কি রে জামান, কোথায় যাচ্ছিস?
না কোথাও যাচ্ছি না, তোকেই মনে মনে ভাবছিলাম। চল আজ রাতে লং ড্রাইভে যাব!
কোথায়?
কোন দিক নেই। যে দিকে গাড়ির চাকা যেতে চায় সেই দিকেই যাব। এবার কিন্তু যাবার পথে আমি ড্রাইভ করব তুই আসবি ফেরার পথে।
ও! তাহলে তো যেতেই হবে। কিন্তু মা বলেছিল সন্ধ্যায় বড় আপুর বাসায় যাবে! দাঁড়া দেখি মাকে একটু ফাকি দেয়া যায় কিনা। আমি বাড়ি যাই তোকে সময় মত জানাব।
চুপি চুপি বাড়িতে এসেই সোজা গ্যারেজে ঢুকে গাড়ির একটা স্পার্কিঙ্গ প্লাগের তার খুলে রেখে লক্ষ্মী বালকের মত মায়ের কাছে বসে টিভি দেখছে। একটু পরেই বাবা এসে বলল-
কি তোমরা রেডি হওনি?
হ্যাঁ এইতো হচ্ছি। জামানের মা নিজে পোশাক পাল্টাতে চলে গেল। ফিরে এসে আবার বলল কি রে যাবি না?
না মা তোমরা যাও, আমার যেতে ইচ্ছে হচ্ছে না। আমি পরে এক দিন যাব।
জামানের বাবা বের হয়ে দেখে ড্রাইভার এগিয়ে আসছে। কি ব্যাপার মোতালেব, গাড়ি বের করেছ?
স্যার, গাড়ি স্টার্ট নিচ্ছে না!
স্টার্ট নিচ্ছে না মানে কি?
হ্যাঁ স্যার, অনেকক্ষণ চেষ্টা করলাম কিচ্ছু হচ্ছে না!
আচ্ছা ঠিক আছে তুমি একটা ট্যাক্সি ডেকে আন।
বাবা আর মা বের হবার সাথে সাথে জামান বের হয়ে রবিনকে খবর দিয়ে এলো। আব্বু আম্মু চলে গেছে কখন বের হবি?
খেয়ে দেয়ে রাত নয় বা সারে নয়টার দিকে বের হই?
হ্যাঁ ঠিক আছে। আমি গাড়ি নিয়ে তোদের বাড়ির সামনে দিয়ে হর্ন বাজিয়ে সোজা সামনের রাস্তায় যেয়ে দাঁড়াব।
কথা অনুযায়ী জামান গাড়ি নিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড় করে ড্রাইভিং সিট থেকে বের হয়ে পাশের সিটে বসে রইল। একটু পরেই রবিন এসে উঠে জামানের হাত থেকে চাবিটা নিয়েই সোজা টঙ্গির দিকে চালিয়ে দিল। কিছু দূর গিয়ে বলল-
চল দোস্ত আজ নবীনগরের দিকে যাই!
চল, তবে বেশি দূরে যেতে পারব না। তেল বেশি নেই আবার টেনশনে ছিলাম বলে মানি ব্যাগ ফেলে এসেছি।
আরে আমার মানি ব্যাগও রেখে এসেছি! কি আশ্চর্য ব্যাপার? তা হলে ফিরব কেমন করে?
চল এমনিই যত দূর যেতে পারি, তেলের ইনডিকেটর অর্ধেক দেখালেই ব্যাক করবি।
চল তাই করতে হবে আর কি।
নবীনগরের তেরাস্তার মোড়ে এসে বায়ে ঢাকার পথে না গিয়ে রবিন কেন যেন ডানে আরিচার দিকে গাড়ি ঘুড়িয়ে দিল। রাত প্রায় এগারটা বাজে। রাস্তায় নাইট কোচের সাথে অল্প কিছু গাড়ির চলাচল। বলতে গেলে ফাকা রাস্তা। কত স্পিডে চালাচ্ছে কেউ দেখছে না। ভিতরে নীরব, কারো মুখে কোন কথা নেই শুধু সামনে এগিয়ে চলছে তো চলছেই। কোথায় কত দূর এসেছে কেউ কিছুই বুঝতে পারেনি। হঠাৎ করে গাড়ি একটা ঝাঁকুনি দিয়ে থেমে গেল। ড্যাশ বোর্ডে তাকিয়ে দেখে তেলের কাটা নেমে গেছে। গিয়ার নিউট্রাল করে হ্যান্ড ব্রেক চেপে দুই জনেই নেমে পাশে দাঁড়াল।
রবিনই এতক্ষণের নীরবতা ভাঙল।
এখন ফিরব কি ভাবে?
কি জানি!
গাড়িটা লক করে দুই জনে একটু একটু করে হাঁটছে আর শীতের কনকনে বাতাসেও ঘামছে। কোথায় এসেছে কিছুই বুঝতে পারছে না। হাটতে হাটতে বেশ কিছুটা পথ এগিয়ে গেছে। কাউকে যে জিজ্ঞেস করবে রাস্তায় তেমন কাউকে দেখছে না। একটু পরে পরে এ দিক ওদিক থেকে শুধু রাতের কিছু বাস ট্রাক ঝড়ের বেগে আসছে আর যাচ্ছে। এই গতির গাড়ি থামিয়ে জিজ্ঞেস করা যায় না। রাত যতই অন্ধকার হোক অন্ধকারেরও নিজস্ব একটা আলো থাকে। সেই আলোতেও আশে পাশে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। চারিদিকে নিঝুম নিস্তব্ধ। আশে পাশের কোন গ্রামের কোন বাড়িতে আলো দেখা যাচ্ছে না। আদৌ কোন গ্রাম বা বাড়ি আছে কিনা তাও বোঝা যাচ্ছে না। আসা যাওয়ার গাড়ির হেড লাইটেও কোন বাড়ি ঘরের ছায়া নেই। এর মধ্যে যত দূর হেটে এসেছে তাতে শুধু রাস্তার দুই পাশের ক্ষেতের সবুজ ছাড়া আর কিচ্ছু নেই।
হঠাৎ ডান দিকের দুই জমির আল ধরে এক জনকে দেখল মেইন রোডের দিকে আসছে। গায়ে চাদর জড়ানো। মাথা সহ মুখের অধিকাংশই ঢেকে রেখেছে। লোকটাকে দেখে দুজনেই থমকে দাঁড়াল। ধীর শান্ত পায়ে এগিয়ে এসে বড় রাস্তায় উঠে ওরা যেখানে গাড়ি রেখে এসেছে তার উলটো দিকে যাচ্ছে। রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে রবিন ডেকে বলল-
এই যে ভাই একটু শোনেন!
লোকটা সামনের দিকেই যাচ্ছিল। ওর ডাক শুনে মুখটা একটু ঘুড়িয়ে ওদের দিকে দেখল।
আচ্ছা এটা কোন জায়গা?
কোন উত্তর নেই। আচ্ছা আমরা একটা বিপদে পরেছি এখন কি করব, গাড়ির তেল দরকার। কোথায় পাব বলতে পারেন?
লোকটা হাতে ইশারা করে কাছে ডাকল। ওরা কি করবে না করবে কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওদের অবচেতন পা গুলি ওই লোকটার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কাছাকাছি গিয়েও লোকটার মুখ ভাল করে বুঝতে পারল না, চাদরে ঢাকা। লোকটা চাদরের ভিতর থেকে দুই হাত বেড় করে রাস্তার উপর নামিয়ে রেখে হাতে ইশারা করে দেখাল নিয়ে যেতে। লোকটা বোতল দুইটা নামিয়ে রেখেই যে দিকে যাচ্ছিল সেই দিকে এগিয়ে গেল। এবার একটু জোড়ে হাঁটছে। পিছন থেকে ডেকে জিজ্ঞেস করল এটা কোন জায়গা? আগের মত কোন জবাব নেই। ওরা দুই জনেই এক এক করে হাতে নিয়ে দেখল দুইটা বড় দুই লিটারের পানির বোতল ভরা। কি দিল এটা? লোকটা কোন কথা বলল না কেন? ভয়ে ভয়ে হাতে নিয়ে বোতলের মুখ খুলেই বুঝল এগুলি ভরা পেট্রোল। সন্দেহ হল। আবার শুকে দেখে বুঝল, না ভিন্ন কিছু নয়, পরিষ্কার পেট্রোল। ওদের অবাক দৃষ্টি অন্ধকারের মধ্যেও একে অপরের দিকে এবং হঠাৎ আগত এই অচেনা রহস্যময় লোকটার পথের দিকে তাকাল। কিন্তু লোকটা ততক্ষণে আর নেই। এই অন্ধকারে যত দূর দেখা যাবার কথা তার আগেই নেই হয়ে গেছে।
দুই জনে দুই বোতল হাতে নিয়ে ঠাণ্ডায় কাঁপতে কাঁপতে গাড়ির কাছে এসে বোতল খালি করে চার লিটার তেল ভরে হাতের খালি বোতলটা পিছনের সিটের নিচে ফেলে গাড়িতে বসে যেই চাবি ঘুরিয়েছে অমনি গাড়ি স্টার্ট। গাড়ি ঘুড়িয়ে যে পথে এসেছিল সেই পথে। প্রায় দেড় ঘণ্টা চালাবার পর রাস্তার পাশের দোকানের সাইন বোর্ড দেখে চিনল এটা মানিকগঞ্জ। আবার সেই আগের মত একটু ঝাঁকুনি দিয়ে গাড়ি থেমে গেল। রাস্তার দুই পাশে দুইটা পেট্রোল পাম্প। ওই এক পাম্পের লোকদের নিজেদের এই বিপদের কথা বলে জামান তার নিজের হাতের ঘড়ি খুলে বলল এই ঘড়িটা রেখে আমাদের ঢাকায় যাবার মত তেল দিন। কাল দুপুরের মধ্যে এসে টাকা দিয়ে ঘড়ি নিয়ে যাব। ঘড়িটা খোলার আগে দেখে এখন রাত বারটা চুয়াল্লিশ মিনিট। দামি ঘড়িটা দেখে পথের মানুষকেও বিশ্বাস করে ট্যাঙ্ক ভরেই তেল দিয়ে দিল। তেল ভরে জামান নিজেই ড্রাইভ করে রাত তিনটা চৌদ্দ মিনিটে বাড়িতে এসে পৌঁছুল। সেই বোতলটা এখনও জামানের বাড়ির গ্যারেজে পরে আছে। শুধু বোতলটা যে দিয়েছে তার কোন হদিস বা পরিচয় কিছুই পায়নি। পর দিন মানিকগঞ্জে যেয়ে পাম্পের টাকা দিয়ে ঘড়িটা নিয়ে গত রাতে যেখানে গাড়ি থেমে গিয়েছিল সেখান অবধি গিয়ে চিনতে পারল শিবালয়ের কাছাকাছি এক গ্রাম।
*** শ্যামলে সবুজে মেশান এই দেশটাকে ভালবেসে যেন আর শেষ হয় না।
না কোথাও যাচ্ছি না, তোকেই মনে মনে ভাবছিলাম। চল আজ রাতে লং ড্রাইভে যাব!
কোথায়?
কোন দিক নেই। যে দিকে গাড়ির চাকা যেতে চায় সেই দিকেই যাব। এবার কিন্তু যাবার পথে আমি ড্রাইভ করব তুই আসবি ফেরার পথে।
ও! তাহলে তো যেতেই হবে। কিন্তু মা বলেছিল সন্ধ্যায় বড় আপুর বাসায় যাবে! দাঁড়া দেখি মাকে একটু ফাকি দেয়া যায় কিনা। আমি বাড়ি যাই তোকে সময় মত জানাব।
চুপি চুপি বাড়িতে এসেই সোজা গ্যারেজে ঢুকে গাড়ির একটা স্পার্কিঙ্গ প্লাগের তার খুলে রেখে লক্ষ্মী বালকের মত মায়ের কাছে বসে টিভি দেখছে। একটু পরেই বাবা এসে বলল-
কি তোমরা রেডি হওনি?
হ্যাঁ এইতো হচ্ছি। জামানের মা নিজে পোশাক পাল্টাতে চলে গেল। ফিরে এসে আবার বলল কি রে যাবি না?
না মা তোমরা যাও, আমার যেতে ইচ্ছে হচ্ছে না। আমি পরে এক দিন যাব।
জামানের বাবা বের হয়ে দেখে ড্রাইভার এগিয়ে আসছে। কি ব্যাপার মোতালেব, গাড়ি বের করেছ?
স্যার, গাড়ি স্টার্ট নিচ্ছে না!
স্টার্ট নিচ্ছে না মানে কি?
হ্যাঁ স্যার, অনেকক্ষণ চেষ্টা করলাম কিচ্ছু হচ্ছে না!
আচ্ছা ঠিক আছে তুমি একটা ট্যাক্সি ডেকে আন।
বাবা আর মা বের হবার সাথে সাথে জামান বের হয়ে রবিনকে খবর দিয়ে এলো। আব্বু আম্মু চলে গেছে কখন বের হবি?
খেয়ে দেয়ে রাত নয় বা সারে নয়টার দিকে বের হই?
হ্যাঁ ঠিক আছে। আমি গাড়ি নিয়ে তোদের বাড়ির সামনে দিয়ে হর্ন বাজিয়ে সোজা সামনের রাস্তায় যেয়ে দাঁড়াব।
কথা অনুযায়ী জামান গাড়ি নিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড় করে ড্রাইভিং সিট থেকে বের হয়ে পাশের সিটে বসে রইল। একটু পরেই রবিন এসে উঠে জামানের হাত থেকে চাবিটা নিয়েই সোজা টঙ্গির দিকে চালিয়ে দিল। কিছু দূর গিয়ে বলল-
চল দোস্ত আজ নবীনগরের দিকে যাই!
চল, তবে বেশি দূরে যেতে পারব না। তেল বেশি নেই আবার টেনশনে ছিলাম বলে মানি ব্যাগ ফেলে এসেছি।
আরে আমার মানি ব্যাগও রেখে এসেছি! কি আশ্চর্য ব্যাপার? তা হলে ফিরব কেমন করে?
চল এমনিই যত দূর যেতে পারি, তেলের ইনডিকেটর অর্ধেক দেখালেই ব্যাক করবি।
চল তাই করতে হবে আর কি।
নবীনগরের তেরাস্তার মোড়ে এসে বায়ে ঢাকার পথে না গিয়ে রবিন কেন যেন ডানে আরিচার দিকে গাড়ি ঘুড়িয়ে দিল। রাত প্রায় এগারটা বাজে। রাস্তায় নাইট কোচের সাথে অল্প কিছু গাড়ির চলাচল। বলতে গেলে ফাকা রাস্তা। কত স্পিডে চালাচ্ছে কেউ দেখছে না। ভিতরে নীরব, কারো মুখে কোন কথা নেই শুধু সামনে এগিয়ে চলছে তো চলছেই। কোথায় কত দূর এসেছে কেউ কিছুই বুঝতে পারেনি। হঠাৎ করে গাড়ি একটা ঝাঁকুনি দিয়ে থেমে গেল। ড্যাশ বোর্ডে তাকিয়ে দেখে তেলের কাটা নেমে গেছে। গিয়ার নিউট্রাল করে হ্যান্ড ব্রেক চেপে দুই জনেই নেমে পাশে দাঁড়াল।
রবিনই এতক্ষণের নীরবতা ভাঙল।
এখন ফিরব কি ভাবে?
কি জানি!
গাড়িটা লক করে দুই জনে একটু একটু করে হাঁটছে আর শীতের কনকনে বাতাসেও ঘামছে। কোথায় এসেছে কিছুই বুঝতে পারছে না। হাটতে হাটতে বেশ কিছুটা পথ এগিয়ে গেছে। কাউকে যে জিজ্ঞেস করবে রাস্তায় তেমন কাউকে দেখছে না। একটু পরে পরে এ দিক ওদিক থেকে শুধু রাতের কিছু বাস ট্রাক ঝড়ের বেগে আসছে আর যাচ্ছে। এই গতির গাড়ি থামিয়ে জিজ্ঞেস করা যায় না। রাত যতই অন্ধকার হোক অন্ধকারেরও নিজস্ব একটা আলো থাকে। সেই আলোতেও আশে পাশে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। চারিদিকে নিঝুম নিস্তব্ধ। আশে পাশের কোন গ্রামের কোন বাড়িতে আলো দেখা যাচ্ছে না। আদৌ কোন গ্রাম বা বাড়ি আছে কিনা তাও বোঝা যাচ্ছে না। আসা যাওয়ার গাড়ির হেড লাইটেও কোন বাড়ি ঘরের ছায়া নেই। এর মধ্যে যত দূর হেটে এসেছে তাতে শুধু রাস্তার দুই পাশের ক্ষেতের সবুজ ছাড়া আর কিচ্ছু নেই।
হঠাৎ ডান দিকের দুই জমির আল ধরে এক জনকে দেখল মেইন রোডের দিকে আসছে। গায়ে চাদর জড়ানো। মাথা সহ মুখের অধিকাংশই ঢেকে রেখেছে। লোকটাকে দেখে দুজনেই থমকে দাঁড়াল। ধীর শান্ত পায়ে এগিয়ে এসে বড় রাস্তায় উঠে ওরা যেখানে গাড়ি রেখে এসেছে তার উলটো দিকে যাচ্ছে। রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে রবিন ডেকে বলল-
এই যে ভাই একটু শোনেন!
লোকটা সামনের দিকেই যাচ্ছিল। ওর ডাক শুনে মুখটা একটু ঘুড়িয়ে ওদের দিকে দেখল।
আচ্ছা এটা কোন জায়গা?
কোন উত্তর নেই। আচ্ছা আমরা একটা বিপদে পরেছি এখন কি করব, গাড়ির তেল দরকার। কোথায় পাব বলতে পারেন?
লোকটা হাতে ইশারা করে কাছে ডাকল। ওরা কি করবে না করবে কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওদের অবচেতন পা গুলি ওই লোকটার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কাছাকাছি গিয়েও লোকটার মুখ ভাল করে বুঝতে পারল না, চাদরে ঢাকা। লোকটা চাদরের ভিতর থেকে দুই হাত বেড় করে রাস্তার উপর নামিয়ে রেখে হাতে ইশারা করে দেখাল নিয়ে যেতে। লোকটা বোতল দুইটা নামিয়ে রেখেই যে দিকে যাচ্ছিল সেই দিকে এগিয়ে গেল। এবার একটু জোড়ে হাঁটছে। পিছন থেকে ডেকে জিজ্ঞেস করল এটা কোন জায়গা? আগের মত কোন জবাব নেই। ওরা দুই জনেই এক এক করে হাতে নিয়ে দেখল দুইটা বড় দুই লিটারের পানির বোতল ভরা। কি দিল এটা? লোকটা কোন কথা বলল না কেন? ভয়ে ভয়ে হাতে নিয়ে বোতলের মুখ খুলেই বুঝল এগুলি ভরা পেট্রোল। সন্দেহ হল। আবার শুকে দেখে বুঝল, না ভিন্ন কিছু নয়, পরিষ্কার পেট্রোল। ওদের অবাক দৃষ্টি অন্ধকারের মধ্যেও একে অপরের দিকে এবং হঠাৎ আগত এই অচেনা রহস্যময় লোকটার পথের দিকে তাকাল। কিন্তু লোকটা ততক্ষণে আর নেই। এই অন্ধকারে যত দূর দেখা যাবার কথা তার আগেই নেই হয়ে গেছে।
দুই জনে দুই বোতল হাতে নিয়ে ঠাণ্ডায় কাঁপতে কাঁপতে গাড়ির কাছে এসে বোতল খালি করে চার লিটার তেল ভরে হাতের খালি বোতলটা পিছনের সিটের নিচে ফেলে গাড়িতে বসে যেই চাবি ঘুরিয়েছে অমনি গাড়ি স্টার্ট। গাড়ি ঘুড়িয়ে যে পথে এসেছিল সেই পথে। প্রায় দেড় ঘণ্টা চালাবার পর রাস্তার পাশের দোকানের সাইন বোর্ড দেখে চিনল এটা মানিকগঞ্জ। আবার সেই আগের মত একটু ঝাঁকুনি দিয়ে গাড়ি থেমে গেল। রাস্তার দুই পাশে দুইটা পেট্রোল পাম্প। ওই এক পাম্পের লোকদের নিজেদের এই বিপদের কথা বলে জামান তার নিজের হাতের ঘড়ি খুলে বলল এই ঘড়িটা রেখে আমাদের ঢাকায় যাবার মত তেল দিন। কাল দুপুরের মধ্যে এসে টাকা দিয়ে ঘড়ি নিয়ে যাব। ঘড়িটা খোলার আগে দেখে এখন রাত বারটা চুয়াল্লিশ মিনিট। দামি ঘড়িটা দেখে পথের মানুষকেও বিশ্বাস করে ট্যাঙ্ক ভরেই তেল দিয়ে দিল। তেল ভরে জামান নিজেই ড্রাইভ করে রাত তিনটা চৌদ্দ মিনিটে বাড়িতে এসে পৌঁছুল। সেই বোতলটা এখনও জামানের বাড়ির গ্যারেজে পরে আছে। শুধু বোতলটা যে দিয়েছে তার কোন হদিস বা পরিচয় কিছুই পায়নি। পর দিন মানিকগঞ্জে যেয়ে পাম্পের টাকা দিয়ে ঘড়িটা নিয়ে গত রাতে যেখানে গাড়ি থেমে গিয়েছিল সেখান অবধি গিয়ে চিনতে পারল শিবালয়ের কাছাকাছি এক গ্রাম।
*** শ্যামলে সবুজে মেশান এই দেশটাকে ভালবেসে যেন আর শেষ হয় না।
No comments:
Post a Comment
Thank you very much for your comments.