Saturday 9 February 2013

ব্লগিং করা সার্থক হয়েছে

 সুপ্রিয় পাঠক ভাই বোনেরা,
আপনারা এর আগে আমার এক পোস্টে জেনেছেন শিশু পাচারকারির হাতে পড়া এক মেয়েকে কি করে ১০ বছর পরে ভারতের মুম্বাই থেকে আমাদের দেশের সাতক্ষীরায় তার পরিবারের কাছে পৌঁছাবার ব্যবস্থা করেছিলাম। আজ লিখছি তেমনি আর এক গল্প। আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে এই ব্লগে আমার প্রথম পোস্ট “নিয়তি, তুমি এখন কোথায়” গল্পের কথা! ওই গল্পটি আমার নিজের ব্লগেও প্রচার করেছিলাম। ওই গল্পের প্রেক্ষাপট ছিল ৩৩/৩৫ আগের একটি
দুর্ঘটনা। ওই সময়ের অনেক কথাই আমি ভুলে গিয়েছিলাম বা সাধারণ ভাবে বলা যায় আমার স্মৃতির খাতায় ধুলো জমে ঢেকে গিয়েছিল। ওখানে তখন আমার সাথে আরো একজন জুনিয়র বন্ধু ছিল যার নাম আব্দুল মোমেন সে এখন সুদূর সউদি আরবে বসবাসরত। এই বন্ধুটিও হারিয়ে গিয়েছিল। গত ৩৩/৩৫ বছর ধরে অর্থাৎ ওই ঘটনার পর থেকে তার সাথে আর কোন যোগাযোগ হয়নি। গত ৭ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ তারিখে আমার মেইল বক্সে দেখি একটা নাম জ্বলজ্বল করছে। আব্দুল মোমেন লিখা একটা মেইল এসেছে। কোন মোমেন? একটু অবাক হয়ে বেশ একটু আগ্রহ নিয়ে মেইলটা খুলে দেখি লিখেছে-
“খালিদ ভাই,
আমি আব্দুল মোমেন লিখছি। আপনার সাইটে এই গল্পটি পড়ে দেখলাম। আপনি বাস্তব ঘটনাটি তুলে এনে গল্পাকারে এখানে সাজিয়েছেন দেখে সেদিনের কথা মনে পড়ে খুব বিস্মিত হলাম। ফিরে গিয়েছিলাম আবার সেই ৩৫টি বছর আগে আর জসীম ভাইয়ের কথা মনে হয়ে কান্না পাচ্ছিল। জসীম ভাই আর আমি হাসপাতালে একই রুমে ছিলাম। জসীমভাই চলে গেল আর আমি সমস্ত শরীরে পোড়া দাগ নিয়ে এখনও বেঁচে আছি। আপনি অনেক যত্ন করে অনেক কিছুই লিখেছেন কিন্তু সেখানে যে আমিও আপনার সাথে ছিলাম তা কোথাও লিখেননি। কেন লিখেননি?

ওর এই আকুতি দেখে আমি বেশ অনেকক্ষণ হতবিহবলের মত বসে রইলাম। নিজেকে অপরাধী মনে হলো। ওকে কি করে এখন সান্ত্বনা দেই? আমার সব ভাষা নিভে গেল। আমি যে এই এত দিনে ওর কথা ভুলেই গিয়েছিলাম তা কি
ওকে বলা যায়? না, তা কিছুতেই বলা যায় না। কি লিখব? শেষ পর্যন্ত ভাবতে ভাবতে লিখলামঃ-
প্রিয় মোমিন,
আমার এই গল্প লেখাটা সার্থক হয়েছে এই কারনে যে এই গল্প দিয়েই আমি তোমাকে এত বছর পর খুজে পেয়েছি! আর হ্যা, তুমি আরও খুশী হবে যে আমার লেখা প্রথম বই “জীবন পথের বাঁকে বাঁকে” যে বারটি গল্প দিয়ে সাজান হয়েছে তার মধ্যে এই গল্পটিও একটি, বইটি এবারের বই মেলায় এসেছে। তুমি রাগ করবেনা আশা করি। এর পরে আবার তোমাকে নিয়ে আর একটি গল্প লিখে ফেলব কারন তোমার সাথেও আমার এমন আরো অনেক ঘটনা আছে যা এখন আস্তে আস্তে মনে পরছে। তোমার মেইল পেয়ে তোমাকে দেখতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে। আশা করি এবার দেশে এসে আমার সাথে দেখা করবে।
ইতি, খালিদ ভাই
এই গল্পের মধ্যেই আরো একজন বন্ধুকে ফিরে পেয়েছি যে কিনা হারিয়ে গিয়েছিল প্রায় ৩৬ বছর আগে। আবুল কালাম আজাদ এখন বাস করছে আমেরিকার ক্যালিফোরনিয়াতে। সেও এমনি করে আমার নিজ ব্লগে কন্ট্রাক্ট মি বাটনে ক্লিক করে মেইল পাঠিয়েছিল।
সবাই ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং ব্লগিং করুন। আপনার আশেপাশের সবাইকে উদবুদ্ধ করুন ব্লগিং করতে।

No comments:

Post a Comment

Thank you very much for your comments.