Sunday 25 November 2012

নক্ষত্রের গোধূলি-১৩ [২য় অধ্যায়]


পূর্ব সূত্রঃ নক্ষত্রের গোধুলী- ১২ [২য় অধ্যায়]
মনিরা কিছু না বুঝে বলল সাধে কি আর আমি পাগল বলি?
না, সাধে বলবে কেন আমি তো পাগল। আর এজন্য তুমিই দায়ী, তুমিই আমাকে পাগল বানিয়েছ।
আচ্ছা ঠিক আছে এজন্য যে শাস্তি দিতে চাও কাল দিও এখন ঘুমাও।
বলেই শোয়া থেকে উঠে বিছানায় বসে স্বামীর গায়ে মাথায় চুলে হাত
বুলিয়ে দিয়ে ঘুম পারিয়ে দিল।
সকালে উঠে আবার মনিকে কাছে ডেকে নিয়ে বলল তুমি তো পাগল বলেই খালাস, আমার কথাটা একটু মন দিয়ে শোন।
বল।

রাশেদ সাহেব রাতের ভাবনা গুলি আবার বুঝিয়ে খুলে বলল। আরও বললো যে নয়া মামারতো অনেকের সাথে জানা শোনা আছে তাদের কারো ট্রাভেল এজেন্সি আছে, তাকে বলে দেখি যদি বাকিতে বা অন্য কোন ভাবে দুইটা টিকেটের ব্যবস্থা করতে পারে।
শুনে মনিরা একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল টিকেট দুইটা কেন?
বারে, রাতে কি বললাম আর এতক্ষণে বা কি বললাম?
না, না, তা হবার নয়। তুমি এভাবে ভেবো না, এসব এই মুহুর্ত সম্ভব নয়, সবাই বলবে কি?
সবার কথা বাদ দাও, আমি তো তোমাক নিয়ে হানিমুন করতে বা রং ঢং করতে যাচ্ছি না, শুধু তোমার ভিসার একটা ব্যবস্থা হয় এই জন্য। তুমি যেয়ে অন্তত এক সপ্তাহ থেকে এলেও হবে। এবার আমার সাথে গেলে যত সহজে ভিসা হবে পরে এমন সহজে আর হবে না। দেখ এক নাগার এতো দিন আমি আমার মনিকে ছাড়া কিছুতেই থাকতে পারবো না।
থাকতে কি আমিও পারবো?
তাহলে আর এমন করে বলছ কেন?
মনিরা অনেক বোঝাবার চেষ্টা করলো কিন্তু কোন লাভ হোল না।

দেখ মনি, আমি যদি এতো দিন তোমাকে ছাড়াথাকি তাহলে আর আমাকে সুস্থ ফেরত পাবে না, নিশ্চয়ই আমি পাগল হয়ে যাব। তুমি কি বাকী জীবন এক জন পাগলকে নিয়ে চলতে পারবে?
শেষ পর্যন্ত মনিরাকে হার মানতেই হোল।
নাশতা খেয়ে রাশেদ সাহেব বের হয়ে সোজা মামার অফিসে গিয়ে সব খুলে বললেন।
শুনে মামা কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললেন ঠিক বুদ্ধি করেছিস। তুই তোদের ভিসার জন্য প্রসেস কর আমি টিকেটের ব্যবস্থা করে দিব, আজ রাতেই তোকে ফোনে জানাব, টিকেট নিয়ে তুই ভাবিস না। এখনই বাসায় গিয়ে ওয়েব সাইট থেকে ভিসা ফর্ম নিয়ে ফিল আপ করে কালই দিয়ে আসবি। এপ্লাই করার টাকা আছে?
না।
তাহলে সে কথা বলছিস না কেন?একটু অপেক্ষা কর, টাকা নিয়ে যা।
একমাত্র মামাই তার যন্ত্রনা বুঝতে পারলেন। মামা হলেও প্রায় সম বয়সি, এক সাথে বিড়ি সিগারেট খায়। মামাই পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে দেয়, নে। এজন্যেই মামা বুঝতে পেরেছেন। মামার অফিস থেকেই ফোন করে মনিকে জানালেন। মামার প্রতি কৃতজ্ঞতায় মন ভরে গেল। সবাই যখন তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তখন একমাত্র এই মামাই তাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন।
কিছু খাবি?
না, এইতো নাশতা করে এসেছি।
তা হলে একটু চা খা এই ফাকে আমি কবিরকে ব্যাংকে পাঠাই?
তা করা যায়।কলিং বেল টিপে কবিরকে চা দিতে বলে ব্রিফ কেস থেকে চেক বই বের করে লিখে রাখলেন। কবির চা নিয়ে এলে তার হাতে চেকটা দিয়ে দিলেন। চা খেতে খেতেই কবির টাকা নিয়ে এলো।

টাকা নিয়ে খুশি মনে মামার অফিস থেকে বের হয়ে সোজা বাড়িতে এসে ছোট ভাইয়ের কম্পিউটার অন করে বৃটিশ হাই কমিশনের ওয়েব সাইটে খুঁজে খুঁজে ভিসার ফর্ম বের করে প্রিন্ট করে তা পুরন করে মনিরাকে ডেকে সই স্বাক্ষর দিতে বললো।
মনি ইতস্তত করছে দেখে রাশেদ সাহেব বললো নাও সই কর, ভয় কিসের তোমার সতীন আনতে যাচ্ছি না তোমাকে নিয়েই রংগ লীলা করতে যাচ্ছি ভয় পেয়ো না।
আমি সে ভয় পাচ্ছি না। আমি জানি আমাকে আল্লাহর রহমতে সতীনের মুখ দেখতে হবে না, সে ব্যপারে আমার কোন ভয় নেই। আমি ভয় পাচ্ছি অন্য কারনে।
আহা সই করতো, ভয়ের কোন কারন নেই, যা হবার হোক। কাল সকালে চল এগুলি জমা দিয়ে আসি।
না কাল না।
তাহলে? বুধবারে চল।
মানে আজ সম বার, তুমি পরশুর কথা বলছ?
হ্যা, তোমার সব শুভ কাজ বুধ বারেই হয়, এ যাবত তাই দেখে আসছি।
আচ্ছা বুঝেছি, তাহলে তাই হবে পরশুই চল।
রাতে মামা ফোন করে রাশেদকে চাইলেন, রাশেদ ফোন ধরতেই ও পাশ থেকে মামা বললেন হাইকমিশনে গিয়েছিলি?
না।
কেন?
মনি রেডি ছিলনা তাই কাল যাব।
আচ্ছা ঠিক আছে। টিকেটের ব্যাপারে কথা বলেছি। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসে পাওয়া যাবে কিন্তু শর্ত হচ্ছে এক মাসের মধ্যেই টাকা দিতে হবে। কি করবি, পারবি?
হ্যা তা পারা যাবে।
তাহলে তোরা কালই যা দেখ কি হয়, আমাকে জানাবি।

[আবার দেখা হবে পৌষের হিম ঝরা রাতে রাশেদ সাহেবের রূপকথার গল্পের আসরে। যে যেখানে আছেন সবাই এ পর্যন্ত সুস্থ থাকুন, ভাল থাকুন এবং সুখ স্বপ্নের সাথে পরবর্তী পর্বের অপেক্ষা করুন। ধন্যবাদ]

No comments:

Post a Comment

Thank you very much for your comments.