[পূর্ব সূত্রঃ
রাশেদ সাহেব উপরে এসে যোহর আসর দুই ওয়াক্তের নামাজ পরেই বিছানায় গড়িয়ে পরলেন। ক্লান্ত লাগছে। বিছানার সামনে দেয়াল ঘড়িতে দেখলেন তিনটা দশ। কখন যে চোখ বন্ধ হয়ে এসেছে, ঘুম ভাঙল নুরুল ইসলামের ডাকে।]
কি ভাই সাহেব ইফতার করবেন না? উঠেন উঠেন সময় নাই।
লাফ দিয়ে উঠে বাথরুম থেকে ওযু করে নিচে গিয়ে দেখে ইফতারের আয়োজন চলছে। আসাদ বলল
ভাই আপনি ওই ওখানে দেখেন গ্লাস আছে. ওই যে ওই বারের ভিতরে। ওখানে সিঙ্ক ও আছে ওখান থেকে কয়েক গ্লাস পানি আনেন।
পাঁচটা গ্লাস ভরে আনতে যাবে আবার আসাদ আবার বলল
আরে ওখানে ট্রে আছে তো
ওহ! হ্যাঁ হ্যাঁ দেখেছি
ট্রেতে করে গ্লাস পাঁচটা নিয়ে এসে সবার সামনে একটা একটা করে নামিয়ে রেখে নিজে বসল এক পাশে।
রোজা আজ কয়টা যাচ্ছে?
২৬টা।
দেখতে দেখতে চলে গেল।
রাশেদ সাহেব রোজার দিনে তার বাড়ির ইফতারের টেবিলে সবাইকে নিয়ে বসে এক সাথে রোজা সম্পর্কে কিংবা অন্যান্য ধর্মীয় প্রসঙ্গে আলোচনা করতেন। বিশেষ করে মেয়েদের শিক্ষা দেবার জন্যে। তার কথা হল ইফতার তৈরী করে অন্তত কিছুক্ষণ আগেই যেন সবাই ধীরে সুস্থে টেবিলে এসে বসে। ইফতারির সময় এত হুলুস্থুল করার কি দরকার? ঘরির দিকে তাকিয়ে দেখলেন আরো আট দশ মিনিট বাকি আছে। তিনি সবাইকে উদ্দেশ্য করে রোজার শেষ কয়দিনের সম্পর্কে বলতে শুরু করলেন। সবাই কথা থামিয়ে তার দিকে মনোযোগ দিয়ে শুনছে। বলা শেষ করে বললেন আসেন আমরা সবাই এবারে একটু মুনাজাত করি। মুনাজাত শেষ হবার সাথে সাথেই কবির বলল
টাইম হয়ে গেছে নিয়ত করেন।
আজকেও গতকালের মত খেজুর, ছোলা ভুনা আর পায়েসের মত দেখতে হলুদ রঙের স্বাদহীন খিচুরি। খিচুরি টা রাশেদ সাহেব খেতে পারলেন না।
মারুফ বলল
তাহলে ভাইসাহেব আপনে আর একটু ছোলা নেন।
তা নেয়া যায়।
যদি মনে করেন তাহলে ভাত খেয়ে নিতে পারেন তরকারি রেডি আছে।
না ভাত লাগবে না এতেই হবে।
ইফতার করতে করতে নুরুল ইসলাম বলল
ভাইসাহেব বেশ সুন্দর মুনাযাত করলেন। যে কয়দিন আছে এইভাবে করবেন। সবাই একসাথে বলে উঠলো হ্যা হ্যা আগে কিছু বলে নিবন। আজকের মত ইফতারের সময় আর গল্প হবে না। কাল থেকে ভাইসাব মুনাজাত করবে।
আচ্ছা, নামাজ কি সবাই আলাদা আলাদা পরেন?
হ্যা অই আরকি যে যেমনে পারে।
তা কেন, উপরে বেশ জায়গা আছে ওখানে সবাই এক সাথে পরা যায়। চলেন সবাই এক সাথেই পরি এমনিতেই আমরা অনেক কিছু জেনেও না জানার মত চলি। মানার মত ব্যবস্থা থাকলেও মানি না। কত কিছু ইচ্ছা করেই হোক বা অনিচ্ছা করেই হোক ছেড়ে দিই। জামাতে সওয়াব বেশি এটা যদি পারি তাহলে করবো না কেন?
আচ্ছা চলেন তাহলে আপনে যখন বলছেন।
উপরে এসে নামাজ পরে রাশেদ বলল
আমার একটু চা লাগবে আমি নিচে যাই আপনারা কেউ আসবেন?
হ্যা আসছি চলেন।
আবার নিচে এসে চা পর্ব সেরে উপরে এসে এবারে একটা সিগারেট বানিয়ে বিছানায় কাত হলেন।
মেয়েরা কি করছে? নিশ্চিয়ই বাবার কথা মনে করছে। মনি আজ কি ইফতার বানিয়েছিল? নাকি মনিকে আজ মেয়েরা রান্না ঘড়ে ঢুকতে দেয়নি? এতো লম্বা জার্নি করে গেছে। ধকল তো কম না। তাহলে কে ইফতার বানিয়েছে? হয়তো রেখা নয়তো খুকু। মাঝু কি বাবার জন্যে প্লেট সাজিয়েছিল? না না তা সাজাবে কেন? বাবা নেই সে কথা কি আর মাঝু জানে না? তবে মনে করেছিল নিশ্চই। অভ্যস্ত চোখটা বাবাকে খুঁজেছে ইফতারের টেবিলে। বাবা নেই কেমন লাগছিল তখন মেয়েদের? ইফতারের প্লেটটা বাবার জন্যে মাঝুই সাজাত। বাবা যা পছন্দ করে মা বলে দিতে দিতে কখন যে ওদের তা মুখস্ত হয়ে গেছে তা কি ওরা জানে? তবুও মা মনে করিয়ে দিতেন মাঝু তোমার বাবার প্লেটে পিঁয়াজু কোনটা দিয়েছ? রাশেদ সাহেব কড়া ভাজা পিঁয়াজু খেতে চায়না তার জন্যে আলাদা নরম করে ভেজে দিতো। মাঝু বলতো হ্যা বাবা দিয়েছি, আমারতো বাবা আমি কি জানিনা আব্বুকে কি দিতে হবে? তুমি তারাতারি মরিচ ভেজে দাও। গোলান বেসন মাখা মরিচ ভাজা তার প্রিয়। মাঝু জানে আর কারো জন্যে না হোক বাবার জন্যে চার পাঁচটা মরিচ ভাজতেই হবে। ইফতারের সময় হয়ে যাচ্ছে বাবা আসছেনা মাঝু ফোন করে খবর নিতো। আব্বু তুমি কোথায়?
হ্যা আব্বু আমি আসছি, এইতো মসজিদ পর্যন্ত এসেছি।
তারাতারি এস ঘড়ি দেখেছ?
এক গ্লাস ক্যানডিরালের সরবত। ভেজানো চিড়া, বেল, কলা, পেঁপে, তরমুজ, লেবু না থাকলে ছাদের টবের লেবু গাছ থেকে লেবু পাতা এনে তাই শরবতের সাথে ডলে দেয়। মাঝে মাঝে পুদিনা পাতা যখন যা পেতো তাই দিয়ে বাবার জন্যে এক গ্লাশ ক্যান্ডিরালের সরবত। যুঁথি ইফতারে পিঁয়াজু, ঘুমনি, ছোলার চেয়ে আলুর চপ বেশি পছন্দ করে তাই সে সবসময় একটা চপ যুঁথীকে তুলে দিত। চপ নিয়ে যুথী আর ওর দাদার হইচই। দাদা বলে আমারতো দাঁত নেই তাই আমি চপ খাই তুমি চপ পছন্দ কর কেন? তুমি পিঁয়াজু খাও সব চপ আমার। টেবিলে প্লেট গ্লাস সাজানোর কাজটা করে যুঁথি আর মার সাথে থাকে খুকু। আবার ওদিকে ইফতার নামাজ সেরে মা একটু শুয়ে বিশ্রাম না নিলে অস্থির হয়ে পরে।
এমনিতেই সে শ্বাস কষ্টের রুগি, তার বিছানাটাও যুঁথি করে রাখে। আজ কি করেছে না কি ভুলে গেছে? মনি কি আজ ইফতারের পরে একটু শুতে পেরেছিল? ইফতারের পরে নামাজ সেরে সবাই আবার টেবিলে এসে বসতো বড় এক থালায় করে পিঁয়াজু, ঘুমনি, ছোলা, চপ, কুচানো ধনে পাতা কিংবা পুদিনা পাতা যেদিন যা থাকে কাচামরিচ, টমাটো রাখা থাকে। এই থালাটাও মনি কিনেছিল। বড় দেখে শুধু ইফতারের জন্যে। সবাই খেয়ে যা থাকে তাই দিয়ে এবার মুড়ি মাখানোর পালা। এটা করতো সেঝ ভাই। এইসব মাখামাখি ভর্তা ইত্যাদি ও যা বানায় তা মনে রাখার মত। ও না থাকলে মাঝু। এই থালাটাও মাঝুই গুছিয়ে রাখত। টেবিলের মাখানো মুড়ির গন্ধটা যেন নাকে আসছে। সামনে ওই তো একটা পেয়ালা হাতে খুকু বলে উঠলো আব্বু ধর। তার বিহীন যোগাযোগটা কিভাবে যেন ছিড়ে গেল। হঠাৎ চমকে উঠলেন। সামনের ঘড়ি বলছে আমি আর মাত্র পাচ মিনিট সময় দিতে পারি উঠে পর রাশেদ। হাতের সিগারেট দুই আঙ্গুলের ফাঁকেই নিভে গেছে। আবার জানালেন। ছাদের দিকে তাকিয়ে পর পর কয়েকটা টান দিয়ে অ্যাশ ট্রেতে নিভিয়ে কাপর বদলে নিচে চললেন।
এসে কি করতে হবে সব ভুলে গেছেন। মনের যে অবস্থা আর এইমাত্র যে খুকুর দেয়া পেয়ালা রেখে এসেছেন তাতে আর কিইবা মনে থাকবে? সমস্ত কিচেনে ঘুরঘুর করতে লাগলেন কি করি কি করি? আচ্ছা অন্তত ইফতারের ঝামেলা গুলি ধুয়ে রাখি এর মধ্যে কবির এলে ওর কাছে জানা যাবে কি করতে হবে। একটু পরেই কবির নেমে এলো।
সালামালেকুম কবির ভাই, আসেন আসেন কি খবর?
আরে আপনে এগুলি কি করেন ফ্রীজ থেকে মাল বার করেন।
হ্যা ভাই আসলে আমি ভুলে গিয়েছিলাম কি করতে হবে তাই এইটা করছিলাম। ও বুঝছি আসেন আমার সাথে।
দুইজনে মিলে সব মালামাল বের করে যা যা করতে হবে সব গুছিয়ে একেবারে রেডি। মিনিট দশেকের মধ্যেই অর্ডার আসতে শুরু হয়েছে। প্রথম অর্ডার নিয়ে এলো আসাদ। আজকের অর্ডার একটু তারাতারি এলো। একের পর এক টেক এওয়ের অর্ডার আসছে আর মারুফের ফ্রাই প্যান, চামচের ঠং ঠং শব্দ, কুকের চিৎকার, কবিরের দৌড়া দৌরি, রাশেদ সাহেবের প্যাকেটের গায়ে কারীর নাম লেখা, বিল দেখে ব্যাগে ভরা আবার সাথে সাথে মারুফের প্যান ধুয়ে দেয়া, কুককে পোলাও রাইস গরম করে দেয়া, তন্দুরি শেফের নান বানানোর শব্দ। নানের শিক উঠানো নামানোর শব্দ, একটা কিমা নান, একটা পেশোয়ারি নান, দুইটা নানের হাঁক ডাক সব কিছু গতকালের ব্যস্ততাকে ছাড়িয়ে গেল। এর মধ্যে ঘটনা একটা ঘটে গেল। ভিতরে চার জনের এক টেবিলের অর্ডারের কারি রাশেদ সাহেব প্যাকেটে ভরে ফেলেছে এখন আসাদ এসে ওই কারী খুজে পাচ্ছেনা। মারুফ বলল আমি বানিয়ে সব ডিশে ভরে হট বক্সে রাখতে বলেছি। ভাইসাহেব, ওই যে দিলাম ওটা কি করলেন?
আমিতো প্যাকেটে ভরে ফেলেছি।
ইইশ কি করেছেন কি?
শিগগির বের করেন আবার যেমন ছিল তেমন করে ডিশে ঢালেন না না থাক এটা আর দেয়া যাবেনা আমি আবার বানিয়ে দিচ্ছি। এর পর একটু দেখে ভরবেন। নতুন মানুষ নিয়ে কাজ করার কি যে ঝামেলা।
রাশেদ সাহেব মারুফকে বললেন ভাই এই ডেকচিতে কিন্তু সাদা রাইস আর নেই।
আরে বলেন কি?
এই কবির শিগগির সাদা রাইস চড়াও।
ভাইসাব চার পট রাইস ধুয়ে দেন তারাতারি।
[নিজ দেশের প্রতি ভালবাসা থাকা প্রতিটি মুমিনের কর্তব্য নয়কি?]
রাশেদ সাহেব উপরে এসে যোহর আসর দুই ওয়াক্তের নামাজ পরেই বিছানায় গড়িয়ে পরলেন। ক্লান্ত লাগছে। বিছানার সামনে দেয়াল ঘড়িতে দেখলেন তিনটা দশ। কখন যে চোখ বন্ধ হয়ে এসেছে, ঘুম ভাঙল নুরুল ইসলামের ডাকে।]
কি ভাই সাহেব ইফতার করবেন না? উঠেন উঠেন সময় নাই।
লাফ দিয়ে উঠে বাথরুম থেকে ওযু করে নিচে গিয়ে দেখে ইফতারের আয়োজন চলছে। আসাদ বলল
ভাই আপনি ওই ওখানে দেখেন গ্লাস আছে. ওই যে ওই বারের ভিতরে। ওখানে সিঙ্ক ও আছে ওখান থেকে কয়েক গ্লাস পানি আনেন।
পাঁচটা গ্লাস ভরে আনতে যাবে আবার আসাদ আবার বলল
আরে ওখানে ট্রে আছে তো
ওহ! হ্যাঁ হ্যাঁ দেখেছি
ট্রেতে করে গ্লাস পাঁচটা নিয়ে এসে সবার সামনে একটা একটা করে নামিয়ে রেখে নিজে বসল এক পাশে।
রোজা আজ কয়টা যাচ্ছে?
২৬টা।
দেখতে দেখতে চলে গেল।
রাশেদ সাহেব রোজার দিনে তার বাড়ির ইফতারের টেবিলে সবাইকে নিয়ে বসে এক সাথে রোজা সম্পর্কে কিংবা অন্যান্য ধর্মীয় প্রসঙ্গে আলোচনা করতেন। বিশেষ করে মেয়েদের শিক্ষা দেবার জন্যে। তার কথা হল ইফতার তৈরী করে অন্তত কিছুক্ষণ আগেই যেন সবাই ধীরে সুস্থে টেবিলে এসে বসে। ইফতারির সময় এত হুলুস্থুল করার কি দরকার? ঘরির দিকে তাকিয়ে দেখলেন আরো আট দশ মিনিট বাকি আছে। তিনি সবাইকে উদ্দেশ্য করে রোজার শেষ কয়দিনের সম্পর্কে বলতে শুরু করলেন। সবাই কথা থামিয়ে তার দিকে মনোযোগ দিয়ে শুনছে। বলা শেষ করে বললেন আসেন আমরা সবাই এবারে একটু মুনাজাত করি। মুনাজাত শেষ হবার সাথে সাথেই কবির বলল
টাইম হয়ে গেছে নিয়ত করেন।
আজকেও গতকালের মত খেজুর, ছোলা ভুনা আর পায়েসের মত দেখতে হলুদ রঙের স্বাদহীন খিচুরি। খিচুরি টা রাশেদ সাহেব খেতে পারলেন না।
মারুফ বলল
তাহলে ভাইসাহেব আপনে আর একটু ছোলা নেন।
তা নেয়া যায়।
যদি মনে করেন তাহলে ভাত খেয়ে নিতে পারেন তরকারি রেডি আছে।
না ভাত লাগবে না এতেই হবে।
ইফতার করতে করতে নুরুল ইসলাম বলল
ভাইসাহেব বেশ সুন্দর মুনাযাত করলেন। যে কয়দিন আছে এইভাবে করবেন। সবাই একসাথে বলে উঠলো হ্যা হ্যা আগে কিছু বলে নিবন। আজকের মত ইফতারের সময় আর গল্প হবে না। কাল থেকে ভাইসাব মুনাজাত করবে।
আচ্ছা, নামাজ কি সবাই আলাদা আলাদা পরেন?
হ্যা অই আরকি যে যেমনে পারে।
তা কেন, উপরে বেশ জায়গা আছে ওখানে সবাই এক সাথে পরা যায়। চলেন সবাই এক সাথেই পরি এমনিতেই আমরা অনেক কিছু জেনেও না জানার মত চলি। মানার মত ব্যবস্থা থাকলেও মানি না। কত কিছু ইচ্ছা করেই হোক বা অনিচ্ছা করেই হোক ছেড়ে দিই। জামাতে সওয়াব বেশি এটা যদি পারি তাহলে করবো না কেন?
আচ্ছা চলেন তাহলে আপনে যখন বলছেন।
উপরে এসে নামাজ পরে রাশেদ বলল
আমার একটু চা লাগবে আমি নিচে যাই আপনারা কেউ আসবেন?
হ্যা আসছি চলেন।
আবার নিচে এসে চা পর্ব সেরে উপরে এসে এবারে একটা সিগারেট বানিয়ে বিছানায় কাত হলেন।
মেয়েরা কি করছে? নিশ্চিয়ই বাবার কথা মনে করছে। মনি আজ কি ইফতার বানিয়েছিল? নাকি মনিকে আজ মেয়েরা রান্না ঘড়ে ঢুকতে দেয়নি? এতো লম্বা জার্নি করে গেছে। ধকল তো কম না। তাহলে কে ইফতার বানিয়েছে? হয়তো রেখা নয়তো খুকু। মাঝু কি বাবার জন্যে প্লেট সাজিয়েছিল? না না তা সাজাবে কেন? বাবা নেই সে কথা কি আর মাঝু জানে না? তবে মনে করেছিল নিশ্চই। অভ্যস্ত চোখটা বাবাকে খুঁজেছে ইফতারের টেবিলে। বাবা নেই কেমন লাগছিল তখন মেয়েদের? ইফতারের প্লেটটা বাবার জন্যে মাঝুই সাজাত। বাবা যা পছন্দ করে মা বলে দিতে দিতে কখন যে ওদের তা মুখস্ত হয়ে গেছে তা কি ওরা জানে? তবুও মা মনে করিয়ে দিতেন মাঝু তোমার বাবার প্লেটে পিঁয়াজু কোনটা দিয়েছ? রাশেদ সাহেব কড়া ভাজা পিঁয়াজু খেতে চায়না তার জন্যে আলাদা নরম করে ভেজে দিতো। মাঝু বলতো হ্যা বাবা দিয়েছি, আমারতো বাবা আমি কি জানিনা আব্বুকে কি দিতে হবে? তুমি তারাতারি মরিচ ভেজে দাও। গোলান বেসন মাখা মরিচ ভাজা তার প্রিয়। মাঝু জানে আর কারো জন্যে না হোক বাবার জন্যে চার পাঁচটা মরিচ ভাজতেই হবে। ইফতারের সময় হয়ে যাচ্ছে বাবা আসছেনা মাঝু ফোন করে খবর নিতো। আব্বু তুমি কোথায়?
হ্যা আব্বু আমি আসছি, এইতো মসজিদ পর্যন্ত এসেছি।
তারাতারি এস ঘড়ি দেখেছ?
এক গ্লাস ক্যানডিরালের সরবত। ভেজানো চিড়া, বেল, কলা, পেঁপে, তরমুজ, লেবু না থাকলে ছাদের টবের লেবু গাছ থেকে লেবু পাতা এনে তাই শরবতের সাথে ডলে দেয়। মাঝে মাঝে পুদিনা পাতা যখন যা পেতো তাই দিয়ে বাবার জন্যে এক গ্লাশ ক্যান্ডিরালের সরবত। যুঁথি ইফতারে পিঁয়াজু, ঘুমনি, ছোলার চেয়ে আলুর চপ বেশি পছন্দ করে তাই সে সবসময় একটা চপ যুঁথীকে তুলে দিত। চপ নিয়ে যুথী আর ওর দাদার হইচই। দাদা বলে আমারতো দাঁত নেই তাই আমি চপ খাই তুমি চপ পছন্দ কর কেন? তুমি পিঁয়াজু খাও সব চপ আমার। টেবিলে প্লেট গ্লাস সাজানোর কাজটা করে যুঁথি আর মার সাথে থাকে খুকু। আবার ওদিকে ইফতার নামাজ সেরে মা একটু শুয়ে বিশ্রাম না নিলে অস্থির হয়ে পরে।
এমনিতেই সে শ্বাস কষ্টের রুগি, তার বিছানাটাও যুঁথি করে রাখে। আজ কি করেছে না কি ভুলে গেছে? মনি কি আজ ইফতারের পরে একটু শুতে পেরেছিল? ইফতারের পরে নামাজ সেরে সবাই আবার টেবিলে এসে বসতো বড় এক থালায় করে পিঁয়াজু, ঘুমনি, ছোলা, চপ, কুচানো ধনে পাতা কিংবা পুদিনা পাতা যেদিন যা থাকে কাচামরিচ, টমাটো রাখা থাকে। এই থালাটাও মনি কিনেছিল। বড় দেখে শুধু ইফতারের জন্যে। সবাই খেয়ে যা থাকে তাই দিয়ে এবার মুড়ি মাখানোর পালা। এটা করতো সেঝ ভাই। এইসব মাখামাখি ভর্তা ইত্যাদি ও যা বানায় তা মনে রাখার মত। ও না থাকলে মাঝু। এই থালাটাও মাঝুই গুছিয়ে রাখত। টেবিলের মাখানো মুড়ির গন্ধটা যেন নাকে আসছে। সামনে ওই তো একটা পেয়ালা হাতে খুকু বলে উঠলো আব্বু ধর। তার বিহীন যোগাযোগটা কিভাবে যেন ছিড়ে গেল। হঠাৎ চমকে উঠলেন। সামনের ঘড়ি বলছে আমি আর মাত্র পাচ মিনিট সময় দিতে পারি উঠে পর রাশেদ। হাতের সিগারেট দুই আঙ্গুলের ফাঁকেই নিভে গেছে। আবার জানালেন। ছাদের দিকে তাকিয়ে পর পর কয়েকটা টান দিয়ে অ্যাশ ট্রেতে নিভিয়ে কাপর বদলে নিচে চললেন।
এসে কি করতে হবে সব ভুলে গেছেন। মনের যে অবস্থা আর এইমাত্র যে খুকুর দেয়া পেয়ালা রেখে এসেছেন তাতে আর কিইবা মনে থাকবে? সমস্ত কিচেনে ঘুরঘুর করতে লাগলেন কি করি কি করি? আচ্ছা অন্তত ইফতারের ঝামেলা গুলি ধুয়ে রাখি এর মধ্যে কবির এলে ওর কাছে জানা যাবে কি করতে হবে। একটু পরেই কবির নেমে এলো।
সালামালেকুম কবির ভাই, আসেন আসেন কি খবর?
আরে আপনে এগুলি কি করেন ফ্রীজ থেকে মাল বার করেন।
হ্যা ভাই আসলে আমি ভুলে গিয়েছিলাম কি করতে হবে তাই এইটা করছিলাম। ও বুঝছি আসেন আমার সাথে।
দুইজনে মিলে সব মালামাল বের করে যা যা করতে হবে সব গুছিয়ে একেবারে রেডি। মিনিট দশেকের মধ্যেই অর্ডার আসতে শুরু হয়েছে। প্রথম অর্ডার নিয়ে এলো আসাদ। আজকের অর্ডার একটু তারাতারি এলো। একের পর এক টেক এওয়ের অর্ডার আসছে আর মারুফের ফ্রাই প্যান, চামচের ঠং ঠং শব্দ, কুকের চিৎকার, কবিরের দৌড়া দৌরি, রাশেদ সাহেবের প্যাকেটের গায়ে কারীর নাম লেখা, বিল দেখে ব্যাগে ভরা আবার সাথে সাথে মারুফের প্যান ধুয়ে দেয়া, কুককে পোলাও রাইস গরম করে দেয়া, তন্দুরি শেফের নান বানানোর শব্দ। নানের শিক উঠানো নামানোর শব্দ, একটা কিমা নান, একটা পেশোয়ারি নান, দুইটা নানের হাঁক ডাক সব কিছু গতকালের ব্যস্ততাকে ছাড়িয়ে গেল। এর মধ্যে ঘটনা একটা ঘটে গেল। ভিতরে চার জনের এক টেবিলের অর্ডারের কারি রাশেদ সাহেব প্যাকেটে ভরে ফেলেছে এখন আসাদ এসে ওই কারী খুজে পাচ্ছেনা। মারুফ বলল আমি বানিয়ে সব ডিশে ভরে হট বক্সে রাখতে বলেছি। ভাইসাহেব, ওই যে দিলাম ওটা কি করলেন?
আমিতো প্যাকেটে ভরে ফেলেছি।
ইইশ কি করেছেন কি?
শিগগির বের করেন আবার যেমন ছিল তেমন করে ডিশে ঢালেন না না থাক এটা আর দেয়া যাবেনা আমি আবার বানিয়ে দিচ্ছি। এর পর একটু দেখে ভরবেন। নতুন মানুষ নিয়ে কাজ করার কি যে ঝামেলা।
রাশেদ সাহেব মারুফকে বললেন ভাই এই ডেকচিতে কিন্তু সাদা রাইস আর নেই।
আরে বলেন কি?
এই কবির শিগগির সাদা রাইস চড়াও।
ভাইসাব চার পট রাইস ধুয়ে দেন তারাতারি।
[নিজ দেশের প্রতি ভালবাসা থাকা প্রতিটি মুমিনের কর্তব্য নয়কি?]
No comments:
Post a Comment
Thank you very much for your comments.