Thursday 29 November 2012

বই মেলা এবং ২৬টি বছর

Photobucket
 [ছবিঃ ইট পাথরের এই ঢাকা শহরের ১৬ তলার অফিসের জানালা দিয়ে চেয়ে থাকা মুক্ত আকাশের সুদূর সিমানাঃ-]

অনেক অনেক দিন আগের কথা যখন বঙ্গোপ সাগরের পানি নীল রঙের ছিল আর ঢাকা শহরের পাশে দিয়ে বয়ে যেত
সুশীতল স্রোত নিয়ে স্বচ্ছ সলিলা বুড়িগঙ্গা। ওই বুডিগঙ্গার বুকে ভেসে বেড়াত ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকা, কোনটা পাল তুলে আবার কোনটা পাল ছাড়া। তখন অর্থাৎ ১৯৮৩ সালের দিকের কথা বলছি।
বই মেলা তখন সবে শুরু হয়েছে। নওরোজ কিতাবিস্তান এর মালিকদের এক ভাই আমার বন্ধু এজাজ রসুল তাদের স্টলে আসত প্রতি দিন। আমি জাহাজ থেকে এসেছি তখন মেলা চলছে আর আমরা তখন বাবার চাকরির সুবাদে মতিঝিল এজিবি কলোনিতে থাকি। এজাজ বলল গত কয়েক বছর ধরে আমাদের বাংলা একাডেমিতে প্রতি বছর বই মেলা করছি, তুমি এক বারও সময় মত দেশে থাকনি বলে জান না। এবার এসে পরেছ তাই প্রতি দিন আসবে, আমি প্রতি দিন বিকেলে আমাদের স্টলে আসি। সেই সে বার যতদিন বই মেলা ছিল তত দিন গিয়েছি। এজাজের সাথে স্টলে বসে আড্ডা দিয়েছি, সারাটা মেলা চত্বরে ঘুরেছি, চানাচুর বাদাম খেয়েছি আর বট তলায় বসে বসে যার কথা বলেছি যার গল্প করেছি এজাজ নিজে দেখে শুনে তাকেই এনে দিয়েছিল আমায় সারা জীবনের জন্য। যার আঁচলে এখনও বাধা রয়েছি।

দেশের বাইরে থাকা কালিন প্রতিটা বই মেলা চলার সংবাদ যখন পেয়েছি তখন সেই সব দিন গুলির কথা মনে হয়ে সেই স্মৃতির কথা মনে একটা কেমন করা ভাব এনে দিত, কত কথা মনে হতো। আবার কবে যাব সেই আশায় মনে মনে কত কি জাল বুনেছি।
তখনকার বই মেলার সিমানা এতটা বিশাল ছিল না। মানুষের মনে বই মেলার আকুতি তখনও পৌঁছেনি, মেলার বই এর গন্ধে মানুষ তখনও ব্যাকুল হতে শুরু করেনি, তখনও বই মেলা মিলন মেলার রূপে পসার সাজাতে পারেনি। সবে মাত্র কলি মেলতে শুরু করেছেPhotobucket
সেই শেষ, তারপরে এত দিন আর বই মেলায় যাবার সুযোগ হয়ে উঠেনি। সেই এজাজ রসুল ও আর নেই, যার ডাকে আবার যাব যে ডেকে নিয়ে যাবে সে আর নেই। বন্ধু বলতে যা বোঝায় এজাজ আর আমি ছিলাম তার চেয়ে অনেক অনেক দূরের কিছু। এতটা গভীর সম্পর্ক হতে পারে কোন বন্ধুত্বে তা আমাদের এই বন্ধুত্ব যারা দেখেছে তাদের মুখে মুখে এখনও কিংবদন্তির মত ঘুরে বেড়ায়। গত চার বছর আগে সাউথ ওয়েলস এর ব্রিজেন্ড শহরের কাছে আমার সেঝ ভাই এর সাথে একটা মাঠের পাশ দিয়ে হেটে যাবার পথে লন্ডন থেকে এজাজের ছোট বোন ডলি আপার ফোন পেয়ে জানলাম এজাজ আর নেই। আপা বলল গত কাল হঠাত্ স্ট্রোক করেছে।

শব্দ নীড়ে এসে এখানকার আয়োজনে এত দিন যাই যাই করেও যেতে পারিনি। গত রাতে গেলাম। সেই বট তলা তেমনি রয়েছে শুধু এজাজ নেই। বুকটা হাহাকার করে উঠল। বই মেলার খবর গল্প এত দিন ধরে অনেক শুনেছি। শুনে শুনে কিছুটা অনুমান করেছি। কিন্তু যতটা অনুমান করেছি তার চেয়ে অনেক প্রসারিত হয়েছে বই মেলার প্রাঙ্গন, বই মেলার আবেদন এবং বই মেলার গুরুত্ব। আজ খুজে দেখলাম এই ২৬টি বছর কোথা দিয়ে গেছে বলতে পারব না।


Photobucketনওরোজ কিতাবিস্তান এখন নেই। ভিন্ন নামে মানে নওরোজ সাহিত্য সম্ভার নামে চলছে। এজাজের বড় ভাই ইফতেখার রসুল জর্জ ভাই আছেন। কিন্তু এজাজের কথা মনে হবার পর আর ওখানে যাবার শক্তি পাইনি। তবুও পুরনো দুই এক জনের সাথে দেখা হয়ে গেল যেমন খান ব্রাদার্স এর ফিরোজ মামা। অনেকক্ষণ কথা বললাম। জিয়া ভাই আর শিবলি ভাই এর কাছে ফোন করে শব্দ তরীর লোকেশন নিয়ে গেলাম ওখানে।

যেয়ে দেখি ভালবাসা ভাই আর সরসিজ আলীম ভাই কথা বলছেন । দুইটা ছবি নিলাম। জাকির ভাই অনেক করে আগামি কাল অর্থাৎ আজ যাবার জন্য বললেন। বললাম বাসা থেকে যদি কেউ আসে তাহলে আসব এবং অনেকক্ষণ থেকে ঘুরে ঘুরে দেখব। প্রানের মেলা, মনের মেলা, সবার মেলা বই মেলা।

No comments:

Post a Comment

Thank you very much for your comments.