রাতে
খাবার টেবিলে আমজাদ সাহেব বড় ছেলে ফারহানকে জিজ্ঞেস করলেন,
কারো
কোন খবর পেলি?
না
আব্বা, দেশের অবস্থা দেখতে পাচ্ছেন, সরকার এতগুলা
সমস্যা নিয়ে হিমসিম খাচ্ছে সেখানে মানুষ বাড়িঘর বা ফ্ল্যাট কিনছে না বলে কোন
ডেভেলপার এখন নতুন কোন প্রজেক্ট হাতে নিচ্ছে না!
এর সাথে
আমাদের কি সম্পর্ক?
সম্পর্ক
নেই? কি বলছেন? এতগুলা সমস্যা, পদ্মা সেতু, শেয়ার বাজার, হলমার্ক এবং অন্যান্য মিলে কত শত হাজার কোটি টাকার সমস্যা তারপরে সামনে
ইলেকশনের জন্য রাজনৈতিক অস্থিরতাতো আছেই এর মধ্যে কি ব্যবসা বাণিজ্য চলছে? সব কিছু স্থবির হয়ে আছে!
এগুলি
বাজে কথা! সবই তোর বানান সমস্যা। আসলে ডেভেলপারকে দেয়ার কোন ইচ্ছে তোর নেই বলে এসব
বলছিস।
বাজে
কথা না, এখন বাড়ী কেনাতো দূরের কথা বাড়ি ভাড়াও হচ্ছে না!
বললামতো
তোর আগ্রহ নেই বলে এসব কথা বানাচ্ছিস! তাহলে কায়েস যে প্রস্তাবটা এনেছে ওটাই দেখি!
ফারহান
বিরক্ত হয়ে বলল
ঠিক আছে
দেখেন তবে যাকে তাকে দিয়ে একটা মাত্র প্লট রয়েছে এটা হারাবার চেষ্টা করবেন না! এই
অবস্থায় কোন ভাল ডেভেলপার এখানে এই গলির মধ্যে আসতে চায় না, কথাটা মাথায়
রেখে যা করার করবেন।
সেদিনের
মত আর কোন কথা হয়নি। আমজাদ সাহেব খেয়ে দেয়ে তার ঘরে চলে গেলে ফারহানও মনে মনে
কিছুক্ষণ দুঃখ করে উঠে এলো। আমজাদ সাহেব দীর্ঘ অনেক বছর সরকারি চাকরি করে এখন অবসর
জীবন যাপন করছেন। বয়স প্রায় ৯০ ছুঁই ছুঁই। কোন রোগ বালাই এসে অযথা হয়রানি করতে
পারেনি। তিন ছেলে আরমান,
সোবহান, নোমান বিদেশে, বড় ছেলে ফারহান, আর মেয়ে সাদিয়া দেশে থাকে।
ফারহানও অনেক বছর বিদেশে থেকে এসেছে এখন দেশেই এক কোম্পানিতে চাকরি করে। জামাই
কায়েস অনেক দিন যাবত বেকার। বিদেশের ছেলেরা বিশেষ করে আরমানই টাকা পয়সা দিয়ে
চালায়। বড় ছেলে বাড়িতেই থাকে তার আবার তিন মেয়ে। বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছে। জামাই
বিদেশ থেকে লেখাপড়া করে এসে এখন দেশেই একটা বিদেশি কোম্পানিতে চাকরি করে।
স্বাধীনতার
পর আমজাদ সাহেব যখন ঢাকায় নতুন এসেছে তখন বাড়ি ভাড়া দিয়ে ক্লান্ত হয়ে গ্রামের
এজমালি জমি জমা বিক্রি করে এই একটা প্লট কিনেছিল। এতদিন এখানে কাচা ব্যবস্থা করে
কোন রকম মাথা গোজার ঠাই হয়েছিল। প্রায় পঁচিশ বছর আগে রিটায়ার করার পর ছয় তলার ফাউন্ডেশন দিয়ে এই বাড়িটা করতে যাচ্ছিল
কিন্তু পাশের বাড়ির রমজান আলির দায়ের করা আপত্তি আর মামলা মোকদ্দমার জন্য বাড়িটা
একতলার পর আর উপরে উঠতে পারেনি। রাজউক এবং অন্যান্যদের সাথে মামলায় নানা ভাবে
বিপর্যস্ত হয়ে এই পর্যন্তই আটকে আছে। ছেলেরা সবাই যার যার স্ত্রী সন্তান নিয়ে
বিদেশে থাকছে বলে কেউ এ দেশে আর কিছু করার মত ইচ্ছা করে না। কেবল মাত্র ছুটি ছাটায়
দেশে এসে একটু আরামে থাকার জন্য বাবাকে ধরেছে বাড়িটা ডেভেলপারকে দিয়ে ছয় তলা করে
নিলে প্রত্যেকে একটা করে ফ্ল্যাট পাবে আর তাতে অন্তত দেশে এসে একটু আরাম করে থাকা
যাবে কিংবা ফ্ল্যাট বিক্রি করে যে যে দেশে আছে সেখানে একটা বাড়ি কিনে নিবে।
জায়গাটা
যখন কেনা হয়েছিল তখন ফারহান বাদে তার আর সব ভাই বোনেরা সবাই ছোট ছোট ছিল বলে এই
জায়গা কিনতে এবং এখানে বসবাস করার ব্যবস্থা করতে কি কি ঝামেলা পোহাতে হয়েছিল সে সব
কথা কারো মনে থাকার কথা নয়। নতুন দেশের রাজধানী ঢাকা শহরের এক প্রান্তে মিরপুরে
চারিদিকে কাচা রাস্তা কাচা বাড়ি। বাড়ির সামনে কাচা রাস্তার ওপাশে পাট ক্ষেত, ডান দিকে এক
প্লট পরেই ধান ক্ষেত তাতে বর্ষায় এক মানুষ পরিমাণ পানি আসে ওখান দিয়ে নৌকায় পাল
তুলে শ্যামলী পর্যন্ত এক টানে যাতায়াতে কোন সমস্যা হতো না। আশে পাশে দূরে দূরে দুই
একটা টিন বা কাচা মাটির ঘর । এখন আর সে অবস্থা নেই। যেখানে নৌকা চলত এবং বর্ষায়
লাল আর সাদা শাপলা ফুটে থাকত এখন সেখানে পাকা রাস্তা, ছয়
তলা সাত তলা পাকা দালান কোঠায় ভরে গেছে। দেশ এগিয়ে গেছে সেই সাথে মানুষের আর্থিক
অবস্থার উন্নতি হয়েছে। অনেকের ছেলেপিলেরা বিদেশ থেকে টাকা পয়সা পাঠিয়েছে আর সেই
টাকা দিয়ে এসব হয়েছে। আমজাদ সাহেবের বাড়ির চারিদিকেও তেমনি অবস্থা। যেখানে
পাটক্ষেত ছিল সেখানে এখন পাঁচ তলা দালান পাকা রাস্তা, যেখানে
এক মানুষ পানিতে ধান ক্ষেত ছিল সেখানে এখন চারতলা দালান। আশেপাশে ডানে বায় সামনে পিছে আট তলা, ছয় তলা, পাঁচতলা দালান কোঠায় ভরে গেছে। এই
অবস্থায় নিজেরা কিছু করতে না পেরে ডেভেলপারকে দিয়ে বাড়ী বানিয়ে একটা করে ফ্ল্যাট
পেলে মন্দ কি! ফারহান এই জায়গার মর্ম বুঝে, বাবার এজমালি
জমিজমা, মায়ের গয়না এবং নানার সাহায্য সব কিছু মিলিয়ে
মিশিয়ে কি করে এই জমি নেয়া হয়েছিল সে কথা একমাত্র ফারহানই জানে। কি করে আশে পাশে
থেকে কুড়ানো হেলাঞ্চে শাক, কলমি শাক দিয়ে ভাত খেয়ে একটা
পোড়া টিনের দোচালা ঘরে বৃষ্টির পানি ঠেকাতে না পেরেও চার ভাই এক বোন সহ সবাই মাথা
গুজে দিন রাত কাটিয়েছে। তাই তার কোন ইচ্ছা নেই যে এই জায়গায় ডেভেলপারের দেখান পথ
ধরে অন্যান্য ফ্ল্যাট মালিকদের সাথে নিজের জমিতে ভাড়াটের মত মাথা নিচু করে বসবাস
করতে হয়। নিজের জমি পরের হয়ে যাবে যেখানে একটা ফ্ল্যাট বাদে নিজের কোন অধিকার
থাকবে না।
এই নিয়ে
ভাই বোন আর বাবার সাথে দীর্ঘ দিন মতের গড়মিল নিয়ে নানান অশান্তি নিয়ে দিন কাটাতে
হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত ফারহান যখন নিজেই বুঝতে পারল এই বাড়ি এক সময় পাঁচ ভাই বোনের
মধ্যে ভাগ বাটওয়ারা হবেই তখন কি হবে? হয়তো সবাই একটা করে ফ্লোর পেত যদি এটা
অন্তত পাঁচ তলা হতো! কিন্তু তাওতো নেই কাজেই কি করে ভাগ হবে? তার চেয়ে ওরা সবাই যা বলছে তাই মেনে নেয়াতেই শান্তি।
ফারহান
অনেকদিন বিদেশে থেকে এসেছে। দেশে এসে দেখে সে যে বাংলাদেশ রেখে গিয়েছিল সে
বাংলাদেশ আর নেই। অনেক পরিবর্তন হয়েছে। মানুষের মন মানসিকতা থেকে শুরু করে জনগণের
খাদ্যাভ্যাস, সমাজ ব্যবস্থা, পারিবারিক ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ইত্যাদি যাবতীয়
ব্যবস্থারই পরিবর্তন লক্ষ করছে। মোট কথা সে বাংলাদেশ আর নেই। দশ টাকা কেজির চাল
হয়েছে পঞ্চাশ টাকা। বাজারে গিয়ে কোন কিছুর হিসাব মেলাতে বা আগের সাথে সামঞ্জস্য
খুঁজে পায় না বলে প্রায়ই দোকানির সাথে তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে যেত। তাই শুনে মেয়েরা
বলে দিয়েছে আব্বু তুমি আর বাজারে যেও না। জিনিস পত্রের দাম শুনে কবে কার সাথে কি
অঘটন ঘটিয়ে বসবে তার চেয়ে মা ই বাজার করবে ইচ্ছা করলে তুমি তার সাথে যেও। অফিসের
কলিগদের সাথে আলাপ করে জানতে পেরেছে ডেভেলপারের নামে অনেক ছ্যাঁচড়া বিশেষ করে
স্থানীয় উঠতি ভবঘুরে বাউন্ডেলেরা এমনি করে জমি নিয়ে হয়ত শেষ পর্যন্ত নানা রকম তাল
বাহানা করে জমিটাই বেহাত করে ফেলবে। ফারহান জানে বাবার আর কিছু নেই নিজেও কিছু
করতে পারেনি এমতাবস্থায় সম্বল এই জমিটুক বেহাত হয়ে গেলে কাকে কতটা খেসারত দিতে
হবে! সে খুঁজে বেড়াচ্ছে ভাল ডেভেলপার যারা ঠকালেও অন্তত জমি পর্যন্ত গড়াবে না।
ওদিকে আমজাদ সাহেব পাড়ার মসজিদে নামাজ পড়তে গেলে ফেরার পথে যাকে পায় তাকেই
ডেভেলপার খুঁজে দিতে বলে। চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে কিংবা অতি আগ্রহী কিছু উঠতি
ছেলেপিলেদের কাছেও তার আবেদন জানাতে দ্বিধা করে না। ফারহান বারবার বলে আব্বা এমন
লোকদের কিছু বলবেন না এতে ফল কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে আপনি ভাবতে ও পারছেন না। না না আমি যাদের বলছি তারা সবাই ভাল মানুষ
সবাইকে আমি চিনি! কে কি করবে? সবাইকেই আমি চিনি না?
ওদিকে কায়েসের চাকরি বাকরি কিছু নেই বলে তার অফুরন্ত সময় কাটাবার
কোন উপায় নেই তাই জমির জন্য ডেভেলপার খুঁজতে হন্যে হয়ে লেগেছে। বড় সম্বন্ধী যে
প্রস্তাবই আনুক না কেন কায়েসের শ্বশুর খুব আনন্দের সাথে তাকে সে প্রস্তাব যাচাই
করে দেখতে বলে আর এই সুযোগে তাদের অফিসে যেয়ে সাইনিং মানির নামে নানান অযৌক্তিক
দাবী আবদার তুলে ধরে ফলে যা হবার তাই হয়। সেই ডেভেলপাররা অন্তত আর এগুবার ইচ্ছা
করে না। তার কথা হলো, গেলে শ্বশুরের যাবে আমার কি?
এতে সে আনন্দিত হয়ে ওই খবর শ্বশুরকে জানায়, আব্বা দাদা যে প্রস্তাব এনেছে সে একটা বাজে কোম্পানি, এদের দিকে এগুনো যাবে না। মেঝ সম্বন্ধী বিলাত থেকে মাসোয়ারা দেয় তাই
দিয়েই তার দিন চলে। আবার ওদিকে নিজের বড় ছেলে ফারহান এক সময় যখন চাকরি করত তখন সে
প্রথম শ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তা ছিল অথচ তাকে কোন গুরুত্ব না দিয়ে কিংবা মূল্যায়ন
না করে জামাইকেই বেশি যোগ্য মনে করে।
বিদেশে
থাকা ছেলেদের দেখার জন্য,
তাদের সাথে কিছুদিন থাকার জন্য আমজাদ সাহেব বিদেশে চলে যাবার আগে
ফারহানকে জিজ্ঞেস করলেন
আমিতো
প্রায় বছর খানিকের জন্য যাচ্ছি কাজেই এর মধ্যে কায়েস যে ডেভেলপারের সাথে আলাপ করছে
তাদের সাথে পরবর্তী কাজ গুলি করার জন্য কাকে পাওয়ার অফ এটর্নি দিয়ে যাব, কায়েসকে না কি
তোকে? তুই চাকরি বাকরি করিস তোরতো সময় নেই কায়েসকেই দেই?
কায়েসকে
দিবেন না কাকে দিলে ভাল হয়,
কাকে দেয়া উচিত সে আপনি ভেবে দেখেন, আপনি
যদি মনে করেন কায়েসকে দিবেন তাহলে আর আমাকে জিজ্ঞেস করছেন কেন? আপনার জমি কাজেই আপনার যা খুশি যাকে খুশি তাকেই দিন আমার কোন আপত্তি
নেই! আমি চাকরি করি বলে আমার সময় নেই এমন করে ভাবার কোন প্রয়োজন নেই কারণ যে রাঁধে
সে চুলও বাধে।
এই
পর্যন্ত কথা হলো এর পরে এ নিয়ে আর কোন কথা হয়নি! একদিন আমজাদ সাহেব যথারীতি
ইংল্যান্ডে চলে গেলেন ছয় মাস পরে সেখান
থেকে কানাডা যাবেন। বেশ কিছু দিন কায়েস বা কোন ডেভেলপারের কোন সারা শব্দ নেই।
একবার ফারহান এবং তার স্ত্রী গ্রামের বাড়ি গেল শীতের পিঠা খাবার জন্য। দুপুরের
দিকে ফারহান সাহেবের স্ত্রীর মোবাইলে একটা ফোন এলো
আচ্ছা
এটা কি মিসেস ফারহানের নম্বর?
জি
বলছি!
ভাবি
আমি আহমেদ নগর থেকে বলছি সাইফুল, আচ্ছা আপনাদের বাড়ি ডেভেলপারকে দিচ্ছেন সে বাবদ
আমরা কায়েস সাহেবকে দুই লক্ষ টাকা দিয়েছি সে কি আপনি জানেন?
আমি কি
করে জানব? আপনি কি আমাকে জানিয়েছেন?
না
জানাইনি!
তাহলে? আপনি কে এবং
কি সূত্রে তাকে টাকা দিয়েছেন?
ভাবি
আমি সাইফুল এবং একজন ডেভেলপার হিসাবে আপনাদের বাড়ি করার জন্য আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে
বলে কায়েস ভাইকে কিছু টাকা দিয়েছি, আপনাকে কিছু বলে নাই?
না আমি
এর কিছুই জানি না। আপনি কি জানেন সে হলো এই বাড়ি জামাই আর এই বাড়ির ছেলের বর্তমানে
আপনি তাকে জিজ্ঞেস না করে জামাইকে টাকা দিয়েছেন সে আপনার ব্যাপার এ ব্যাপারে এখন
আমাকে জানাচ্ছেন কেন?
আগে জিজ্ঞেস করা দরকার ছিল না?
হ্যাঁ
ভাবি, আগে ভাইকে জানাবার দরকার ছিল!
তাহলে
এখন বলুন আমাকে কেন ফোন করেছেন? আচ্ছা আমি এখন গ্রামে আছি কয়েক দিন অপেক্ষা করেন
আমি ঢাকায় এলে কথা বলবেন!
আচ্ছা
ভাবি তাই ভাল হবে!
পরে এ
নিয়ে ফারহান সাহেবের সাথে তার স্ত্রী আলাপ করলে ফারহান জানাল আমরা যে সাইফুলকে
চিনি সেতো এই এলাকায় রড মিস্ত্রির কাজ করে সে আবার ডেভেলপার হলো কি করে?
কি জানি, দেখা যাক আগে
সে আসুক তখন দেখব কোন সাইফুল।
কয়েক
দিন পরে ঢাকায় আসার পর একদিন দুপুরে সাইফুল এবং অচেনা এক লোক এসে হাজির।
কি
ব্যাপার সাইফুল, তুমি? কি ব্যাপার বল!
ভাবি ওই
ব্যাপারটা নিয়ে একটু আলাপ করতে এসেছিলাম
ও আচ্ছা
তুমিই সেই সাইফুল?
হ্যাঁ
ভাবি
ও, কিন্তু এখনতো
আপনার ভাই বাড়িতে নেই সে এলে পরে আস! সন্ধ্যার পরে আস!
আচ্ছা
ঠিক আছে ভাবি! এই যে এই কাগজগুলা রেখে দেন এতে দেখবেন কায়েস সাহেবকে পাওয়ার অফ
এটর্নি দিয়েছে সবাই,
আমরা জানি ভাই এখানে আছে কিন্তু আমরা স্বাভাবিক ভাবেই যাকে
পাওয়ার দেয়া আছে তাকেই..............................
আচ্ছা
সন্ধ্যায় আসলেই হবে,
ওর সাথে কথা বলবে!
আচ্ছা
কিন্তু
এর পরে আর সাইফুল আসেনি। সাইফুলের দেয়া বিভিন্ন ফটোকপিতে দেখা গেল আমজাদ সাহেব এবং
তার ছোট তিন ছেলে সবাই জামাতা কায়েসকে পাওয়ার অফ এটর্নি দিয়েছে।
ফারহান
সাহেব তার স্ত্রীকে বলল
এ কাজ
করার আগে ওরা কেউ আমাকে একবার জিজ্ঞেসও করল না? অবাক কাণ্ড!
আর
কায়েসও ওর কাছে থেকে টাকা নেয়ার আগে আমার সাথে একটু আলাপ করল না, সবকিছুই আমার
কাছে কেমন এলোমেলো মনে হচ্ছে।
শোন
আব্বার কাছে জিজ্ঞেস করে দেখ আব্বা কিছু জানে কি না
এর পরে
যখন ওরা ফোন করবে তখন বলবে
কয়েকদিন
পরে যখন নোমান ফোন করল তখন বলা হলো আব্বা কে জিজ্ঞেস কর কায়েস সাইফুলের সাথে যে
লেনদেন করেছে সে কি আব্বা জানে?
কি
বললেন? দুলাভাই সাইফুলের সাথে লেনদেন করেছেন মানে কি?
মানে আর
কি ও নাকি ডেভেলপার হয়েছে আর আমাদের বাড়ি করার জন্য সাইনিং মানি বাবদ দুই লক্ষ
টাকা অগ্রিম নিয়েছে অথচ আমরা জানি সাইফুল একজন রড মিস্ত্রি
আচ্ছা
আমি আব্বাকে দিচ্ছি তার সাথে কথা বলেন
হ্যালো
আব্বা
হ্যাঁ
বল শুনছি
কুশলাদি
জানার পর বলল নোমানকে যা বললাম এ ব্যাপারে কি আপনি কিছু জানেন?
নাতো
আমার সাথে এ ব্যাপারে কোন আলাপ হয়নি
আচ্ছা
আপনারা সবাই কি কায়েসকে পাওয়ার অফ এটর্নি দিয়েছেন?
আমতা
আমতা করে আব্বা বলল
হ্যাঁ
কি করব ফারহানতো চাকরি করে ওর সময় নেই তাই কায়েসকে দিয়েছি।
বেশ ভাল
করেছেন।
এর
মধ্যে ঘড়ির কাটার সাথে তাল মিলিয়ে সময় চলে গেল আর আমজাদ সাহেবের দেশে ফেরার সময়
হলো। ফিরে এসে বড় ছেলেকে জিজ্ঞেস করল সাইফুলকে বাড়ির কাজ দিলে কেমন হয়?
একজন রড
মিস্ত্রি কবে রাতারাতি ডেভেলপার হয়ে গেল তাই জানলাম না এখন ওকে যদি দিতেই চান
তাহলে আপনার নিজ দায়িত্বে দিবেন। আমাকে বললে আমি নিষেধ করব।
আমার
মনে হয় ওর যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তাতে একাজ ও করতে পারবে
একজন রড
মিস্ত্রি যদি ইঞ্জিনিয়ারের কাজ করতে পারে তাহলে আর দেশে পড়ালেখার দরকার কি? স্কুল কলেজ
বিশ্ববিদ্যালয় সব বন্ধ করে দিলেই হয়ে যায়! আর তাছাড়া ও এত টাকা পাবে কোথায়?
শুনেছি
ওরা কয়েকজন মিলে এই কাজটা করবে
মানে
শরিকি ব্যবসা? বেশ ভাল কথা কিন্তু বাকি সবাই স্বাভাবিক ভাবে ওর মতই হবে জানা শোনা বা
আর্থিক সচ্ছলতা সব দিক দিয়েই এমন হবার কথা
আমার
কিন্তু তেমন মনে হয় না
আপনি
রিটায়ার করেছেন আজ প্রায় পঁচিশ বছর এর মধ্যে দেশের অবস্থা কত পরিবর্তন হয়েছে
সেদিকে আপনার কোন ধারনা নেই। বাজারের অবস্থাও আপনি জানেন না। জানেন এই বিল্ডিং
করতে প্রায় দুই কোটি টাকার দরকার এই পরিমাণ অর্থ কি ওদের আছে?
ওরা
সেদিন বলল যে ওদের চল্লিশ পঁয়তাল্লিশ লাখ টাকার মত আছে তা দিয়ে শুরু করবে এবং পরে
ফ্ল্যাট বিক্রি করে বাকি কাজ শেষ করবে।
খুব
সুন্দর ধারনা দিয়েছে এবং আপনাকে ভালই বোঝাতে পেরেছে কিন্তু আপনি কি জানেন পাশের
আলাউদ্দিনের জমিতে যারা কাজ করছে তারা সাতজনই সিভিল ইঞ্জিনিয়ার এবং তাদের তৈরি
বিল্ডিঙের একটা ফ্ল্যাট এখনও বিক্রি হয় নাই? এরা এত যোগ্য হয়েও ফ্ল্যাট বিক্রি করতে
পারছে না আর ওরা কি করে ফ্ল্যাট বিক্রি করতে পারবে বলে আপনি বিশ্বাস করলেন?
আমার
মনে হয় পারবে
বেশতো
তেমন মনে করলে দিয়ে দিন তবে আমাকে জিজ্ঞেস করবেন না বা আমার কোন সম্মতিও পাবেন না।
তাহলে
কি তোর দেয়ার ইচ্ছে নেই?
আমার
জানা একজন অযোগ্য লোকের কাছে দিতে আমার সম্মতি নেই তবে আপনি দিতে চাইলে দিতে
পারেন।
তাহলে
এখন কি করা? কায়েস যে টাকা নিয়েছে সে তার কি হবে?
টাকা
নেয়ার সময় আপনাকে কিছু বলেনি আমার সাথেও কোন আলাপ করেনি কাজেই বলে দেন টাকা ফিরিয়ে
দিতে
কোথা
থেকে ফিরিয়ে দিবে?
সে আমি
কি করে বলব?
তুই
ফিরিয়ে দে
বাহ!
আমি যার কিছুই জানলাম না সে টাকা আমি কি করে ফিরিয়ে দিব আর আমার কাছে অত টকা নেইও।
মুশকিল
হলো ওই টাকা ফিরিয়ে না দিলে ওরা ওর পিছনে গুণ্ডা লাগিয়ে মেরে ফেলবে আর তোর বোন বিধবা
হয়ে পথে পথে ঘুরবে এই কি তুই চাইছিস?
কি
আবোলতাবোল বলেন? আমি তা চাইতে যাব কেন? এমন হতে পারে সে কথা
ওদের আগে ভাবা উচিত ছিল কি না? এমন লোকেদের সাথে লেনদেন
করতে গেল কেন? ওরা আমাদের এলাকার মানুষ আমরা ওদের ভাল
করেই চিনি কাজেই আমার সাথে কোন আলাপ না করেই সে ওদের টাকা নিতে গেল কেন আর জমিই বা
ওদের দিতে রাজি হলো কি ভাবে? আরও একটা কথা হলো আমি ওদের
জমি দিতে চাইছি না এটা জানলে যে ওরা আমার পিছনে গুণ্ডা লাগাবে না সে কথা আপনি
জানেন? বখাটেদের সাথে কেন কাজ করতে গেল?
এর পরে
একদিন আমজাদ সাহেব জামাতাকে জিজ্ঞেস করল তুমি আমাকে না জানিয়ে ওদের টাকা নিতে গেলে
কেন?
না
আব্বা আমি আপনাকে জানিয়েছি
কোথায়
জানিয়েছ
আচ্ছা
শোন তোমাকে দেয়া পাওয়ার অফ এটর্নিটা ফিরিয়ে দিয়ে যাও আমি ওটা ক্যানসেল করাব
না আমি
ওটা ফেরত দিব না
কেন
ফেরত দিবে না?
ওটা
আপনারা সবাই আমাকে দিয়েছেন এখন কেন ফেরত দিব
একথা
শুনে আর আমজাদ সাহেব কিছু বলার ভাষা না খুঁজে পেয়ে চুপ হয়ে গেল।
এমনি
কথাবার্তায় বাড়িতে প্রায়ই তিক্ততা লেগেই থাকত। শান্তি বলে যা বোঝায় তার আর কোন
ছিটেফোঁটাও
বাড়িতে
ছিল না। ওদিকে বিদেশের ছেলেরা ফোন করলেই তাদের প্রথম কথা “কোন ডেভেলপার
পাওয়া
গেছে?” তাদের ধারনা
বড় ভাই ইচ্ছে করে কাউকে জমিটা দিতে চাইছে না। অথচ ফারহান নিজেও
অনেকের
সাথে আলাপ করেছে এমনকি তার মেয়েদেরও বলে দিয়েছে তোমরাও দেখ তোমাদের বান্ধবীদের
চেনাজানা
কেউ যদি থাকে তাহলে আলাপ কর। সেই অনুযায়ী কয়েকজন এসেছেও কিন্তু আমজাদ সাহেবের
সাথে
তাদের বনিবনা হচ্ছে না বলে কোন অগ্রগতিও দেখা যাচ্ছে না। ফারহান চাইছে আর কিছুতো
নেই এই
একটা
মাত্র প্লট আছে কাজেই এমন কাউকে দিতে যেন ভবিষ্যতে কোন ঝুট ঝামেলায় পড়তে না হয়।
কোন
প্রতিষ্ঠিত
না হোক অন্তত ভাল একটা কোম্পানিকে যাতে প্লটটা দেয়া হয় এই চেষ্টা করছে সে। কিন্তু
ভাল
মানুষ
বা ভাল কোম্পানিতো আর চাইলেই পাওয়া যায় না এ কথা আমজাদ সাহেব বা তার বিদেশের
ছেলেরা
কিছুতেই
মানতে চাইছে না। তারা ভাবছে যেখানে সেখানেই ডেভেলপার পাওয়া যায় এবং বড় ভাই ইচ্ছে
করেই
কোন চেষ্টা করছে না। তারা সবাই বিদেশে বেশ শান্তিতে আছে বলে এখানকার জটিলতা
কিছুই
বুঝতে চাইছে না। জমিটা কেনার সময় যে সমস্ত ঝামেলা মোকাবিলা করতে হয়েছে বা যেমন
কষ্ট
করেছে
তাতে ফারহান ওদের মত এত সহজেই কাউকে এই প্লটটা হস্তান্তর করতে পারে না। নিজের
সন্তানকে
কেউ কোন দিন কেটে একটুকরার ভাগ চাইতে পারে না। এই কথাটাই ফারহান কাউকে বোঝাতে
পারছে
না।
এদিকে
জামাতার চাকুরী নেই বলে বাসা ভাড়া দিতে পারছে না তাই আমজাদ সাহেব সিদ্ধান্ত নিলেন
যে এই বাড়িতেই মেয়েকে এনে তুলবেন। ফারহানকে নোটিস দিয়ে দিলেন তুমি তোমার সংসার
নিয়ে অন্য কোথাও চলে যাও।
কেন?
সাদিয়ারা
এখানে আসবে
সাদিয়ারা
আসবে তাই আমাকে চলে যেতে হবে?
হ্যাঁ
এটাই আমার সিদ্ধান্ত
বেশ এতে
যদি আপনার মঙ্গল হয় তাহলে তাই হবে। আপনি আপনার জামাইকে এই জমির পাওয়ার অফ এটর্নি
দিয়েছেন এখন আবার দখল দিচ্ছেন বেশ ভালই হলো!
একদিন
ফারহান একটা বাসা ভাড়া নিয়ে তার এত দিনের সংসার গুটিয়ে চলে গেল। যাবার সময় বাবাকে
কিছু বলে গেলনা বা কোন বিদায়ও নিয়ে গেল না।
No comments:
Post a Comment
Thank you very much for your comments.