Friday 12 February 2010

ব্লগ বার্তাঃ ভুমিকা

রাজার হয়েছে গাধার কান গল্পটি হয়ত অনেকেই জানেন। যারা জানেন না তাদের জন্য এখানে লিখছি। কোন এক রাজার এক অসুখ হোল তাতে তার এক কানের কিছু অংশ বেড়ে গেল। এখন এই দীর্ঘ কান নিয়ে তার পক্ষে দরবারে যাওয়া সমস্যা। কয়েক দিন দরবারে
যেতেই পারছে না, এদিকে রাজকীয় কাজ কর্ম বিঘ্নিত হচ্ছে। কি করবে ভেবে ভেবে যখন অস্থির তখন রানি বুদ্ধি দিল কানের চতুর্পাশ ঘিরে মস্ত এক পাগড়ী বেধে দরবারে যেতে। কি করবে  সে তো আর আমাদের মত যেমন তেমন লোক নয় রিতি মত মহা রাজা, তার কি একদিনও দরবারে না গেলে চলে? তবুও ভাগ্য ভালো যে এমন যোগ্য রানি তার পাশে ছিল। কিছু দিন যাবার পর যখন রাজা মশাইয়ের চুল মাথা ছাড়িয়ে হাঁটুর কাছাকাছি আসার উপক্রম হোল এখন তো আর নাপিত না ডেকে উপায় নেই। রানি চুপিচুপি উজির মশায় কে ডেকে একজন নাপিত ডেকে অন্দর মহলে আনার জন্য হুকুম দিল। রানির হুকুমে নাপিত আনা হল। উজির মশায় খুব কড়া করে শাসিয়ে দিল যে ব্যাটা নাপিত যা দেখবে তা যদি কারো কাছে প্রকাশ কর তাহলে নির্ঘাত্ তোমার গর্দান নেয়া হবে, কাজেই সাবধান।

যাই হোক নাপিতের সামনে রাজা মশায়ের পাগরি খোলা হোল। আর অমনিই নাপিত দেখে যে তার রাজা মশায়ের গাধার মত মস্ত এক কান, দেখেই ব্যাটা নাপিত ফিক করে হেসে ফেলেছিলো আর কি, হঠাত তার উজিরের কথা মনে হলো। চুপ করে রইলো। চুল কাটা শেষ করে বাইরে এসে কোন রকম বৌয়ের কাছে এসেই বললো বৌ আমি যে একটা জিনিষ দেখে এলাম তা কাওকে বলা বারন, কিন্তু আমিযে না বলে পারছি না এখন কি করি? তার বুদ্ধিমতি বৌ বললো বারন থাকলে বলার দরকার নেই চুপচাপ থাকো। যতই দিন যেতে থাকে ততই নাপিতের পেট ফুলতে থাকে, সেই এক কথা তার পেটের ভিতর শাখা প্রশাখা ছড়িয়ে এমন ভাব হয়েছে যে পেট রিতিমত ফুলে ফেপে নাজুক অবস্থা। এখন কোন মতেই আর চলছে না। আবার বৌকে বললো ও গিন্নী বল না এখন আমি কি করি। বৌ অনেকক্ষন ভেবে চিন্তে বললো আমাদের উঠানের মাঝ খানে একটা বড় গর্ত কর আর সেই গর্তের ভিতর ঢুকে তুমি বার বার ওই কথা বলে বলে পেট খালি করে ফেল আমি উপরে থেকে গর্তের মুখ ঢেকে রাখবো।

হ্যা মন্দ বলনি। তাহলে তাই হোক। তাই হোল গর্তে নেমে নাপিত ইচ্ছা মত বললো রাজার হয়েছে গাধার কান, রাজার হয়েছে গাধার কান। বলে বলে যখন পেট খালি হোল তখন নাপিত উপরে উঠে সেই গর্ত আবার মাটি দিয়ে ভরাট করে দিল। কিছু দিন যেতে না যেতে ওই গর্তের উপর একটা চাড়া গাছ গজালো, সে আর কারো নজরে পরেনি। সেই গাছ যখন বড় হোল তখন একদিন সকালে দেখে তার প্রতিটা পাতায় পাতায় লেখা রাজার হয়েছে গাধার কান। পরবিতো পর মালির ঘারে, ওই পথ দিয়ে রাজ সৈন্যরা যাচ্ছিলো যুদ্ধের মহরা দিতে। সেনাপতির চোখে পরে গেল সেই লেখা। সে তার সৈন্য সামন্ত নিয়ে নাপিতের উঠানে এসে হাজির। কিরে ব্যাটা নাপিত তোর উঠানের গাছের পাতায় এ কি লেখা? বল কে লিখেছে এই সব?নাপিততো ভয়ে অস্থির। এখন উপায় কি?

ঠিক এই ভাবে আমাদের মনে প্রতি দিনের নানা ঘটনা দেখে শুনে, বইপত্র পড়ে, কাগজ পত্রিকা পড়ে, রেডিও টেলিভিশন শুনে দেখে নানা রকম প্রশ্নের উদয় হয়, নানা ভাবের সুচনা হয়, নানা ধারনার আবির্ভাব হয় যার কিছু বলতে পারি আবার মানুষে শুনে পাগল ভাববে এই ভয়ে কিছু আর বলা হয়ে উঠে না। অথচ মনের মদ্ধ্যে শুধু কেমন একটা ছটফট ভাব থেকেই যায়। রাতে শোবার পর আরো বেশি করে চেপে বসে। ঘুমের ব্যঘাত হয় নানা শারিরীক জটিলতা দেখা দেয়। কিভাবেই বা বলা যায় সেও এক ভাবনার বিষয়।

এতদিন ধরে নিজ নিজ মনের কথা, নিজের চিন্তা ভাবনা, আশা আকাঙ্খ্যা, সাধ আহ্লাদের কথা কারো কাছে বলার সুযোগ খুব কম মানুষেই পেয়েছে। কাগজের কাছে বলতে যাবে সে উপায় নেই, আরে ধুর ভাই যানতো বাড়ি যান, আপনার চাইতে অনেক জ্ঞ্যানিগুনি লোকার কথাই ছাপাতে পারছি না, শুধু শুধু বিরক্ত করবেন না। ব্যার্থ ভাঙ্গা মন নিয়ে ফিরে আসতে হয়েছে। না আমার কথা কেও শুনছে না। এই ভাবে কত মুকুল অকালে ঝরে গেছে, কত মনি মুক্তা লোক চক্ষুর আড়ালে ধুলি চাপা পরে গেছে তার হিসাব কি কেও রাখতে পেরেছে? এর মধ্যে থেকেই যে কোন আইনস্টাইন, নিউটন বা রবিঠাকুর হারিয়ে যায় নি সে কথা কি আমরা জোড় দিয়ে বলতে পারবো?

আজকাল সে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে, বিভিন্ন প্রচার মাধ্যম তৈরি হয়েছে ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে যেখানে নিজের মতামত, ধ্যান ধারনা, অর্জিত জ্ঞ্যানের ধারায় আবির্ভুত তত্ব, বা নেহায়েত মতাদর্শ প্রকাশ করা বা অপরকে জানাবার মাধ্যম আবির্ভুত হয়েছে। যেহেতু আমাদের গরীব দেশে আমরা পেটের ক্ষুধার অন্য যোগার করতেই ব্যস্ত তাই আমরা একটু দেরিতে হলেও সে খবর পেয়েছি।

এই যে ব্লগের ১০ বছড় হয়ে গেল, এর মদ্ধ্যে ৩০ কোটি ব্লগ খোলা হয়ে গেল সে খবর উন্নত দেশের মানুষেরা অনেক আগে পেলেও আমরা অবশ্যই তা ১০ বছর আগে জানতে পারিনি। কবে এটা আমাদের দৃস্টিতে এসেছে তা আমি জানি না। তবে যেদিনই আসুক না কেন রাতারাতি এটা আমাদের জন্য একটা শুভ ক্ষেত্রে পরিনত হতে যাচ্ছে বলে আমার বিশ্বাস। এর মধ্যে আমি বেশ কিছু ব্লগ দেখেছি যা আমাকে অভিভুত করেছে। এতো অজানা তথ্য তুলে ধরছে, অকাতরে এতো জ্ঞ্যান বিলিয়ে যাচ্ছে আরোও কত কি করছে! তবুও ব্লগ করার নানা খুটিনাটি কলা কৌশল না জেনেই এতো কিছু করছে, চেষ্টা করছে, ধীরে ধীরে এগুচ্ছে। আরোও কিছু জানতে পারলে নিশ্চয়ই আরোও সুন্দর করে নিজেকে প্রসারিত করতে পারবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।

বর্তমান প্রজন্মের প্রতি আমার কিছুটা হতাশা জনক ভাব ছিলো কিন্তু এই পথে আমি যতই দেখছি ততই মুগ্ধ হচ্ছি। যাদের পুর্ব পুরুষেরা মায়ের ভাষা কেড়ে নেয়ার জন্য বুকের রক্ত দিয়ে যুদ্ধ করেছে, মায়ের সন্মান ফিরে পাবার জন্য, নিজের দেশ স্বাধিন করার জন্য সারা জাতির রক্ত উজার করে ঢেলে দেয়ার জন্য প্রস্তুত হয়েছিলো সেই মায়ের সন্তানেরা কি করে বিপথে যেতে পারে? কেন তারা পথ হারাবে? কেন তারা অথর্ব্য হয়ে পরে থাকবে? কেন আমি তাদের ভুল বুঝেছি?প্রসঙ্গত উল্ল্যেখ্য যে আমি দীর্ঘ দিন দেশ থেকে অনেক দূরে রয়েছি।

এই যে নিজ নিজ ক্ষেত্রের অভিজ্ঞ্যতা, জ্ঞ্যান, মতামত, ভাব, ভাবনা প্রকাশের যে ভঙ্গি তাদের আমি দেখছি তা দেখে আমার মনে হচ্ছে এগুলিই সবাইকে চিতকার করে জানাই। তোমরা দেখ, সিমিত সুজোগ দিয়ে কি করছে, ইন্টার নেটের স্বল্প গতি, বিদ্যুতের অস্বাভাবিক প্রবাহ, মশা মাছির উতপাত এবং অসহনিয় গড়মের মধ্যে থেকেও তাদের উদ্ভাবনি শক্তি কোন পর্য্যায়ের, আরো একটু সুবিধা যদি তারা পেত তাহলে আরো কত কি করতে পারতো।

আজকাল আকাশে আকাশে ঘুড়ে বেড়ানো একটা বিশেষ জরুরি বিষয় হয়ে যাচ্ছে। ঘড়ে বসেই প্রয়োজনিয় যাবতিয় তথ্য সংগরহের এ এক মহা উপায়। ঠিক এই ধরনের এক প্রয়োজন মেটাবার জন্য আমি যখন আকাশে পায়চারি শুরু করেছি তখনই বাংলা হ্যাকস নামের একটি ব্লগ আমার চোখে পরে। আবাক হয়ে বেশ আগ্রহ নিয়ে আগাগোড়া দেখলাম। বোঝার চেষ্টা করলাম। ওখান থেকেই নানা মন্তব্য কারির দেয়া ঠিকানার সুত্র ধরে ঘুড়ে ঘুড়ে দেখলাম আর মুগ্ধ হলাম। কেও তার হাতে আকা ছবি প্রকাশ করছে, কেও ডাইরি লেখার মত করে তার নিজের দৈনন্দিন কাজের ফিরিস্তী লিখছে, কেও নিজের লেখা গল্প কবিতা লিখে প্রচার করছে, কেও অপরকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রয়োজনিয় পরামর্শ দিচ্ছে, কেও ব্লগ পরিচালন করার মত সুক্ষ্ম কৌশল শিখিয়ে যাচ্ছে। মোট কথা যে যা জানে তা আকাশ পাড়ের সপ্ত দুয়ার খুলে অগুনিত তারার মত ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিচ্ছে। এতোদিন যা জানার জন্য ঘুড়ে বেড়িয়েছি আজ তার সব ঘড়ে বসেই পাচ্ছি।

তাই ভেবেছি একে একে আমার দেখা এই সব ব্লগ গুলি নিয়ে আমি লিখবো, জানি না আমার এ লেখা কে দেখবে বা দেখবে না। তবুও আমি লিখবো, কেও দেখুক বে না দেখুক। আমি আমার কাজ করে যাবো।
প্রথমত বলে নিই এসব ব্লগ কে কোথা থেকে পরিচালিত করছেন জনি না। এসব বিষয়ে প্রকৃত কোন তথ্যই আমার জানা নেই, আমি শুধু তাদের কার্যাবলি সম্পর্কে যা দেখছি তারই কিছুটা আলোকপাত করব।

একটি বিশেষ অনুরোধঃ কাওকে কোন ভাবেই আক্রমন করার কোন আগ্রহ আমার নেই, প্রসঙ্গ ক্রমে যদি কোন বক্তব্য কারো বিপক্ষে যায় তাহলে অনুগ্রহ করে ভুল না বুঝে সরাসরি আমাকে জিজ্ঞ্যেস করার অনুরোধ জানাচ্ছি।

2 comments:

  1. করতে থাকুন। পড়তে আসবো বলে কথা দিলাম।

    ReplyDelete
  2. টুটুলঃ ভাইয়া তোমাকে অনেক ধন্যবাদ। শুধু একা কেন বন্ধু বান্ধব সবাইকে নিয়ে এসো, সবার জন্য উন্মুক্ত।

    ReplyDelete

Thank you very much for your comments.