Friday 30 November 2012

নক্ষত্রের গোধূলি-৩৩ (অধ্যায়-৩)

এই ভাবে ভুল-ঠিক, এলো মেলো, বকাঝকা, গালাগালি, তারা হু্রো, গুতো গাতি, চিৎকার, হইচই, চেঁচামেচি সব কিছু মিলিয়ে রাত সাড়ে নয়টার দিকে একটু হালকা হবার পর আসাদ গতকালের মত ট্রে করে চারটা গ্লাসে অরেঞ্জ জুস আর কোক এনে সবার সামনে ধরল। যার যা খুশি তুলে নিয়ে এক চুমুকে শেষ। এর মধ্যেতো একটু পানি
খাবার সময় কেউ পায়নি। না, রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়নি একটু ভিড় কমেছে। তবুও একটু শান্ত পরিবেশ। টেকএওয়ের ভিড়ও কমেছে। এবারে যারা ভিতরে বসে খাচ্ছে তাদের ভিড়। এগুলি মোটামুটি সামাল দেয়া যায়। এখন একটু ধীর গতিতে চলছে। তারপরও কম না, রোজা রাখা শরীর তো এমনিতেই কাহিল তারপর ইফতার আর কি হয় মাঝে একটু পানি খাবার মত সুযোগও পাওয়া যায়না তারপরে নতুন মানুষ। এবার কবিরের একটা মাশরুম রাইসের অর্ডারের সাথে কবির স্টাফের জন্যেও কিছু বানিয়ে কয়েকটা পেয়ালায় রেখে বলল
ভাইসাব এই করাইটা ধুয়ে দেন তারপরে এই যে এখান থেকে একটা নিয়ে খান।
আসাদ এলো মাশরুম রাইস নেয়ার জন্যে। তখন তাকে বলল
ভাই একটু ডায়েট কোক দেয়া যাবে?
আচ্ছা দিব আর কেউ কিছু খাবেন?
আমাকে একটা, আমাকে অরেঞ্জ, আমাকে পাইনএপল।
আচ্ছা আনছি, এই টেবিলটা সার্ভ করে নেই।

গতরাতের মত আজও প্রায় সাড়ে এগারোটার পরে আনোয়ার এসে হাঁক দিল মারুফ আটাউ আটাউ শেষ কর।
এবার শুরু হল গুছানোর পালা। ফ্রিজ থেকে যা যা বের করেছিলো সেগুলি যা রয়েছে তা ছোট ছোট আইসক্রিমের বাক্সের মত কন্টেইনারে ঢেলে বড় ট্রেগুলি সব সিঙকে জমা হচ্ছে। ওদিক থেকে কাস্টমারের প্লেট পেয়ালা খালি ডিশ ইত্যাদি জমে পাহাড়ের মত হয়ে গেছে তবুও মাঝে দুইবার বেশ কিছু ধুয়ে দিয়েছে। চামচ, কাটা চামচ, টেবিল ছুরি এগুলিকে বলে সিলভার। সিলভার জমা করে পাশে নিচে একটা বালতিতে জমা করে রাখে। সিলভারও এক বালতি ভরে পরি পরি ভাব। মাঝে একবার অর্ধেক বালতির কিছু কম ধুয়ে দিয়েছিলো ওগুলি আবার এখান থেকে ধুয়ে বালতিতে একটু লিকুইড সাবান দিয়ে গরম পানি সহ দিয়ে দেয়। সামনের লোকজন ন্যাপকিন দিয়ে মুছে নেয়। হাতের দিকে দেখে হাত কাল হয়ে গেছে, কত যে কেটেছে তার হিসাব নেই। বেশি বড় না তবে যন্ত্রণাদায়ক। নুরুল ইসলাম ড্রিঙ্কস এনে দেখিয়ে দিল এটা ডায়েট। রাশেদ সাহেব তুলে নিলেন। এক পেয়ালা রাইস নিয়ে একটা চামচ নিয়ে খাওয়া শুরু করেছে ওমনি কবির বলে
ভাইসাব একটু পোলাও রাইস গরম করে দেন কুইক।
পেয়ালা রেখে তাকে যোগান দিলেন।

কবির বলল আপনে এভাবে খেতে পারবেন না। পাশে রাখেন, চামচ দিয়ে কাজের ফাঁকে ফাঁকে শেষ করবেন। নিশ্চিন্তায় বসে খাবার মত এতো সময় কোথায়?
গতরাতের মতই কবির সাহায্য করছে।
ধোয়া টোয়ার কাজ শেষ। দুইটা বড় বিন ব্যাগ ড্রাম সহ দুইজনে ধরে বাইরে কাউন্সিলের বিন কন্টেইনারে ফেলে এসে দেখে সবার কাজ প্রায় শেষ। আগেই মপের বালতি চুলায় দিয়ে গিয়েছিল। পানি গরম হয়ে গেছে এবারে ব্লিচ, সাবান আর সুগন্ধি মিশিয়ে ফ্লোর মুছে বালতির পানি বাইরে ফেলে ব্রাশটা যায়গা মত রেখে এসে দেখে সবাই খাচ্ছে।
আসেন ভাই খেয়ে নেন।
ঘড়ি দেখে একটু চিন্তা করে বলল না আপনারা খান আমি এখন কিছু খাবো না, দুইটার দিকে একেবারে সেহেরি খেয়ে শুয়ে পরবো।
আরে কি বলেন শরীর খারাপ হবেতো!
না তখন যে রাইস খেলাম ওতেই হবে আপনারা খেয়ে নেন আমি উপরে নামাজ পড়ে নিই।
ঠিক আছে যান রেস্ট করেন।
আচ্ছা কালতো সকালে বারোটায় নামতে হবে তাইনা?
হ্যাঁ কাল বারোটায় নামলেই হবে।
তাহলে আমি আসি।
রাশেদ সাহেব উপরে চলে গেলেন কাপর বদলে কিছুক্ষণ গড়াগড়ি করে উঠে গোসল করে এসে নামাজ পরে একটা সিগারেট জ্বালিয়ে জানালার ধারে দাঁড়ালেন। গত রাতের মত একই দৃশ্য। আজ যেটা নতুন লক্ষ্য করলেন তা হল মহিলাদের পরনের স্বল্প বসন। গরম পোষাকতো নেইই সাধারণ কাপর যা আছে তাও খুবই সংক্ষিপ্ত। এই শীতের মধ্যে এই কাপর পরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে কিভাবে? অথচ দিব্বি কথা বলছে হাসছে। হাতে প্রায় সবারই একটা করে গ্লাস যাতে রঙ্গিন পানীয়, এখান থেকে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে । ও হ্যাঁ, পাবেতো এসেছে আগুন পান করার জন্যে। তারপর নাচানাচি। ঠাণ্ডা লাগবে কোথা দিয়ে? পেটেতো আগুন ভরছে, এখনো হাতে আগুনের গ্লাস। আমাদের দেশে এইরকম সময়ে এই রকম জায়গায় এই বেশে কোন মহিলাকে ভাবাই যায়না। সভ্যতা, এই হল সভ্যতা। হাতের সিগারেট শেষ হতেই বিছানায় এলিয়ে পরলেন।
[রাশেদ সাহেবের পথ চলা এখনও শেষ হয়নি। আরো অনেক দূর যেতে হবে তাকে, তার সাথেই থাকুন।]

No comments:

Post a Comment

Thank you very much for your comments.