Monday 19 November 2012

গোল্ডি সাহেব এবং স্কটিশ সুন্দরী-৩ [৫]


Photobucket


[ছবিঃ লন্ডনের টেমস নদী, চেলসি এলাকা থেকে]

[পূর্ব প্রকাশের পর, গোল্ডি সাহেব এবং স্কটিশ সুন্দরী-২]

পিটার চলে যাবার পর আমি বের হলাম গোল্ডিকে নিয়ে ক্যামেরা গুলি কোথায় কোথায় আছে তা দেখার জন্য। গোল্ডি নাকি জানে সেই সব দেখিয়ে দিতে পারবে। গোল্ডির ঘরে এসে দেখি শুয়ে আছে। আমাকে
দেখে দাঁড়ালো। ওর গলার চেইন খুলে বাংলায় বললাম চল এলাকাটা ঘুরে আসি। ঘড় ঘড়। কি, বাংলা বুঝ না? এবার বসে পরল। আবার ইংরেজিতে বললাম। আবার ঘড় ঘড়। সমস্যা। কি করি এখন ভেবে পাচ্ছি না। একটু ইতস্তত করে গোল্ডির চেইন ধরে বাইরে নিয়ে এলাম। হ্যাঁ এবার কাজ হবে বলে মনে হল। হ্যাঁ গোল্ডি সাহেব দাঁড়ালেন, ঘর থেকে বের হয়ে আগে আগে যাচ্ছে আমি তার পিছনে হাতে চেইন ধরে রেখেছি। একটা একটা করে যেখানে উপরে ক্যামেরা লাগানো আছে তার নিচে এসে উপরে মুখ তুলে দাঁড়ায় আর আমি টর্চ দিয়ে দেখি হ্যাঁ ক্যামেরা আছে। এই ভাবে প্রায় ঘণ্টা খানেকের মধ্যে পুরো এলাকাটা জরিপ করে যখন ফিরে আসছি তখন গোল্ডি সাহেব হঠাত্ করেই এক লাফ দিতে চাইল কিন্তু ওর গলার চেইন আমার হাতে শক্ত করে ধরা থাকায় আর পেরে উঠেনি, রাগে গড় গড় করছে। কি করি এখন আবার ভয় শুরু হোল। এবার আর বাংলা না শুধু ইংরেজিতেই বলছি কিন্তু উনি কিছু বুঝতে চাইছে না, হয়ত আমার উচ্চারণ সে বুঝে উঠতে পারছে না। যাই হোক কোন ভাবে মানিয়ে মানিয়ে ঘরে এনে বেধে রেখে ঘর তালা দিয়ে এসে বসলাম।
মনিটর গুলিতে চোখ ঘুড়িয়ে নিলাম ঠিকই আছে আশে পাশে কাওকে দেখা যাচ্ছে না। ভাবছি গোল্ডি সাহেবের সাথে এভাবে এখানে থাকা সম্ভব নয় কালই পিটার এলে ওকে খুলে বলতে হবে যেন ক্রিসকে বুঝিয়ে বলে আমাকে অন্য কোথাও নিয়ে যায়। রাতটা কেটে গেল, সকালে পিটার এলে ওকে খুলে বললাম, হাতের পুরনো ক্ষতটা দেখালাম। আচ্ছা ঠিক আছে আমি আজই ক্রিসকে খুলে বলবো তুমি এখন ঘুমাও গিয়ে। পিটারকে ধন্যবাদ জানিয়ে ঘরে এসে কাপড় পালটে বিছানায় শুয়ে পরলাম। বিগত এক মাসের ক্লান্তি, আর রাত জেগে কাজের পর শোবার সাথে সাথেই ঘুমিয়ে পরলাম।

একবারে চারটায় ঘুম ভাঙল, এখানকার শীতের চারটা মানে রাতের অন্ধকার হয়ে গেছে, রাস্তার আলো জেলেছে অনেকক্ষণ, ওপাশের এবে পার্কের গেটের বাইরে কোন গাড়ি নেই। হাত মুখ ধুয়ে খেতে যাবার সময় পিটারের কাছে গেটের চাবি আনতে গেছি আর অমনি পিটার প্রায় চিত কার করে বলে উঠলো ওহ কে, তোমার গুড নিউজ আছে। কি?একে বার হেড অফিসে যাচ্ছ তুমি। মানে? মানে আর কি, তুমি ক্রিসকে বলতে বলেছিলে না?হ্যাঁ। ক্রিসকে বলাতেই সে বলল ও, তাহলে কে কে এখানে আসতে বলে দাও। তাই নাকি?বলে একটু বসলাম। কবে কখন যেতে বলেছে? কাল সকালেই চলে যাও আজ রাতের ডিউটি করতে হবে না। এরিক আসছে আজ এখানে ওই করবে তুমি রেস্ট কর। বল কি! একটু অবাকই হলাম, কত দিন নিউক্যাসেলের বাইরে, কিছু দিন আগে যাও হুকুম হোল তা আবার ব্রীজেন্ড যেতে হোল। তাহলে শোন পিটার আমি এখনই বের হই আগে টিকেট নিয়ে ওখান থেকেই খেয়ে আসি না হলে কাউন্টার বন্ধ হয়ে যাবে। কেন আবার টিকেট করতে এতো দুরে যাবে কেন এখান থেকেই অনলাইনে করে প্রিন্ট করে নাও। ও হ্যাঁ আমি ভুলেই গেছিলাম। আচ্ছা ঠিক আছে অন্তত খেয়ে আসি, তুমি যাবে আমার সাথে? না না তুমি যাও খেয়ে আস।

পরদিন দুপুরে পিটারের আছ থেকে বিদায় নিয়ে সেন্ট মার্গারেট কোচ স্টেশনে এসে আড়াইটার কোচে উঠে পরলাম। মাঝে লীডসে প্রায় এক ঘণ্টার ব্রেক। বাস থেকে নেমে টার্মিনালের ভিতরে দোকান থেকে একটা টুনা বাগেট(লম্বা গোল মত পাউরুটি ফালি করে কেটে দুই ভাগ করে ভিতরে টুনা মাছ আর সালাদ দেয়া) আর এক ক্যান ডায়েট কোক নিয়ে ওয়েটিং লাউঞ্জে বসে খেয়ে নিলাম, আবার গিয়ে কাগজের গ্লাসে এক গ্লাস চা এনে আরামে বসে বসে চা খাচ্ছি আর ভাবছি কারো সাথে যোগাযোগ করলাম না ওখানে গিয়ে কোথায় কি ভাবে থাকবো কিছুই জানলাম না এতো রাতে গিয়ে কোন ঝামেলায় পরি এমনিই শীতের রাত। ডেভিডকে ফোন করলাম।
কি খবর ডেভিড, কেমন আছ?
হ্যাঁ কে ভাল আছি, তুমি কখন আসছ?
রাত হবে আমি এখন লীডসে। তা আমার কি ব্যবস্থা করেছে?
সব ব্যবস্থা ঠিক করা আছে তোমার ঘরের চাবি আমার কাছে আছে।
তোমার কাছে থাকলে হবে নাকি তা আমাকে পেতে হবে?
হ্যাঁ হ্যাঁ পাবে, তুমি এলেই পাবে।
আচ্ছা ভাল কথা, পেলেই হবে।
রাত প্রায় আটটার দিকে মটর ওয়ের পাশে কোন সার্ভিস স্টেশনে যেন থামল। হাতের গ্লোভস পরে কোচ থেকে নেমে গেলাম সার্ভিস স্টেশনের ভিতর। এক গ্লাশ চা নিয়ে বাইরে এসে দাঁড়িয়ে পকেট থেকে তামাক বের করে মাত্রই জ্বালিয়েছি অমনি ফোন বেজে উঠলো। এখন আর কেউ ফোন করবে না ভেবে একেবারে ভিতরে শার্টের পকেটে রেখেছিলাম।
এক হাতে পকেট খুঁজে ফোন বের করে দেখি অচেনা নম্বর, যাই হোক হ্যালো,
ওপাশ থেকে সুললিত মার্জিত কণ্ঠে স্পষ্ট উচ্চারণে ভেসে এলো ইজ ইট K দেয়ার?
ইয়েস, স্পিকিং।

ও বেশ, আমি ডার্লিংটন থেকে এলিজাবেথ ক্যাম্পবেল।
তা বল এলিজাবেথ আমি তোমাকে কি ভাবে সাহায্য করতে পারি?
তুমি কখন এসে পৌঁছবে?
মানে কি? তুমি আমাকে চেন? কোথায় পৌঁছানোর কথা বলছ?
এক সাথে তিনটা প্রশ্ন করলাম।
হ্যাঁ চিনি এবং খুব ভালো করেই চিনি এবং তোমার প্রোফাইল আমার মুখস্থ।
আশ্চর্য!
Newcastle University
ছবিঃ নিউক্যাসেল বিশ্ববিদ্যালয়।

আশ্চর্য হবার কিছু নেই। আমি তোমার সহকর্মী। যদিও আমাদের দেখা বা পরিচয় হয় নি এখনো তবে আশা করছি আজই হবে।
আর একটু খুলে বলতে পার?
তুমি যখন নরউইচে ছিলে, মনে আছে?
হ্যাঁ তা আছে।
ওই তখন আমি জয়েন করেছি, আমি ক্রিসের সেক্রেটারি।
আচ্ছা এলিজাবেথ, বেশ ভালো কথা, শুনে খুশি হলাম, তা বল এখন আমি তোমার জন্য কি করতে পারি?
ওই যে বললাম তুমি কখন নিউক্যাসেল পৌঁছাবে সেটা জানিয়ে আপাতত ধন্য কর বাকিটা পরে দেখবো।
সে কি করে সম্ভব বল?
কেন?

কেন আবার কি কোচ তো আর আমি চালাচ্ছি না, কোচ চালাচ্ছে ড্রাইভার সেই ভালো বলতে পারে কখন পৌঁছাবে।
দেখ তুমি নীল নয়না স্বর্ণ কেশী খাটি স্কটিশ এক সুন্দরীর সাথে কথা বলছ। সুন্দরীদের সাথে কেউ এভাবে দুষ্টামি করে? দুষ্টামি রেখে বল কখন আসছ, তোমাকে রিসিভ করে তোমার ল্যেঙ্কেস্টার স্ট্রিটের বাসার চাবি সহ তোমাকে পৌঁছে দেয়ার জন্য বসের নির্দেশে আমি বসে আছি। তুমি তোমার পকেটে হাত দিয়ে টিকেট বের করে দেখ ওখানে লেখা আছে। তুমি কখন আসছ তাই বুঝে আমাকে আবার ডঙ্কেস্টার যেতে হবে, মোটকু ডেভিড আমার হাতে চাবি না দিয়েই ওখানে চলে গেছে।
দেখ, তুমি সুন্দরী না জল হস্তী তা আমি কি করে বুঝি বল তবে তুমি যে স্কটিশ তা তোমার কথা এবং নাম শুনেই বুঝেছি, ক্যাম্পবেলেরা স্কটিশ এটা আমি জানি। সে যাই হোক, তোমাকে তো তাহলে বেশ ঝামেলায় ফেলেছে, আমার দুঃখ হচ্ছে যে আমার জন্যই তোমাকে কষ্ট করতে হচ্ছে। আচ্ছা একটু লাইনে থাক আমি টিকেট দেখে বলছি,
এক হাতে চায়ের গ্লাস আর এক হাতে ফোন, পকেট দেখি কি করে? একটু এগিয়ে এসে কোচের হেড লাইটের উপরের শেডে চায়ের গ্লাস নামিয়ে রেখে সব পকেট হাতালাম কিন্তু নেই। শীতের দিনে এমনিতেই পকেট বেশি থাকে, কোথায় রেখেছি মনে করতে পারছি না। আবার দেখলাম। না নেই, কোথাও নেই।
শুনছ এলিজাবেথ, টিকেট পাচ্ছি না।

পাচ্ছি না মানে আবার কি, তাহলে কোচে উঠলে কেমন করে?
তখন ছিল ড্রাইভারকে দেখিয়েছি কিন্তু এখন পাচ্ছি না।
আচ্ছা শোন তুমি যে সিটে বসেছ তার আশে পাশে দেখ হয়ত পকেট থেকে পরে গেছে।
হ্যাঁ তা হতে পারে বলে গাড়িতে উঠে সিটের কাছে এসে দেখি এইতো নিচেই পরে আছে।
হ্যাঁ এলিজাবেথ তুমি ঠিকই বলেছ, এইতো পেয়েছি, আচ্ছা আমি রাত দশটা দশ মিনিটে নিউক্যাসেলে ইন করবো।
আচ্ছা এখন বাজে ৯টা তাহলে আমি এখনই ডঙ্কেস্টার যাচ্ছি, আমার আসতে যদি একটু দেরিও হয় তুমি অপেক্ষা করবে, তাহলে একটু পরেই দেখা হচ্ছে। বলেই রেখে দিল। আমি ভাবলাম মেয়েটাকে বড্ড ঝামেলায় ফেলেছে, এই সময় তার বয় ফ্রেন্ডের সাথে পাবে বিয়ারের গ্লাস নিয়ে বসে থাকার কথা নয়তো বাড়িতে বসে রাতের খাবার আগে ওয়াইনের গ্লাশ হাতে টিভি দেখার কথা। তা না করে এই শীতের মধ্যে চল্লিশ দ্বিগুণে আশি মাইল গাড়ি চালিয়ে ডার্লিংটন থেকে ডঙ্কেস্টার যাবে আসবে আবার সেখান থেকে নিউক্যাসেল তারপর সহকর্মীকে তার বাসায় নামিয়ে দেয়া। পিছনে ঘুরেই দেখি যাত্রীরা আর ড্রাইভার এগিয়ে আসছে। আমিও ঠাণ্ডা চায়ের গ্লাসে চুমুক দিয়ে বিনে ফেলে দিয়ে কোচে এসে বসলাম। কোচ ছেড়ে দিল। [আগামী পর্বের আমন্ত্রণ]

*** শুভ্র বসনা শিউলি ডাকে যে আমায়


 যেন চাদের কণা হাসে রাতের নিরালায়।

No comments:

Post a Comment

Thank you very much for your comments.