ঈদের পরদিন যথারীতি ভোর বেলা সামান্য কিছু নাশতা পান্তা খেয়ে আমি আর আমার স্ত্রী গাব তলি বাস স্ট্যান্ড থেকে ঝিটকা গামী ভিলেজ লাইনের প্রথম বাস ধরে কলতা বাজার পর্যন্ত এসে আগে থেকে আমার শ্যালক রতন সাহেবের পরামর্শ অনুযায়ী নেমে অপেক্ষা করছি আর পাশের এক চায়ের দোকান থেকে ভেসে আসা গরম চায়ের গন্ধে পাগল হয়ে চায়ের স্বাদ উপভোগ করছি।
আধুনিক যান্ত্রিক সভ্যতার একটি বিশেষ জরুরী উপকরণ মোবাইলে জানতে চাইলাম ‘কিরে শালা তুই কোথায়?’ শুনেই আমার স্ত্রী একটু ধমক দিলেন। তুমি আমার ভাইয়ের সাথে এমন ভাবে কথা বলছ কেন? আচ্ছা বলুন তো শালাকে শালা বলা কি খুব বড় মাপের অপরাধ? সেও যদি সে আবার নৌকা নিয়ে ঘাটে পৌছাতে বিলম্ব করে। কথা অনুযায়ী একটা ইঞ্জিন চালিত নৌকা নিয়ে সে কলতা ঘাটে অপেক্ষা করবে। মানিকগঞ্জে এসে ওকে একবার জানিয়েছি আমরা এখন মানিকগঞ্জ ছাড়লাম।
একটু পরেই দেখি শ্যালক মহোদয় হেলিয়া দুলিয়া আমাদের দিকে এগিয়ে আসছেন। কাছে এসেই তার চির চেনা হাসির সাথে আরে দুলাভাই আমিতো ভেবে ছিলাম আপনারা রাস্তার জ্যামে আটকা পরবেন তাই ভাবলাম একটু দেরি হলে এমন ক্ষতি হবে না।
আচ্ছা ঠিক আছে চল, বাড়ি গিয়ে তোর পাওনাদি পরিশোধ হবে। এখানে আর না। কারণ মুখে যত যাই বলি আমার প্রাণের একটা মায়া আছে না?
বিনে পয়সার কুলি সেজে (কেউ কিন্তু মাইন্ড করবেন না) রতন সাহেব এবং নৌকার মাঝি ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে আগে আগে যেয়ে নৌকায় উঠলেন এই ফাকে কলতার বিশেষ দৈ নিতে চাইলাম তা রতন সাহেব বাধা দিল। বলল তার গিন্নী শাহনাজের দৈ দেখে কলতার কারিগরেরা লজ্জা পায়। বেশ ভাল কথা, তা হলে অন্তত কিছু দুধ নিয়ে চল! আরে দুলাভাই যে কি বলেন সে কর্মটা আমি ভোর বেলা আপনারা যখন ঢাকা থেকে বের হয়েছেন তার আগেই বিজয় নগর বাজার থেকে সেরে এসেছি। বেস বেশ তাহলে বোঝা যাচ্ছে তুই আমার উপযুক্ত শালা। তোর আপা যাই বলুক সব ফাকা।
তাহলে চল নৌকায় উঠি।
কলতা বাজারের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে ইছামতী- চলছে পারাপার-
বাড়ির কাছে চলে এসেছি, এখানে এই ভেসাল (স্থানীয় ভাষায় এক শ্রেণীর মাছ ধরার জাল) থেকে যে কয় দিন ছিলাম তার জন্য মাছ সরবরাহ হয়েছে আর তা রান্না হয়েছে কাঁঠাল গাছের নিচে পাট খড়ির বেড়ার ঘরে মাটির চুলায় ডালপালা দিয়ে রতন গিন্নী শাহনাজের রান্না ঘরে-
বাংলার সোনালী আশ-
আবহমান গ্রাম বাংলার চির চেনা রূপ মাধুরী-
মাধবী লতা আকাশ ছুইতে চাইছে
ভাদ্র মাসে তালগাছে ঝুলে থাকা তালের বাহার, নীচে এই তালের পিঠা-
বাড়ির পাশের খালে স্বাধীন ভাবে গোসল-
হাসের ছবিটি দেখে রাখুন, এগুলিই রান্না হবে।
কাঁঠাল গাছের নিচে পাট খড়ির বেড়ার ঘরে মাটির চুলায় ডালপালা দিয়ে রতন গিন্নী শাহনাজ ওই হাস রান্না করছে-
সাথে তৈরি হচ্ছে রকমারি পিঠা
দুপুরে খাবার পর নৌকা নিয়ে আবার কলতায় নৌকা বাইচ দেখতে যাওয়া। ভাসমান দোকানির পসরা
বাইচ শুরু হয়ে গেছে
ফিরে এসে মুষলধারে বৃষ্টি
পর দিন সকালে শাপলা আর নদী দেখা-
অনেক দিন পরে দেখা হিজল ফুল-
সন্ধ্যা বেলা বাড়ি ফেরার পথে নৌকায় বসে
চার পাচ দিন থেকে একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে সভ্যতা নামের বর্বরতার টানে আবার ফিরে এলাম এই ইট লোহার ঢাকা মহানগরীর এক কোণে।
*** যে দেশ যে মাটি এত কিছু দিয়েছে তার জন্য কি রেখে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কিছু ভেবেছেন?
অপূর্ব......।। বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি...।
ReplyDeleteধন্যবাদ সাহাদত ভাই। আরে বাংলার মুখ দেখব কি! বাংলায়ইতো পরে রয়েছি চিরকাল! আরো থাকব........................!
ReplyDelete