Tuesday, 4 December 2012

কে আমি-৩ [৩], শেষ পর্ব


[পূর্ব প্রকাশের পরঃ কে আমি-২ [৩]]
৮।
পরী এখন হাঁটতে পারে। একটু একটু কথাও কয়। ছোট মামিও কেন যেন ইদানিং একটু পরে পরে বমি করে। এতদিন ছোট মামি পরীর দেখাশুনা যতটা করতে পারত এখন অতটা পারে না। মা হারা পরীও আরিফকে
চিনে ফেলেছে। ছোট চাচী, দাদি সবাইকে চিনে নিয়েছে। পরীর বিছানা গুছিয়ে রাখা থেকে দুধের ফিডার ধোয়া, টুকিটাকি যখন যা লাগে দোকান থেকে কিনে আনা থেকে শুরু করে কোলে নিয়ে ছাদে বা বারান্দায় ঘোরা, যেদিন স্কুল বন্ধ থাকে সেদিন পরীকে কোলে নিয়ে ধুপ খোলার মাঠ থেকে ঘুরে আসা। এভাবেই চলতে চলতে পরী এখন আর কোলে থাকতে চায়না। মা হারা মেয়ে মাটি মায়ের টানে মাটির বুকে হেঁটে বেড়াতে চায়, একা একা। আরিফের হাত না ধরে। দিন মাস বছরের সাথে একদিন পারেও। যেমন চাইছিল তেমনি করেই। দাদি, বাবা, চাচা-চাচী আর আলি ভাইয়ের (ছোট থেকেই সে আরিফ উচ্চারণ করতে না পেরে আলি ভাই বলে ডাকত) আদরে পরী বেশ বড় হয়েছে। স্কুলে ভর্তি হয়েছে। সকালে আলি ভাই স্কুলে দিয়ে আসে। সংসারের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। ছোট মামিও এক বাচ্চা নিয়ে এসেছে, সেও বেশ বড় হয়েছে। পরীর এখন আর একাকীত্বের কোন সুযোগ নেই। আরিফের সাথে সাথে পরীও বেড়ে উঠেছে। পরীর ছোট চাচাত বোনটিও বেশ বেড়ে উঠেছে। বাড়িটা এখন সারাদিন হৈচৈ হাঁক ডাকে ব্যস্ত থাকে। পুরনো আমলের বাড়ির দোতলার লম্বা টানা বারান্দায় টানানো রশিতে এখন ছোট ছোট ফ্রক, ন্যপকিন শুকাতে দেখা যায়।

বড় মামির কথা আরিফ এখনো ভুলতে পারেনি। তারিখটা ঠিক মনে করে রেখেছে। বড় মামাকে সকালে মনে করিয়ে দেয়। মামার সাথে সেও গোরস্তানে যায়। আরিফের পোশাক আশাক আর বাড়িতে ওর চলাফেরা দেখলে বাইরের কেউ বুঝতে পারে না এই ছেলেকে রেল স্টেশন থেকে কুড়িয়ে আনা হয়েছিল, যার কোন পরিচয় ভিন্ন কেউতো দূরের কথা সে নিজেই জানে না। সে তার বাবা-মা কারো পরিচয় কিছুই জানে না। সে শুধু জানে ছোট মামা তাকে সঙ্গে করে ময়মনসিংহ রেল স্টেশন থেকে নিয়ে এসেছে। চোখে একটু ছায়ার মত আসে, দৌড়ে এসে ছোট মামার হাত ধরে ট্রেনে উঠে বসল। এই বাড়িতেই আমার জন্ম। কমলাপুর নেমে ফুটপাথ থেকে তার পুরনো পরিচয় সব ফেলে দিয়ে নতুন পোষাকে নতুন করে ঢেকে নিয়ে এসেছিল এই বাড়িতে। গায়ে লাগা যা কিছু অবশিষ্ট ছিল তা বাথরুমে ঢুকে সাবান দিয়ে ঘসে ঘসে একেবারে মুছে ফেলেছে। এখন এটাই তার পরিচয়। এর বেশী আর কিছু সে জানে না। মনে নেই। ফইটক্যা বা ফটিকের ইতিহাস এখন আর বিশেষ কিছু মনে পরে না। শুধু বাদলা দিনে যখন চিলেকোঠার জানালা দিয়ে বাইরে ঘুণ্টি ঘরের পাশে ওই রেল লাইনের দিকে তাকায় তখন একটু একটু ছায়ার মত কখনও উড়নচণ্ডী মেঘ হয়ে ভেসে আসতে চায় কিন্তু আরিফ কিছুতেই সে দরজা খুলতে চায় না। তবুও ভাঙ্গা বেড়ার ফাঁক ফোকর দিয়ে একটু আধটু চুরি করে মনের ঘরে ঢুকেই পরে। শত চেষ্টা করেও আরিফ তা ঠেকিয়ে রাখতে পারে না। ওই যে সেদিন, চায়ের কাপ ভাল করে ধোয়া হয়নি বলে কেব্বাত আলী রাতে খাবার দেয়নি। কাস্টমার নোংরা কাপ দেখে চলে গিয়েছিল বলে দুই গালে দুই চর মেরে বলেছিল আইজ রাইতে তর খাওন বন্ধ। আজাইরা বইয়া বইয়া খাইয়া গতরে চর্বি জইমা গেছে তাই কাপ ধুইতে মন লাগে না? এই কথা কি আর ইচ্ছা করলেই ভুলা যায়?
ঘড়ির কাটা ঘুরুক আর না ঘুরুক তাতে কার কি আসে যায়? সময় ঠিক তার গন্তব্যের দিকে এগিয়ে গেছে, একটুও থামেনি। এই সুযোগে আরিফকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। ভাবতে শিখিয়েছে। বিচার বিবেচনা করতে শিখিয়েছে। না শুধু তাই না, আরও অনেক কিছু শিখিয়েছে যা ধীরে ধীরে আরিফের কাজে লাগবে।

আরিফ জানে, তারেক হাসান তার বাবা নয়। এই নামটা শুধু স্কুলের ভর্তির জন্য ছোট মামা ভর্তির ফর্মে লিখে দিয়েছিল। বাপের নাম না থাকলে নাকি স্কুলে ভর্তি হওন যায় না! কি আশ্চর্য কথা! যার বাপ মা নাই হে কি তাইলে পড়তাম পারব না? হে কি নিজে ইচ্ছা কইরা তার বাপ মায়েরে গুম কইরা থুইয়া আইছে?
সূত্রাপুর লোহার পুলের নিচে ধোলাই খাল দিয়ে ঢাকা শহর ধোয়া অনেক পানি বুড়িগঙ্গায় মিশেছে এর সাথে কি আরিফের কান্নার কিছু পানি ধোলাই খালের পানির সাথে মিশেছিল? তাহলে আরিফের কান্না গুলি সব কেন ধুয়ে নিয়ে গেলনা? সারা জীবন কি আরিফের কাছে তার জন্ম পরিচয় অজানা থাকবে? যা কেবল রাতের বালিশ আর চিলেকোঠায় দেয়ালের পাশে পাতা বেঞ্চ ছাড়া এই পৃথিবীর কেউ জানবে না? আরিফের স্কুলে শিখেছে বাংলাদেশে ছয়টি ঋতু, গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত আর বসন্ত। কিন্তু আরিফ অনেক হিসেব করে দেখেছে তার জীবনে একটাই ঋতু। আমি কে?
আজ না হয় এভাবে গেল কিন্তু কাল? যখন আরিফের সন্তানেরা তাদের দাদার নাম জানতে চাইবে, দাদির মায়ায় ছোঁয়া একটু নারকেলের নাড়ু পেতে চাইবে কিংবা দাদির বুকের উষ্ণতায় শুয়ে গল্প শুনতে চাইবে, কিংবা নিদেন পক্ষে দাদার ভিটেটা দেখতে চাইবে তখন? কি জবাব আছে তার কাছে?
কিরে আরিফ কোথায় গেলি?
নানী ডাকছে।
দোকানে যাবি না?
জাল ছিঁড়ে গেল। আরিফ উঠে পা টেনে নিয়ে গেল নানীর কাছে
নে, তড়াতাড়ি খেয়ে ছাপান কাগজ গুলি নিয়ে দোকানে যা। হাসান তোকে বলে গেছে না?
হ কইছে, যাইতাছি।

৯।
ময়মনসিংহ রেল স্টেশন থেকে কুড়িয়ে আনা ফইটক্যা ওরফে ফটিক ওরফে আরিফ পরীকে বড় করার সাথে সাথে একদিন দ্বিতীয় বিভাগে এসএসসি পাশ করল। এর মধ্যে অনেক কিছু হয়ে গেছে। বাংলাবাজার এলাকায় আরিফকে চিনে না এমন কেউ নেই। যে কোন দোকান থেকে ২/৪ হাজার টাকার মাল নিয়ে এলেও সবাই দিয়ে দিবে। শুধু আরিফ গিয়ে বললেই হবে মামা ১০রিম কাগজ দেন। কে পাঠিয়েছে, কি করবে বা কেন নিবে কেউ জিজ্ঞেস করবেনা। সবাই জানে এই আরিফ বিখ্যাত পান্থ নীড় প্রকাশনীর বিশিষ্ট প্রকাশক তারেক হাসান সাহেব এবং হিরণের একান্ত সহকারী। শুধু কি তাই, সে আরও অনেক কিছু। দোকানের চাবি, আলমারির চাবি থেকে শুরু করে সব হিসাব নিকাশের খাতা পত্র এই আরিফের কাছেই থাকে। কোন লেখকের বই কতটা চলছে কার পাণ্ডুলিপি কিনে নিতে হবে আর কার পাণ্ডুলিপি লেখক নিজে ছাপাবে সে আরিফ জানে।
বই মেলায় কোন বই যাচ্ছে, কোন বই যাচ্ছে না, স্টলের ডেকোরেশন কেমন হবে, কোন সেলফে কোন বই থাকবে। কোন লেখকের বই কোন সেলফে থাকবে। কোন লেখকের বইতে কোন কাস্টমারকে কত কমিশন দিতে হবে সব কিছুই বড় মামার কাছে শিখে নিয়েছে। এখন মেলার আগে বড় মামা শুধু বলে দেয় আরিফ, ফেব্রুয়ারি মাস এসে গেছে, মনে আছে?
হ মামা, গুছাইতাছি। আপনে চিন্তা কইরেন না, আমি আর ছোট মামা সব ঠিক কইরা নিমুনে।

এই ছোট বড় নানা কাজেকর্মে আরিফ এখন প্রকাশনা জগতটাকে বেশ ভাল করে চিনে নিয়েছে। খুঁটিনাটি অনেক কিছু এখন আরিফের জানা। সেই সাথে ছাপাখানার ভিতর-বাহির, বাইন্ডিং, ফর্মা, বই এর হিসাব, কাগজ কালির হিসাব, দশ ফর্মার বই ছাপাতে কত সময় লাগবে ইত্যাদি সহ বই সংক্রান্ত আয় ব্যয়ের নানান খুঁটিনাটি শিখে নিয়েছে। কোথা থেকে কি ভাবে বই মফস্বলের ডিলারদের কাছে পাঠাতে হয়, কে পেমেন্ট করেছে কে করেনি, কারটা আগে, কারটা পরে পাঠাতে হবে সব আরিফের নখদর্পণে।

আরিফের এসএসসি পাশ করার খবর যেদিন হিরণের ভাই প্রথম শুনেছিল সেদিন হাসান সাহেব নিজে আরিফকে সাথে নিয়ে বাংলাবাজারের সব দোকানে দোকানে নিয়ে মিষ্টি খাইয়ে এসেছে। এযে হিরণের আবিষ্কার ইতিমধ্যে এলাকার সবাই তা জেনে গেছে। দোকান আর প্রেস মিলে আরিফের এখন অনেক কাজ। এখন আর সে টিফিন ক্যারিয়ারে করে দোকানে ভাত আনে না। এজন্য অন্য আর একজনকে নেয়া হয়েছে।
আরিফের মাথার চিন্তাভাবনার নিউরনগুলি কাজ করতে শিখছে। এখানে যাদের কাছে রয়েছে, যারা তাকে আজ রেল স্টেশনের পিচ্চি থেকে এখানে নিয়ে এসে আরিফ বানিয়েছে, যারা তাকে মানুষের পরিচয় দিয়েছে তাদের কারো সাথে তার রক্তের কোন সম্পর্ক নেই। কেবল একটু মায়ার বাঁধন। দেয়া নেয়ার হিসাব মেলাতে পারে না। কি পেয়েছে কি দিয়েছে সে হিসাব করতেও চায় না মেলাতেও চায় না। ও কথার কাছে যেতেও মন সায় দেয় না। শুধু কিন্তু কিন্তু পর্যন্তই এগুতে পারে এর বেশী আর একটুও এগুতে পারেনি কোন দিন।

১০।
তবুও ভাবে এ ভাবেতো আর সারাটা জীবন বয়ে যাবে না। কিছু একটা করতে হবে। কিন্তু কি ভাবে? কার সাথে পরামর্শ করবে? একা একাই ভাবে। কারো সাথে পরামর্শ করতে পারে না। একদিন দোকান বন্ধ করে বাড়ি যাবার পথে ছোট মামাকেই বলল
মামা, একটা কথা কমু কইয়া ভাবতেছি কিন্তু সাহস পাই না
কি কথা?
মামা, আমি কে, কইত্থিকা আইছি তার সব আমার মনেও নাই আর মনে করতামও চাই না। এইটুক জানি যে আপনেই আমারে নতুন কইরা জন্ম দিছেন। আমার ছোট বেলার কথা আমার আর কিছু মনে নাই। আপনেই চোখে চোখে রাইখা খাওয়াইয়া পিন্দাইয়া বড় করছেন, লেখা পড়া শিখাইছেন, কাম কাজ শিখাইছেন। অহন আমি সব পারি।
হ্যাঁ তা বুঝলাম, কিন্তু তুই আসলে কি বলতে চাচ্ছিস?
মামা, রাগ করবেননাতো?
তুই বল
আচ্ছা মামা বাড়ি যাইয়া কমুনে
ঠিক আছে।

সেদিন রাতে বাড়ি ফিরে খাবার পর ড্রইং রুমে সোফায় বসে সবাই টিভি দেখছিল আর হিরণের পায়ের কাছে কার্পেটে বসে আরিফ।
হ্যাঁ বল, তখন কি বলছিলি
মামা, কইছিলামকি আপনে আমার জন্যে যা করছেন তা আমি এই জীবনে শোধ দিতাম পারুম না। তাই কইছিলামকি কবে কি বেয়াদবি কইরা ফালাই তহন আপনেরাও মনে কষ্ট পাইবেন আর আমিও সারা জীবন তাই মনে কইরা কষ্ট পামু। তার চাইতে আমিতো এহন বড় হইছি।
এই পর্যন্ত বলে আরিফের আর কোন কথা আসছিল না।
থামলি কেন বল
কেমনে কমু মামা? এই কথা কি এত সহজে কওয়া যায়?
বল তুই না বললে আমি বুঝব কেমনে?
আমারে একটা কিছু কইরা দেন আমি আমার মত থাকি! আপনেগো কাছাকাছিই থাকুম, যহন দরকার হইব আমারে ডাকলেই যাতে আইতে পারি! আপনেরাই পাইলা মানুষ করছেন চোখ মেলতে শিখাইছেন। আমার বড় ডর করে যদি কোন দিন আপনাগো অবাধ্য কিছু কইরা ফালাই! তহন আপনেরাও সহ্য করতে পারবেন না আবার আমিও যন্ত্রণায় জ্বলুম।
তা তুই এমন করবি কেন?
মামা আপনেরা জানেন না মাইনসে কত কিছু কয়!
কে কি বলে?
থাক, এগুলি শুনলে মনে খালি কষ্টই পাইবেন। আমিতো আর তাগো কথা শুনতে চাই না। কে আমার বাবা কে আমার মা কোথায় আমার বাড়ি, কোথায় আমার ঠিকানা কিছুই ত জানি না। খালি এক আপনাগোই চিনি। কনতো মামা আমি কে?
কেন, তুই আরিফ!
মামা, আমারে আপনে নিজেই টোকাইয়া আনছেন আপনে এই কথা কেমনে কইলেন? আর কেউ জানুক আর না জানুক আপনে ঠিক জানেন আমারে কইত্থিকা নিয়া আইছেন!
চোপ কর, থাম এত কথা কোথা থেকে শিখলি?
না মামা আমি কথা শিখি নাই, যা আসল আমি তাই কইতেছি! যেডা কাইল হইব হেইডা আইজই কইয়া দিলাম। মামা আপনে বড় মামারে একটু কইয়েন!
আচ্ছা বলে দেখি।
দেখেন মামা
বলেই একটু মামার মুখের দিকে তাকিয়ে আবার সাথে সাথে মুখ নামিয়ে নিল।
ও! এই কথা? হ্যাঁ বুঝেছি, আর বলতে হবে না। আচ্ছা সবুর কর মা আর দাদা ভাইয়ের সাথে আলাপ করে দেখি।
আইচ্ছা মামা।

১১।
কয়েকদিন পরে আবার একদিন সন্ধ্যায় দোকান থেকে ফিরে ড্রইং রুমে। হাসান সাহেব, হিরণ বসে কি আলাপ করছিল।
যাতো আরিফকে ডেকে নিয়ে আয়!
আরিফ!
জী মামা আইতাছি!
দুরু দুরু বুকে আরিফ এসে সামনে দাঁড়াল।
বোস ওখানে।

আরিফ তার নির্দিষ্ট জাগায় কার্পেটে বসল। আরিফ জানে মামারা এখন কি বলবে।
তুই খুব ভাল কথা মনে করে দিয়েছিস। রফিক সাহেবের দোকানের এক পাশে ভাড়া দিবে। শোন এখন
ওটা তোর নামে ভাড়া নিয়ে নিই। তুই আপাতত আমাদের নিজেদের পাবলিকেশন গুলি বিক্রি করবি।
বলে একটু আরিফের মুখের দিকে তাকিয়ে,
কি, পারবি না?
পারুম।
পরে আস্তে আস্তে অবস্থা বুঝে যখন যা ভাল হয় করবি। আমি বলে দিব।
থাকুম কোথায় মামা?
ও!
এখানে থাকবি না?
না, মানে কইছিলাম কি……
আচ্ছা বুঝেছি, আর বলতে হবে না।
তা হলে ওদিকে প্যারিদাস রোডের কাছাকাছি কিংবা লক্ষ্মী বাজারে কোন মেস খুঁজে দেখ
মামা, একটা কথা কমু?
কি?
ওই প্রেসের কাগজের গুদামের পাশে যে একটু খালি জাগা আছে ওখানে একটা চোকি পাতলে হয় না? পরে গুদামের পাশে কয়টা টিন দিয়া ছাইয়া দিলে একটা রুমের মত হয়।
ও! ঠিক আছে থাক।

১২।
এই শুরু হল আরিফ ওরফে ফটিক ওরফে ফইটক্যার জীবনের আর একটা নতুন জীবন। কাগজের গুদাম ঘরের এক পাশে একটা চৌকি পেতে বেশ থাকছে। খাওয়া দাওয়া আগের মতই চলছে। বাড়ির টুকিটাকি কাজ, বাজার করা সহ যতটা সম্ভব করে। ওদিকে ব্যবসা বেশ ভালই চলছে। এ ভাবে আরও কয়েক বছর থাকার পর আরিফের বিয়ের প্রস্তাব এলো। হিরণের মা তখনও বেচে। ছোট মামি, আর নতুন বড় মামি যেয়ে একদিন মেয়ে দেখে আসল। ঢালকা নগরে বাড়ি। বাবা রেলের সিগন্যাল ম্যান। বাড়ির বৌরা মেয়ে দেখে এসে হাসান সাহেবকে বলল। হাসান সাহেব দোকান আর বাড়ির পাশের ৪/৫ জনকে নিয়ে পাকা কথা দিয়ে তারিখ ঠিক করে আসল।
কথা দিয়ে আসার পর ওই সেই আগের দেখান আরিফের প্রস্তাব অনুযায়ী কাগজের গুদামের পাশে কয়েকটা টিনের চালা আর বেড়া দিয়ে একটা ঘর তুলে সেখানেই নতুন বৌ এনে তোলার জায়গা করে দিল। পাশেই একটা খোলা বাথরুম আর টয়লেট ছিল আগে থেকেই। সেগুলি একটু বেড়া দিয়ে মেরামত করতে হয়েছিল। মেয়ের বাড়ি থেকেই আসবাব পত্র যা দেবার দিয়ে দিয়েছে। হিরণের মা বৌয়ের জন্য কয়েকটা গহনা তৈরী করিয়ে দিয়েছিল।
আরিফ নতুন বৌকে সাথে নিয়ে আগামীর বীজ বুনে তার সেই “কে আমি” প্রশ্নের জবাব খুঁজে পাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

আবার দেখা হবে ভিন্ন কোন আয়োজনে। এতক্ষণ ভাল থাকুন, আনন্দে থাকুন।

No comments:

Post a Comment

Thank you very much for your comments.