Monday 19 November 2012

গোল্ডি সাহেব এবং স্কটিশ সুন্দরী-২ [৫]

 Photobucket
[ছবিঃ ব্রিস্টল রেল স্টেশন]

কন্ট্রোল রুমের পাশে একটা ছোট ঘর খুলে ও ঢুকল আমি ওর পিছনে। ঢুকেই দেখি গলায় শিকল বাধা বিশাল এক
এলসেসিয়ান পিছনের দুই পায়ের উপর বসে আছে সামনের পা দুটি সামনে বিছানো। ওজন সত্তর কেজির কম হবে না। আস্ত এক নেকড়ে বাঘের মত মনে হোল। আমাকে দেখেই ঝট করে উঠে দাঁত মুখ খিঁচিয়ে ঘেউ করে উঠলো। এই প্রাণীর প্রতি এমনিতে ছোট বেলা থেকেই আমার ভয়। যখন
ক্লাস সেভেন থেকে এইটে উঠেছি তখন এক জায়গায় পরীক্ষা দিয়েছিলাম তাতে ভালোই হয়েছিলো বলে পরবর্তীতে ভাইভার জন্য যেদিন যেতে বলেছে সেই দিন ভোর বেলা উঠে বাসার পিছনে সবজি বাগানে দাঁড়িয়ে কি যেন করছিলাম আর এমন সময় হঠাৎ কোথা থেকে এক পাগলা কুকুর পিছনে থেকে এসেই বাম হাতের কব্জিতে কামড় দিয়ে বসল। ভয়ে আর ব্যথায় চিৎকার করতেই মা এসে দেখে হতভম্ব। তারা তারি হাতের কাছে আর কিছু না পেয়ে বাগানে পানি দেবার পাইপের এক মাথা ধরে পটা পট কয়েক ঘা দিতেই হাত ছেড়ে যে পথে এসেছিলো সেই পথে দৌড়। এদিকে যা হবার তা হয়ে গেছে। হাত বেয়ে সমানে রক্ত বেয়ে পরছে। মা আমাকে টেনে ঘরে এনেই মগে ডেটল গুলিয়ে হাতে ঢেলে দিলেন। একটু পরিষ্কার হলে দেখা গেল তিনটা দাঁত বিঁধেছে। তার মধ্যে হাতের বুড়ো আঙ্গুলের উপরে একটা রগ মনে হয় কেটে গেছে বলে এখানকার রক্ত থামছে না। হাতের কাছে যা ছিল তাই দিয়ে কোন রকম ব্যান্ডেজ করে দিলেন। চেঁচামেচি শুনে বাবা এগিয়ে এসেছেন পাড়া প্রতিবেশী ও দুই একজন এসেছে। তাদের পরামর্শে বাবা রেডি হয়ে নিলেন। কে একজন স্কুটার ডেকে এনেছে তাতে করে হাসপাতালে নিয়ে এলেন। তখনো বুড়ো আঙ্গুলের উপরের অংশের রক্ত বের হচ্ছে। ইমার্জেন্সি ডাক্তার দেখে বললেন এই রগ কেটে গেছে সেলাই দিতে হবে। সেলাই করে ব্যান্ডেজ করে হাতে আর পেটে ইঞ্জেকশন দিয়ে বলে দিল ১৪ দিনে ১৪ টা ইঞ্জেকশন দিতে হবে। আজ নিয়ে যান আর কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু আমার সেই ভাইভা আর দেয়া হোল না। হলে হয়ত বা আমার জীবন এখন যে রকম চলছে সে রকম না হয়ে ভিন্ন রকম হতে পারত। এই হচ্ছে ঘটনা, এর পর থেকেই এই প্রাণীর প্রতি আমার অসম্ভব রকমের ভয়।

Photobucket
ছবিঃ সাউথ ওয়েলস এর ব্রিজেন্ড শহরের একটি বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট। 
সে যাই হোক, এই কুত্তা না সরি কুত্তা না একটু ভদ্র ভাষায় বলতে হয় কুকুর। না না কুকুরও না। তাহলে? এ হচ্ছে ডগ। এতো আর আমাদের নেড়ি কুত্তা না, রীতিমত টাকা খরচ করে ট্রেনিং দিয়ে একে ডগ সাহেব বানানো হয়েছে। ও যখন আমাকে দেখে ঘেউ ঘেউ করেই চলেছে তখনই পিটার ধমক দিয়ে বলল ওহ গোল্ডি স্টপ, হি ইস আউয়ার কলিগ, ডোন্ট বি সিলি। আমি একটু পিছিয়ে এসেছি। বুঝলাম তাহলে এই হচ্ছে গোল্ডি। পিটার আমাকে বলল তোমার পকেট থেকে পিয়াইডি চাবিটা বের করে ওকে দেখাও।

সবুজ রঙ এর একটা ম্যাগনেটিক চাবি আমাদের সবার কাছেই থাকে, পকেট থেকে সেটা বের করলাম। ওটা দেখেই গোল্ডি তড়াক করে লাফ দিয়ে আমার ডান হাতের কাছে চলে এলো আর তা দেখেই আমার সেই দিনের কথা মনে হয়ে শরীরের রক্ত মনে হল ঠাণ্ডা বরফ হয়ে গেছে। আমি নড়তে পারছি না আমার সব থেমে গেছে শ্বাস বইছে কিনা বুঝতে পারছি না। গোল্ডি কাছে এসেই হাতে ধরা চাবিটা শুঁকছে। আমার মনে হচ্ছিল হাতটা বুঝি এবার গিলেই ফেলবে। না, সে তা আর করেনি তবে আমাকে ভাল ভাবে আন্তরিকতার সাথে গ্রহন করতে পারেনি রাগে গড়গড় করতে করতে যেখানে বসে ছিল সেখানে ফিরে গেল। এবার পিটার ওর কাছে গিয়ে বুঝিয়ে বলল দেখ গোল্ডি এ হচ্ছে কে’ আমাদের সহকর্মী এর সাথে এরকম খারাপ ব্যবহার করবে না, এর সাথে তোমাকে কাজ করতে হবে, সাবধান আমি যেন কোন অভিযোগ শুনি না। পিটারতো বলল কিন্তু গোল্ডি কি বুঝল কে জানে তবে গড় গড়া বন্ধ হয়েছে আর তার সাথে একটু একটু করে লেজ নাড়ছে।আবার কন্ট্রোল রুমে ফিরে এলাম, কে তোমার ল্যাপটপ এনেছ? আরে না এইতো কদিন আগে ওটা ভেঙ্গে গেছে। মানে? খুলে বললাম সে কাহিনী। ও, তাহলে কি এখন আর একটা কিনবে? না পিটার এখন আর কেনা সম্ভব নয়, দেখি কিছু দিন পর ক্রিস্টমাসের সেল এর সময় কিনতে হবে। তাহলে এই ডেস্কটপ দিয়েই কাজ চালিয়ে নাও। আচ্ছা তাহলে সব দেখলে তো, বাকী যা আছে গোল্ডি দেখিয়ে দিবে, এখন তাহলে আমি বাই বলি? হ্যাঁ ঠিক আছে, তুমি বিশ্রাম নাও গিয়ে কাল আবার দেখা হচ্ছে। পিটার বাই বাই

বলে চলে গেল।
এই জায়গাটা হচ্ছে ১৯২৬ সালে তৈরি এখানকার প্রথম বাস ডিপো। প্রায় ১০ একর জায়গার উপর। প্রথম দিকে এই শহরে যখন ট্রাম চলতো তখনও এটাই ছিল ট্রাম ডিপো।
সাবেক আমলের ধরন গড়নে তৈরি বলে এখন এই আধুনিক যুগে আর চলছিলো না তাই এটা বিক্রি করে দিয়ে কাছেই অন্য জায়গায় আধুনিক যুগের উপযোগী নতুন ডিপো বানিয়ে এরা ওখানে চলে গেছে আর এখানে হবে আবাসিক পল্লী। এতো দিন যাবত এখানে গাড়ি ইঞ্জিন ইত্যাদি চলাচল করেছে মাটিতে ডিজেল মবিল পরে মাটি দুষিত হয়ে গেছে যা মানুষের আবাসিক এলাকার জন্য অস্বাস্থ্যকর বলে প্রায় ৩০ ফুট গর্ত করে মাটি সরিয়ে নতুন মাটি দিয়ে ভরাট করে এখানে ৭২০ টি আধুনিক ফ্ল্যাট নির্মাণ হবে। এই পুরনো আমলের এলো মেলো ভাবে নির্মিত ছোট বড় নানান সাইজের বিল্ডিংয়ের ভিতরে যাতে মাদক সেবিরা এসে আখড়া না বানাতে পারে যার জন্য প্রায় ৩৬টা সিসি ক্যামেরা এবং ৪টা মনিটর দিয়ে ২৪ ঘণ্টা পাহারাদারি করার চুক্তি হয়েছে আমাদের কোম্পানির সাথে।

[আগামী পর্বের আমন্ত্রণ]

*** এ দেশের এই রূপ দেখেছি যে তাই
    মরণের পরেও যেন দেখিতে পাই।

No comments:

Post a Comment

Thank you very much for your comments.