Friday 16 November 2012

বিলাতের সাত সতের - ৩ [৯]


[পূর্ব প্রকাশের পর]
কিছুক্ষণের মধ্যেই কোচ মোটর ওয়েতে চলে এলো। সারা দিন যে ভয়ে ছিলাম এখানে এসে দেখলাম বরফের কোন চিহ্নই নেই সব পরিষ্কার। অল্প স্বল্প যা ছিল তা গাড়ি চলাচলে গলে পানি হয়ে এখন বাষ্প হবার অপেক্ষা করছে। মন
চলে গেল ঢাকার বাড়িতে। ওরা এখন কি করছে?খুকুর মা কি এয়ারপোর্টে এসে পৌচেছে?সাথে কে কে এসেছে?খুকুর মনে কি হচ্ছে?মাকে ছেড়ে যাবার শোকে কাতর নাকি
বাবাকে দেখার আনন্দ, নাকি শোক আর আনন্দের মিশ্র অনুভূতিতে দিশা হারা?মাঝু এবং ছোটনের কেমন লাগছে, বড় আপু চলে যাচ্ছে এই ব্যাথায় অস্থির নাকি বড় আপু গিয়ে বাবাকে দেখবে এই আনন্দ?খুকুর মা নিশ্চয়ই একটা ভাব গম্ভীর লেকচার শুনিয়েছে, মাঝুও কম করেনি। বড়াপু, তুমি কিন্তু বাবার খেয়াল রেখ, বাবা যা খেতে চায় রেঁধে দিও, সাবধানে থেকো দেখবে আবার ঠান্ডা লাগিয়ে নিও না, বাবা যে ভাবে বলে তেমনি চলবে, বেশি মাতব্বরি করতে যেও না এই সব ভাবতে ভাবতে কখন যেন ঘুমিয়ে পরেছি। সাধারনত জার্ণিতে ঘুম আসে না কিন্তু আজ কি হোল হয়ত বা মনের কোণে জমে থাকা সন্তানের মুখ দেখতে না পাবার অতৃপ্তি, পিতৃ স্নেহের হাহাকার, একা থাকার এক যন্ত্রণার কিঞ্চিত অবসানের আভাসে ক্লান্ত মন কখন যেন নিস্তেজ হয়ে অবসাদে ঝিমিয়ে পরেছে। রাত প্রায় দুটার দিকে মাইকে ড্রাইভারের কণ্ঠে ঝিমানি ভাব ভেঙ্গে গেল। গাড়ি কোথায় এসেছে কিছু বুঝলাম না। ড্রাইভার বলছে সামনের সার্ভিসে আধা ঘন্টার জন্য থামবে। নেভিল স্ট্রীট থেকে যে খাবার এনেছি তাই এখনো খাইনি, যাক ভালই হয়েছে। স্যান্ডউইচের প্যাকেট খুলে খেয়ে নিলাম। এর মধ্যেই সার্ভিসে এসে গাড়ি পার্ক করল। কয়েক জন যাত্রি ছিলাম সবাই নেমে গেলাম। প্রথমে টয়লেটের কাজ সেরে দুই পাউন্ড দিয়ে এক গ্লাস চা নিয়ে পাশে রাখা দুধের প্যাকেট আর ক্যান্ডিরালের দুইটা প্যাকেট নিয়ে চায়ের সাথে মিশিয়ে কাঠি দিয়ে নেড়ে কাঠি, দুধের খালি প্যাকেট, ক্যান্ডিরালের প্যাকেট বিনে ফেলে বাইরে এসে চা খাচ্ছি আর হাতে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে ভাবছি খুকু এতক্ষণে ফ্লাই করেছে। ভাবতে ভাবতেই দেখি ফোন বাজছে। এই এতো রাতে কে ফোন করলো?
পকেট থেকে ফোন বের করে দেখি ওভারসিজ নাম্বার
হ্যালো
হ্যা, আমি
ও! যামিনী! কি খবর?
তোমার খুকু কে উঠিয়ে দিয়ে আমরা এই মাত্র বাড়ি পৌঁছলাম।
খুকু কি আমার একার নাকি?তোমার খুকু বলছ কেন?
না তোমার একার হবে কেন, তোমার কাছে পাঠিয়ে দিয়ে এলাম তাই বললাম।
কান্না কাটি করেছ?
বুঝ না?মায়ের মন কেমন হতে পারে?তবে তোমার কাছে যাচ্ছে বলে তেমন খারাপ লাগেনি তবুও মায়ের মন না?শুধু কি আমি, তিন বোনে মিলে যা করেছে তা দেখলে অবাক হতে। এক বার ওদের দুজনকে ছেড়ে ভিতরে চলে যায় আবার ফিরে এসে জড়িয়ে ধরে কান্না, আবার ভিতরে যায় একটু গিয়েই আবার ফিরে আসে। বলে মা, যদি বাবা ওখানে না থাকত তাহলে আমি যেতাম না। বুঝিয়ে সুঝিয়ে তারপর ঠেলে দেয়ার মত করে দিয়েছি।
হ্যা তা হবেই, যাক তুমি চিন্তা করবে না, হিথ্রোতে ওকে দেখা মাত্রই আমি জানাব। মন খারাপ করে থেক না, তুমি এইতো আর কয়েক মাস পরেই আবার আসছ তখন দেখবে, আমিও ছুটি নিয়ে লন্ডন যাব, কাজেই মন খারাপ করে থেক না ওদের দিকে খেয়াল রেখ।
শোন, হাফিজ ফোন করেছিল, ওরা এয়ারপোর্টে আসবে।
তা আমাকে কিছু বলেনি কেন?আমাকে বললে আমি নিষেধ করতাম, তুমি নিষেধ করতে পারলে না? এত দূর থেকে যাবার কি দরকার, আমি তো যাচ্ছি।
তুমি আমি নিষেধ করলেই কি ওরা মানবে?মেয়ে তো আর তোমার একার না কাজেই মেয়ে যাচ্ছে আর চাচা চাচী কি রিসিভ করবে না?তুমি কি যে বল!
আচ্ছা ঠিক আছে আসুক, ভালই হবে। হিথ্রো থেকে ওদের গাড়িতে বাসায় যেতে সুবিধা হবে।
সকাল ঠিক ৮টায় এসে ভিক্টোরিয়া পৌছে কোচ থেকে নেমে সোজা টিউব স্টেশনে এসে অল জোনের একটা ডে টিকেট নিয়ে চলন্ত সিঁড়ি দিয়ে ইঁদুরের গর্তের মত স্টেশনের নিচে নেমে গেলাম। আরিফের বাসায় যেতে মাইল এন্ডের উদ্দেশ্যে ডিস্ট্রিক্ট লাইনে উঠে বসলাম। ঘন্টা খানেকের মধ্যে আরিফের বাসায়। নাস্তা করে আরিফের সাথে আবার স্টেপনি গ্রীন। এখানে নেমে বাসায় যেয়ে বাড়ির লোকজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল।
ইনি কলিম ভাই, যে মেয়েটা আসছে তার বাবা।
ও আচ্ছা! ভিতরে নিয়ে রুম দেখিয়ে দিল।
স্যুটকেস ব্যাগ রেখে বললাম তাহলে আমি এখন আসি।
এখনি যাবেন, একটু চা খেয়ে যান।
না না আমাকে আবার ইস্ট একটন যেতে হবে, একটু পরে তো আসছি তখন খাব।
ও কখন ল্যান্ড করবে?
দুপুর দুইটায়, তবে সব কিছু সেরে আসতে আসতে ৫/৬টা বেজে যেতে পারে।
আচ্ছা ঠিক আছে।
ওই বাসা থেকে বের হয়ে আরিফ জিজ্ঞেস করল ভাইয়া একটনে কোথায় যাবেন?
ওই যে আমার বন্ধু, ফিরোজের বাসায়। তুমি কি এখন বাসায় যাবে নাকি কাজে?
কাজে যাব। ভাইয়া, আমি কিন্তু এয়ারপোর্টে যেতে পারছি না তবে রাতে এসে ওর সাথে দেখা করব। আপনি একটন যাবেন যখন তাহলে স্টেপনি গ্রীন না গিয়ে মাইল এন্ড থেকে সেন্ট্রাল লাইনে চলে যান, চলেন কুইন্স মেরি ইউনিভার্সিটির ভিতর দিয়ে সোজা পথ আছে আমি দেখিয়ে দিচ্ছি।
[চলবে, এতক্ষণ সাথে থাকার জন্য বলছি!]
আসুন, আমরা আমাদের সন্তানদের জন্য একটা নিরাপদ, কোলাহল মুক্ত স্বাস্থ্যসম্মত ও  সুন্দর তিলোত্তমা মহানগরি ঢাকা শহর রেখে যাই।

No comments:

Post a Comment

Thank you very much for your comments.