পূর্ব সূত্রঃ নক্ষত্রের গোধূলি, পর্ব -৫৩ (অধ্যায় ৫)
মেঘলা দিনে নয়তো কুয়াশা মাখানো ভেজা দিনে দূরের সাগর আর নীল থাকেনা আকাশের সাথে সেও তার রঙ বদলে ফেলে। আকাশের সাথে সাগরের যে কি এক গভীর সম্পর্ক তা সাগরের একেবারে কাছে না গেলে দেখার উপায় নেই, বোঝার উপায় নেই। সাগরের নীল রঙ
বদলে ছায়া ছায়া ধুসর রঙ, ঠিক ইলিশ মাছের পিঠের রঙ যেমন তেমন হয়ে যায়।
এখানে এসেছে প্রায় এক মাস অথচ এর মধ্যে সূর্য দেখেছে মাত্র সাত আট দিনের বেশি হবেনা। আবহাওয়া প্রায়ই খারাপ থাকে কখনো ইলশে গুড়ির চেয়েও কম থেকে থেকে বৃষ্টি নয়তো স্নো, নয়তো কুয়াশা লেগেই আছে। সারাটা শীতকালই এই রকম। শুধু সামারের কিছু দিন ভালো থাকে। রাস্তায় প্রায় মানুষই ছাতা, ওভার কোট নয়তো রেইন কোট গায়ে চলা ফেরা করে। সবার সাথে ছাতা নয়তো রেইন কোট থাকবেই।
এখানে আসার কয়েক দিন পর লাইব্রেরিতে গিয়ে টুরিস্ট বই দেখে ভেবেছিল ব্রিটেনের সবচেয়ে উঁচু শহর ফোর্ট উইলিয়ামে যাবে। এখান থেকে কাছে, তারপর ইনভারনেস হয়ে ব্রিটেনের একেবারে উত্তর প্রান্তে সাগর পারের শহর থারসো দেখে আসবে। মেয়েদের হাফ স্কার্টের মত বড় বড় চেক কাপড়ের তৈরি পুরুষদের স্কটিশ পোশাক কার্ল পরনে পুরুষদের কেমন দেখায় দেখে আসবে। এতো দিন ছবিতেই দেখেছে, অবশ্য এখানেও দুচার জনকে দেখেছে ওই পোষাকে। সেদিন থারসোর উত্তরের কি যেন একটা ছোট্ট দ্বিপ থেকে, দ্বিপটার নাম বলেছিল ভুলে গেছে গ্রে ক্যাম্পবেল এসেছিল তার তিন মেয়ে দুই ছেলে আর স্ত্রীকে নিয়ে। এখানে এক হোটেলে উঠেছে। ওদের ওই ছোট্ট দ্বিপে কোন ভারতীয়ই নয় শুধু কোন বিদেশি রেস্টুরেন্টই নেই তাই এখানে এসেছে সভ্যতার কাছে। কিছু অচেনা মানুষের কাছে, যাদের কখনো দেখেনি তাদের কাছে তাদের দেখতে।
মানুষ দেখতে, মানুষের গড়া সভ্যতা দেখতে আর গাড়ি ভরে কিছু সভ্যতা নিয়ে যেতে। তাদের সেই শহরে কিছুই নেই। তার নিজের একটা পাব আছে আর সামান্য চলার যোগ্য কিছু যা না হলেই নয় এই ধরনের কিছু দোকান পাট। সপ্তাহে দুই দিন থারসো থেকে ফেরি চলাচল করে। তাদের যার যা দরকার কেনাকাটা করে গাড়ি ভড়ে নিয়ে যায়। ক্যাম্পবেল সাহেবের সাথে রাশেদ সাহেবের বেশ আলাপ হল। তার পরিবারের সবাই কেতা দুরস্ত পোশাক পরনে, কথা বার্তায় মার্জিত। খাটি স্কটিশ উচ্চারণ। বড় ছেলেটা লুঙ্গির মত করে স্কটিশ পোশাক লাল সবুজ কাল বড় চেকের মেয়েদের স্কার্টের মত কার্ল পরেছে। ভারতীয় মশলাদার খাবার তাঁদের খুবই প্রিয় তাই এখানে এলে খেয়ে যায়। এর আগে দুই বার এসেছে। এছাড়া যেখানেই যায় সেখানে ভারতীয় রেস্টুরেন্ট পেলে খেয়ে যায়। জীবনে কখনো লন্ডন যায়নি। তার দৌড় গ্লাসগো পর্যন্ত। তবে বেলফাস্ট আর আমস্টারডাম গেছে কিন্তু লন্ডনে না।
আমাদের দ্বিপে লোক সংখ্যা কত জান? মাত্র কয়েক শ, এক হাজারও না। আমরা এই কয়েক জন চেনা মানুষ দেখতে দেখতে হাঁপিয়ে গেলেই বাইরে চলে আসি। কেনাকাটা করি, বিদেশি রেস্টুরেন্টে খাই, ভালো হুইস্কি নিয়ে যাই, ডান্স করি। এই যে আমার সুইট হার্ট মরিন, খুব ভালো ডান্স করে। জান আমাদের ওখানে মাত্র তিন চার পদের বিয়ার আর কয়েক পদের ওয়াইন ছাড়া আর কিছু পাই না। তাই এখানে এলে আমরা গারি ভরে সব কিছু নিয়ে যাই।
তাহলে ওখানে থাক কেন এদিকে কোথাও চলে এলেই পার ওখানে তো আমার মনে হয় বাচ্চাদের পড়া লেখাও সমস্যা, শীতও বেশি।
হ্যাঁ এইতো এই আমার এই বড় তিন জনই ইনভারনেসে আমার যে বাড়ি আছে সেখানে থাকে, একজন গভর্নেস রেখে দিয়েছি সেই দেখা শুনা করে। আমরা কেউ হয়তো মরিন নয়তো আমি প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার আসি। আর এইযে এই ছোট দুই জন ওখানে প্রাইমারিতে আছে তবে প্রাইমারি শেষ হলেই এরাও চলে আসবে ইনভারনেস। ব্যাপারটা সুবিধা আর অসুবিধার না এটা হোল একটা মায়া, আমি ওই দ্বিপের মায়া ছাড়তে পারিনা। তুমি সময় পেলে যাবে দেখবে কেমন সুন্দর দ্বিপ।
দিন রাত সাগরের ঢেউ কিনারে আছড়ে পরছে আর যখন বাতাস থাকে তখন যে ঢেউয়ের কি সুর তুমি অবাক হবে এমন ছন্দ ময় সুর তুমি জীবনে শোননি এ অসাধারণ মেলোডি। স্নো হলে তো আমরা সাগরের সাথে মিশে যাই, কোন মাটি দেখবে না। মনে হবে সাগরের মাঝে ভেসে থাকা কিছু বাড়ি ঘড়, বুঝলে, এই হল প্রকৃতি। তুমি চেষ্টা করলেও ওখানে কোন গাড়ির হর্ন শুনবেনা, কোন অজে বাজে মেশিনের বা কোন ইঞ্জিনের শব্দ পাবেনা। পাহাড়, পাহাড়ের চুড়ায় স্নো বা স্নো জমা বরফ, ঝর্ণা, সাগরের ঢেউ সব কিছু মিলিয়ে রিয়াল প্রকৃতি, একেবারে হ্যাভেন লাইক।
বুঝলাম ক্যাম্পবেল তুমি আসল স্কটিশ, প্রকৃতি প্রেমী।
খাওয়া দাওয়া সেরেও অনেকক্ষণ গল্প করেছিল কিন্তু ছোট ছেলে আর মেয়েটা ঘুমে পরে যাচ্ছিল বলে মরিনের তাগাদায় আর টিকতে পারেনি, যাবার সময় তার পাবের ঠিকানা লেখা একটা কার্ড দিয়ে বলেছিল
সুযোগ পেলে যাবে, তুমি যদি প্রকৃতি প্রেমী হও তা হলে ভালো লাগবে।
সাত জনের বিল হয়েছিলো একশ চুয়াত্তর পাউন্ড, স্কটিশ বিশ পাউন্ডের দশটা নোট রাশেদ সাহেবের হাতে দিয়ে বলল কিপ দা চেঞ্জ। রাশেদ সাহেব টিল থেকে ভাংতি ছাব্বিশ পাউন্ড গুনে টিপসের লাল বাক্সে রেখে দিয়ে তাদেরকে দরজার বাইরে পর্যন্ত এগিয়ে দিলেন, কোলের বাচ্চাটা সহ সবাই একে একে হ্যান্ডশেক করে বিদায় নিল।
ভেবেছিলেন আরও কোথাও যাবেন, তা আর হল না। ফোর্ট উইলিয়ামতো নয়ই কিছুই দেখা হল না। তার আগেই তাকে এখান থেকে চলে যেতে হচ্ছে। তবুও যা দেখা হয়েছে কম কি, ভালোই দেখেছে। দেখার কোন শেষ আছে? এতো বড় পৃথিবীর কে আর কতটা দেখতে পারে? এযাবৎ সে যা দেখেছে কম হয়নি, মনে শুধু একটাই কষ্ট, মনিকে সাথে নিয়ে কোথাও যাওয়া হল না। মনির হাত ধরে কিছু দেখা হল না, মনির মুখের দিকে তাকিয়ে দেখা হল না কে বেশি সুন্দর তার মনি না প্রকৃতি।
রাশেদ সাহেবের স্কটল্যান্ডের মেয়াদ আজই শেষ, সন্ধ্যায় কোচ। সকালে ময়না ভাই এসেছে। আজ তার কোন কাজ নেই ছুটি। বিকেলে টেসকোতে গিয়ে রাস্তায় খাবার জন্য কিছু নিয়ে এসে বাসা থেকে ব্যাগ নিয়ে রেস্টুরেন্টে গেল।
ময়না ভাই বলল আপনার ফোন এসেছিল।
কে? কিছু বলেছে?
হ্যাঁ আপনার রীতা আপা, আপনাকে ফোন করতে বলেছে।
একটু ঘাবড়ে গেলেন, কি ব্যাপার হঠাত রীতা আপার ফোন কেন? রাশেদ সাহেব বাইরে গিয়ে কয়েন বক্স থেকে রীতা আপার বাসায় লাইন পাবার চেষ্টা করলেন। অনেকক্ষণ, রিং হচ্ছে কিন্তু কেউ ধরছেনা। এর পর ফিরোজের বাসায়, ভাবি ধরেছে কিন্তু ফিরোজ বাসায় নেই।
ভাবি আমি আজ এইতো সন্ধ্যা সাতটায় রওনা হয়ে লন্ডন আসছি।
আসেন, এখানেইতো আসছেন?
না ভাবি এবার রীতা আপার ওখানে যাব।
কেন, কি হল আবার?
না, এমনিই, ওখানে যাওয়া হয়নি তাই ভাবলাম এই সুযোগে যাই, ফিরোজকে দরকার ছিল। আচ্ছা আমি গ্লাসগো পৌঁছে আবার চেষ্টা করবো ও আসলে আপনি বলবেন আমি ফোন করেছিলাম।
রীতা আপা তার এই রেস্টুরেন্টের ফোন নম্বর জানেনা তাহলে সে ফোন নম্বর পেল কোথায়, নিশ্চয় ফিরোজের কাছে ফোন করে জেনে নিয়েছে, এখন ফিরোজই বলতে পারবে সে কেন ফোন করেছিল। মনের মধ্যে একটা খুঁতখুঁতানি রয়ে গেল। ফোন সেরে এসে বসলেন। ময়না ভাই আর দেলুর সাথে কিছুক্ষণ গল্প গুজব করে সাড়ে ছয়টায় বিদায় নিয়ে ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে এক বোতল পানি সহ নাস্তার ব্যাগ হাতে বের হয়ে সোজা বাস স্ট্যান্ড। ময়না ভাই কাঁচুমাচু করে তার অক্ষমতার কথা বললেন আরও বললেন আপনাকে ছেড়ে দিতে আমার খুব খারাপ লাগছে কিন্তু কি করব উপায় নেই, তবে যেখানেই যাবেন আমাকে ফোন করে নম্বর জানাবেন, আমি ফোন করব। দেলুকে বলল যাও উনাকে এগিয়ে দিয়ে এসো। সাথে দেলু আসলো এগিয়ে দেয়ার জন্য।
[ অনেক দূর যাবার পথে সাথেই থাকুন।]
মেঘলা দিনে নয়তো কুয়াশা মাখানো ভেজা দিনে দূরের সাগর আর নীল থাকেনা আকাশের সাথে সেও তার রঙ বদলে ফেলে। আকাশের সাথে সাগরের যে কি এক গভীর সম্পর্ক তা সাগরের একেবারে কাছে না গেলে দেখার উপায় নেই, বোঝার উপায় নেই। সাগরের নীল রঙ
বদলে ছায়া ছায়া ধুসর রঙ, ঠিক ইলিশ মাছের পিঠের রঙ যেমন তেমন হয়ে যায়।
এখানে এসেছে প্রায় এক মাস অথচ এর মধ্যে সূর্য দেখেছে মাত্র সাত আট দিনের বেশি হবেনা। আবহাওয়া প্রায়ই খারাপ থাকে কখনো ইলশে গুড়ির চেয়েও কম থেকে থেকে বৃষ্টি নয়তো স্নো, নয়তো কুয়াশা লেগেই আছে। সারাটা শীতকালই এই রকম। শুধু সামারের কিছু দিন ভালো থাকে। রাস্তায় প্রায় মানুষই ছাতা, ওভার কোট নয়তো রেইন কোট গায়ে চলা ফেরা করে। সবার সাথে ছাতা নয়তো রেইন কোট থাকবেই।
এখানে আসার কয়েক দিন পর লাইব্রেরিতে গিয়ে টুরিস্ট বই দেখে ভেবেছিল ব্রিটেনের সবচেয়ে উঁচু শহর ফোর্ট উইলিয়ামে যাবে। এখান থেকে কাছে, তারপর ইনভারনেস হয়ে ব্রিটেনের একেবারে উত্তর প্রান্তে সাগর পারের শহর থারসো দেখে আসবে। মেয়েদের হাফ স্কার্টের মত বড় বড় চেক কাপড়ের তৈরি পুরুষদের স্কটিশ পোশাক কার্ল পরনে পুরুষদের কেমন দেখায় দেখে আসবে। এতো দিন ছবিতেই দেখেছে, অবশ্য এখানেও দুচার জনকে দেখেছে ওই পোষাকে। সেদিন থারসোর উত্তরের কি যেন একটা ছোট্ট দ্বিপ থেকে, দ্বিপটার নাম বলেছিল ভুলে গেছে গ্রে ক্যাম্পবেল এসেছিল তার তিন মেয়ে দুই ছেলে আর স্ত্রীকে নিয়ে। এখানে এক হোটেলে উঠেছে। ওদের ওই ছোট্ট দ্বিপে কোন ভারতীয়ই নয় শুধু কোন বিদেশি রেস্টুরেন্টই নেই তাই এখানে এসেছে সভ্যতার কাছে। কিছু অচেনা মানুষের কাছে, যাদের কখনো দেখেনি তাদের কাছে তাদের দেখতে।
মানুষ দেখতে, মানুষের গড়া সভ্যতা দেখতে আর গাড়ি ভরে কিছু সভ্যতা নিয়ে যেতে। তাদের সেই শহরে কিছুই নেই। তার নিজের একটা পাব আছে আর সামান্য চলার যোগ্য কিছু যা না হলেই নয় এই ধরনের কিছু দোকান পাট। সপ্তাহে দুই দিন থারসো থেকে ফেরি চলাচল করে। তাদের যার যা দরকার কেনাকাটা করে গাড়ি ভড়ে নিয়ে যায়। ক্যাম্পবেল সাহেবের সাথে রাশেদ সাহেবের বেশ আলাপ হল। তার পরিবারের সবাই কেতা দুরস্ত পোশাক পরনে, কথা বার্তায় মার্জিত। খাটি স্কটিশ উচ্চারণ। বড় ছেলেটা লুঙ্গির মত করে স্কটিশ পোশাক লাল সবুজ কাল বড় চেকের মেয়েদের স্কার্টের মত কার্ল পরেছে। ভারতীয় মশলাদার খাবার তাঁদের খুবই প্রিয় তাই এখানে এলে খেয়ে যায়। এর আগে দুই বার এসেছে। এছাড়া যেখানেই যায় সেখানে ভারতীয় রেস্টুরেন্ট পেলে খেয়ে যায়। জীবনে কখনো লন্ডন যায়নি। তার দৌড় গ্লাসগো পর্যন্ত। তবে বেলফাস্ট আর আমস্টারডাম গেছে কিন্তু লন্ডনে না।
আমাদের দ্বিপে লোক সংখ্যা কত জান? মাত্র কয়েক শ, এক হাজারও না। আমরা এই কয়েক জন চেনা মানুষ দেখতে দেখতে হাঁপিয়ে গেলেই বাইরে চলে আসি। কেনাকাটা করি, বিদেশি রেস্টুরেন্টে খাই, ভালো হুইস্কি নিয়ে যাই, ডান্স করি। এই যে আমার সুইট হার্ট মরিন, খুব ভালো ডান্স করে। জান আমাদের ওখানে মাত্র তিন চার পদের বিয়ার আর কয়েক পদের ওয়াইন ছাড়া আর কিছু পাই না। তাই এখানে এলে আমরা গারি ভরে সব কিছু নিয়ে যাই।
তাহলে ওখানে থাক কেন এদিকে কোথাও চলে এলেই পার ওখানে তো আমার মনে হয় বাচ্চাদের পড়া লেখাও সমস্যা, শীতও বেশি।
হ্যাঁ এইতো এই আমার এই বড় তিন জনই ইনভারনেসে আমার যে বাড়ি আছে সেখানে থাকে, একজন গভর্নেস রেখে দিয়েছি সেই দেখা শুনা করে। আমরা কেউ হয়তো মরিন নয়তো আমি প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার আসি। আর এইযে এই ছোট দুই জন ওখানে প্রাইমারিতে আছে তবে প্রাইমারি শেষ হলেই এরাও চলে আসবে ইনভারনেস। ব্যাপারটা সুবিধা আর অসুবিধার না এটা হোল একটা মায়া, আমি ওই দ্বিপের মায়া ছাড়তে পারিনা। তুমি সময় পেলে যাবে দেখবে কেমন সুন্দর দ্বিপ।
দিন রাত সাগরের ঢেউ কিনারে আছড়ে পরছে আর যখন বাতাস থাকে তখন যে ঢেউয়ের কি সুর তুমি অবাক হবে এমন ছন্দ ময় সুর তুমি জীবনে শোননি এ অসাধারণ মেলোডি। স্নো হলে তো আমরা সাগরের সাথে মিশে যাই, কোন মাটি দেখবে না। মনে হবে সাগরের মাঝে ভেসে থাকা কিছু বাড়ি ঘড়, বুঝলে, এই হল প্রকৃতি। তুমি চেষ্টা করলেও ওখানে কোন গাড়ির হর্ন শুনবেনা, কোন অজে বাজে মেশিনের বা কোন ইঞ্জিনের শব্দ পাবেনা। পাহাড়, পাহাড়ের চুড়ায় স্নো বা স্নো জমা বরফ, ঝর্ণা, সাগরের ঢেউ সব কিছু মিলিয়ে রিয়াল প্রকৃতি, একেবারে হ্যাভেন লাইক।
বুঝলাম ক্যাম্পবেল তুমি আসল স্কটিশ, প্রকৃতি প্রেমী।
খাওয়া দাওয়া সেরেও অনেকক্ষণ গল্প করেছিল কিন্তু ছোট ছেলে আর মেয়েটা ঘুমে পরে যাচ্ছিল বলে মরিনের তাগাদায় আর টিকতে পারেনি, যাবার সময় তার পাবের ঠিকানা লেখা একটা কার্ড দিয়ে বলেছিল
সুযোগ পেলে যাবে, তুমি যদি প্রকৃতি প্রেমী হও তা হলে ভালো লাগবে।
সাত জনের বিল হয়েছিলো একশ চুয়াত্তর পাউন্ড, স্কটিশ বিশ পাউন্ডের দশটা নোট রাশেদ সাহেবের হাতে দিয়ে বলল কিপ দা চেঞ্জ। রাশেদ সাহেব টিল থেকে ভাংতি ছাব্বিশ পাউন্ড গুনে টিপসের লাল বাক্সে রেখে দিয়ে তাদেরকে দরজার বাইরে পর্যন্ত এগিয়ে দিলেন, কোলের বাচ্চাটা সহ সবাই একে একে হ্যান্ডশেক করে বিদায় নিল।
ভেবেছিলেন আরও কোথাও যাবেন, তা আর হল না। ফোর্ট উইলিয়ামতো নয়ই কিছুই দেখা হল না। তার আগেই তাকে এখান থেকে চলে যেতে হচ্ছে। তবুও যা দেখা হয়েছে কম কি, ভালোই দেখেছে। দেখার কোন শেষ আছে? এতো বড় পৃথিবীর কে আর কতটা দেখতে পারে? এযাবৎ সে যা দেখেছে কম হয়নি, মনে শুধু একটাই কষ্ট, মনিকে সাথে নিয়ে কোথাও যাওয়া হল না। মনির হাত ধরে কিছু দেখা হল না, মনির মুখের দিকে তাকিয়ে দেখা হল না কে বেশি সুন্দর তার মনি না প্রকৃতি।
রাশেদ সাহেবের স্কটল্যান্ডের মেয়াদ আজই শেষ, সন্ধ্যায় কোচ। সকালে ময়না ভাই এসেছে। আজ তার কোন কাজ নেই ছুটি। বিকেলে টেসকোতে গিয়ে রাস্তায় খাবার জন্য কিছু নিয়ে এসে বাসা থেকে ব্যাগ নিয়ে রেস্টুরেন্টে গেল।
ময়না ভাই বলল আপনার ফোন এসেছিল।
কে? কিছু বলেছে?
হ্যাঁ আপনার রীতা আপা, আপনাকে ফোন করতে বলেছে।
একটু ঘাবড়ে গেলেন, কি ব্যাপার হঠাত রীতা আপার ফোন কেন? রাশেদ সাহেব বাইরে গিয়ে কয়েন বক্স থেকে রীতা আপার বাসায় লাইন পাবার চেষ্টা করলেন। অনেকক্ষণ, রিং হচ্ছে কিন্তু কেউ ধরছেনা। এর পর ফিরোজের বাসায়, ভাবি ধরেছে কিন্তু ফিরোজ বাসায় নেই।
ভাবি আমি আজ এইতো সন্ধ্যা সাতটায় রওনা হয়ে লন্ডন আসছি।
আসেন, এখানেইতো আসছেন?
না ভাবি এবার রীতা আপার ওখানে যাব।
কেন, কি হল আবার?
না, এমনিই, ওখানে যাওয়া হয়নি তাই ভাবলাম এই সুযোগে যাই, ফিরোজকে দরকার ছিল। আচ্ছা আমি গ্লাসগো পৌঁছে আবার চেষ্টা করবো ও আসলে আপনি বলবেন আমি ফোন করেছিলাম।
রীতা আপা তার এই রেস্টুরেন্টের ফোন নম্বর জানেনা তাহলে সে ফোন নম্বর পেল কোথায়, নিশ্চয় ফিরোজের কাছে ফোন করে জেনে নিয়েছে, এখন ফিরোজই বলতে পারবে সে কেন ফোন করেছিল। মনের মধ্যে একটা খুঁতখুঁতানি রয়ে গেল। ফোন সেরে এসে বসলেন। ময়না ভাই আর দেলুর সাথে কিছুক্ষণ গল্প গুজব করে সাড়ে ছয়টায় বিদায় নিয়ে ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে এক বোতল পানি সহ নাস্তার ব্যাগ হাতে বের হয়ে সোজা বাস স্ট্যান্ড। ময়না ভাই কাঁচুমাচু করে তার অক্ষমতার কথা বললেন আরও বললেন আপনাকে ছেড়ে দিতে আমার খুব খারাপ লাগছে কিন্তু কি করব উপায় নেই, তবে যেখানেই যাবেন আমাকে ফোন করে নম্বর জানাবেন, আমি ফোন করব। দেলুকে বলল যাও উনাকে এগিয়ে দিয়ে এসো। সাথে দেলু আসলো এগিয়ে দেয়ার জন্য।
[ অনেক দূর যাবার পথে সাথেই থাকুন।]
No comments:
Post a Comment
Thank you very much for your comments.