Tuesday, 4 December 2012

নক্ষত্রের গোধূলি-৪৭ (অধ্যায় ৪)

[পূর্ব প্রকাশের পরঃ নক্ষত্রের গোধূলি-৪৬, কথা বলতে বলতে ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে এগিয়ে গেলেন গেটের দিকে। ছেলেটাও সাথে এসে গেটে দাঁড়ালো।
আচ্ছা ভাই ভালো থাকবেন।
হাত নেড়ে বিদায় জানিয়ে এগিয়ে গিয়ে টিকেট দেখিয়ে লাগেজটা বক্সে দিয়ে গাড়িতে উঠে বসলেন।]
শীতের ভোর, ঘন কুয়াশা ভরা। এখনো অন্ধকার। সারা টার্মিনাল জুড়ে ফ্লাড লাইট জ্বলছে তবুও আলো নেই। লাইট গুলি ঝাপসা লাগছে। কোচের ভিতরে উঠে একটু উষ্ণতা অনুভব হল, মনে হচ্ছে অন্তত এক ঘণ্টা আগে থেকে হিটার চালিয়ে রেখেছ। এতক্ষণ ঠাণ্ডায় জমে যাবার অবস্থা থেকে রেহাই পেলেন। আরাম করে বসে চোখ বন্ধ করলেন। মিনিট দশেক পরেই কোচ ছেড়ে দিল। টার্মিনাল থেকে বের হয়ে এগিয়ে চলেছে অজানা ওবান শহরের দিকে। সেখানে কি অপেক্ষা করছে কে জানে? চোখ বন্ধ কিন্তু, গাড়ি চলার গতি, মোড় নেয়ার ভাব অনুভব করেই বুঝলেন শহর এলাকা ছেড়ে এসেছে। গাড়ি এখন মটর ওয়েতে চলছে।
সারা রাত তো নিদ্রাহীন ভাবেই গেছে, ভেবেছিল একটু তন্দ্রার ভাব যদি হয় ভালো লাগবে। সিটের পিছনে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করলেন। মনি তুমি আমাকে ইংল্যান্ডে রেখে গেছ। আমি এখন ইংল্যান্ড ছেড়ে চলে এসেছি স্কটল্যান্ডে, যাচ্ছি আরেক অজানা গন্তব্যে।

বন্ধ চোখের পাতার আকাশে ভেসে এসেছে কত দিন আগের উড়ে যাওয়া মেঘের মত সেই ছবি, যেদিন একমাত্র ঘনিষ্ঠ বন্ধু গেণ্ডারিয়ার শাহিনকে নিয়ে কল্যাণপুরে গিয়েছিল স্কুল ফাইনালের পরে বোনের বাড়িতে বেড়াতে আসা মনিরাকে দেখাবার জন্য। আগে থেকে কিছু বলেনি। ও বাড়িতে গিয়ে দুলাভাইয়ের সাথে, আপার সাথে গল্প গুজব করে চা নাস্তা খেয়ে চলে এসেছিল। আসার পথে শাহিনকে বলল,
একটা কথা বলতো।
কি কথা?
মনিরাকে কেমন দেখলে?
মানে কি?
মানে আবার কি, বললাম মনিরাকে দেখে তোমার কি মনে হোল?
হ্যাঁ ভালো মেয়ে।
ব্যাস শুধু ভালো মেয়ে আর কিছু না?
আর কি শুনতে চাও, তুমি কি কিছু ভেবে জিজ্ঞেস করছ?
যদি তাই হয়?
তাহলে সে কথা আমাকে আগে বলবতো, সে দেখা আর এই দেখার মধ্যে পার্থক্য আছে না?
পার্থক্য আবার কি?
বারে, এমনি সাধারণ একজন মেয়েকে দেখা আর আমার বন্ধুর বৌ হবে এমন একজন মেয়ে বাছাই করা, এতে আকাশ পাতাল পার্থক্য আছে না?
তুমি সাধারণ ভাবে যা দেখেছ তাই দিয়েই বলতে পার না?
হ্যাঁ তা বলা যায় কিন্তু বিষয়টা কি আমাকে বলবেতো, ডুবে ডুবে জল খাচ্ছ নাকি?
কি যে বল সেরকম হলে তুমি জানতে না?
তাহলে হটাত আয়োজন করে আমাকে নিয়ে এসে ওকে দেখানোর মানে কি?
মানে টানে যাই হোক, তুমি কি দেখলে তাই বল।
হ্যাঁ এক নজরেই চোখে পরার মত মেয়ে।

ব্যাস এইতো, এইটাই আমি চাইছিলাম। হ্যাঁ এখন বল তুমি যা ভাবছ আমি যদি সেই ভাবে বলি তাহলে এ ব্যাপারে তোমার মতামত কি?
দেখ রাশেদ, এতো সংক্ষিপ্ত দেখা দেখে আমি কিছু বলতে পারছিনা বলেছি তো।
তাহলে কিভাবে বলতে পারবে?
আমাকে আবার দেখতে হবে।
তাহলে চল এখনি যাই।
ধুর বোকা, এখন গেলে আপা দুলাভাই কি ভাববে?
ভাবুক, তাতে কি আসে যায়? আমরা কি বাঁদরামি করতে যাচ্ছি?
না না শোন, আজ কোন অবস্থাতেই হতে পারে না বরং আমরা কাল আসি।
ঠিক আছে তাই হবে।
কাল আবার গিয়েছিল। ফেরার পথে শাহিন বলল হ্যাঁ দেখলাম তোমার জন্য উপযুক্ত মেয়ে। আর এ ছাড়া অন্যান্য যা দেখতে হয় এখানে সেটা প্রযোজ্য নয় যেহেতু তোমাদের একই ফ্যামিলি। তবে একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা হোল শুধু তোমার বা আমাদের মত হলেই তো হবেনা, ওর মতও জানা দরকার।
তুমি কি ওর সাথে এব্যাপারে কিছু আলাপ করেছ?
না শাহিন আলাপ বলতে যা বোঝায় সেরকম কিছু না তবে আমার মনে হয় ওর অমত হবেনা।
কি ভাবে বুঝলে?

কেন তুমি যে ভাবে বুঝেছ, আজ এতক্ষণ ওর সাথে একা একা কথা বলে কিছু বুঝনি? আমিও সে ভাবেই বুঝেছি, আমি যে ওকে কবে থেকে দেখছি তা আমার মনেও নেই।
আমিতো সরাসরি জিজ্ঞেস করেছি।
তা কি বলল, ও তো কিছু বলার মেয়ে না।
না কিছু বলেনি, ও ভ্যাবাচেকা খেয়ে মাথা নিচু করে চুপ করে বসে ছিল। কিছু বলেনি, ওর মৌনতা দেখে অনুমান করেছি। এই জন্যেই, শুধু এই আলাপ টুকুর জন্যই আমি সেদিন বলেছি আবার দেখতে হবে। তাহলে এখন কি করবে?
তুমি বল কি করতে হবে, খালাম্মাকে বলতে হবে তো?
হ্যাঁ।
চল আজই বলে যাই।
চল।
শাহিন তার খালাম্মাকে বলছিল।
খালাম্মা, আপনি যে রাশেদের জন্য মেয়ে খুঁজছেন সে মেয়ে তো আপনাদের কাছেই রয়েছে।
কার কথা বলছ তুমি?
কেন মনিরা।
মনিরা!
মনিরাকে তুমি কোথায় দেখলে?

কল্যাণপুরে ওর বোনের বাসায় দেখেছি, কোন দিক দিয়ে ওকে অপছন্দ করার মত বলেন, আমার মনে হয় রাশেদের জন্য উপযুক্ত মেয়ে।
না সে কথা বলছি না ও ভালো মেয়ে সন্দেহ নেই। তবে, আমাকে যে একটু দেখতে হবে।
বেশ তো দেখেন, তাহলে চলেন কাল যাই।
না কাল না, দেখি আমি তোমার খালুর সাথে আলাপ করে নেই তারপর তোমাকে জানাবো।
সেই রাতেই রাশেদের বাবার কাছে কথাটা তুলতেই উনি যা বললেন সে কথা রীতিমত অবাক হবার মত। রাশেদের বাবা বললেন আমি আর মোসলেম একদিন ওদের বাড়ির পাশের যে দীঘি সে দীঘির পাড়ে আম গাছ তলায় বসে গল্প করছিলাম তখন দেখি দীঘির পানির কাছে কাদায় বসে একা একটা ছোট্ট মেয়ে কাদা পানি দিয়ে খেলছে। আমি মোসলেমকে জিজ্ঞেস করলাম এই মেয়েটা কার? ও আমাদের সালাম ভাইয়ের মেঝ মেয়ে মনিরা। সেই তখন থেকে এই মেয়ে আমার চোখে। এর পরের ঘটনা খুব দ্রুত ঘটে গেল। মনিকে বৌ করে যেদিন প্রথম নিয়ে এলো, আসতে আসতে ভোর হয়ে গিয়েছিলো। গাড়ি এসে বাসার নীচে দাঁড়ালো। ছোট খালা, সেঝ মামি এরা এগিয়ে এলো বৌ নামাবার জন্য। রাশেদ তাদের বৌ নামাতে দেয়নি, বলেছিল
আম্মা কোথায়?
তোর আম্মা তো উপরে আয় তুই নেমে আয় আমরা বৌ নিয়ে যাই।
না আম্মাকে ডাকেন আম্মা এসে তার বৌ নিয়ে যাবে।

কল্যাণপুর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত আসতে স্ত্রীর পাশে বসেও গায়ে কোন ছোঁয়া লাগতে দেয়নি। আম্মাকেই আসতে হয়েছিলো বৌ নামাবার জন্যে। উপরে যেতে যেতে আকাশ পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। সেঝ মামি রাত জাগা বৌয়ের শাড়ি, ওড়না, মাথার খোপা ঠিকঠাক করে মুখের মেকআপ রি টাচ করে আম্মার সামনে নিয়ে গেলে আম্মা বৌয়ের হাত ধরে নিজের ছেলের দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন
এই হোল আমার অবোধ, যে নিজের ভাতটাও মাখিয়ে খেতে পারে না, লবণ ঠিক আছে কিনা বুঝে না। এতদিন আমি দেখে রেখেছি আজ থেকে এখন থেকে তুমি দেখবে। এর দায়িত্ব তোমার বলে ছেলের হাত তুলে দিয়েছিলেন বৌয়ের হাতে।
নতুন বালিকা বৌ মনিরা অবাক হয়ে শাশুড়ির মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল। বিয়ের পরের দিনেই দুপুরে খাবার টেবিলে বাবা, ভাইবোন সহ সবাই খেতে বসেছে। রাশেদ সাহেব প্লেটে ভাত নিয়ে নাড়াচাড়া করছিলেন। মা সেটা লক্ষ্য করে বৌকে রান্না ঘরে ডেকে বলেছিলেন তুমি ওর প্লেট থেকে একটু ভাত মুখে দিয়ে দেখত। সত্যিই মার কথা মত সেই প্লেট এনে একটু লবণ আর একটু ঝোল নিয়ে মেখে তার সামনে দিয়েছিলেন এর পর দিব্যি তা খেয়ে নিয়েছিলেন। তাই দেখে মা বললেন দেখলে তো! এর কয়েক দিন পর বিকেলে শাহিনের বাসায় গিয়েছিল, গিয়ে দেখে সেখানে বন্ধুরা দশ বারো জনে মিলে রাজকীয় হালে গাজার আসর বসিয়েছে। গোলাপ জলে ধোয়া কলকি, ছিপি, রংপুর থেকে আনা গাজা বিশেষ কাতানি দিয়ে কাটা। গোলাপের শুকনো পাপড়ি মেশানো গোলাপ জলে গোলা তেঁতুল কাঠের গুড়ি দিয়ে তৈরী টিকার আগুন। চলছে, সবাই নেশায় বিভোর হয়ে আছে।
শাহিন বলল আরে রাশেদ ঠিক সময় মত এসেছ, নাও ধর টান দাও।

না না কি বল, আমার বৌ টের পাবে। শাহিন, তুমি যাকে এনে দিলে তুমি চেন না তাকে?
কি যে বল রাশেদ, কিচ্ছু টের পাবে না টেনেই দেখ কি জিনিস। এক ছিলিমে যেমন তেমন, দুই ছিলিমে মজা, তিন ছিলিমে উজির নাজির, চার ছিলিমে রাজা। তো তুম আজ রাজা বনকে বিবিকা পাস যাওগে অওর উসকো রানি বানা দেওগে। নাও নাও ধর, টান দাও।
যাই হোক চাপাচাপিতে কয়েকটা টান দিয়েছিলো। এর পর পুরনো ঢাকার মিষ্টি আর চা, একেবারে সোনায় সোহাগা। নেশা ধরে গিয়েছিল। চোখ লাল টকটকে, মুখে কথার ফুলঝুরি, কণ্ঠ গম্ভীর, পা টলমল। বাসায় এসে পরবি তো পর মায়ের সামনে। মা ই দরজা খুলেছেন। মুখের দিকে তাকিয়েই কিছু না বলে হাত ধরে টেনে সোজা রান্না ঘড়ে নিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন
কোথায় গিয়েছিলি, তোর চোখ লাল কেন?
কোথায় আবার যাব বলে গেলাম না গেণ্ডারিয়া যাচ্ছি শাহিনের বাসায়।
মোটর সাইকেল চালিয়ে এসেছি চোখ তো লাল হবেই, বাতাস ছিল আর চশমা নেই নি।
চশমা নিসনি তো তোর চোখে এটা কি?
আর কোন কৈফিয়ত দিয়ে লাভ নেই, মাথা নিচু হয়ে গেছে। মা বলেছিলেন, সেই নেশার মধ্যেই এখনো মনে আছে। আজ কাল তোদের মত ছেলেরা যেখানে সেখানে গাজা খায়, খবরদার আর যেন কোন দিন দেখি না, ঘরে বৌ এনেছি পরের মেয়ে। মার কাছ থেকে ছাড়া পেয়ে নিজের ঘড়ে যেতেই মা যেভাবে হাত চেপে ধরেছিলেন ঠিক সেই একই কায়দায় বৌও হাত চেপে ধরে জিজ্ঞেস করেছিল
মা কি বলল?
কি বলবে আবার, কিছু না।

কিছু না যদি তবে রান্না ঘড়ে নিয়ে গেল কেন? তোমার চোখ লাল কেন? গায়ে এমন কড়া তামাকের গন্ধ কেন? তোমার কণ্ঠ এত গম্ভীর কেন?
রাশেদ সাহেব কত কেনর জবাব দিবেন? স্বীকার করলেন।
গেণ্ডারিয়া গিয়েছিলাম, ওখানে ওরা রাজকীয় ভাবে গাজার আসর বসিয়েছিল, ওরা চাপাচাপি করেছে বলে লোভ হোল তাই একটু-।
তাই একটু টান দিয়েছ?
হ্যাঁ।
সাথে সাথে স্বামীকে বুকে জড়িয়ে ধরেছিল মনি।
তুমি গাজা খেয়েছ বলে কষ্ট পেলেও খুব শান্তি পেলাম যে তুমি আমাকে লুকবার চেষ্টা করনি, মিথ্যা বলনি, সব কিছু স্বীকার করেছ। যাক, যা হয়েছে তা হয়েছে। ঐ ভাবে বুকে জড়ানো অবস্থায়ই গালে চুমুর পর চুমু খেয়ে বলল আমার সোনা মানিক, আমি তোমার কাছেই এসেছি, এ বাড়িতে তুমিই আমার আশ্রয় বল আর যাই বল সবই তুমি, তোমার কিছু হলে আমি যে ধুলোয় মিশে যাবো। আর কখনো এমন খেয়ো না, মনে থাকবে?
হ্যাঁ থাকবে।
না, তার পরে আর কখনো রাশেদ সাহেব তেমন কিছু করেনি। কিছু দিন যাবার পর আস্তে আস্তে রাশেদের কার্যকলাপ দেখে মনিরা বলেছিল
তোমাকে এতদিন দেখে যেরকম মনে হয়েছে তুমি সেরকম নও।
কেন, আমাকে আবার কেমন মনে হয়েছে?
তুমি একে বারে শিশুর মত নাদু গোপাল। এতো দিন তোমার ব্যক্তিত্ব, তোমার চলাফেরা দেখে মনে হত তুমি খুব কঠিন মানুষ।
ঠিকই বলেছ। কঠিনই, তবে বাইরে, তোমার কাছে নয়। তোমার কাছে আমি যেন কেমন হয়ে যাই।

আহারে আমার নাদু গোপালরে। থাক, তুমি এমন করে আমার নাদু গোপাল হয়েই থেকো। আমি তোমাকে সারা জীবন এই ভাবেই বুকে করে রাখবো।
বাইরে থেকে ফেরার পর মা বৌকে ডেকে বলতো বৌমা তোমার নাদু এসেছে যাও খাবার রেডি কর। তো সেই মনিরা, যার বাবা মা ভাই বোন সবাই ডাকে মনিরা বলে সেই মনিরা আজ তার মনি, তার নয়ন মনি। যাকে ছাড়া সে একটা পা ও ফেলতে পারেনা, এক কাপ চা খেতে হলেও মনি দেখে না দিলে সে চা রাশেদ সাহেব খেতে পারেনা। মনি তাকে সব দিয়েছে। মায়া মমতা, সোহা্‌গ, আদর যত্ন, ভালোবাসা, মন প্রাণ, জীবন সব দিয়েছে। উজাড় করেই দিয়েছে। তার সব কিছু বুঝেও নিয়েছে। কখন ক্ষুধা লেগেছে, কখন পানি খাবে, কখন চা খাবে, কখন শীত লাগছে মুখের দিকে তাকিয়েই সব বুঝতে পারে। বাইরে থেকে রাশেদের ফিরতে দেরি হলে মনি তার শার্ট গায়ে বাড়িতে ঘুরত, রান্না ঘড়ে মার কাছে বসে থাকতো। মা জিজ্ঞেস করতো বৌমা কি গায়ে দিয়েছ? কেন দেখছেন না আপনার নাদুর জামা, দেখেন আপনার নাদুর গন্ধ বলেই মার নাকের সামনে নিয়ে ধরত। বালিকা বৌয়ের কাণ্ড দেখে মা হাসতেন। বারির কাজের মেয়েটা দাড়িয়ে আছে, ধোয়ার জন্য কাপর নিতে আর মনিরা ময়লা কাপড়ের ঝুড়ি থেকে বেছে বেছে তার গেঞ্জি, মুজা, আন্ডার ওয়ার আলাদা করে রেখে বাকি কাপর গুলি কাজের মেয়ের হাতে দিতে দেখে রাশেদ জিজ্ঞেস করেছে ওগুলি আলাদা করে রাখলে কেন?
ওগুলি ওদের কাছে দেই না, ওগুলি আমি ধুই।

কেন? ওগুলি সরাসরি তোমার গায়ে লেগে থাকে তাই তোমার গায়ের ছোঁয়া অন্য কারো হাতে দিতে আমার ভালো লাগেনা।
ধীরে ধীরে কখন যে এই মনি তার সমস্ত মন প্রাণ জুড়ে নিয়েছে সে কথা তখনই বুঝে যখন মনি একটুক্ষণের জন্য কাছে থাকেনা, মনে হয় বাড়িতে সবই আছে শুধু প্রাণ নেই। মনি তার জন্য তার মায়ের কাছে যেয়েও দুই দিন থাকতে পারেনা। আমার পাগলটা কি করছে কে জানে, না মা আমি কালই চলে যাব। তোমার জামাই আসতে পারলে আর দুই এক দিন থাকতে পারতাম। জানো না মা সারা আলমারিতে একটা শার্ট খুঁজে পাবে না, আলনা থেকে প্যান্ট খুঁজে পাবে না, জুতা পাবেনা মুজা পাবেনা। সেবারে আলমারির ড্রয়ারে টাকা রেখে এসেছিলাম সে টাকা খুঁজে না পেয়ে মায়ের কাছ থেকে টাকা নিয়ে চলেছে। গোসল করতে যাবে টাওয়েল নিতে ভুলে যাবে, নয়তো লুঙ্গি নিতে ভুল হবে। ক্ষুধা লেগেছে কিনা তাও মাকে বলবে না। বলবে কি বুঝলে তো বলবে? মা যাই হোক ডেকে খাইয়ে দিলে খেয়ে বিছানায় শুয়ে বা সোফায় বসে বই পরবে আর কিছু করবেও না কোথাও যাবেন না। বড় আপা দুঃখ করে বলে তুই দুই এক দিন আমার কাছে এসে থাকিস না কেন? মনি বলেছে আমি এখানে এসে থাকবো আর তোমরা আমাকে যে পাগল গছিয়ে দিয়েছ সে পাগল দেখবে কে? তোমরা ওকে বাইরে থেকে দেখে যেমন কঠিন মনে কর আসলে ওটা ওর খোলস, ভিতরে একেবারে আলাদা, বাচ্চা ছেলেদের মত। আমি না থাকলে মা ছাড়া কারো হাতে পানি খাবে না, চা খাবে না। মা কতক্ষণ পারে? আমি জিজ্ঞেস করি আমি না থাকলে তুমি এতো এমন কর কেন, নিজে একটু বুঝে চলতে পার না? এখন তুমি বড় হয়েছ, তোমার বৌ আছে, দুদিন পরে বাবা হবে। ও বলে তুমি না থাকলে আমার কিছুই ভালো লাগে না, কাউকে ভালো লাগে না, কিছু করতেও ইচ্ছা করেনা। তুমি আছ আমার সব আছে, তুমি নেই আমার কিছুই নেই। এখন বল এই মানুষকে রেখে আমি কি করে থাকি?

আবার দেখা হবে যেদিন রাশেদ সাহেবের ভাগ্যের আকাশে দেখা যাবে পূর্ণিমার চাঁদ। এ পর্যন্ত সুস্থ থাকুন ভাল থাকুন।

No comments:

Post a Comment

Thank you very much for your comments.