Sunday 18 November 2012

বিলাতের সাত সতের - ৬ [৯]


[পূর্ব প্রকাশের পর]
ঠিক আছে তা হলে, তুমি যখন যে কোন অসুবিধায় পর সঙ্গে সঙ্গে ফোন করে বলবে আমি বা তোমার চাচা গিয়ে নিয়ে আসব, কোন চিন্তা কোর না। বাবা মা কি আর সব সময় কাছে থাকতে পারে?তুমি এখন বড় হয়েছ, আর তা ছাড়া তোমার বাবা থাকে কত দূরে, সে তো আর সব সময় আসতে পারবে না। তোমার চাচাও কাছে থাকে না। তুমি আমার সাথে যোগা যোগ রেখ।


আচ্ছা চাচী।
ভাবি দুই সেট জামা কাপড় এনে রেখেছিল তা বের করে দিল।
তা হলে ভাবী আজ উঠি।
এর পর সোজা আরিফের বাসায়। আরিফের বৌ অনেক কিছু রেঁধেছিল। খেয়ে দেয়ে কিছু ক্ষন গল্প সল্প করলাম। এখানেও আরিফ আরিফের বৌ একই রকম উপদেশ পরামর্শ দিল। রাত ১১টা বেজে গেল বাসায় ফিরতে। কাল কি করব সে প্ল্যান করে শুয়ে পরলাম।

সকালে বের হয়ে ডিস্ট্রিক্ট লাইনে মনুমেন্ট নেমে ট্রেন বদলে নর্দার্ন লাইন ধরে বোরো স্টেশনে নেমে আর কলেজ খুঁজে পাই না। প্রায় ঘন্টা খানিক খুঁজে তারপর পেলাম। ওহ সে কি হেস্তনেস্ত, কলেজের চার পাশ দিয়ে ঘুরেছি কিন্তু পাইনি। শেষ পর্যন্ত পেলাম। ভর্তি করে কবে থেকে ক্লাস শুরু হবে, কবে এসে কোর্স মেটেরিয়াল নিতে হবে সব কিছু জেনে কিছু দরকারি কাগজ পত্র নিয়ে বেরিয়ে এলাম।
আসার পথে জিজ্ঞেস করলাম কেন পাইনি বুঝেছ?
হ্যা বুঝেছি, এইতো এই রেস্টুরেন্টের পাশ দিয়ে গেলেই হবে ওই তো ডান দিকে স্টেশন।
ঠিক আছে, এই ভাবেই এসো, চল এখন তোমাকে বাঙ্গালি লন্ডনে নিয়ে যাই ওখানে গিয়ে খেতে হবে ভীষন ক্ষুধা লেগেছে।

হ্যা আব্বু আমারও ক্ষুধা লেগেছে, কিন্তু বাঙ্গালি লন্ডন মানে?
মানে গেলেই বুঝবে, আমি আগে থেকে বলে তোমার অবাক হবার পথ বন্ধ করতে চাই না।
অল্ডগেট ইস্টে নেমে স্টেশন থেকে উপরে এসেই বাংলায় ‘ব্রিক লেন’ রাস্তার নাম লেখা এবং অধিকাংশ উপ মহাদেশীয় লোকজন দেখে খুকু বলল আব্বু আমি এই বারো ঘন্টা ফ্লাই করে এ কোথায় এলাম এ তো দেখছি একে বারে আমাদের ঢাকা।
বললাম চল আরো সামনে চল আরো দেখ।
যতই এগোচ্ছি অধিকাংশ দোকানের নাম, রাস্তার নাম সব বাংলায় লেখা দেখে খুকু অবাক। যতই দেখছে ততই অবাক হচ্ছে। কিছু দূরে বাংলাদেশের সোনালি ব্যাঙ্ক পর্যন্ত গিয়ে আবার ফিরে এসে হোয়াইট চ্যাপেল এলাম। এখানে রাস্তার পাশে ফুটপাথে তাঁবু টানানো শাক সব্জী থেকে মোবাইল ফোন সহ নানা ধরনের জিনিসের দোকান দেখে ও আরো অবাক।
লন্ডনেও এমন ফুটপাথে বাজার!
নিজের চোখেই দেখছ আর জিজ্ঞেস কর কি।
চল আব্বু আজ আমরা ইংলিশ লাঞ্চ করি।
ইংলিশ লাঞ্চে কি থাকে?
এদের ট্র্যাডিশনাল ইংলিশ লাঞ্চ হচ্ছে ফিশ এন্ড চিপস। বলে কাছে ছোট একটা দোকানে ঢুকলাম।
ওর বয়েসী এক ওয়েট্রেস এসে জিজ্ঞেস করল কি খাব।
খুকু বলল আব্বু দুই রকম অর্ডার দেই তাই দুইটাই টেস্ট করে দেখতে পারব।
হ্যা দাও।
একটা দিল মাছ এবং চিপস, সাথে মটর শুঁটি আর স্যালাদ, আর একটা চিকেন এবং বেকড বিন্স সাথে টোস্ট আর স্যালাদ।
অর্ডার নিয়ে ওয়েট্রেস মেয়েটা চলে গেলে খুকু বলল আব্বু মেয়েটা যেমন সুন্দর তেমন ওর আচরণ তাই না?
আমি বললাম হ্যা, আবার এলে জিজ্ঞেস করে দেখ হয় তো ও তোমার মত ছাত্রী। সত্যিই মেয়েটা যখন দুই ট্রেতে করে দুই হাতে খাবার এনে টেবিলে নামিয়ে রাখছিল তখন খুকু জিজ্ঞেস করল
তুমি কি এখানে ফুল টাইম কাজ কর?
না আমি পার্ট টাইম।
তা হলা অন্য সময়ে কি কর?
আমি পড়াশুনা করি।

কোথায়?
ওর কলেজের নাম শুনে খুকু বলল,
আমি এই মাত্র ওই কলেজে ভর্তি হয়ে এলাম।
তাই নাকি?তাহলে তো তুমি আমার কলেজ মেট!
হ্যা তাই দেখছি।
তোমার কথা শুনে মনে হয় না তুমি ইংলিশ, আমি কি ভুল বলছি?
না তুমি ঠিক ধরেছ, আমি পোলিশ।
বাহ!
দোকানে আমরাই দুই জন কাস্টমার ছিলাম, খেতে খেতে ওরা আরো কিছু আলাপ করল। আমি শুনছি আর খাচ্ছি আর দেখছি খুকু এখানে ভাষা নিয়ে কোন অসুবিধায় পরবে কি না। দেখলাম মোটা মুটি চলছে, কালই বাংলাদেশ থেকে এসে কি আর রাতারাতি ইংরেজ হয়ে যেতে পারে? তবে যা বলছে তা মন্দ না। একটু নিশ্চিন্ত হলাম। [চলবে]

 *** যারা দেশে স্বাধীন করেছে তারা হলেন মুক্তি যোদ্ধা আর যারা দেশ গড়ে তুলবে তারা কি হবেন?
আসুননা আমরা তাই হই! আগামীর জন্য রেখে যাই চমতকার এক স্বপ্নের দেশ!

No comments:

Post a Comment

Thank you very much for your comments.