Friday 30 November 2012

নক্ষত্রের গোধূলি-৩৬ [অধ্যায় ৩]

বাসায় এসে শুনি শাহেদ এয়ারপোর্টে গেছে। কতক্ষন পরে ও এসেই হই চই একা চলে এলাম বলে। বাসায় এসেই মনে হোল আজ বুঝি আমার পুনরজন্ম হোল আমি যে এপরযন্ত পৌছতে পারব আশা করিনি সারাটা পথ কি টেনশনে গেছে। একেতো তোমার চিন্তা কোথায় গেলে কিভাবে গেলে কি কোরছ তারপরে নিজে কি করবো সাথেতো দুইটা
অমানুষ রয়েছে ওই দুইটা যদি মানুষ হোত তাহলে আমার এতো কষ্ট হোত না। যাক আল্লাহর কাছে হাযার শোকর সহি সালামতে পৌচেছি বাসায় ঢুকার সাথে সাথেই তিন মেয়ে এক সাথে এইযে জড়িয়ে ধরলো আর ছারেনা। তোমাকেতো বলে দিয়েছিলাম ঢাকায় নেমে বাসায় ফোন করবে যাইহোক যা হবার হয়ে গেছে। আছছা মনি শোন প্রায় আধা ঘন্টা হয়েছে লাইনে আছি আমার কারড প্রায় শেষ। এখন রাখি আজ আমার ছুটি এখন লাইব্রেরিতে যাচ্ছি ওখান থেকে আমি আমার কথা মেইলে পাঠাছছি তুমি দেখে নিও। ফোন রেখে রাশেদ সাহেব রুমে এসে বাইরে যাবার শীতের কাপর পরে হ্যান্ড গ্লোভস পকেটে নিয়ে নিচে এসে সেদিন কবিরের দেখিয়ে দেয়া গোপন জায়গা থেকে চাবি নিয়ে বাইরে বের হয়ে দড়জায় তালা দিয়ে আবার গোপন জায়গায় চাবিটা রেখে কবিরের দেখানো পথ ধরে হাটতে লাগলেন। বেশ ঠান্ডা হ্যান্ড গ্লোভস টা হাতে পরে নিলেন, মাফলারটা আনা দরকার ছিলো কানে ঠান্ডা লাগছে, আকাশ ভরা রোদ, বিলাতে এরকম আকাশ দেখা নাকি ভাগ্যের ব্যাপার তবুও কি ঠান্ডা। একটু এগিয়ে যেতেই দেখে সেদিন বাস থেকে যেখানে নেমেছিলো সেই জায়গা। বায়ে ঘুরে দেখে একটা দশ বারো ফুট উচু পিলারের মাথায় বিভিন্ন জায়গার নাম লেখা দিক নিরদেশনা।

লাইব্রেরি লেখা বোর্ডটা যেদিকে তীর চিহ্ন দিয়ে ঘুরানো রয়েছে সেদিকে হেটে কিছুদুর যেতেই দেখে হ্যা কবির যেভাবে বলেছে সেই রকমই ডানে সমার ফিল্ড সুপারস্টোর বায়ে লাইব্রেরি। সমারফিল্ডে পরে যাব আগে লাইব্রেরিতে যাই। সামনে এসে দারিয়ে দেখলো অনেক পুরানা বিল্ডিং আশে পাশে দেখে অনেক গাছপালা কিন্তু কোনটায় পাতা নেই সব পাতা শিতে ঝরে গেছে ন্যারা গাছ দাড়িয়ে আছে, ভিতরে ঢুকে পরলো নিচ তলায় এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে প্রায় সব দড়জাই বন্ধ পাশেই উপরে যাবার কাঠের সিড়ি, উপরে উঠেই বাইরের শীতের চেয়ে এখানে উষ্ণতা অনুভব করলেন হিটার চলছে। হাতের গ্লোভস খুলে জ্যাকেটের পকেটে রাখলেন সিকিউরিটি গেট পেরিয়ে বাম পাশে রিসিপসন সমস্ত ঘরটাই নিরব সুধু রিসিপসনের একজন তার মত অন্য একজনের সাথে ফিস ফিস করে কথা বলছে একজন বিরাট এক কম্পিউটারে কাজ করছে আর একজনে কম্পিউটারের মনিটর দেখে কিসব গুছিয়ে রাখছে। পাশে দারাতেই একজন মহিলা যিনি গুছিয়ে রাখছিলেন এগিয়ে এসে জিজ্ঞ্যেস করলো আমি কি ভাবে সাহায্য করতে পারি? আমি একটু ইন্টারনেট ব্যাবহার করবো। আগে বুকিং করেছ? না। কারড আছে? না। মহিলা একটা ফরম দিয়ে পুরন করতে বলল একটা কলম বের করে দিলো সাথে।

ফরম পুরন করে দিতেই সেটা নিয়ে কম্পিউটারে কি কি এন্ট্রি করে বলল কতক্ষন ব্যাবহার করবে? কতক্ষন করা যায়? একদিনে এক ঘন্টা, এর বেশী করতে হলে ঘন্টা প্রতি এক পাউন্ড। ঠিক আছে তাহলে একঘন্টা। আছছা ওইযে তিন নম্বর কম্পিউটার আর এই হোল তোমার পিন নম্বর একটা ছোট্ট কাগজ এগিয়ে দিলো কাগজটা নিয়ে ওখান থেকে সরে এলো। এতোক্ষনে চারিদিকে তকিয়ে দেখে বেশ বড় হল রুম অনেক পুরাতন অনেক কিছু আছে। দেখবো সব কিছু ঘুরে দেখবো আগে মেইলটা পাঠিয়ে নেই বারিতে সবাই ভাবছে। টেবিলে বসে পিন নম্বর দিয়ে লগ ইন করেই সরা সরি ইয়াহু পেজ পেয়ে সাইন অন করে মেইল লিখতে শুরু করলো। মনির দেশে ফিরে যাবার সময় পথের বিবরন শুনে তার মনের অবস্থা কি সেসব লেখার পর সেদিন হিথ্রো এয়ারপোরট থেকে বেরিয়ে আসার পর থেকে আজ পরযন্ত সব কিছু সংক্ষেপে লিখলো প্রায় দুই পাতা ভরে। ঘরিতে দেখে তার আর মাত্র দশ মিনিট বাকি রয়েছে। এবার রেস্টুরেন্টের ঠিকানাটা লিখেই শেষ করলো। মেইল পাঠিয়ে দিয়ে রিসিপসনে এসে জানালো আমার শেষ কিন্তু আমি কি লাইব্রেরিতে অন্য কিছু দেখতে পারি, ধন্যবাদ জানিয়ে বলল হ্যা তুমি ইছছা করলে বিকেল পাচটা পরযন্ত থাকতে পারো কোন নিষধ নেই। দৈনিক সংবাদপত্র কয়েকটা সাময়িকি এই শহরের পত্তন কাহিনি বরতমান বিবরন শহরের ম্যাপ বাসের সিডিউল এই শহরে কোথায় কি ঘটছে ঘটবে এধরনের যাবতিয় তথ্য, বিভিন্ন রকমের বই, কয়েকটা হাই স্পিড ব্রডব্যান্ড লাইন সংযুক্ত কম্পিউটার ইত্যাদি নানান কিছুতে ভরা এই লাইব্রেরি। এদেশের ছোট বড় সব শহরেই নাকি এই রকম একটা লাইব্রেরি আছে।

কার কোথায় কি প্রয়োজন জানো না, যাও লাইব্রেরি থেকে জেনে আস। কে কোন কলেজ বা উনিভারসিটিতে পড়তে চাও সেখানে কি আছে কি নেই জানো না জানতে চাও তবে যাও লাইব্রেরি থেকে জেনে আস। বরতমান প্রজন্মকে যুগোপযোগি করে গরে তোলার জন্যে যা প্রয়োজন তার সবই পাবে এখানে শুধু বরতমান প্রজন্ম নয় আবাল বৃদ্ধবনিতা সবাই এখানে আসতে পারে। কোথাও কোথাও লাইব্রেরিই তাদের মিলন কেন্দ্র। দিনের বেলা লাইব্রেরি আর রাতে পাব এদের সামাজিক মিলন কেন্দ্র। আহারে অর্থ, হায়রে পাউন্ড তুমি এদেশের জন্যে কি করেছ আর আমাদের দেশের জন্যে কি করছ? এরকম একটা লাইব্রেরি্র সুযোগ আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা পেলে কোথায় এগিয়ে যেতো! এদেশে এখনকার প্রজন্ম তাদের পুরব পুরুষদের কৃত করমের ফল ভোগ করছে। তারা ছিল করমঠ উচ্চাভিলাষী সুদূর প্রসারি দৃষটি সমপন্ন ওরা সারা বিশব জুরে সাম্রাজ্যা বিস্তার করেছে, সারা বিশবের সম্পদ এনে নিজের দেশ গরেছে। এদের বারিঘড়ের কাঠামো চলাচলের রাস্তা বিভিন্ন প্রতিস্টহানের আয়োজন দেখেই বোঝা যায়। প্রচন্ড শীতের মধ্যে যেখানে বতসরের আরধেকই থাকে সংকুচিত হয়ে কোন কাজ করা যায়না তার মধ্যেও ওরা কিভাবে এসব গড়ে তুলেছে কি ধরনের পরিকল্পনা করেছে কি রকম গঠন মুলক চিন্তাভাবনা ছিলো তা না দেখলে বোঝা কঠিন। আর আমাদের পুরব পুরুষেরা ছিল আয়েশি ভোগ বিলাসী কোন রকম মাছেভাতে দিন গেলেই খুশী সাথে যদি একটু নাচগানের আয়োজন থাকে তাহলেতো কথাই নেই আর কিচ্ছু চাইনা।

কিন্তু আশ্চরয হোল মাত্র কয়েকজন মানুষ এই এতো বর লাইব্রেরি ব্যাবহার করছে দুই তিন জন বুড়া বুড়ি পত্রিকা পরছে একজন কম্পিউটারে রয়েছে আর একজন মধ্যেবয়সি মহিলা বই পরছে। এখানে ইংলিশ শেখার জন্যে অডিও ক্যাসেট ভিডিও ক্যেসেট বই গানের সিডি সিনেমার ডিভিডি নানান কিছু রয়েছে যা নাম মাত্র ভারা দিয়ে দুই সপ্তাহের জন্যে বাসায় নেয়া যায়। যাদের মাতৃভাষা ইংলিশ তারাও শিখছে আবার যাদের মাতৃভাষা ইংলিশ নয় তারাও শিখছে। এই লাইব্রেরি দেখে মনে হয় হ্যা সত্যিই জ্ঞ্যান ভান্ডার। জ্ঞ্যানের বিশাল ভান্ডার এখানে নিশ্চুপ হয়ে দারিয়ে রয়েছে। জ্ঞ্যানের মশাল জ্বেলে তার এলাকা আলোকিত করে রেখেছে অনেক দিন ধরে, তার এলাকার নাগরিকদেরকে মানুষ করে গরে তোলার জন্যে সুপথে চলতে শেখানোর জন্য। এগুলিতো আর একদিনে হয়নি। রাশেদ সাহেব অবাক হয়ে দেখেন আর ভাবেন এ কোথায় এলাম এখানে না এলেতো এসবের কিছুই জানতে পারতামনা কিছুই দেখতে পেতামনা আমার দেশের সাথে তুলনা করতে পারতামনা টাকা আর পাউন্ডের তফাত কি তা জানতে পারতেমনা। গোলা ভরা ধান গোয়াল ভরা গরু আর এই লাইব্রেরির তফাতটা কোথায় কিছুক্ষন ভাবলেন। না এক দিনে এই লাইব্রেরি দেখা সমভব না পরের অফ ডেতে আবার আসব। একটু আফসোস হলো একটু পরে যদি মেইলটা পাঠাতাম তাহলেতো এসম্পরকে কিছু লেখা যেতো, কি আর করা যাবে পরের বার যখন আসব তখন লিখবো মনে মনে ভাবতে ভাবতে বেরিয়ে এলেন।
(চলবে)

মুখ বন্ধঃ বানান দেখবেন না, সমস্যা আছে। এই পর্বে এবং এর পরের পর্বে।

No comments:

Post a Comment

Thank you very much for your comments.