Sunday 18 November 2012

বিলাতের সাত সতের - ৭ [৯]


[পূর্ব প্রকাশের পর]
মেয়েটির নাম আলেকজান্দ্রা। আলেকজান্দ্রা আবার এক নতুন কাস্টমার এলে তাকে এ্টেন্ড করতে গেলে খুকু বলল,
মেয়েটা খুব ভাল, তাই না আব্বু?ওকে কিছু টিপস দিয়ে দিও।

আচ্ছা, সে তুমিই দিও বলে একটা ৫ পাউন্ডের নোট বের করে ওর হাতে দিলাম, তবে এখানে ৯৫% ভাগ রেস্টুরেন্টে টিপস মালিকেরা নিয়ে নেয়, কর্মচারীদের দেয় না। কাজেই যাবার সময় তুমি কাউন্টারে
যে আছে তাকে দেখিয়ে ওকে ডেকে ওর হাতে নোটটা দিয়ে ওই লোককে বলবে এটা ওকে দিলাম।
খেতে খেতে জিজ্ঞেস করলাম কি আব্বু এই খাবার কেমন লাগছে?
আমি তোমার মেয়ে না?
এই তো বাবা বিদেশে না এলে জীবনের অনেক কিছু অজানা থেকে যায়, কি করে পরিবেশ পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে চলতে হয় তা কিছুই বোঝা যায় না। মায়ের কোল ছেড়ে এখন এসেছ, দেখবে পৃথিবীটা কেমন।

সেদিন খাবার পাট সেরে রাস্তার ও পাশে ইস্ট লন্ডন জামে মসজিদ দেখালাম আর একটু এগিয়ে রয়াল হাসপাতাল দেখালাম। এখান দিয়ে রাস্তা পার হয়ে একটু বাম দিকে বার্কলেজ ব্যাঙ্ক এ নিয়ে গেলাম একটা একাউন্ট করার জন্য। রিসিপশনে যে ছিল সে আমাদের সামনের এক জন বয়স্ক বাঙ্গালির সাথে বাংলাদেশের সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলছিল। আমরা তার পিছনে দাঁড়ালাম। সামনের বয়স্ক ভদ্রলোকের কাজ হয়ে গেলে আমরা এগিয়ে বাংলায় বললাম আমরা একাউন্ট করতে চাই। আমাদের কথা শুনে সে কিছু বোঝেনি এমন একটা ভাব করে ইংরেজিতে জিজ্ঞেস করল কি বললে?
আবার বাংলায় বললাম আমরা একটা স্টুডেন্ট একাউন্ট করতে চাই
এবারও সে ইংরেজিতে জিজ্ঞেস করল, কি বললে?
বললাম আপনি এই একটু আগে ওই ভদ্র লোকের সাথে বাংলায় কথা বলছিলেন আর এখন আমার কথা বুঝতে পারছেন না?
সে আবার ইংরেজিতে বলল, কি বললে?
বুঝলাম ইনি এক মাত্র আঞ্চলিক ভাষা ছাড়া শুদ্ধ বাংলা জানেন না কিংবা বাঙ্গালি বলে পরিচয় দিতে লজ্জা পান তাই তখন বাধ্য হয়ে ইংরেজিতেই বললাম। শুনে বলল এখানে আমরা স্টুডেন্ট একাউন্ট করি না, আপনারা অন লাইনে স্টুডেন্ট একাউন্ট করুন। এমনিই এর উপর আমার কিছুটা রাগ মেশানো বিরক্তি ভাব এসেছিল তাই আর কিছু না বলে ধন্যবাদ জানিয়ে ওর সামনে থেকে চলে এলাম। আবার কাছাকাছি কোন ব্যাঙ্ক আছে দেখতে হবে। খুঁজে লয়েডস ব্যাঙ্ক পেলাম রাস্তার ওপাড়ে। এখানে এসে জানালাম। এরা আবার বলছে ঠিকানার প্রমান লাগবে।
আরে এ এসেছে মাত্র গত পরশু সে এটা কি ভাবে দিবে?এই তো কলেজ থেকে যে চিঠি দিয়েছে ওতে তার স্থানীয় এবং স্থায়ী দুই ঠিকানা দেয়া আছে।

না এতে হবে না।
কি হলে হবে?
ওর নামে বাসার যে কোন বিলের একটা কপি হলেই হবে।
আচ্ছা আমাকে একটু বুঝিয়ে বলবে যে এক জন মানুষ যে এই দেশে ছিল না সে কি করে এই বিল দেখাবে?তা হলে কি বলতে চাও ও এখানে আসার আগে ওর নামে বাসা করে রাখা উচিত?
দেখ এ কথার জবাব আমি দিতে পারব না কারন আমাদের যে নিয়ম আমি তোমাকে তাই বলে দিলাম। এ কথা বলে একাউন্ট করার নিয়ম সংক্রান্ত ছাপান একটা কাগজ আমাকে দিয়ে বলল দেখ এটা পড়লেই জানতে পারবে কি কি দেখাতে হবে।
কাগজটা নিয়ে পড়ে দেখলাম ও লোক যা বলেছে তাই লেখা। বেশ হবে না যখন তা হলে আর কি। বের হয়ে পাশের এইচএসবিসি ব্যাঙ্ক এ গেলাম ওখানেও ওই একই কথা। সেদিনের মত আর একাউন্ট করা হল না, ব্যাঙ্ক থেকে বের হয়ে এলাম।
মেয়েকে জিজ্ঞেস করলাম এখন কি আরো কিছুক্ষণ ঘুরে দেখবে না কি বাসায় যাবে?
না আব্বু আজ আর পারছি না, খুব টায়ার্ড লাগছে, বাসায় চল। তুমি তো কাল আছ কাল আবার বের হব।
বেশ চল, এখানে রিকশা নেই যে এই রিকশা চল বলে লাফ দিয়ে উঠে পরবে, এখানে একটু হাটতে হবেই। আজ একটু হেঁটেছ বলে এমন টায়ার্ড লাগছে। [চলবে]

*** আমাদের সোনার বাংলাদেশে অনেক ডাকাত এসে ডাকাতি করে গেছে। আসুন আমরা সবাই মিলে সেই ক্ষতি কিছুটা হলেও কাটিয়ে এনে আমাদের পরবর্তির জন্য সুন্দর একটা দেশ রেখে যাই!

No comments:

Post a Comment

Thank you very much for your comments.