Friday 5 March 2010

প্রাক –চর্যার যুগের বাংলা ভাষা ও আধুনিক কবিতার সম্পর্কে কিছু কথাঃ

লক্ষনীয়ঃ 
BuZZ এ কেন জানি প্রায়ই এরর দেখাচ্ছে। তাই মেইল করে দিলাম। আমার বক্তব্য! পারলে আপনাদের কেউ পোস্ট করে দিন:
লেখক সুশান্ত কর
যান্ত্রিক গোলযোগের কারনে তিনি নিজ ব্লগে প্রচার করতে পারেননি বলে এখানে তার অনুরোধের প্রেক্ষিতে প্রচার করে দিলাম। স্মৃতিকণা।

চিনলেননা তো ! তবে কে আর দিদিমার মায়ের নাম মনে রাখে বলুন। আমি অপেক্ষা করছিলাম গোপীদা লিখবেন কিছু। তিনি সম্প্রতি 'চর্যাপদ' নিয়ে বই লিখেছেন কিনা।
যাই হোক এর থেকেই বাংলা এসেছে। ওটা প্রাক-চর্যাপদ যুগের প্রাকৃত ভাষা, সম্ভবত সৌরসেনী। হাজার বছরের চে'ও বেশি পুরোনো আমাদের প্রাক-বাংলা ভাষা। 'প্রাকৃত পৈঙ্গল' নামের এক প্রাচীন সংকলনে এটি সংকলিত হয়েছিল।এর এক আধুনিক বাংলা অনুবাদ আমি করেছিলাম এরকমঃ
প্রিয়তম দূর দেশে
       দিগন্ত পার ।
ওড়না ওড়ালো এসে
       মেঘ বরষার ।।
মন দিয়ে পড়ুন আবার , দেখবেন এক ছোট্ট গল্প আছে এর মধ্যে। অনেক কথা বলেছেন কবি, অনেক কম বলে।
এর অনুকরণে আমি আরো লিখেছিলাম কিছুঃ
১)
কাশফুল ঝরে যায়;
      কপালের টিপ।
বাঁধা বেনী খুলে যায়
        নেভানো  প্রদীপ।
২)
'বউ কথা কও' পাখি
             ডাকিসনে আর
শিউলি ফোটেনা সখি
         ভাদো আশিনার
৩)
যে যদি মিনতি করে
           আঙটি ও হার;
দু'পা গেলে নদী বয়;
         কলসি দোয়ার।

 এবারে পড়ুন আমার বৈষ্ণব কবিতার যুগের ধাঁচে কবিতাঃ

তুই ছাড়া আর কার বা আমি
            নিলাম জাতি কুল;
কার প্রাণে বা বাজলো গিয়ে
          বাঁশি আমার ভুল!

ঝাড় উপাড়ি ডালে মূলে
           কে ভাসালে সুর;
তোর পায়ের নুপূর চেনে
         সাত সমুদ্দূর !

এখন সখি, সুখ হলো তোর-
        কী দিয়ে নিই প্রাণ!
ভুলেই গেছে যমুনা যে সেই
আগের কলতান!
---
দেখুন এবারে এখানে খালিদদার সেই প্রথম কবিতার সুর পাচ্ছেন কিনা।
----
কিন্তু আমি আজকাল কবিতা লিখিনা। সত্যি বলতে ঐ যারা ইন্দিরাদিকে মধ্যযুগীয় বলে বিদ্রুপ করল কবিদের মধ্যে ওদের সংখ্যা এত্তো বেশি আর ওরা শক্তিতে এত্তো প্রবল যে আমার ঘেন্না ধরে গেল। আমি অবশ্যি হার মানবার পাত্র নই। কিন্তু আমার নিজেরই আগ্রহ গদ্যে বেড়ে গেল। কী আর করা।আমার সে দুঃখের কথা অরকুটের প্রফাইলে লেখা আছে।
এবারে 'মধ্য যুগ' শব্দটা আসলে ধার করা। আমাদের দেশে ইউরোপের মতো কোনো মধ্যযুগ কোনোদিন ছিল না। ইংরেজ গেছে , কিন্তু গোলামির মানসিকতা আমাদের যায়নি। তাই ওদের গোলামি করে ওদের থেকে ধার করা ধারণাতে জগত না দেখলে আমাদের অনেকে মধ্যযুগীয় বলে।

ইন্দিরাদি, আমি ঐ অরকুট গ্রুপে গিয়ে দেখেছি কে কি বলেছে। ওমন অসভ্যের মতো লিখত না যদি আপনি কবিতা নালিখে আমার মতো গদ্য লিখতেন। তখন বড়জোর আপনার সঙ্গে মতামত বিনিময় করত বা দ্বিমত পোষণ করত। এমন কাঁচা পণ্ডিতি কবিতা নিয়ে হয়। আমি ক'দিন আগে দেবেশ রায়ের একটা বই পড়েছি। ওখানে তিনি একজায়গাতে লিখেছেন, “কিছু দিন আগে কলকাতাতে এলেন কিউবার এক বিখ্যাত কবি। তিনি এক বৈঠকে, 'আমার কাছে ত আমার কোনো কবিতার বই নেই, নইলে পড়ে শোনাতাম দু'চারটে কবিতা,' বলতেই বেরিয়ে আসে বাঙালি শ্রোতাদের ভেতর থেকে তাঁর লেখা দু'দুটো কাব্যগ্রন্থ। সে কবিতো আমাদের আন্তর্জাতিকতায় হতবাক। দুনিয়ার এত খবর রাখতে গিয়ে নিজেদের খবর আমাদের বড় একটা রাখা হয় না,...।'

তিনি যেটি লেখেননি আমি লিখছি। মনে করুন, ওখানে অসমের বা ঊড়িষ্যার কোনো কবি গিয়ে ঐ কথা বলতেন। আমি নিশ্চিত ওখানে তাঁর একটাও কবিতা বেরুতো না। কারণ আধুনিক হবার দৌড়ে আমরা একটা 'ঊড়ো খৈ গোবিন্দায় নমঃ' তত্ব বের করেছি। যা কিছুতে পশ্চিমের গন্ধ আছে তাই আধুনিক। প্রাচ্যের সবকিছু পরিত্যাজ্য। উপেক্ষণীয়। আমরা কালিদাসের কথা বলি বটে কিন্তু কতজন বলুন জ্ঞানদাস, চণ্ডীদাস, বিদ্যাপতি, শাহ মুহম্মদ সগির, শৈয়দ আলাওলের কথা মনে রাখি। রাখিনা , কারণ ইংরেজি শিক্ষাতে জেনেছি ওরা আসার আগে যা কিছু ছিলো সব মধ্য যুগীয় এবং পরিত্যাজ্য।
'দেইখ্যা আইলাম তারে সই , দেইখ্যা আইলাম তারে।
একই অঙ্গে এতো রূপ নয়ানে না ধরে..." (জ্ঞানদাস)
           এমন লাইনকে যে মধ্যযুগীয় বলে তার গালে চপেটাঘাত করা উচিত!

কিন্তু বলে। মাইকেলের আগের প্রায় সব্বার নাম আমাদের ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে বা ঠাকুর ঘরে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। ওটা ইংরেজ প্রীতিতে প্ল্যান করে করা হয়েছিল । এনিয়েও দেবেশ রায়ের ঐ বইতে কিছু দারুণ কথা আছে। কিন্তু তিনি উপন্যাস প্রসঙ্গে লিখেছেন। আমি টুকে দিচ্ছিঃ

"উনিশ শতকের দ্বীতিয়ার্ধে শুরুতে আমাদের ইংরেজ পুরাণ তৈরি হয়ে গেছে, তার পৌরাণিক স্বতঃসিদ্ধ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ। তাই বঙ্কিম যখন উপন্যাস লেখেন তিনি সেই পুরাণকেই পৌরাণিক মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেন। সেখানে সমবেত উৎসবের মেজাজে পুরাণ কে ভাঙা হয় না, ব্যক্তি গত অভিনিবেশে সমবেত ইচ্ছার সেই পুরাণকে গড়ে তোলা হয়। তাতে মহৎ মহত্তর হয়, তুচ্ছ তুচ্ছতর হয়--উভয়ের অন্তর্বর্তী পার্থক্য আরো নির্দিষ্ট হয়। মঙ্গল কাব্যের আসরে, কীর্তনের আখরে, এমনকি খেউড়ের রাত জাগা বাসরে--কাহিনীর অন্য এক বিবরণ তৈরি হয়ে ছিল সেই পনের শতকের বরিশাল-চট্টগ্রামে-এর বঙালে, রংপুর-কোচবিহারের পৌণ্ড্রবর্ধনে, মেদিনীপুরের সমতটে, রাঢ়ে, ষোল শতকের শান্তিপুর-নদীয়ায়, আঠার-উনিশ শতকের নতুন কলকাতায়। কিন্তু আমাদের আধুনিকতা সেই সব বিবরণের মধ্য উপন্যাসের কোনো উপকরণ  খোজেনি। ফলে, ইংরেজি উপন্যাসের একটি বাঁধা ছক আমাদের উপন্যাসের বাঁধাছক তৈরি হয়ে উঠল এবং আজ পর্যন্ত তাইই এক মাত্র ছক। ইংরেজি উপন্যাসের কিন্তু কোনো বাঁধা ছক ছিল না-- সেখানে উপন্যাস  হয়ে উঠেছিল প্রাক উপন্যাস কাহিনীর বিবরণ থেকেই, ...।

আমাদের পক্ষে তো ইংরেজি উপন্যাসের সেই উৎসকে বাংলায় নিয়ে আসা সম্ভব ছিল না, পরিবর্তে ইংরেজি উপন্যাসের একটিমাত্র ছককেই মাত্র আনা গেল। কিন্তু তাতাই জানা হয়ে গেল--এটাই  উপন্যাস, একমাত্র উপন্যাস......'দুর্গেশ নন্দিনী প্রার আগেই আমরা ইংরেজি উপন্যাস থেকে জেনেছি উপন্যাস কী... আমাদের কাহিনী ভালো লাগার আধুনিকতা আমাদের কাহিনী বিবরণের ঐতিহ্য থেকে সম্পূর্ণ , একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল।"
      
উদ্ধৃতি দীর্ঘ হবার জন্যে দুঃখিত। আমি কফি হাউসে উদ্দীপনা গোস্বামীর এক কবিতা অনুবাদে রেখেছি। আমি কিছু মিশিং শব্দ লেখিকার মতোই রেখে দিয়েছি।দেখবেন 'অভ্র' লিখেছে শব্দগুলো ওর ভালো লাগেনি। এমনিতে অভ্র আমার অনুরাগী। কিন্তু সে ঐ কথা লিখেছে, কেননা ওভাবেই আমরা ভাবতে অভ্যস্থ।  যদি ওগুলো ইংরেজি হতো? বাব্বা! কোনো সংশয় কারো থাকতো না। ইন্দিরাদি,  আপনি একটু এমনি এমনি লিখে দিন আপনি স্পেনের রাম শ্যামের উত্তরাধুনিকতার দ্বারা  অনুপ্রাণিত হয়ে লিখেছেন, ব্যস আপনার ভক্ত সংখ্যা বেড়ে যাবে!ঃ)

2 comments:

  1. ঠিকই আছ ! শুধু একেবারে শুরুতে 'স মঝু কন্তা' পুরোটা তুলে দিন। নইলে পাঠক ধরতে পারবে ন। আর এক জায়গাতে দেখুন ,নিচের দিকে ---খোঁজে--বানানাটা খো&জে' হয়ে আছে। প্লীজ ঠিক করে দিন।

    ReplyDelete
  2. ঠিক করে দিলাম।

    ReplyDelete

Thank you very much for your comments.