Friday 30 November 2012

প্রবহমাণ-৮

১। রাজনৈতিক সমাবেশ নাকি জনগনের অতিষ্ট হবার উপকরণ? বিগত ১১ই জুন পল্টনে যে সমাবেশ হয়েছে তারই একটি চিত্র, যা আমার ছোট্ট মোবাইলের ৩.২ মেগাপিক্সেল ক্ষমতার চোখে ধরা পরেছে। ঢাকায় বিশেষ একটা থাকা হয়নি বলে আমার চোখে এর আগে কখনও এই রূপ ধরা পরেনি। আমার কাছে বেশ লাগছিল। সারা দিন ধরে ধীরে ধীরে লক জন আসছে, কেউ খবরের কাগজ কিংবা ক্যানভাস বিছিয়ে বসে বিড়ি সিগারেট টানছিল, কেউ পান চিবুচ্ছিল, চিনা বাদাম চিবুচ্ছিল গল্প করছিল আবার ওদিকে মুল মঞ্চ থেকে মাইল খানিক জুরে মাইকে নানান মূল্যবান বক্তব্য রাখছিল যাতে অসাধারন লোক জনের কানে তালা লাগছিল কিংবা বিরক্তি ছড়াচ্ছিলও বলা যায়। এদিক ওদিকে কিছু ছোট খাট বচসা কিংবা তর্কা তর্কি হচ্ছিল। আসে পাশের অফিসে বা বাসা বাড়িতে চরম রকমের বিরক্তি। সব মিলিয়ে বেশ সুন্দর একটা পরিবেশ। এমন সময়ে কখনও দেশে বা ঢাকায় থাকার সুযোগ হয়নি বলে এসব দেখার সৌভাগ্য হয়নি।দুপুরের পর থেকে এই গরমের মধ্যে রোদ মাথায় করে ঘামে ভিজে ব্যানার, প্ল্যাকার্ড নিয়ে মিছিল আসতে লাগল নানা দিক থেকে, আসছেতো আসছেই। এই দেখে ভাবলাম এই স্রোত যখন শেষ হবে তখন সেই স্রোতের উজান ঠেল্কে আমার পক্ষে বাড়ি ফেরা সম্ভব হবে না তাই ভয়ে আমি বিকেল চারটায় অফিস ছেড়ে ফিরে এলাম।- Probohoman-8 (1)
২। ব্যর্থতাই সফলতার সোপান নাকি সফলতা ব্যর্থতার সোপান! নিচের এই ছবিটি বেশ মজার, তাই না! এক জন শ্রমিক শ্রেনীর মানুষ তার বেচে থাকার জন্য, সামান্য খাদ্য আর একটু নিরাপদে ঘুমাবার জায়গার জন্য দাবী জানিয়েছে বলে রাষ্ট্রিয় ক্ষমতা কি ভাবে তার গায়ের সর্বশক্তি ব্যয় করে ছেলেটির মাথায় বাড়ি মারছে! এমনিতেই এই আধমরা ছেলেটিকে মারার জন্য কতটুকু শক্তির প্রয়োজন হয় বলতে পারেন? ছবিটি গত ১৭ই জুন প্রথম আলো পত্রিকার কভার পেজে এসেছে। অনেকেই দেখেছেন, আমিও দেখেছিলাম এবং এটা নিয়ে সময় পেলে একটা পোস্ট লিখব বলে কাগজটা নিরাপদে রেখেছিলাম। ছেলেটি কেন চাইল এক মুঠো খাবারের নিশ্চয়তা? এ কথা কাকে জিজ্ঞেস করব? তার মালিক পক্ষকে, নাকি দেশের কর্তাকে নাকি ছেলেটিকে নাকি নিজেকে কিছু বুঝতে পারছি না। এই ছবিটি এই ছেলের মা বাবা কিংবা ভাই বোন যারা এই ছেলের কাজের বিনিময়ে প্রাপ্ত টাকা দিয়ে কিছু চাল ডাল নয়ত শখের কিছু কেনাকাটা করে তারা কি দেখেছে? যদি দেখে থাকে তাহলে তাদের মনের অবস্থা কেমন হয়েছিল তা জানতে খুব ইচ্ছা করে কিন্তু কোথায় পাব তাদের? মিল বা কল কারখানা করে মালিক তার পরের বছরেই কিন্তু আরেকটি মিল করে ফেলে, সাথে গাড়ি বা বাড়ির কথা বললাম না কিন্তু যারা তার মিলে কাজ করে তাকে এই অর্থ যোগার করে দিয়েছে তাকে কেন এই সর্ব শক্তি দিয়ে মাথায় বাড়ি দেয়া হচ্ছে? সে দক্ষ কাজ করে তাকে উপরে উঠার সিড়ি তৈরী করে দিয়েছে এই কি তার অপরাধ? সে যখন অদক্ষ কর্মচারী হয়ে যে বেতনে ঢুকেছিল এখন তার দ্বিগুন বেতন পাচ্ছে না কেন? তার দক্ষতার সীমা মাত্রার মান দন্ডে পৌঁছেনি তাই? তাহলে তার মালিক কি করে বিশ্ব বাজার থেকে মুনাফা নিয়ে এল? কার শ্রমের ফসল সে ঘরে তুলে আনল? কার শ্রমের ফল দিয়ে এই মালিক তার নিজের সন্তান স্ত্রীর জন্য দামী পোষাক গহনা কিনে দিল? কার টাকায় সে তার পরিবার নিয়ে সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক থেকে বেড়িয়ে এল?
আসলে কোথায় যাচ্ছি আমরা? একটুও মানবিক বোধ কি আমাদের উদয় হবে না? আমরা উলটো স্রোতে ভেসে যাচ্ছি নাতো?
Probohoman-8 (4)
কিছু দিন আগের গার্মেন্টস মালিকেরা বুক ফুলিয়ে অত্যন্ত গর্ব এবং দর্পের সাথে আশুলিয়ার গার্মেন্টস কারখানা গুলি বন্ধ করে দিল। এতে শ্রমিকদের না তাদের না দেশের ক্ষতি হল? যিনি ছবিটি নিতে পেরেছেন তাকে জানাই ধন্যবাদ।
Probohoman-8 (5)
কারখানা খোলার পর যারা কাজ শুরু করেছে তাদের হাসি মুখের চেয়ে কি মালিকদের মুখের হাসির মূল্য বা লাভ কম? তাহলে মালিকদের এমন মধু মাখা হাসির ছবি কেন এল না? তাদের না খেয়ে মরার ভয় নেই বলে? নাকি তাদের এমন করে পুলিশের পিটুনি খাবার ভয় নেই বলে?
Probohoman-8 (6)
যে মালিক এই কারখানা চালু করে সম্পদের পাহাড়ে বসে সুরা আর সাকী নিয়ে ব্যস্ত জীবন কাটাবে তার হাসি ভরা ছবি কেন এলো না?
৩। গাড়ি চালানঃ সেদিন অফিসে যাবার পথে পল্টনে পৌছে দেখি একটা ট্রাকের মাথা মোড়ের এক দোকানের ভিতরে ঢুকে রয়েছে। আমাদের দেশের ড্রাইভারদের সে পেশাদার ড্রাইভার কিংবা মালিক স্বয়ং চালিত কারের ড্রাইভার যেই হোক না কেন সবারই এক মনোবৃত্তি, রাস্তাটা আমার। যারা রাস্তা দিয়ে হেটে চলে তারা আবার মানুষ নাকি? রাস্তার কোন নিয় শৃংখলা মানার কোন দায় দায়িত্ব নেই এগুলি দেখা্রও কেউ নেই।
Probohoman-8 (2)
তারপর দিন ট্রাক সরিয়ে নেয়ার পর দোকানটির দৃশ্য।
Probohoman-8 (3)
যে যেখানে আছেন সবাই ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন। কারো জীবনে যেন এমন সব ঘটনার সন্মুখীন হতে না হয় তেমনি শুভ কামনা। সবার জন্য।

No comments:

Post a Comment

Thank you very much for your comments.