলছে, প্রাণের কত আকুতি, বেঁচে থাকার কত অনুনয় কিন্তু গলা দিয়ে কোন শব্দ বের হচ্ছে না। পিছন থেকে বাবা ধমকে বলে উঠল কি দেখছ? ছুড়ি চালাও। সাথে সাথে দেখল ভাই নিচু হয়ে চাপাটিটা তার গলা বরাবর এনেছে আর অমনিই ফাতেমার গলা খুলে গেল “মা তুমিও আমাকে বাঁচতে দিলে না?” সাথে সাথেই একটা অস্পষ্ট গোঙ্গানির শব্দের সাথে সব শেষ।
৬।
গত রাতেই ফাতেমা এত আনন্দ নিয়ে কথা বলল আর আজ সারাটা দিনেও তার কোন একটা কল নেই কেন? কোন কল ধরছেও না, কি ব্যাপার? সন্ধ্যা পর্যন্ত অন্তত ১০০ বার কল করেও যখন কোন সারা পেল না। সারা রাত একটুও চোখের পাতা এক করতে পারেনি। সকালে আবার ফোন করে কোন সারা না পেয়ে নিরুপায় হয়ে পুলিশে জানাল। আমার বন্ধুর কোন খোঁজ পাচ্ছি না তাকে কল করেও ফোন ধরছে না। তোমরা কি আমাকে একটু সাহায্য করবে?
ঠিকানা নিয়ে সেই সকালেই পুলিশ আবুল বখতের ইস্ট হেমের বাড়িতে ডগ স্কোয়াড সহ হাজির। বারিতে কেবল হামিদ বখত ছাড়া আর কেউ নেই। স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ কুকুর তার বসের হাত থেকে ছুটে যেখানে ফাতেমার দেহ লুকিয়ে চাপা দিয়ে রেখেছে সেই কার্পেটের কাছে শুঁকছে আর ঘেউ ঘেউ করছে।
কি ব্যাপার? রক্তের তাজা গন্ধ কেন এই ঘরে?
কার্পেট সরিয়ে দেখা গেল মেঝের আলগা কাঠ। কাঠ সরিয়ে মাটি একটু সরাতেই দেখা গেল কাল রক্তে মাখান ফাতেমার নিথর দেহ কুণ্ডলী করে কোন রকম চাপা দিয়ে ঢেকে রেখেছে।
হামিদ বখত পালিয়ে যাবার পথ খুঁজছিল কিন্তু এই ব্রিটেনের রয়াল পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে তাই কি সম্ভব?
তোমার মা বাবা কোথায়?
ওরা কাল রাতে পাকিস্তান চলে গেছে।
দুলাভাই?
সে লিভারপুলে গেছে আজ সকালে।
কিসে গেছে কার নিয়ে নাকি ট্রেনে?
ট্রেনে।
পুলিশ হাতের ঘড়ি দেখে বলল এখনও লন্ডন ছেড়ে বেশিদূর যেতে পারেনি।
সঙ্গে সঙ্গে লন্ডন এবং লিভারপুলের মাঝের স্টেশন রেডিং এ ফোন করে জানিয়ে দিল লন্ডন থেকে যত ট্রেন রেডিং স্টেশনে থামবে তার সব চেক করে পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত আলি আসগর নামের যে লোক পাবে তাকে এরেস্ট করে লন্ডনে পাঠিয়ে দিন। সে একটা খুন করে পালিয়ে যাচ্ছে।
ধন্যবাদ। আবার দেখা হবে ভিন্ন কোন আয়োজনে।
ফাতেমার নির্দেশ অনুযায়ী মেইন এক্সিটের বাইরে দাঁড়িয়ে সোলায়মান শুধু ঘড়ি দেখছে। প্রায় চল্লিশ মিনিট হয়ে গেল এখনও ফাতেমা আসছে না! তাহলে কি ও আমাকে ফাকি দিল? না, ওর চেহারা মুখ
বলে না যে এই মেয়ে কেউকে ফাঁকি দিতে জানে। গোলাপের মত নিষ্পাপ যার মুখ সে কি করে একজনকে ফাঁকি দিবে? নানা কিছু ভাবছে সোলায়মান। এমন সময় হটাত দেখল মেইন এন্ট্রান্সের পাশে ফুলের ব্লকের পাশ দিয়ে ফাতেমা ধীর পায়ে এগিয়ে আসছে। টেসকোর পোষাক চেঞ্জ করেছে বলে ও চিনতে ভুল করেছে।
আসতে বললাম আর ও ঠিক আসছে এখন কি বলব, কোথা থেকে কি ভাবে শুরু করব এই সব ভেবে কিছুক্ষণের জন্য একটু হতবিহবল হয়ে গেল। মুহূর্তের মধ্যে নিজেকে সামলে নিয়ে রেডি হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। হাতের ফুলটার অস্তিত্ব দেখে যাচাই করে নিলো, ফুলটা ঠিক আছে। ফাতেমা বেড় হয়ে এদিক ওদিক দেখেই সোলায়মানকে দেখতে পেল। চার চোখের মিলনের সাথে আবার এক টুকরো মিষ্টি হাসি বিনিময়।
কি ব্যাপার, কি বলবে বল
একটু ইতস্তত করে পিছনে লুকিয়ে রাখা ডান হাতে ধরা লাল গোলাপটা সামনে এনে ফাতেমার দিকে বাড়িয়ে বলল
I love you Fatema! তুমি কি কোথাও এনগেজড?
ফাতেমা একটু থতমত খেয়ে আস্তে করে গোলাপটা হাতে নিয়ে হাতের গোলাপের পাপড়ির মত ঠোঁট গুলি থির থির করে কাঁপা কণ্ঠে বলল-
সম্ভবত আমি তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম!
এইতো শুরু হল সোলায়মান আর ফাতেমার এক নতুন অধ্যায়। দেখতে দেখতে প্রায় ছয় মাস পেরিয়ে গেল কিন্তু কাদের কিছুই জানতে পারল না।
ওরা ভাবে আর কতদিন? লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা করা, সারাটা দিন ছটফট করা, যতক্ষণ কথা হয় দেখা হয় ততক্ষণ একটা অজানা আতংকের মধ্যে থাকতে হয়। ফাতেমার রক্ষণশীল পরিবারের কারো চোখে পরে গেলে সর্বনাশের চূড়ান্ত কিছু ঘটে যেতে বিন্দুমাত্র দেরি হবে না। কতদিন এ ভাবে চলে? অবুঝ দুটি মনে কেউ কোন কিনারা পাচ্ছে না, কোন উপায় দেখতে পাচ্ছে না। ফাতেমা একবার না, দুইবার না অনেকবার বলেছে আমাদের যে পরিবার তাতে তাদের কেউ এই সম্পর্ক মেনে নিবে না! ফাতেমা সোলায়মনকে তার বাবা মা এবং দাদার বংশের কৌলিণ্য সম্পর্কে ভাল করে জানিয়ে বলেছে এরা নিজ বংশের কৌলিণ্য সম্পর্কে অতিরিক্ত খেয়ালী। কি জানি কি হয় আমার কিন্তু ভীষন ভয় করছে।
ওদের লুকিয়ে চুরিয়ে কথা হয়। ফাতেমার ডিউটি শেষ হলে পোষাক বদলে টেসকোর কাস্টমারের বসার জন্য যে বেঞ্চ আছে ওখানে বসে বা আড়ালে কোথাও দাঁড়িয়ে। তাতেও ভয়, যদি কেউ দেখে ফেলে! প্রেম! প্রেম কি আর ভূগোল মানে? সে কি আর অর্থ সম্পদ চায়? মান মর্যাদা বুঝে? সে তো হৃদয়ের ভিখারি!
ফাতেমা
শুনছি বল
চল আমরা লন্ডন ছেড়ে কোথাও চলে যাই!
কোথায় যাব? এটা ব্রিটেন, আমার নিখোঁজ সংবাদ যখন আমার পরিবার থেকে পুলিশকে জানান হবে তার দুই ঘণ্টার মধ্যেই পুলিশ আমাদের খুঁজে বের করে ফেলবে। জান এরা কি ভয়ংকর পুলিশ? তার চেয়ে তোমার বন্ধু কাদেরকে বলে দেখ সে যদি আমাদের কোন সাহায্যের পথ বের করে দিতে পারে!
তুমি এদেশের মেয়ে, তুমিই কোন পথ খুঁজে পাচ্ছ না, সে কি করবে? শুধু শুধু জানাজানি হবে! আচ্ছা বলত তোমাদের পরিবারে কে তোমাকে সবচেয়ে বেশে স্নেহ করে?
কেন?
না তাকে যদি বলে দেখতে পার এবং সে যদি কিছু করতে পারে!
না না সোলায়মান তা হবার নয়!
তাহলে?
তাহলে দেখি আরও কিছুদিন যাক, ভেবে দেখি।
ঠিক আছে তাই দেখ।
৫।
ফাতেমা অনেক ভেবে চিন্তে একদিন রাতে তার দুলাভাই দোকান থেকে ফিরে এলে তাদের এই কথা জানিয়ে একটা উপায় বের করে দেয়ার জন্য অনেক অনুনয় বিনয় জানাল। সব কিছু খুব মনোযোগের সাথে শুনে দুলাভাই তাকে উপায় বের করে দেয়ার জন্য আশ্বস্ত করে বলল তুমি কোন চিন্তা করনা আমি এর একটা ব্যবস্থা করব। শুনে আনন্দের আতিশয্যে সাথে সাথে সোলায়মানকে মোবাইলে সুসংবাদটা জানাল। ফাতেমা বিশ্বাস করতে পারছিল না যে দুলাভাই এত সহজে তাকে সাহায্য করতে রাজী হবে। সে আজ একটা অসাধ্য সাধন করেছে মনে করে মনে মনে খুশীর জোয়ারে মুক্ত পায়রার মত নীল আকাশে উড়ছিল। সারা রাতে তার চোখে ঘুম নেই। শুধু মনে হচ্ছিল এই বুঝি সে যেন এলো মোর দারে।
বেথনেল গ্রিন, গ্লোব রোড এবং ইস্ট হেমে দুটি নবীন এবং অবুঝ মন সময়ের অপেক্ষায় প্রতিটি মুহূর্ত গুনছে কখন সোনা ঝরা শুভ লগ্ন তাদের দুয়ারে উকি দিবে।
ব্রিটেনের অধিকাংশ সাধারণ বাড়ির মত ডুপ্লেক্স টাইপের এই বাড়ির এক তলার ফাতেমার রুমে সারা রাত জাগার ক্লান্তি নিয়ে ভোরের একটু আগে যখন দুটি চোখ ক্ষণিকের জন্য একটু এক হয়েছে ঠিক তেমনি সময় তার ঘরের দরজা খোলা এবং মানুষের মনের ষষ্ট ইন্দ্রিয়ের বিপদের একটা ইঙ্গিত পেয়ে ফাতেমার তন্দ্রা ভেঙ্গে দেখে তার মা দুটি হাত ধরে রয়েছে, দুলাভাই ধরে রেখেছে দুই পা। বাবাকে দেখা যাচ্ছে না কিন্তু তার কথার শব্দ পাচ্ছে পিছনে। পাশে মাংস বানাবার চাপাটি হাতে দাঁড়িয়ে রয়েছে ভাই, এক মাত্র ভাই যার কাছে সেই ছোট বেলা থেকে ছিল কত আবদার কত স্মৃতি জড়ান এই ভাইয়ের সাথে, সেই ভাই আজ তার গলায় চাপাটি ধরে রয়েছে! কিছুতেই বিশ্বাস হতে চাইছে না। মা কি করে তার হাত দুটি এমন চেপে ধরে রেখেছে যে এক চুল পর্যন্ত নারার উপায় নেই। যে মা তাকে দশটি মাস পেটে ধরেছে আবার কত কি করে এত বড় করে তুলেছে সেই মা কি করে এ ভাবে তার হাত দুটি ধরে রেখেছে! বাবা কোথায়? মাথা ধরে রেখেছে যে সেই কি তাহলে বাবা? সব সম্পর্ক কি তাহলে এই দুলাভাইকে কাল রাতে বলার পর থেকেই শেষ হয়ে গেল? এই বংশের আভিজাত্য কি রক্তের সম্পর্কের চেয়েও কঠিন? ঘটনার আকস্মিকতায় ভয়ে আড়ষ্ঠ হয়ে স্তব্ধ হয়ে গেল, কত কথা বলছে, প্রাণের কত আকুতি, বেঁচে থাকার কত অনুনয় কিন্তু গলা দিয়ে কোন শব্দ বের হচ্ছে না। পিছন থেকে বাবা ধমকে বলে উঠল কি দেখছ? ছুড়ি চালাও। সাথে সাথে দেখল ভাই নিচু হয়ে চাপাটিটা তার গলা বরাবর এনেছে আর অমনিই ফাতেমার গলা খুলে গেল “মা তুমিও আমাকে বাঁচতে দিলে না?” সাথে সাথেই একটা অস্পষ্ট গোঙ্গানির শব্দের সাথে সব শেষ।
৬।
গত রাতেই ফাতেমা এত আনন্দ নিয়ে কথা বলল আর আজ সারাটা দিনেও তার কোন একটা কল নেই কেন? কোন কল ধরছেও না, কি ব্যাপার? সন্ধ্যা পর্যন্ত অন্তত ১০০ বার কল করেও যখন কোন সারা পেল না। সারা রাত একটুও চোখের পাতা এক করতে পারেনি। সকালে আবার ফোন করে কোন সারা না পেয়ে নিরুপায় হয়ে পুলিশে জানাল। আমার বন্ধুর কোন খোঁজ পাচ্ছি না তাকে কল করেও ফোন ধরছে না। তোমরা কি আমাকে একটু সাহায্য করবে?
ঠিকানা নিয়ে সেই সকালেই পুলিশ আবুল বখতের ইস্ট হেমের বাড়িতে ডগ স্কোয়াড সহ হাজির। বারিতে কেবল হামিদ বখত ছাড়া আর কেউ নেই। স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ কুকুর তার বসের হাত থেকে ছুটে যেখানে ফাতেমার দেহ লুকিয়ে চাপা দিয়ে রেখেছে সেই কার্পেটের কাছে শুঁকছে আর ঘেউ ঘেউ করছে।
কি ব্যাপার? রক্তের তাজা গন্ধ কেন এই ঘরে?
কার্পেট সরিয়ে দেখা গেল মেঝের আলগা কাঠ। কাঠ সরিয়ে মাটি একটু সরাতেই দেখা গেল কাল রক্তে মাখান ফাতেমার নিথর দেহ কুণ্ডলী করে কোন রকম চাপা দিয়ে ঢেকে রেখেছে।
হামিদ বখত পালিয়ে যাবার পথ খুঁজছিল কিন্তু এই ব্রিটেনের রয়াল পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে তাই কি সম্ভব?
তোমার মা বাবা কোথায়?
ওরা কাল রাতে পাকিস্তান চলে গেছে।
দুলাভাই?
সে লিভারপুলে গেছে আজ সকালে।
কিসে গেছে কার নিয়ে নাকি ট্রেনে?
ট্রেনে।
পুলিশ হাতের ঘড়ি দেখে বলল এখনও লন্ডন ছেড়ে বেশিদূর যেতে পারেনি।
সঙ্গে সঙ্গে লন্ডন এবং লিভারপুলের মাঝের স্টেশন রেডিং এ ফোন করে জানিয়ে দিল লন্ডন থেকে যত ট্রেন রেডিং স্টেশনে থামবে তার সব চেক করে পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত আলি আসগর নামের যে লোক পাবে তাকে এরেস্ট করে লন্ডনে পাঠিয়ে দিন। সে একটা খুন করে পালিয়ে যাচ্ছে।
ধন্যবাদ। আবার দেখা হবে ভিন্ন কোন আয়োজনে।
No comments:
Post a Comment
Thank you very much for your comments.