[পূর্ব প্রকাশের পর]
তত দিনে লেখা পড়ার পাট শেষ করে এই চাকরিতে জয়েন করেছি, ওই যে যখন প্রথম চিটাগাং গেলাম তখন। এক বার ছুটিতে এসেছি তখন এক দিন সন্ধ্যায় কালাম চাচা তার মেয়ের বিয়ের নিমন্ত্রণ করতে আমাদের বাড়িতে এলেন।
কথাটা শুনে চমকে উঠলাম, মা অবাক হয়ে মুখে কি!! বলে কিছুক্ষণ চাচার দিকে তাকিয়ে থেকে চাচাকে ডেকে ভিতরে নিয়ে গেলেন। চাচাও কোন কিছু না বলে মাথা নিচু করে
মাকে অনুসরণ করলেন। বাবা বাসায় নেই। ও ঘরে কি কথা হোল সব শুনতে পাইনি তবে মাঝে একবার মায়ের উচ্চ কণ্ঠ পেলাম এ মেয়ে আমার, আমি কিচ্ছু বুঝি না আমাকে এ মেয়ে দিতে হবে মার এ কথার প্রেক্ষিতে চাচার একটু উচ্চ কণ্ঠ শুনলাম, “আমি কি করব ভাবী”।
সেদিনের মত চাচা চলে গেল। একটু পরে বাবা এলেন। বাবার সাথে যখন মা এ নিয়ে আলাপ করছিল তখন যা শুনলাম তা হচ্ছে
মেয়ের নানা বিয়ে ঠিক করেছে। ছেলে গ্রামে (তোদের গ্রাম) থেকে দোকান দারী করে, অনেক জমি জমা নাকি আছে। এর চেয়ে ভাল পাত্র পাওয়া যাবে না তাই দেরি না করে বিয়ের দিন ঠিক করে পাকা কথা দিয়ে দিয়েছে। মেয়ের বাবাকে একটু জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন মনে করেনি। মেয়ের বাবা এ কথা শুনে প্রতিবাদ করেছিল-
না আমি মেয়ের জন্য ছেলে ঠিক করে রেখেছি, ওর মা বলে গেছে, এ বিয়ে হবে না। আমার মেয়ে আমাকে একটু জিজ্ঞেস করবেন না?
তোমাকে কি জিজ্ঞেস করব, মেয়ে কি তুমি পেলে বড় করেছ?
দেখ, এই হোল আমাদের মেয়েদের জীবন, এক জন মা হারা মেয়ের জীবন কি এমন হতে হবে?এখানে তার কি দোষ ছিল?বাবা থাকতেও বাবার গলা জড়িয়ে ধরে একটু সোহাগ, একটু স্নেহ কেন পেল না?আমার মা বাবা ওই বিয়েতে যেতে পারেনি, আমার বিয়েতে ও ওই চাচা আসেনি। আমার বিয়ের আগে হবু বৌকে সব বলেছি এমনকি বিয়ের পরে ওকে সাথে নিয়ে চাচার বাড়িও গেছি। ওর কৌতূহল ছিল এ কেমন মা একটু দেখব, সৎ মা হলেই কি এমন হতে হবে আর বাবাই বা কেমন বাবা? তাই দেখাতে নিয়ে গেছিলাম। ও বাড়ি যাবার পর আমার বৌ এর মাথায় হাত রেখে চাচা কেঁদে ফেললেন, আমি তাকিয়ে দেখলাম। এ কান্না কিসের কান্না আমাকে একটু বুঝিয়ে দিবি? তবে ওই পুতুলকে দেখতে চেয়েছিল তা আর হয়ে উঠেনি।
এখন বল আমার পক্ষে কি ওই গ্রামে যাওয়া উচিত?এখানে আমার কি দোষ? আশা করি আমাকে ভুল বুঝবি না। কারো মনে কষ্ট দেয়া তো দূরের কথা সে রকম কিছু ভাবাও আমার পক্ষে সম্ভব না। মানুষের সাথে সু সম্পর্ক না হতে পারে কিন্তু খারাপ সম্পর্ক থাকবে কেন?একটু খানি বন্ধুত্ব গড়ে তোলা অনেক কঠিন তাই চেষ্টা করি তা টিকিয়ে রাখতে। তোদের মত বন্ধুদের ভালবাসা আমার জীবনের পাথেয়। ও কথা ভুলে থাকার চেষ্টা করেছি, কিন্তু মানুষ কি তা পারে? হঠাত্ করে সেদিন মনে হয়ে যাওয়ায় মনটা ভীষণ ভাবে অস্থির হয়েছিল। বৌকে বললাম এখন আমি কি করি? বৌ কি চিকিৎসা দিল শুনবি? বলল ঘুমাবার চেষ্টা কর, আর তার জন্য দোয়া কর তার ইহ কালের সুখ যেন পর কালে পায়, এ ছাড়া আর কিছু বলার নেই।
তুই তো জানিস আমার স্ত্রী ভাগ্য খুবই ভাল, এদিক দিয়ে আমি অত্যন্ত সুখী মানুষ। আমার কি প্রয়োজন তা আমি বোঝার আগেই সে বুঝে ফেলে। তাই মনে হয় আমার এই ভবঘুরে ছন্ন ছাড়া জীবন এখনো টিকে আছে।
আশা করি তোর ভুল ভেঙ্গেছে, এবার চিঠির উত্তর দিবি। এবার দেশে গেলে অবশ্যই দেখা করবি।
ইতি,
যে নামে আমাকে ডাকতে তুই পছন্দ করিস
তোর সেই যাযাবর
*** কোয়েলা কোকিলা কাজরী গায় শোনে বনানী, কি মায়া ছড়াল পথের ধারে শিরিশ মেহগিনি!
No comments:
Post a Comment
Thank you very much for your comments.