Sunday 18 November 2012

গোল্ডি সাহেব এবং স্কটিশ সুন্দরী-১ [৫]

Photobucket
[ছবিঃ হ্যারি পটার এর শ্যুটিং স্থান গ্লস্টার ক্যাথিড্রাল]

আমার ঈদের ছুটি শেষ হবার দু দিন আগেই অফিস থেকে ফোন এলো। ডেভিড ফোন করেছে। K, তোমার ঈদ শেষ হয়েছে?এখানে একটু বলে রাখি আমার নাম এই ইংরেজদের উচ্চারণ করতে খুব কষ্ট হয় বলে আমিই বলে দিয়েছি
তোমরা আমাকে K বলে ডাকবে। হ্যাঁ, কেন কি ব্যাপার?

এদেশে সাধারণত ছুটি কাটাবার সময় নিতান্ত জরুরী কোন ঘটনা না ঘটা পর্যন্ত কাজের জায়গা থেকে ফোন করে বিরক্ত করে না। তাই আমি একটু অবাক হলাম।
কে একটু সমস্যায় পরেই তোমাকে ফোন করছি।
আমি বললাম কি হয়েছে খুলে বল।

বলছি, সাউথ ওয়েলসের ব্রীজেন্ড এর সনি কোম্পানি তো তুমি চেন তোমাকে কাল ওখানে যেতে হবে, বস একথা বলার সময় তোমার ছুটি শেষ হয়নি বলে খুব ইতস্তত করছিলো কিন্তু তুমি ছাড়া হচ্ছেও না কারন এর আগের বার তুমিই ওখানে গিয়েছিলে ওদের ক্যামেরায় কি যেন হয়েছে।
আচ্ছা ঠিক আছে ডেভিড, তুমি বসকে বল আমি কালই ট্রেনে করে চলে যাব।
তারপর ব্রীজেন্ড এসে মেশিনের মত একটানা এক মাস কেটে গেল, সবচেয়ে অসুবিধা হয়েছে খাবারে। বিলাতে এতদিন থাকলেও বিলাতি খাবারে অভ্যস্ত হতে পারিনি। তবুও নিরুপায় হয়ে পিজা, স্যান্ডউইচ, ডোনার কাবাবের সাথে নান রুটি, চিপস, ফিস বা চিকেন চিপস এই সব খেয়েই দিন গুলি পার করেছি আর কবে কাজ শেষ করতে পারব সেই দিন গুনেছি। সময়ের অভাবে লেখালেখির কোন কাজ করতে পারছি না এমনকি মেইল টাও দেখতে পারছি না। শেষ পর্যন্ত কাজ যখন প্রায় শেষ হয়ে এসেছে তার আগের দিন অফিসে বস ক্রিসের কাছে ফোন করে জানিয়ে দিলাম আগামী কাল দুপুরের মধ্যে এখানকার কাজ শেষ হবে এখন কি করব বল।
ক্রিস বলল ঠিক আছে কে তুমি অপেক্ষা কর আমি দেখছি কি করব।
পরদিন সকালে ক্রিস বলল এন্ডি আগামী কাল বিকেলে ব্রাউনকে সোয়ান সী নামিয়ে দিয়ে তোমাকে নিয়ে লেস্টার আসবে এখানে পিটার আছে তুমি আর পিটার এখানেই থাকবে ওই তোমার থাকার ব্যবস্থা করবে তুমি এন্ডির সাথে যোগাযোগ রেখ ও কখন পৌছাতে পারে জেনে নিও।
আচ্ছা ঠিক আছে ক্রিস। ধন্যবাদ জানিয়ে রেখে দিলাম।
দুপুরে এন্ডিকে ফোন করে জানলাম সে বিকেল ৫টার মধ্যে আসতে পারে।
সব কিছু গুছিয়ে ৪টার মধ্যেই রেডি হয়ে বসে রইলাম। কাটায় কাটায় ৫টায় আমার মোবাইল ফোনের সিগন্যাল রিসিভিং সিস্টেম একটিভেট হয়ে মধুর সুর তুলে বেজে উঠলো, চিনতে পারলাম এন্ডির কল।

হ্যালো এন্ডি বল।
আরে কি বলব আমি যে তোমাদের ওডিওন সিনেমার কাছে এসে ট্র্যাফিক জ্যামে আটকে গেলাম একটু দেরি হবে।
আচ্ছা ঠিক আছে তুমি ধীরে ধীরে আস আমি রেডি হয়ে আছি।
এন্ডি বলল কে তুমি কি করছ?
তোমার অপেক্ষা করছি।
ও আচ্ছা তাহলে জানালার পর্দাটা সরিয়ে একটু রাস্তার দিকে তাকাতে পারবে?
হ্যাঁ পারব কিন্তু কি হয়েছে? আহা একটু দেখ না।
পর্দা সরিয়ে দেখি এন্ডি তার সবুজ রঙ এর ফোর্ড গাড়ি পার্ক করে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে উপরে আমার জানালার দিকে তাকিয়ে আছে।
ও, বুঝেছি ইয়ার্কি করছ? জানালার পাল্লা খুলে বললাম। আগেই যখন এসে পরেছ তাহলে একটু উপরে আস একটা কফি খেয়ে নিই। দেরি হয়ে যাবে না?
দেরি না হয় হল একটু। ট্রেন তো আর মিস করতে হবে না, আস, সেদিন কার্ডিফ থেকে কফি বিনস এনে গুড়া করে কফি বানিয়ে রেখেছিলাম এখনো তোমার জন্য যথেষ্ট রয়েছে।
কি বললে ফ্রেশ গ্রাউন্ড কফি! হ্যাঁ তাইতো বললাম।
তাহলে আসছি।

আমি সাথে সাথে ইলেকট্রিক জগে পানি ভরে সুইচ অন করে নীচে নেমে দরজা খুলে দিলাম। এন্ডি তার ফোকলা দাতে ফিক করে হেসে দিয়ে হাত বাড়িয়ে দিল। বছর দুয়েক আগে মদ খেয়ে মাতাল হয়ে কার সাথে মারামারি করতে গিয়ে ঘুষি খেয়ে দাঁত ভেঙ্গে গেছে। উপরে এসে দেখি পানি গরম হয়ে গেছে। দুইটা কাপে নিজের হাতে গুড়া করা কফি বানিয়ে একটা এন্ডির হাতে দিয়ে বসলাম। আধা ঘণ্টার মধ্যেই কফি শেষ করে জিনিষ পত্র নামিয়ে লেস্টারের পথে চললাম।
Photobucket
[ছবিঃ লেস্টার এর এবে পার্ক, এর বিপরীতেই ছিল আমার সেই কাজের জায়গা যেখানে দেখা হয়েছিল মহান গোল্ডী সাহেবের সাথে]

সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে লেস্টার এসে পিটারের সাথে দেখা হোল অনেক দিন পর, তা প্রায় এক বত্সরের বেশি হবে। পিটার গেট খুলে দাঁড়িয়ে ছিল, আমাকে নামিয়ে দিয়েই এন্ডি পিটারকে বাই বলেই চলে গেল। এন্ডি চলে যাবার পর পিটার আমাকে নিয়ে বসার ঘড়ে এসে বলল অনেক দিন পর তোমার সাথে দেখা হল, চল আগে খেয়ে নিই তার পর কাজের বিষয় নিয়ে বসব।
তোমার জন্য দেখ কি এনে রেখেছি বলেই ফ্রিজ খুলে দেখাল সাদা ওয়াইন সার্ডনির বোতল।
আমি বললাম এ দিয়ে আমার কি হবে, আমি এসব খাই না তা কি ভুলে গেছ?
ও হ্যাঁ তাইতো তাহলে আমি একা খাব? তুমি কি খাবে বল।
ললাম আমার জন্য একটু ফ্রেস জুস হলেই হবে।
আচ্ছা ঠিক আছে পিজার অর্ডার দেই ওরা এখানে এনে দিয়ে যাবে ওদেরকে বলে দিলেই পাশের সিনস বুরি থেকে জুস নিয়ে আসবে। না না পিজা না।
তাহলে কি?
ইটালিয়ান নাকি চাইনিজ?
না না ওসব কিছু না, জান আমি বাঙ্গালি হয়েও ব্রীজেন্ডে থাকার সময় গত এক মাসে ভাত খাইনি, ভাত মাছ না খেয়ে বাঙ্গালি বাঁচে কি ভাবে?
তাহলে কি ইন্ডিয়ান?
হ্যাঁ, এখানে পাশের বেলগ্রেভ রোডে অনেক ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট আছে ওখানে চল, খেয়ে আসি। ইন্ডিয়ান খাবার ডেলিভারি এনে খেলে স্বাদ পাওয়া যায় না।
বেশ চল।

ঘর বন্ধ করে গেটে তালা দিয়ে মিনিট ১০/১২ হেটে বেলগ্রেভ রোডের এক ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টে এলাম। এখানে যদিও মাছ পাওয়া যায় না তবে ভাত আর মাংস তো পাব। আমি ভেড়ার মাংস আর ভাতের অর্ডার দিলাম, পিটার দিল চিকেন, নান রুটি, চিপস আর তার সাথে এক পাইন্ট বিয়ার আর আমার জন্য এক গ্লাস আপেল জুস। খেতে খেতে আলাপ হচ্ছে। পিটার বলল
তোমাকে সব বুঝিয়ে দিয়ে আমি চলে যাব কাল সকালে আটটায় আসবো, তবে ভেবো না তোমাকে একজন ভাল সঙ্গী দিয়ে যাব।
আমি মনে মনে ভাবছি এই সঙ্গী আবার কে? এতক্ষণ জানতাম আমি একাই থাকবো।
জিজ্ঞেস করলাম সঙ্গী আবার কে?
আছে গোল্ডি আছে, গোল্ডি থাকবে তোমার সাথে, আশা করি গোল্ডির সাথে তোমার সময় ভালোই কাটবে।
আমি একটু অবাক হয়ে বললাম গোল্ডি! কই দেখলাম না তো? এই নামে কেউ আছে আমাদের কোম্পানিতে তাও তো শুনিনি।
আছে ওর ঘরেই আছে।
আচ্ছা ঠিক আছে দেখা যাক, গেলেই দেখা হবে।
খেয়ে দেয়ে চলে এলাম। কন্ট্রোল রুমে এসে সব কিছু দেখিয়ে দিয়ে বলল এইতো দেখলে আর যা আছে তা গোল্ডি দেখিয়ে দিবে। ওহ চল তোমার থাকার ঘর দেখিয়ে দিচ্ছি। থাকার ঘর দেখিয়ে দিয়ে বলল চল এবার গোল্ডির সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি।
[আগামী পর্বের আমন্ত্রণ]

*** যারা দেশের বাইরে থাকেন তাদের যেমন দেশের জন্য মন প্রান কাদে তেমনি করে যারা দেশে থাকেন তাদের মনটাও যদি একটু কাদত তাহলে কতইনা ভাল হত!

No comments:

Post a Comment

Thank you very much for your comments.