Friday 7 December 2012

নক্ষত্রের গোধূলি -৫৩ [অধ্যায় ৫]

[পূর্ব সূত্রঃ নক্ষত্রের গোধূলি, পর্ব -৫২ (অধ্যায় ৫)]
এই অর্থের কত শক্তি, সে তো সে নিজের জীবন দিয়েই দেখছে। তার সংস্পর্শে জড়িত যারা তারা সবাই তা অনুভব করছে, তার স্ত্রী সন্তানেরা সবাই। করুক, ময়না মিয়ার যা ইচ্ছা করুক তাতে কি এমন ক্ষতি। কত টাকা আর কম দিবে?


সেদিনটা কোন ভাবে কেটে গেল। পর দিন থেকে আবার কাজ। ব্যস্ততা কম। দেলু বলেছে আবার দুই এক দিন পরে নিউ ইয়ার্সে বিজি হবে। হ্যাঁ সত্যিই একত্রিশে ডিসেম্বর রাতে যে কি বিজি তা বলার মত নয়। দৌড়া দৌড়িতে পা গুলি আর চলতে চাইছিল না। এদিকে চড়া শব্দে মিউজিক, কান ফেটে যাবার উপক্রম তবুও কাস্টমাররা বলে লাউড! লাউড! টেবিল ছেড়ে হাতে ড্রিংক্স এর গ্লাস নিয়ে নাচানাচি। ক্রিকে যত জাহাজ লঞ্চ ছিল তারা সবাই রাত বারোটা এক মিনিটে এই যে, হুইসল বাজানো শুরু করল আর থামতে চায়না। তার সাথে তাল মিলিয়ে এখানে যারা আছে তাদের উচ্চ স্বরে বেসুরো গান গেয়ে উত্তাল উন্মাদনায় নিউ ইয়ার বরণ করা। কিছুক্ষণ পর আস্তে আস্তে ঝিমিয়ে আসছে, নীরব হচ্ছে। মাতাল হয়ে একেক জন টেবিলে বসেই ঘুমিয়ে পরেছে। সাথে যারা ছিল তাদের মধ্যে যাদের একটু হুশ আছে তারা সঙ্গীকে কোন ভাবে টেনে টুনে তুলে নিয়ে গেছে। কিছুক্ষণ আগে একটা বিয়ারের ব্যারেল খালি হয়ে গিয়েছিল। সেটা বদলাবার সময় কানেকশন ঠিক না হওয়ায় ব্যাক প্রেশারে বিয়ার ছিটে এসে পুরো শার্ট, মু্‌খ, হা্‌ত, মাথা ভিজে গেল। তাড়া তাড়ি একটা টেবিল ক্লথ নিয়ে যতটুক পারল মুছে নিল।

ভেজা শার্ট দেখে এক মাতাল জিজ্ঞেস করল তোমার জামা ভেজা কেন? রাশেদ সাহেব জবাব দিলো তুমি বিয়ার পান করছ আর আমি বিয়ার দিয়ে গোছল করেছি তাই। ও তাই নাকি? তাহলে তুমি খুব ভাগ্যবান, সামনের বছর তোমার খুব ভালো যাবে দেখবে। বেশ! বেশ! ভালো কথা! তা তুমিও একটু গোসল করবে নাকি? আরে না, কি বলছ তুমি বাইরে গোসল করেছ আর আমি ভিতরে গোসল করছি। জান আজ আমি কয় পাইন্ট বিয়ার খেয়েছি? সারা দিনেরটা জানি না তবে আমার যতদূর মনে হয় এখানে আমি তোমাকে আট পাইন্ট দিয়েছি। ঠিক বলেছ, সারা দিনে আমি বত্রিশ পাইন্ট আর তোমার এই আট পাইন্ট মিলে মোট চল্লিশ পাইন্ট খেয়েছি, আমার ভিতরে যত ময়লা নোংরামি ছিল সব বেরিয়ে গেছে এখন আমি পবিত্র। আচ্ছা আচ্ছা বেশ ভাল কথা, এখন বাড়ি গিয়ে ঘুমিয়ে পর।

কাস্টমার বিদায় করে সমস্ত রেস্টুরেন্ট পরিষ্কার করে মদের গ্লাস ধুয়ে গুছিয়ে রেখে খেয়ে দেয়ে সেদিন রাত চারটা বেজে গিয়েছিলো বাসায় ফিরতে। এসে ইলেকট্রিক জগে পানি গরম করে গোসল করে তারপর ঘুম।
এর পর থেকেই কিভাবে যেন ব্যস্ততা কমে যাচ্ছিল ক্রমে ক্রমে অনেক কমে গেল এমনকি কোন দিন এমন হল যে কোন কাস্টমারই নেই। এই ভাবে সপ্তাহ খানিক পর একদিন ময়না ভাই দুপুরে তাদের সেই নির্দিষ্ট টেবিলে বসে বলল
ভাই, একটা কথা আপনাকে বলা দরকার কিন্তু কি ভাবে বলি তাই ভাবছি
ভাবার কি আছে যা বলতে হবে বলে ফেলেন
দেখতেই তো পাচ্ছেন অবস্থা এর মধ্যে বেতন দিব কিভাবে!
ইতোমধ্যে সামনে যাকে পার্ট টাইম রাখা হয়েছিলো সে চলে গেছে। রাশেদ সাহেব বললেন
এই কথা নিয়ে আর ভাবছেন কেন, বলে দেন আমাকে কবে যেতে হবে। কি, সামনের সপ্তাহে যাব নাকি?
না সামনের সপ্তাহে না, সামনের সপ্তাহে আমি লন্ডন যাব আপনি এর মধ্যে একটা কাজ খুঁজে দেখেন আমি লন্ডন থেকে আসার পরের সপ্তাহে গেলেই হবে। বেশ তাই হবে।
কিন্তু আপনি যাবেন কোথায়?
কোথায় যে যাব তা কি আমি জানি? এতো বড় এই পৃথিবীতে এত তড় এই বিলাত, এর মধ্যে আমার মত এক জন রাশেদের জন্য একটু জায়গা কি পাবো না? দেখি প্রথমে লন্ডন যেতে হবে তারপর জব সেন্টারে গিয়ে দেখব কোথায় কাজ পাওয়া যায়।

রাশেদ সাহেব অনেক কষ্টে নিজেকে স্থির রেখে কথা বলছিলেন কিন্তু তার মনে হচ্ছিল মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরেছে। এখন কোথায় যাবেন, কি করবেন, কত দিন বসে থাকতে হবে, কোথায় থাকবো নানান চিন্তা এসে মাথায় গিজ গিজ করছিল। কোনটা রেখে কোনটা ভাববেন দিশা পাচ্ছিলেন না। ফিরোজের ওখানে যেতে ইচ্ছা করছে না। তাকে কত বিরক্ত করা যায়? ও তো অনেক করেছে আর কত? নাকি দেশেই ফিরে যাব? না তা কি করে যাই? দেশে গেলে উপায় হবে কি? মনে এক জটিল ধাঁধা দেখা দিয়েছে, কি করি এখন? নিজেকে ভীষণ অসহায় মনে হল। মনে হচ্ছে কোথাও কেউ নেই কিছুই নেই। মানসিক ভাবে ভীষণ দুর্বল হয়ে পরেছেন, ভেঙ্গে পরেছেন। বার বার মনির কথা মনে হচ্ছে। এই ধরনের সমস্যা হলে মনি মুখের দিকে তাকিয়েই জিজ্ঞেস করে, কি হয়েছে? রাশেদ সাহেব যত বড় দুর্যোগ বা বিপদ যাই আসুক মনিকে কখনো কিছু লুকাতে পারে না। সব কথা খুলে বলে। শুনে মনিই সমাধান দিয়ে দেয়।
ও এই কথা, এ নিয়ে এতো ভাবছ কেন? কাল যেয়ে এই ভাবে এই করবে এই বলবে ঠিক হয়ে যাবে। আর চিন্তা করবে না, এখন চল হাত মুখ ধুয়ে এস খেয়ে নাও।
মনির কথা মত সে সব সমস্যা সমাধানও হয়ে যায়। মাঝে মাঝে রাশেদ সাহেব অবাক হয়। বাইরে চাকরি করছি আমি আর তা মোকাবিলা করছে মনি। কি জন্যে যেন একবার মা বলছিলেন বৌকে কিছু দিনের জন্য রেখে যেতে। শুনে রাশেদ বলেছিল না আম্মা আমার অফিসে ঝামেলা চলছে এখন ওকে রেখে যাওয়া যাবেনা। অফিসে ঝামেলা হচ্ছে তোর তা ও কি করবে?আম্মা সত্যি কথা বললে কি মনে করবেন তাই বলতে চাই না। আসলে অফিসে চাকরি আমিই করি কিন্তু সব ঝুট ঝামেলা সামাল দেয় মনি। আমিতো অফিসের টেকনিক্যাল ব্যাপার গুলিই শুধু ভালো বুঝি, আমার বসেরাও আমাকে এই জন্যে পছন্দ করে কিন্তু এ ছাড়া আরও কত রকমের ঝামেলা এসে পরে তা আর আমার মাথায় ঢুকে না, সেগুলি আমাকে ওর সাথে আলাপ করে ওকে সমস্ত পরিস্থিতি বুঝিয়ে তারপর ওর পরামর্শ নিয়ে সামাল দেই। এইতো এবারে এখানে আসার কয়েক দিন আগে রাতে ঝড় বৃষ্টি হচ্ছিলো সেই রাত আড়াইটার দিকে কলিং বেল বেজে উঠল। সবাই ঘুমে, মনি বেলের শব্দ পেয়ে উঠে দরজা না খুলে ভিতর থেকে জিজ্ঞেস করল
কে?

ম্যাডাম আমি মজিদ, স্যারের অফিসের পিওন।
কি ব্যাপার মজিদ ভাই এতো রাতে আপনি, কি হয়েছে?
স্যারকে বড় স্যার অফিসে যেতে বলেছেন।
গাড়ি পাঠিয়েছে?
না।
কোন চিঠি দিয়েছে?
না।
তাহলে এই রাত আড়াইটায় আমি আমার হাজব্যান্ডকে কি ভাবে বেড় হতে দেই বলেন?
তারপর মজিদ অফিসে গিয়ে স্যারকে বলার পর সে অফিসিয়াল চিঠি সহ গাড়ি পাঠিয়েছিল। তখন ও আমাকে ডেকে এই ঘটনা বলে, শুনে আমিতো ভয়ে অস্থির। স্যার না জানি কি বলে। চিঠি দেখলা্‌ম, আবহাওয়া খারাপ, সাত নম্বর সিগন্যাল চলছে তাই কন্ট্রোল রুমে ইমারজেন্সি ডিউটি করতে হবে। রেডি হয়ে অফিসে যেয়ে স্যারকে বললাম। পরে উনি নিজেই বলল, না রাশেদ সাহেব আপনি ভুল করছেন আমি কিছু মনে করিনি। কারণ ভাবি ঠিকই করেছে, ভুল আমিই করেছি। আসলে এত রাতে কাকে খুঁজব আপনি কাছে আছেন তাই আপনার কথাই মনে হয়েছিল কিন্তু ভাবি যেভাবে আপনার সিকিউরিটির কথা ভেবেছে সেটা আমার মাথায় আসেনি। উনি কোন ভুল করেনি এত রাতে কোন মহিলা তার স্বামীকে ছেড়ে দেয়? আপনি শুধু আমার অফিসার না, প্রথমে তার স্বামী, সেতো তার স্বামীর নিরাপত্তার কথা ভাববেই।

সাথে আরও একটু ইয়ার্কিও করেছিল। আরে, শোনেন নাই রাজায় রাজ্য শাসিছে রাজারে শাসিছে রানি। দেখি আগামী কাল কি অবস্থা হয় আমার যদি এখানে থাকতে হয় তাহলে বিকেলে গিয়ে চা খেয়ে আসবো আর ভাবিকে সরি বলে আসবো। শুনে মা খুশি হয়েছিলেন সেদিন আর বৌকে রেখে যেতে চাপ দেয়নি। দুপুরে খাবার সময় দেলুর সাথে আলাপ হল।
সে বলল লন্ডনে আপনার থাকার কোন জায়গা নেই?
একজন আছে কিন্তু আমি সেখানে যেতে চাই না, দেখি আরও একজন আছে সে হল আমার বন্ধুর বোন, এবার নাহয় তার ওখানেই দেখি কি হয়।
ইতস্তত করছেন মনে হচ্ছে, কেন কি ব্যাপার, সেরকম সম্পর্ক নেই তাই?
না ব্যপার টা ঠিক তা না, কখনো যাইনি তো তাই, তবে তার ছোট ভাই আমার খুবই ঘনিষ্ঠ বন্ধু।
তাহলে আর এত ইতস্তত করছেন কেন? ভাইয়ের বন্ধুকে কি একটু জায়গা দিবে না? আপনি তাই করেন ওখানেই চলে যান, দুই চার দিন যা লাগে থাকলেন তারপর কাজ খুঁজে চলে যাবেন। না হলে ব্রিকলেন বা ইস্ট লন্ডন মসজিদে গিয়ে কাউকে বলে দেখবেন আমি শুনেছি ওখানে থকার ব্যবস্থা আছে, ওরা হয়তো কোন ব্যবস্থা করতে পারে। বাংলাদেশ সেন্টারও আছে তবে ওখানে গিয়ে লাভ নেই কারণ ওখানে আপনি আমি জায়গা পাব না।
হ্যাঁ তাই দেখি কি করা যায়, যদি কোন ব্যবস্থা না হয় তাহলে তো বেড এন্ড ব্রেকফাস্ট আছেই, কত আর লাগবে, না হয় চার দিনে দেড় দুইশ পাউন্ডই খরচ হবে। দরকার হলে তো করতেই হবে না হলে শীতের মধ্যে কি করবো? না দেলু ভাই আমি সেজন্যে ভাবছি না, ভাবছি এই মাত্র সেদিন এলাম এত দূর, আবার সেই বিশাল জার্নি তাই।
দেখি আজ মনির সাথে কথা বলতে হবে। রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে পাশের বক্স থেকে ফোন করলো। মনি শোন, এখানে এসে যত খুশি হয়েছিলাম ব্যাপারটা তত খুশির না।
কেন কি হয়েছে?
এইতো ক্রিস্টমাস নিউ ইয়ার হয়ে গেছে এখন বিজি কম তাই না করে দিল, বলল বেতন দিতে পারব না।
কবে যেতে বলেছে?
আগামী সপ্তাহের পরে, এখন কি করবো কোথায় যাব কোথায় থাকবো কিছুই ভেবে পাচ্ছি না, আমার ভালো লাগছে না, কেমন যেন ভয় করছে, আমার শুধু কান্না পাচ্ছে। মনি, আমি চলে আসি?
তুমি ভয় পেয়ো না। এত ঘাবড়ে যেয়ো না শান্ত হও, ভয়ের কিচ্ছু নেই সব ঠিক হয়ে যাবে। আরে, এই জন্য কি কারো আটকে থাকে নাকি? আচ্ছা, তুমি আগে যেখান থেকে কাজ নিয়েছিলে সেখানে এসে দেখ।

হ্যাঁ ওখানে যেতে হলে লন্ডন গিয়ে কয়েক দিন থাকতে হবে, সেই থাকা কোথায় থাকবো?
আমি যা বলি শোন, ফিরোজ ভাইয়ের সাথে আলাপ করেছ?
না ওকে আর কত বিরক্ত করবো?
বিরক্ত কিসের সে তোমার বন্ধু তাই না? তাহলে আর কি ওকে অন্তত একটু বলে দেখ, আর যদি ওখানে থাকতে নাই চাও তাহলেও তুমি লন্ডন এসে পর। আসার আগে রীতা আপার সাথে কথা বল, ওনার এতো বড় বাড়ি ওখানে না হয় থাকবে, তুমি বলে দেখ কি বলে, আমার মনে হয় নিষেধ করবেনা।
হ্যাঁ ঠিক বলেছ মনি আমিও তাই ভাবছিলাম কিন্তু কোন কুল কিনারা পাচ্ছিলাম না।
এইতো এখন পেলে?
হ্যাঁ মনি পেয়েছি।
এইতো আমার পাগল সোনা তুমি এখন আমার এই কল রেখেই রীতা আপার কাছে ফোন কর, নম্বর আছে তো?
হ্যাঁ আছে।
আপা কি বলে আমাকে জানিও।
আচ্ছা মনি তাহলে রাখি, তোমরা সাবধানে থেকো।
মনিকে রেখে ফোন করলো রীতা আপাকে।
আপা আমি রাশেদ বলছি,
হ্যাঁ রাশেদ বল কি অবস্থা তোমার।

আপা আমাকে তো লন্ডন চলে আসতে হচ্ছে, একটা কাজ খুঁজে পাওয়া পর্যন্ত কয়েক দিন আপনার ওখানে থাকতে হবে।
কয়দিন থাকবে?
দুচার দিনের বেশি লাগবে বলে মনে হয় না।
আচ্ছা আস।
আবার মনিকে ফোন করে আপার কথা জানিয়ে দিল। এর পর ফিরোজকেও ফোন করে জানিয়ে দিল। ফোন রেখে টিকেট কনফার্মেশনের জন্য যেখানে কোচ থেকে নেমেছিল তার পাশে কলম্বাস ট্রাভেল এজেন্টের অফিসে গিয়ে টিকেট কনফার্ম করে নিয়ে আসলো। আগামী কাল ময়না ভাই লন্ডন যাবে। তাকে একাই সামনে সামাল দিতে হবে। এখানে তার মেয়াদ আছে আর মাত্র আট দিন। রবি বারে ময়না ভাই আসবে আর রাশেদ সাহেব সোম বার লন্ডন যাবেন, কোচ সন্ধ্যা সাতটায়।

এই কদিনে এখানে যা দেখার দেখে নিয়েছে, তেমন কিছু নেই। পাহাড়ের উপরে একটা অনেক পুরনো বাগান, ওখানে উঠলে চোখ অনেক দূর পর্যন্ত যেতে পারে। চতুর্দিকে পাহাড় আর পাহাড়। কোথাও ধূসর রঙের, কোথাও সবুজ আবার কোথাও কালচে এলো মেলো ভাবে নিশ্চল নিস্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। পশ্চিম দিকে কিছু দূরেই সাগর দেখা যায়। ক্রিকের জেটিতে যে জাহাজ ভিড়ে থাকে সেগুলি আয়ারল্যান্ডের বেলফাস্ট আর ওবানে যাতায়াত করে। ওই জাহাজ ক্রিকের ভিতর থেকে দুই পাড়ে পাহাড়ের মাঝে দিয়ে বেশ অনেক দূর গিয়ে সাগরে পরে সেই সাগর দেখা যায় এখান থেকে। সাগরের সমতলের নীল আর উঁচু পাহাড়ের নানান রঙের কারুকাজের দিকে তাকিয়ে থেকে মনে অনেক কিছু আসে যায়। মন যেন কোথায় চলে যায়। সব দিন যেতে পারেনা, যেদিন স্নো থাকে সেদিন ঘরে বসে থাকতে হয় তাছাড়া কুয়াশাও দৃষ্টি পথে কম বাঁধা তৈরী করে না। তবুও, এই রকম খোলা প্রান্তরে কুয়াশার আলাদা একটা সৌন্দর্য আছে যা অন্য কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়না। দূর থেকে দূরে স্তরে স্তরে সিঁড়ির মত ভাজে ভাজে যেন উড়ে যায়। ঝাঁকে ঝাঁকে সাদা রাজ হাসের মত পাখা মেলে কোথায় যে হারিয়ে যায় কিছুই বোঝা যায়না। কেমন যেন হিম মাখানো নিঝুম ঘুম ঘুম ভাব। মনে হয় চোখ বুজে আসতে চায়। প্রকৃতি যেন আরও কাছে ডাকে। এস, আমার কাছে এস, ওখানে বসে আছ কেন আমার বুকের মধ্যিখানে এস। যেন দুবাহু বাড়িয়ে শুধু কাছে ডাকে। মনি যেভাবে কাছে টেনে নেয় সেই ভাবে। মন কেমন যেন উদাস হয়ে যায়। পৃথিবীর কোন কথাই আর মনে থাকেনা। শুধু দিগন্ত, আকাশ, দূরের ওই পাহাড়। পাহাড় ঘেরা ক্রিক আর সাগর। মেঘলা দিনে নয়তো কুয়াশা মাখানো ভেজা দিনে দূরের সাগর আর নীল থাকেনা আকাশের সাথে সেও তার রঙ বদলে ফেলে। আকাশের সাথে সাগরের যে কি এক গভীর সম্পর্ক তা সাগরের একেবারে কাছে না গেলে দেখার উপায় নেই, বোঝার উপায় নেই। সাগরের নীল রঙ বদলে ছায়া ছায়া ধুসর রঙ, ঠিক ইলিশ মাছের পিঠের রঙ যেমন তেমন হয়ে যায়।

চলার পথে আপনাকে সাথে পেলে রাশেদ সাহেবের ভালই লাগবে তাই রাশেদ সাহেবের সাথেই থাকুন আর দেখুন রাশেদ সাহেবের জীবন কেমন চলছে!

No comments:

Post a Comment

Thank you very much for your comments.