Tuesday, 4 December 2012

আভিজাত্য-১ [১/২]


১।
সোলায়মান হায়দর। বাড়ি আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল থেকে প্রায় ৪০ মাইল উত্তরে কালাকান নামের ছোট্ট শহর ছেড়ে আরও প্রায় ১৫ মাইল উত্তরে সাওয়ারখিল ছেড়ে এশিয়ান হাইওয়ে দিয়ে

খানিকটা এগিয়ে কারাকান বাজারে ডান দিকে মোর নিয়ে যে ইসতালিফ সড়ক পূর্ব দিকে চলে গেছে তার বাম পাশে চৌরাস্তার ধারে। নিচে বিশাল মটর পার্টস এর দোকান আর দোতলায় বসত বাড়ি। মটর পার্টসের দোকান হলে কি হবে সাথে কিছু বন্দুক আর পিস্তলের গোলাগুলি সহ টুকি টাকিও আছে। রাশিয়ানরা যখন এখানে যুদ্ধ করছিল তখন নিতান্ত জীবন রক্ষার তাগিদে এলাকা বাসিদের অনুরোধে এগুলি রাখতে হত।

বাবা আফছার হায়দর স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব এবং অনেক ভু-সম্পত্তির মালিক। ভু-সম্পত্তি বলতে বিশাল পাথুরে পাহাড়ি এলাকা যেখানে কোন ফসল বা চাষাবাদ হয় না শুধু ছাগল আর দুম্বার চারণ ভূমি। ছাগল জাতীয় পশুর খাদ্য সাদা কষ হয় এমন পাহাড়ি ঘাসে ভরা। হাজার খানিক ছাগল আছে ওদের। তবে এই সব পাহাড়ি এলাকার বৃষ্টির পানি বয়ে যাবার জন্য যে নালা এশিয়ান হাইওয়ে পাড় হয়ে কাবুল শহরের পশ্চিম দিয়ে বয়ে গেছে সেখানে এই নালার পাড়ে কিছু জমি আছে ওখানে শুধু পায়রা আর ভুট্টার চাষ হয়, পাশে ছোট্ট একটুকরা আঙ্গুর বাগান আছে। মোটামুটি উচ্চ বিত্ত পরিবার। যুদ্ধ বিধ্বস্ত আফগানিস্তানে এই অনেক। সোলায়মান কাবুলে লেখাপড়া শেষ করে বাবার সাথে দোকানের কাজে সাহায্য করে। মাঝে মাঝে কান্দাহার এবং পাকিস্তানের বর্ডার থেকে এটা সেটা যা পায় নিয়ে আসে। আবার ওদিকে ইরানের বর্ডারেও যাতায়াত আছে। বন্ধুরা মিলে গাধার গাড়িতে তাঁবু সহ প্রয়োজনীয় মালামাল বহন আর ঘোড়া নিয়ে যাতায়াতে আড্ডার আড্ডাও হয় আবার এক ঢিলে বাবাকেও কিছু সাহায্য করা হয়ে যায়। কিছু মালামাল নিয়ে আসা যায়।
রাশিয়ানরা যুদ্ধ করছে করুক, ওরা প্রায়ই ওদের দোকানের সামনে দিয়েই সাঁজোয়া বাহিনী নিয়ে ধুলো উড়িয়ে কাবুল যায় আবার লরি ভরে বাজার সদাই নিয়ে দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় জনপদের বাইরে ওদের আস্তানায় চলে যায়। সামনে পরে গেলে ইশারায় কুশল বিনিময় হয় কখনো। সব কিছুই চলছিল বেশ। বাদ সাধল যখন আমেরিকানরা এলো। এমনিতেই আফগানরা জাতি হিসেবে একটু, না না একটু নয় বেশ স্বাধীনচেতা। কারো বশ্যতা মেনে নেয়া ওদের ধাতে নেই।

আমেরিকানরা এসেছে রাশিয়ানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আফগানিস্তানের দখল নিয়ে আমেরিকান সাম্রাজ্য বিস্তারের আশা নিয়ে। তা বেশ মারামারি কাটাকাটি খুনখারাবি করবি কর। আমরা কি কম পারি এগুলি? আমরা জাতি হিসেবে যোদ্ধার জাতি সে কথা কি তোরা ভুলে গেলি! বাগড়ম এয়ার ফিল্ড দখলের উছিলায় যেদিন গোলাগুলি শুরু হল সেই সময় গোলাগুলির এক পর্যায়ে একদিন এলাকার প্রায় সবাই বাড়ি ঘর দোকান পাট ছেড়ে গাধার গাড়িতে প্রয়োজনীয় মালামাল নিয়ে পশ্চিমে অপেক্ষাকৃত সমতল ভূমি এবং জনবসতির শেষ সীমা জুলফিকার খাইলে মামা বাড়িতে চলে যায়। দিন পনের পরে যখন গোলাগুলি বন্ধ হল তখন একদিন সোলায়মানের বাবা গাধার পিঠে সওয়ার হয়ে এসে নিজ এলাকা দেখে গেল। বাবা যখন ফিরে এলো তখন তার কাছে শুনল তাদের বাড়ি ঘর দোকান কোন কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। শুধু তাদের না কারাকান বাজারের কোন চিহ্ন বলতে লাইট পোস্টের কয়েকটা খুঁটি ছাড়া আর কিছু নেই। সব ভেঙ্গে চুরে ধ্বংসস্তুপ হয়ে আছে। এই সব শুনে বাবার সাথে তার পরদিন বাপ বেটা দুইজনে দুইটা গাধা নিয়ে দেখতে এলো। বাবা নিষেধ করেছিল আর যেয়ে কি হবে, কি দেখবি? কিছুই যে আর নেই! না বাবা আমি দেখব, আমাকে যে এর প্রতিশোধ নিতে হবে। মাও নিষেধ করল কিন্তু সোলায়মান নাছোড় বান্দা, সে নিজ চোখে দেখবেই।

আরে বেকুব তুই কি করে আমেরিকানদের সাথে পাল্লা দিতে যাবি? না মা আমি দেখবই, তুমি বাবাকে যেতে দিতে না চাইলে দিও না আমি একাই যাব। ছেলের মনের দুঃখ বুঝতে পেরে শেষ পর্যন্ত বাবা তার সাথে এলেন। হাইওয়ের পশ্চিম পাশে এসে গাধার পিঠে থেকে নেমে দুই জনে দাঁড়িয়ে দেখল কিছুই নেই।
মামারাও বেশ উচ্চ বিত্তের মানুষ কিন্তু হলে কি হবে এ ভাবে কত দিন চলা যায়? বাবা আর মামার সাথে পরামর্শ করে কাগজপত্র গুছিয়ে কাবুলে এসে ব্রিটেনের দূতাবাসে ভিসার দরখাস্ত জমা দিয়ে এলো। দূতাবাস থেকে একটা তারিখ বলে দিল, পাসপোর্ট নেয়ার জন্য। সময় মত এসে পাসপোর্ট হাতে নিয়ে দেখল ভিসা হয়েছে। বাড়িঘর যুদ্ধ বিধ্বস্ত বলে একেবারে তিন বছরের ভিসা।

শুরু হল লন্ডন আসার প্রস্তুতি। বেশী দেরি করা যাবে না, যত তারা তারি সম্ভব দেশ ছেড়ে আসতে হবে। আমেরিকানদের মতিগতি বলা যায় না। একদিন সত্যি সত্যি মায়ের কান্না বাবার নিষেধ উপেক্ষা করে নিজের নিতান্ত প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস পত্র নিয়ে চলে এলো লন্ডনে। কাবুলে যাদের সাথে লেখাপড়া করেছে তেমন এক বন্ধু কাদের হেকমত বেশ অনেকদিন আগেই লন্ডনে এসেছিল। আরও কয়েকজন মিলে স্টেপনি গ্রিনের কাছে গ্লোব রোডে একটা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকে। সোলায়মানের টেলিগ্রাম পেয়ে সময়মত হিথরো এয়ারপোর্ট থেকে নিয়ে সোজা বাসায় চলে এলো। পথে টিউবে পাশাপাশি বসে এত দিন পরে দেখা হওয়া দুই বন্ধুর অনেক কথা। তার মধ্যে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক ঘোলাটে ও অস্থির পরিস্থিতিই প্রধান। কাদের বেথনেল গ্রিনে টেসকো সুপারস্টোরের পাশে এক কাশ্মিরী দোকানের সামনের ফুটপাথে জুতা স্যান্ডেল বিক্রি করে। সেও আফগানি এক সম্ভ্রান্ত উচ্চ বিত্ত পরিবারের ছেলে কিন্তু পৃথিবীর দুই শক্তির উন্মত্ততার খেলায় তাদের ভাগ্যের বিড়ম্বনার জন্য আজ এই অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে।

কয়েকদিন যাবার পর সোলায়মান বলল দোস্ত,
আমার কি ব্যবস্থা করতে পারবে?
এসেছ যখন কিছু করতেই হবে, এ নিয়ে তোমার ভাবনার কিছু নেই, তুমি আমার সঙ্গেই থাকবে, আমাকে সাহায্য করবে। আমি বড্ড নিঃসঙ্গ বলে বেশ কষ্ট হচ্ছে। তুমি কয়েক দিন এদিক ওদিক ঘুরে দেখে শুনে চিনে নাও তারপরে আমার সাথে দোকানে থাকবে। তোমাকে দোকানে রেখে আমি মাল আনতে গেলাম বা কখনও তুমি মাল নিয়ে আসলে আর আমি দোকানে রইলাম। কি, পারবে না?
কি বল দোস্ত পারব না কেন এযে সোনায় সোহাগা! আমি ভাবতেই পারছি না! আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ তায়ালা তোমার মঙ্গল করুন।
হিসাব নিকাশের জন্য তুমি কিচ্ছু ভাববে না, লাভ লোকসান সব আধাআধি! ঠিক আছে?
আমার যে কোন চালান নেই? আমি কি করে তোমার সাথে ব্যবসা শেয়ার করব?
কে বলল চালান নেই, তোমার এই মাথার মগজগুলিকে তোমার চালানে বদলে নিলেই দেখবে তোমার কত চালান!
বলে একটু হেসে বন্ধুকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলল তুমি এসেছ বলে আমি যে কত খুশী হয়েছি তা বলে বোঝাতে পারব না।
কাদের তুমি মহান! ঠিক আছে আমি তোমার সিদ্ধান্ত জেনে অতি আনন্দিত। তাহলে বাড়িতে বাবাকে একটা চিঠি দিতে হয়।
তা জানিয়ে দাও, আর চিঠিতে বলে দিও আমার বাড়িতে যেন একটু সংবাদ দেয়।
হ্যাঁ হ্যাঁ তা অবশ্যই বলব।

২।
কাদের আর সোলায়মান দুই বন্ধু মিলে বেশ চালিয়ে যাচ্ছিল। দুই জনে মিলে কাস্টমার ডাকাডাকি করে বিক্রি করে, মাল কিনে আনে আবার সারা দিনের শেষে সন্ধ্যা হলে মালামাল গুছিয়ে কার্টুনে ভরে কাশ্মীরী দোকানের পিছনে এক কোণে রেখে চলে যায়। যাবার সময় প্রায়ই পাশের টেসকো সুপারস্টোর থেকে রেডি নান এবং আর একটু এগিয়ে পাকিস্তানি কাবাবিশ দোকান থেকে গ্রিল চিকেন কিংবা শিক কাবাব বা ভিন্ন কিছু কিনে দুই বন্ধু পাশাপাশি হাটতে হাটতে ভবিষ্যতের কল্পনার জাল বুনতে বুনতে গ্লোব রোডের বাসায় এসে খেয়ে শুয়ে পরে আর সারা দিনের কঠিন যুদ্ধের পর ক্লান্ত শরীর প্রায় সাথে সাথে ঘুমিয়ে পরে পরের দিনের প্রস্তুতি নিতে।
দুই বন্ধু মিলে বেশ চলে যাচ্ছিল।

ডিসেম্বরের শীতের সন্ধ্যায় বৃষ্টির জন্য রাস্তায় কোন লোকজন ছিল না কাস্টমার আসার কোন সম্ভাবনা নেই মনে করে কাদের দোকান গুটিয়ে নিচ্ছিল আর সোলায়মানকে বলল তুমি টেসকো থেকে রুটি নিয়ে আস আমি দোকান প্যাক করছি। সোলায়মান বন্ধুর কথামত টেসকোতে যেয়ে নান রুটি, দুধ, দৈ এবং সকালের নাস্তার জন্য এক প্যাকেট কর্ণ ফ্ল্যাক্স নিয়ে কাউন্টারের পাশে এসে হাতের ঝুরিটা নামিয়ে দেখল অপরূপা কাল কেশী এক সুন্দরী মেয়ে ওই কাউন্টারে কাজ করছে। পরনে টেসকোর নির্দিষ্ট পোশাক বলে বুঝতে পারল না এ কোন দেশী। তবে সার্টের পকেটে লেখা নাম দেখল ফাতেমা। যাক তাহলে এ মুসলমান। এর আগেও এসেছে কিন্তু কোনদিন দেখেনি, হয়ত ডিউটি ছিলনা কিংবা ভিন্ন কোন টিলে ছিল বলে দেখেনি। যথারীতি কিউ এগিয়ে যাচ্ছে আর যখন সোলায়মানের পালা এলো তখন সে এক এক করে পাশের ঝুরি থেকে তার জিনিসপত্র কনভেয়ার বেল্টে নামাচ্ছে আর মেয়েটির দিকে দেখছে। লক্ষ করল মেয়েটিও তাকে লক্ষ করছে। এক্সকিউজ মি, আমি কি জানতে পারি তুমি (ইংরেজি ভাষায় আপনির প্রচলন নেই তাই তুমি) কোন দেশের?
কেন?
নিতান্ত কৌতূহল।
একটু হেসে দিয়ে বলল-
তুমি কোন দেশের?
আমি আফগানিস্তান থেকে এসেছি, তুমি?
আমার মা বাবা এবং পূর্ব পুরুষ পাকিস্তানের তবে আমি এই দেশের।
ও আচ্ছা।

কথার ফাঁকে ফাঁকে ফাতেমা সোলায়মানের জিনিসপত্র স্ক্যান করছে আর ব্যাগে ভরছে।
সব কিছু স্ক্যান হলে দেখা গেল ওর ১২ পাউন্ড ৭২ পেনি দাম হয়েছে।
২০ পাউন্ডের একটা নোট বেল্টের উপর নামিয়ে রাখল আর যথারীতি ফাতেমা টিল থেকে ভাংতি ফেরত দিল।
সোলায়মান ভাংতি নেয়ার সময় আবার দুজনের চোখে চোখ পড়ে গেল, একটু মিষ্টি হাসির সাথে ফাতেমা সোলায়মানের হাতে ব্যাগটা ধরিয়ে দিল।
গুড নাইট, আবার দেখা হবে বলে সেদিনের মত সোলায়মান চলে এলো আর ফাতেমা পরের কাস্টমারকে এটেন্ড করতে মনোযোগ দিল।
এই ভাবে বেশ কয়েকদিন গেল। দোকান বন্ধ করার আগে সোলায়মান বলে দোস্ত তুই মালামাল গুছিয়ে নে আমি টেসকো থেকে আসছি। কোন দিন চা পাতা, কোন দিন চিনি কিছু না কিছু তো একটা কিছু লাগেই হোক না সে দুইজনের সংসার। এমনি একদিন সোলায়মান ফাতেমাকে জিজ্ঞেস করে বসল-
আজ তোমার ডিউটি কয়টা পর্যন্ত?
এইতো আর মাত্র আধা ঘণ্টা আছে, ৮টায় শেষ হবে, কেন?
না, তেমন কিছু না। তোমার সাথে একটু আলাপ করতাম, এই আর কি!
আচ্ছা ঠিক আছে, তুমি কি আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করতে পারবে?
আধা ঘণ্টা কেন, তুমি যদি বল এক বছরও পারব।
তুমি খুব দ্রুত এগিয়ে গেছ মনে হচ্ছে! আচ্ছা ঠিক আছে তুমি ওই ডান পাশের এক্সিট এর বাইরে দাঁড়াও আমি শেষ করে আসছি।

৩।
ফাতেমার দাদার বাড়ি পাকিস্তানের ফয়সালাবাদের (প্রাক্তন লায়ালপুর) খুরিয়ান ওয়ালায়। দাদা ওমর বখত পাকিস্তান ভারত স্বাধীনের পর এদেশে চলে আসে। এখানেই বিয়ে করে সংসার ব্যবসা করে বেশ অর্থ, নাম, যশ ও প্রতিপত্তি কিনে নেয় মানে সে তার ভাগ্যের কাছে থেকে অনেক সাহায্য সহযোগিতা পেয়েছিল। এখানেই জন্ম হয় একমাত্র ছেলে আবুল বখ্তের। এক সময় যখন সময়ের সাথে আবুল যৌবনের দরজায় পৌঁছে তখন অনেকদিন, অনেক বছর পরে ওমর বখত ফয়সালাবাদে ফিরে এসে দেখে তার এই এলাকার নাম আর লায়ালপুর নেই এটা এখন ফয়সালাবাদ হয়ে গেছে। খোদ বিলাতের বাসিন্দা নিজের ছেলের জন্য কনে খুঁজতে এসেছে, কম কথা নয়। তাদের পাশের এক গ্রামের মেয়ে রুখসানার সাথে ছেলের বিয়ে পড়িয়ে আবার পাকিস্তানে পাড়ি দেয়। ছেলেকে রেখে যায় বৌকে সাথে নিয়ে যাবার আয়োজনের জন্য এবং নিজের পিতৃভূমিতে কিছুদিন থেকে সবকিছু দেখেশুনে চিনে নেয়ার জন্য।
মাস ছয়েক থেকে বৌ এর কাগজপত্র ঠিকঠাক হলে একদিন তাকে নিয়ে আবার বিলাতে চলে আসে পূর্ব লন্ডনে বাবার ইস্ট হেমের বাড়িতে। রুখসানা বেগমের বাবা মায়ের সাথে দেখা করার জন্য হলেও অন্তত দুই বছরে একবার পাকিস্তানে যাতায়াত করতে হয়, সাথে আবুল বখতকেও যেতে হয়। রুখসানা বেগম একে একে ওমর বখতকে দুই নাতনি আর এক নাতি উপহার দেয় বলে তার মান এবং মর্যাদা শ্বশুরের কাছে অত্যন্ত বেড়ে যায়।

ফাতেমা সবার ছোট। বড় বোন কুলসুমের বিয়ে হয়েছে ওয়েস্ট হেমের আলী আসগরের সাথে আর মাঝে এক ছেলে হামিদ বখত। ওমর বখতের আপটন পার্কের এশিয়ান মুদি দোকানের ব্যবসা বেশ জমজমাট। ছেলে বড় হবার পর থেকে সে আর দোকানে বসে না। এর মধ্যে দিন বদলে গেছে অনেক। দোকান বড় হয়েছে, ব্যবসা বড় হয়েছে আবুল বখত এখন আর খুচরা দোকানদারি করে না। বাবার কেনা দোকান ভাড়া দিয়ে আপটন পার্কের দক্ষিণ মাথায় এক বিশাল পাইকারি দোকান বা ক্যাশ এন্ড ক্যারি দিয়ে ছেলে আর জামাইকে নিয়ে ব্যস্ত আছে। ব্রিটেনের আইন অনুযায়ী কুলসুম আর হামিদ বখতের পড়ালেখা স্কুলের গণ্ডি পর্যন্তই শেষ কিন্তু ফাতেমা আবার এর বিপরীত। সে স্কুল ডিঙ্গিয়ে কিং’স কলেজে একাউন্টিং পড়ছে আর নিজের হাত খরচের জন্য টেসকোতে পার্ট টাইম মানে দিনে চার ঘণ্টা করে সপ্তাহে বিশ ঘণ্টা কাজ করছে। [পরবর্তি পর্বের আমন্ত্রণ]

No comments:

Post a Comment

Thank you very much for your comments.